জাকির এইচ. তালুকদার:
Published:2025-02-22 17:04:08 BdST
রাষ্ট্রায়াত্ব লোকসানি শিল্প-কারখানা সংস্কার জরুরি
আর্ন্তর্বতী সরকার বন্ধ রাষ্ট্রাত্ব বস্ত্রমিল-কারখানাগুলোয় সরকারি পুণ:বিনিয়োগের পরিবর্তে (পিপিপি) সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্বে পরিচালনা ও ইজারা দেওয়া শুরু করেছে। এরই মধ্যে বিটিএমসি প্রায় সাতটি বন্ধ বস্ত্র কল এধরনের বিনিয়োগে ছেড়ে দিয়েছে। সংস্কারের অংশ হিসেবে বাণিজ্য উপদেষ্টা বিশেষ করে সরকারের শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠা ও জাতীয়করণ ভুল ছিলো উল্লেখ করে এসব প্রতিষ্ঠানে পিপিপি পরিচালনা ও দ্রত বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে সবার প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
এক্ষেত্রে সরকার শুধু বস্ত্রখাতের বন্ধ কারখানা ইজারা, পিপিপি পরিচালনায় নির্দেশনা দিলেও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা কর্পোরেশনগুলোর লোকসানি ও বন্ধ শিল্পকারখানার বিষয়ে নির্দেশনা দেননি। এসব রাষ্ট্রায়ত্ব শিল্প-কারখানা লাভজনক করতে প্রাইভেট খাতে পুরোপরি বিক্রি, লিজ বা যৌথ বিনিয়োগ কোনট কিভাবে দেওয়া যেতে পারে সে বিষয়টিও স্পষ্ট করেননি। পক্ষান্তরে মন্ত্রণালয় এবং বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রয়েছে নানা দোষারোপের বৃত্তের মধ্যে।
১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ রাষ্ট্রমালিকানাধীন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ১৯৭৩ সালের ৩০ জুনের হিসাব অনুযায়ী ৩১৩টি কারখানা নিয়ে দেশের শিল্প খাতের যাত্রা শুরু হয়। গত ৫০ বছরে সরকারি বেসরকারি শিল্পকারখানার সংখ্যা প্রায় দেড় শ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার ১১০টি। দেশে বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ব কর্পোরেশনের সখ্যা ৩৫ টি বলে জানা গেছে। যার অধীতে শতশত শিল্প কারখানা রয়েছে।বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে অনেক সরকারি মিল কারখানা বিক্রিও করে দিয়েছে সরকার।
রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করা এবং জাতীয়করণ করা মিল কারখানাগুলোর মধ্যে বন্ধ হওয়া ছাড়াও রয়েছে লোকসানি নানা শিল্প প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ পুণর্গঠনে সংস্কারের অংশ হিসেবে এগুলোর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকা সময়ের দাবী। একই ধরনের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দেদারছে লাভ করলেও সরকারি শিল্প-কারখানা লোকসান দিয়ে দিয়ে দেশের জন্য হয়ে আছে বিশাল দায় ও বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশ ও জনগণ প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে এসবের ভার বহন করছে তো করেই চলেছে। শক্তিশালী দেশ তৈরির ক্ষেত্রে এসবের সময়োপযোগী সংস্কারের পথ অবশ্যই বের করতে হবে।
