February 23, 2025, 12:42 am


ওমর ফারুক ভুঁইয়া

Published:
2025-01-19 19:27:49 BdST

রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের হাতে আদৌ কি আসবে?  জনগণের রাষ্ট্র অধরাই থেকে গেল!


গত বহু বছর ধরেই বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফ বাংলাদেশ তথা স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতিতে বিভিন্নভাবে প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই অত্যন্ত চাতুরতার সাথে সেটা তারা বেশ সফলভাবে করেছেও বটে, ক্ষেত্রবিশেষে তাদের এই প্রভাব সরাসরি রাজনীতিতেও রয়েছে। এই প্রভাবকে সকল ক্ষেত্রে খারাপ ভাবে নেয়ার সুযোগ নাই। কারন তাদের চাপ প্রয়োগের কারনে কিছু কিছু জায়গায় সরকার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্র্যাকটিস শুরু করতে বাধ্য হয়েছে। ঋণের টাকা নয় ছয় করার প্র্যাকটিসটা কিছুটা হলেও কমেছে। কিন্তু তাই বলে এটা ভাবার কোন উপায় নাই যে, এই ঔপনিবেশিক প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণের স্বার্থ রক্ষায় এসব কাজ করছে। তাদের এই প্রচেষ্টার মুল উদ্দেশ্যই হচ্ছে কোন ভাবেই যেন তাদের ঋণের টাকা আটকে না যায়। জনগণের স্বার্থ তারা থোরাই কেয়ার করে। 

বিগত সরকারের আমলে আইএমএফের ঋণের টাকা পাওয়ার জন্য যে গোলামীর চুক্তি হয়েছিল আওয়ামী সরকার তা পুরোপুরি না মানলেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিন্তু সেই পথেই হাটছে। এই পর্যন্ত যা দেখছি, ইউনুস সাহেবের সরকার কিন্তু গত সরকারের মেন্ডেটগুলোই পূরন করে যাচ্ছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাজনৈতিক বিবেচনায় আর লুটপাটের উদ্দেশ্যে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার যে বিশাল বাজেট পাশ করা হয়েছিল এই সরকার তো সেই বাজেট নিয়েই কাজ করছে। শুধু শুনছি গত সরকার উন্নয়নের নামে যে লুটপাট করেছে তা দিয়ে এটা সেটা কত কিছু করা যেতো, তাহলে এই সরকার কেন এতো দিনেও একটা সংশোধিত বাজেট পেশ করলো না? কেন পতিত সরকারের একটি অযৌক্তিক বাজেটের টার্গেট পূরনের জন্য জনগণের উপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছেন। 

প্রায় সর্বক্ষেত্রেই ১৫% পরোক্ষ কর যুক্ত করেও মাননীয় উপদেষ্টা মহোদয় বলছেন এতে জনগণের উপর কোন বাড়তি চাপ পড়বে না। ব্যাপারটা অবশ করে অপারেশন করার মতো, আপনার অঙ্গহানি হবে কিন্তু আপনি টের পাবেন না। ডাক্তার আপনাকে বার বার অবয় দিবে, ব্যাথাতো দূরে থাক কি হচ্ছে তা আপনি বুজতেই পারবেন না। যখন হুশ ফিরবে তখন দেখবেন আপনার অঙ্গহানি হয়ে গেছে।

অতি পণ্ডিত লোকদের নিয়ে এই এক সম্যসা। তাদের চিন্তা চেতনা, ভাবনা গুলো তাদের মতোই দুর্ভেদ্য। সাধারন মানুষের পক্ষে তা অনুধাবন করাটা কঠিন। কারন আমরা আমজনতা তো রাবিশ।  

তবে সাধারন মানুষ কিন্তু এই হিসেবটা খুব ভালো বুজে যে, ১০০ টাকা মোবাইল রিচার্জ করলে যদি ৫৬ টাকা নাই হয়ে যায় তবে সেই চাপটা তার উপরই পড়বে, উপদেষ্টার উপর নয়। ওষুধের ক্ষেত্রে স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে, চশমার ফ্রেম, চশমার গ্লাস, সান গ্লাস এ শুল্ক হার বাড়ানো হয়েছে, রোগীর পথ্য ফল কমলা, আঙুর, আপেল, ডালিম, নাশপাতি, ফলের রসের উপর সারচার্জ  ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। এটা বুঝা গেল যে মানুষকে স্বাস্থ্য সচেতন করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই ব্যবস্থা নিয়েছে কিন্তু বাদাম কি দোষ করলো। এক ঠেলায় ১৫ শতাংশ বেড়ে ৪৫ শতাংশ? বাতাসে উড়া টিস্যু পেপার, তাতেও ১৫% ভ্যাট, তাও না হয় মানলাম কিন্তু লজ্জা নিবারণের উপরও তো ১৫% ভ্যাট। এখন বুজতে পারছি একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান কেন বলেছিলেন পোশাক নিয়ে তাদের কোন অভিযোগ নেই। 

