February 22, 2025, 4:16 pm


নেহাল আহমেদ, কবি ও সাংবাদিক

Published:
2025-02-01 15:03:37 BdST

৫২ ভাষা আন্দোলনে রাজবাড়ী জেলা


বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন একটি বিশেষ ঘটনা। বলা যায়, পাকিস্তানের পরবর্তী ঘটনা-প্রবাহের ক্ষেত্রে এই ঘটনা বিশেষ প্রভাব ফেলে। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্ত হবার সময় থেকেই বাঙালি বুদ্ধিজীবী এবং ছাত্র সমাজ বাংলা ভাষার বিষয় নিয়ে তাদের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছিলেন।

কিন্তু পাকিস্তানি ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী এই বিষয়ে মোটেও আন্তরিক ছিলেন না। তারা উল্টো উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছিলেন। সুতরাং অনিবার্যভাবেই সংকট সৃষ্টি হয়। এরই চূড়ান্ত পরিণতি হচ্ছে ১৯৫২ সালের রক্তাক্ত ঘটনা প্রবাহ।

সারাদেশের মত রাজবাড়ী জেলার সন্তানরাও সেদিন এগিয়ে এসেছিলেন মাতৃভাষা বাংলাকে রক্ষার করার সংগ্রামে। রাজবাড়ীর ছেলে আবুল কাশেম (কার্টুনিস্ট) তখন বাংলা অক্ষর তাড়াও একেঁ দারুণ প্রতিবাদ করেছিলেন। ১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মহান সৈনিক কাজী আবুল কাসেম তার আঁকা ‘হরফ খেদাও’ কার্টুন চিত্রটির কারণে সারা পৃথিবীতে এখনো স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন।

রাজবাড়ীর আরেক কৃতি সন্তান অধ্যাপক আব্দুল গফুর (একুশে পদক প্রাপ্ত) যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রথম তিনজন শিক্ষার্থীর একজন। তার নাম রাজবাড়ী জেলায় কোন অনুষ্ঠানে উচ্চারিত হতে দেখেনি। অথচ ভাষা আন্দোলনে তার ভুমিকা ছিলো গুরুত্বপূর্ন।

রাজবাড়ীর সন্তান কাজী মোতাহার হোসেন। ১৯৪৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বরে তমদ্দুন মজলিস একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে যার নাম ছিল পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা বাংলা না উর্দু? এই পুস্তিকার লেখক কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল মনসুর আহমেদ এবং অধ্যাপক আবুল কাসেম (তমদ্দুন মজলিসের সাধারণ সম্পাদক) বাংলা ভাষাকে পূর্ব বাংলায় ভাব বিনিময়, অফিস ও আদালতের একমাত্র ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার পক্ষে জোরালো মতামত তুলে ধরেছিলেন।

অসাম্প্রদায়িক ধ্যান-ধারণায় বিশ্বাসী এবং সেই আলোকে দেশের শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির সুদৃঢ় ভিত গড়ে তোলার জন্য তখন বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন অনেক রাজবাড়ীর সন্তানেরা।

শিক্ষার সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালুর দাবীতে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে পূর্ব বাংলায় যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল তার মধ্যে রাজবাড়ী জেলার ভাষা সৈনিকদের নিয়ে রাজবাড়ীতে কোন কাজ হয়েছে বলে আমার জানা নেই।

মহান ভাষা আন্দোলনে রাজবাড়ী জেলায় বিদগ্ধ ও গুনী মানুষ প্রত্যক্ষ ও প্ররোক্ষভাবে অংশগ্রহন করেন।ভাষা আন্দোলন অংশগ্রহনকারী ভাষা সৈনিকদের নাম ডঃ কাজী মোতাহার হোসেন (বাগমারা পাংশা),
অধ্যপক আব্দুর গফুর (দাদপুর,বেলগাছি), এ্যডঃ আব্দুল ওয়াজেদ চৌধুরী (কাটাখালী, বরাট,)
সামছুল আলম চৌধুরী (রাজবাড়ী সদর), অধ্যক্ষ মিয়া মোহাম্মদ কায়েম উদ্দিন (রাজবাড়ী সদর), হামিদুল হক ভোলা মিয়া (সজ্জন কান্দা,রাজবাড়ী), অধ্যক্ষ বদোরুদ্দোজা টুকু মিয়া (সুর্য নগর,রাজবাড়ী), মুন্সি মোঃ তফাজ্জল হোসেন (পাকুরিয়া,পাংশা), কাজী মোতাহার হোসেন ভাষা আন্দোলনের ভিত রচনা করেন।

অধ্যপক্ষ আব্দুল গফুর ভাষা আন্দোলনে অংশ গ্রহন করা এবং সৈনিক পত্রিকার সহ-সম্পাদক থাকায় তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি হলে তিনি তিন মাস পলাতক থাকেন। এ্যডঃ আব্দুল ওয়াজেদ চৌধুরী ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনে যোগদান করে হাতের তালুতে গুলি লেগে আহত হন। এ্যডঃ সামছুল আলম এবং অধ্যক্ষ মিয়া মোঃ কায়েম উদ্দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকা অবস্থায় ঐদিন মিছিলে অংশ গ্রহন করেন। বদরোদ্দোজা টুকু মিয়া গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। হাদিদুর হক ভোলা মিয়া মিছিলে অংশ গ্রহন করায় গ্রেফতার হন। মুন্সি তোফাজ্জল হোসেন সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় গোপনে ছাত্রদের অর্থ সহায়তা এবং নানাভাবে সংশিষ্ট হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোর্ট মার্শালে বিচার শুরু হলে মাতৃভাষার পক্ষে জোড়ালো বক্তব্যে আত্মপক্ষ সমর্থন করায় তিনি অব্যাহতি পান।

২৪ ফেব্রূয়ারী ঢাকায় নিরপরাধ ছাত্র ও জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি ও হত্যার প্রতিবাদে রাজবাড়ী শহরের মানুষ ২৩ ও ২৪ ফেব্রূয়ারী বিক্ষোভে এ, কে, এম আসজাদ, সমর সিংহ, হাবিবুর রহমান প্রমূখ নেতৃত্বে ২৪শে ফেব্রুয়ারি ৬/৭ হাজার মানুষ আজাদী ময়দানে সমবেত হন। তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। পরে তারা ডানলফ হলে বর্তমানে চিত্রা হলে মিলিত হন। এই প্রসঙ্গে দৈনিক পত্রিকা ১৯৫২-১৬ মার্চ প্রতিবেদন ২১ ও ২২শে ফেব্রূয়ারী ঢাকায় নিরীহ ও নিরপরাধ ছাত্র ও জনসাধারনের উপর পুলিশের অমানুষিক গুলিবর্ষনের সংবাদ এই মহকুমার সর্বত্র স্কুল ও হাট বাজার বন্ধ রাখা হয়।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.