একসময় প্রাইভেট পরিবহন খাতের স্বার্থেন্বেসী সিন্ডিকেট কৌশলে রেলশিল্পকে ধ্বংস করতে ষড়যন্ত্রে নেমেছিলো। রেলখাত জনগণের জন্য এখানো চলাচলের অন্যতম ভরসার বিষয় হিসেবে কাজ করছে। একইভাবে ষড়যন্ত্রকরে এদেশের চিনি শিল্পকে ধবংসের শেষ প্রান্তে নিয়ে আসা হয়েছে। প্রাইভেট খাতের ব্যবসায়ীরা চিনি আমদানি করেও লাভ করছে। আর রাষ্ট্রায়ত্ব চিনির মিলগুলো বন্ধ হয়ে লোকসান গুনছে, ধুকে ধুকে মরছে। ঠিকমত চললে এদেশে বাইরে থেকে চিনি আমদানি করার প্রয়োজন পড়ে না। একই ধারায় বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌল কর্পোরেশনের রাষ্ট্রায়ত্ব ইস্টার্ন কেবলস এক সময় এক চেটিয়া লাভ করে বাজার দখল করেছিলো। ক্রমে এটা এখন লোকসানি প্রতিষ্ঠান। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হলেও কমছে শেয়ারমূল্য। প্রতিষ্ঠানটি ক্রমে হচ্ছে রুগ্ন, রুপ নিচ্ছে হতাশাজনক প্রতিষ্ঠানে। অথচ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান লাভ করে বাজার দখল করে ফেলেছে। সরকারের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই এমন দুরাবস্থা নিয় মরণ দশায় পরিণত হচ্ছে। যেখানে একই ধরনের প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান শুধু লাভই করছে তা নয়, সিন্ডিকেট করে অর্থনীতি দেশ, দেশের মানুষকে জিম্মি দশার মধ্যে ফেলছে।
এপর্যায়ে বেসরকারি করণ করা না হলে মান্দাতার আমলের প্রযুক্তি আর যড়যন্ত্রমূলক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রাষ্টায়ত্ব এসব মিল-কারখানা লাভজনক করা দুঃসাধ্য বিষয় বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞরা।
বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ব কর্পোরেশনের দায়িত্বে থাকা শিল্পমন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব এমএ কামাল বিল্লাহ জানান, সরকার ব্যবসায়ী নয়, তবে ব্যবসায়ীরা সাধারণ জনগণকে জিম্মি করতে না পারে এ লক্ষ্য নিয়ে সরকার মিল, কল-কারখানা স্থাপন, জাতীয়করণ করেছিলো। সময়ের সাথে তাল মিলাতে না পেরে এবং বিভিন্ন কারণে এগুলো ক্রমে লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। তিনি এড়িয়ে গিয়ে জানান, সরকারের এসব কলকারখানা লাভজনক পর্যায়ে আনতে বিনিয়োগ বিষয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট অথোরিটি (বিডা)। বিডা’র সাথে যোগাযোগ করা হলে নির্বাহী চেয়ারম্যান চেীধুরী আসিক মাহামুদ বিন হারুন’র বরাত দিয়ে জানানো হয় বর্তমানে তারা ইপিজেড এবং বেশকিছু অগ্রাধীকার শিল্পে বিনিয়োগে বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন। রাষ্ট্রায়ত্ব এসব লোকসানি শিল্প-কারখানার সংস্কার সম্পর্কে বলা হয়, এসবের মূল দায়িত্ব মন্ত্রণালয়ের। তবে এ নিয়ে তাদের বিভিন্ন প্রস্তাবনা, আলোচনা চলমান রয়েছে। পিছিয়ে পড়া এসব প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক করতে প্রথমে চেষ্টা করা হবে। সরকার ব্যার্থ হলে পরবর্তীতে সেগুলো বেসরকারি করণ করা হবে জানায় বিডা কর্তৃপক্ষ।
বিষয়টি নিয়ে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ’র প্রেসিডেন্ট সৈয়দ এরশাদ আহমেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশে রাষ্ট্রায়ত্ব শিল্প-কারখানাগুলো দেশের জন্য লোকসানি বোঝা হিসেবে কাজ করছে। যে মন্ত্রণালয়ের যে কাজ তারা তা ঠিকমত করছে না। যেমন, চিনি শিল্প’র কথাই ধরা যাক; দেশে যেসব সরকারি চিনির মিল কারখানা রয়েছে কৌশলে এগুলোকে লোকসানী করে রাখা হয়েছে। চিনির মিলগুলো ঠিকমত চললে কোনো চিনি আমদানী করতে হয় না। এর জন্য দায়ভুক্ত শিল্প মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তেমন কোনো কাজ করছে না। তিনি বলেন, এসব মন্ত্রনালয় যেহুতু ঠিকমত কাজ করছে না কাজেই সরকারের উচিত সবগুলো মিল-কারখানা বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.