এই সিদ্ধান্ত যদি কোন রাজনৈতিক সরকার গ্রহন করতো তবে নাগরিক সমাজের রিএকশনটা কি হতো তা সহজেই অনুমেয়। বিশেষ করে এই ব্যপারে যারা সব সময়ই বেশ সরব ছিলেন সেই প্রতিষ্ঠানগুলোও কোন প্রতিবাদ করেনি, দুই একজন একটু দায়সারা গোছের বক্তব্য দিয়েছেন। ঠিক যেন ধরি মাছ না ছুই পানি। 

রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্নে এতোটাই বিভোর যে, তাদের এখন সেই চিন্তা ছাড়া অন্য কোন কিছুই মাথায় ডুকে না। ডুকবেই বা কেমনে? একটি বৃহৎ দলতো গত ১৫ বছর শুধু চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতি চাওয়া ছাড়া জনগণের অধিকার রক্ষায় বিশেষ কিছু কি করেছে? কেউ কেউ অন্য দলের নেতাদের ছায়ায় ডুব দিয়ে নিজেদের অস্থিত্বটাকেই রক্ষা করেছেন। ছোট ছোট দলগুলো জলে ভাসা পাঠ কাঠির মত ঢেউয়ের তালে একবার এই দিকে গেছেন তো আর একবার অন্য দিকে গেছেন। 

দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়িক গ্রুপ গুলো বাংলাদেশের অর্থনীতির এক বিশাল অংশীদার। তারা হাজার হাজার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। প্রতিষ্ঠান গুলোর ছত্রছায়ায় এর মালিকরা হয়তো অনেক কিছু করেছেন, কিন্তু এটাও তো ঠিক গাজী গ্রুপ অস্থিতিশীল হলে টায়ার ও ট্র্যাঙ্কের বাজার অস্থিতিশীল হবে,  বেক্সিমকো গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, টিকে গ্রুপ, অস্থিতিশীল হলে খাদ্যবাজার ও ওষুধ শিল্পে ব্যপক প্রভাব পড়বে। হয়েছেও তাই।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিৎ ছিল এই প্রতিষ্ঠান গুলোকে যথাযথ নিরাপত্তা দিয়ে রক্ষা করা। অন্যায় যদি করে সেটা করেছে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান তো নয়। এই সব ব্যবসায়িক গ্রুপগুলোর মাধ্যমে সরকার কত শত কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতো সেই খবর কি কেউ নিয়েছেন? যে ৮টি ব্যাংক এখনো ৫,০০০ টাকার উপরে কোন গ্রাহককে দিতে পারছে না, গ্রাহকের শত শত কোটি টাকা আটকে গেছে, পথে বসেছেন অনেক ব্যবসায়ী, সেই খবর কয়জন নিয়েছে!

২২.৫ হাজার কোটি টাকা ছাপানো হলো, ব্যাংক গুলোকে বিশেষ আর্থিক সুবিধা দেয়া হলো। সেই টাকা কোথায় জনগণ তা জানতে চায়। গ্রাহক কি টাকা পাচ্ছে? রাষ্ট্র কি এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারতো না? পুলিশ যেমন বহু দূর থেকে সাইরেন বাজিয়ে চোর ধরতে আসে তেমনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও সেই কাজই করেছেন। আগে থেকেই সাইরেন বাজিয়ে লুটেরাদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন। 

আমাদের পশ্চাদমুখী কর ব্যবস্থা সমাজে বৈষম্যের এক বিরাট উদাহরণ। বৈষম্যবিরোধী সরকার ও তাদের সমর্থকরা সেই বৈষম্যটাই আরো বাড়িয়ে দিলেন।  এই রাষ্ট্রের জনগণ বারবারই জেগে উঠে, আম জনতা জীবন দেয়, রাষ্ট্রটা আর জনগণের হয়ে উঠে না। বেহাত হয়ে যায়। 

লেখক একজন উন্নয়ন কর্মী 

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.