February 22, 2025, 4:07 pm


নিজস্ব প্রতিবেদক

Published:
2025-02-06 11:07:12 BdST

৩২ নম্বর বাড়ি গুঁড়িয়ে দিল ছাত্র-জনতা, রাতভর ভাঙা হলো যেসব স্থাপনা


রাজধানীর ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর এক্সকাভেটর-ক্রেন দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। আগুন দেওয়া হয়েছে ধানমণ্ডিতে শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনেও।

এদিকে, খুলনায় এক্সকাভেটর-ক্রেন দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাইয়ের বাড়ি, যা ‘শেখবাড়ি’ নামে পরিচিত। বরিশালে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর বাসভবন। সিলেটে ভেঙে দেওয়া হয়েছে ডিসি অফিসের সামনের শেখ মুজিবের ম্যুরাল। চট্টগ্রামে বিক্ষোভ মিছিলসহ একাধিক জায়গায় শেখ মুজিবের ম্যুরাল ভাঙচুর করেছে ছাত্র-জনতা।

একইভাবে এক্সকাভেটর-ক্রেন দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুবউল আলম হানিফের পরিত্যক্ত বাড়ি। বরিশাল নগরে বুলডোজার দিয়ে ভাঙচুর করা হয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমুর বাসভবন। ভোলা সদরে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের বাড়িতে আগুন দেয় ক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।

অন্যদিকে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মীয়মাণ দুটি হলসহ মোট চারটি হলে শেখ মুজিব এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের নাম থাকা ফলকগুলো ভেঙে নতুন নাম দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ এবং নগরের জামাল খান এলাকায় শেখ মুজিবের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়েছে। রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নামফলক থেকে ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটি তুলে ফেলা হয়েছে। শেখ মুজিবের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়েছে রংপুরেও।

ভারত থেকে শেখ হাসিনার অনলাইন ভাষণের প্রতিবাদে গতকাল বুধবার রাতে এসব ঘটনা ঘটে। এমন এক দিনে এই ঘটনাপ্রবাহ চলেছে, যেদিন গণ-আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের ছয় মাস পূর্ণ হলো। গত রাত ৮টার পর থেকেই বিপুলসংখ্যক মানুষ ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে জড়ো হয়। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড়ও বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করে ছাত্র-জনতা।

গতকাল সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘আজ রাতে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমি মুক্ত হবে।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর অভিমুখে বুলডোজার মিছিল কর্মসূচি দিয়ে প্রচারণাও চালানো হয় বিভিন্ন আইডি থেকে। তবে শেখ হাসিনার ভাষণ শুরু হওয়ার আগেই সেখানে জড়ো হয় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। রাত ৮টার দিকে বাড়িটিতে প্রবেশ করেন তারা। এ সময় স্লোগান দিতে দিতে সেখানে ভাঙচুর চালানো হয়। এরপর আগুন দেওয়া হয়। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জনতার ভিড়ও বাড়তে থাকে।

একপর্যায়ে গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করে জনতা। লাঠিসোঁটা ও শাবল হাতে ভাঙচুরে যোগ দেন অনেকে। কেউ কেউ বাড়ির দেয়াল ভাঙার চেষ্টা করেন। জানালার গ্রিল, কাঠ, ফটকের অংশ ভেঙে নিয়ে যেতে দেখা যায় কাউকে কাউকে। এ সময় ‘আবু সাঈদ-মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘জনে জনে খবর দে, মুজিববাদের কবর দে’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘জনে জনে খবর দে, আওয়ামী লীগের কবর দে’, ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ এমন নানা স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে ৩২ নম্বর এলাকা।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘স্বৈরাচার শেখ হাসিনা আজকে (গতকাল) ছাত্রলীগের ব্যানারে জাতির সামনে ভাষণ দেবে। যে আমাদের ভাইদের গুলি করে দেশ থেকে পালিয়েছে, সে কী করে কর্মসূচি ঘোষণা করে। আমরা এই দেশে বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনার কোনো অস্তিত্ব রাখব না। যারা ছাত্র হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল, সেই ফ্যাসিবাদীদের কোনো চিহ্ন বাংলাদেশের মাটিতে রাখতে চাই না। অবিলম্বে শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। নিষিদ্ধ সংগঠনের কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না।’

গতকাল রাত ১১টার দিকে বাড়িটির সামনে আনা হয় ক্রেন এবং রাত সোয়া ১১টার দিক থেকে বাড়িটি ভাঙার চেষ্টা শুরু হয়। এতে কাজ না হওয়ায় আনা হয় এক্সকাভেটর। রাত পৌনে ১২টার দিকে এক্সকাভেটর দিয়ে বাড়িটি ভাঙার কাজ শুরু হয়।

এদিন শেখ হাসিনার ঢাকার রাজনৈতিক কার্যালয় ও বাসভবন সুধা সদনেও হামলার ঘটনা ঘটেছে। পরিচয় প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয় থানা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, সুধা সদনেও হামলা হয়েছে। সেখান থেকে হামলা করে বিক্ষুব্ধ লোকজন চলে গেছে। তবে হামলায় কী ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেনি সূত্রটি।

এদিকে, ভাঙচুর ও হামলার বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এসএন নজরুল ইসলাম কয়েকটি সংবাদমাধ্যমকে অবশ্য বলেছেন, এই ধরনের কর্মসূচির সম্পর্কে তারা অবগত ছিলেন না। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাহিনীটির একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, বিক্ষুব্ধ মানুষের সামনে তাদের করার কিছুই ছিল না।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.