February 23, 2025, 8:11 am


মানসুরা চৌধুরী দোলা

Published:
2025-02-22 19:59:15 BdST

আব্দুস সোবহান গোলাপের আস্থাভাজন ইলিয়াস মোল্লা রাজউকের মধ্যমণি


ফ্যাসিস্ট সরকারের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা মাদারীপুরের কালকিনির সন্তান ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সোবাহান গোলাপের একান্ত সহচর ইলিয়াস হোসেন মোল্লা। মূলত: আব্দুস সোবহান গোলাপের হাত ধরেই তার উত্থান। শেখ হাসিনার ক্যাশিয়ার খ্যাত আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা আব্দুস সোবাহান গোলাপের অত্যন্ত আস্থাভাজন এই ইলিয়াস মোল্লা।

মাদারীপুরে ছাত্রলীগ নেতা ইলিয়াস মোল্লা রাজউকে চাকরির প্রভাবে এখন প্রায় ২০ কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। ইলিয়াস এর সম্পদের বিবরণ আজ ধারাবাহিক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো।

মাদারীপুর সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের বানিয়া গ্রামের ছোট মেহের মৌজার নজব আলী মোল্লার ছেলে ইলিয়াস মোল্লা। ছোটবেলা থেকেই দারিদ্র্যের অতল সাগরে তলিয়ে যাওয়া ইলিয়াস আজ কোটি কোটি টাকার মালিক। আর্থিক অনটনে বড় হলেও তিনি আজ রাজউকের উপ-পরিচালক। ৬ বোন ও ২ ভাইয়ের মধ্যে ইলিয়াস ৫ম। তার বাবার সে সময় ছোট পরিসরে ব্যবসা ছিল। সন্তানদের নিয়ে খুবই ছোট একটি টিনের ঘরে বসবাস করতেন নজর আলী মোল্লা।

২০১২ সালের দিকে ইলিয়াস মোল্লা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে সহকারী পরিচালক পদে চাকরি পান। চাকরি পেয়েই সখ্যতা শুরু হয় ঘুষ বাণিজ্যের সাথে। দীর্ঘদিন ধরেই তার ঘুষ গ্রহনের বিষয়টি জনমুখে থাকলেও প্রকাশ্যে আসতে একটু সময় লাগে। এসব গুঞ্জনের মাঝেই তার পদোন্নতি হয় নিরীক্ষা ও বাজেট শাখার উপ-পরিচালক পদে।

ইলিয়াস মোল্লা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার সুবাদে আওয়ামী লীগের নেতাদের তদবিরে চাকরি পান। প্রকৃতপক্ষে রাজউকের এই চাকরির সুবাদেই তার কপাল খুলতে শুরু করে। ঢাকায় তার নিজস্ব কিছু না থাকলেও গ্রামের বাড়িতে রয়েছে তার আলিশান বাড়ি। গত এক দশকে গ্রামে ও ঢাকায় গড়ে তুলেছেন কোটি কোটি টাকার সম্পদ, গড়ে তুলেছেন বিলাসবহুল অট্টালিকা। নিজের গ্রামসহ আশেপাশের বিভিন্ন গ্রামে নামে বেনামে কিনেছেন বিঘায় বিঘায় জমি। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মোস্তফাপুর বড় ব্রিজ সংলগ্ন জায়গায় সম্প্রতি কিনেছেন কোটি টাকার জমি। তাছাড়া তাঁতী বাড়ি এলাকায় রয়েছে তার মার্কেট ও গোডাউন। এত অল্প দিনে কিভাবে এত সম্পদের মালিক হলেন এই ইলিয়াস সেটাই এখন এলাকাবাসীর মুখে মুখে।

গ্রামে রয়েছে তার ব্যাপক প্রভাব। এই প্রভাবের জোরেই এলাকায় গড়ে তোলেন লাঠিয়াল বাহিনী। যেকোনো সংবাদকর্মী তাদের কর্তব্য পালন করতে গেলে পড়েন হুমকির মুখে। সাথে মারধর তো আছেই।

বিশেষ অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই লাঠিয়াল বাহিনীর নেতৃত্ব দেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কুদ্দুস মল্লিকের ভাই কাওসার হোসেন। আরো জানা যায়, গত দুই মাসে এই কাওসার বাহিনীর হাতে অনেক লোকজনই মারধর ও নাজেহালের শিকার হয়েছেন। এমন অনেকেই আছেন যারা প্রাণভয়ে মুখ খুলতে সাহস পান না।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের বাড়িতে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেছেন আলিশান বাড়ি। বাড়িটি উঁচু দেওয়াল দিয়ে ঘেরা। দৃষ্টিনন্দন গেট। দূর থেকেই দেখা যায় নির্মাণাধীন একটি আলিশান বাড়ির আবরণ। ভেতরে ঢুকে বাড়িটির চোখ ধাঁধানো ডিজাইন দেখে অবাক হবেন যে কেউ। তিনতলা ভবন। ভেতরে ঘোরানো সিঁড়ি, গম্বুজ আকার ধারণ করে উঠে গেছে ছাদ। বাড়িটির সৌন্দর্যবর্ধনে হাজার হাজার লাইটের পয়েন্ট রাখা হয়েছে। পেছনে গেলেই চোখ পড়ে একটি বড় পুকুর। সিসি ঢালাই করে বাঁধানো হয়েছে পুকুরের পাড়। বাড়িসংলগ্ন স্থানে ছাদসহ করা হয়েছে বড়সর একটি ঘাট। ঘাটের দুপাশে পুকুরের মধ্যে করা হয়েছে ছাদসহ বসার স্থান। দেখলেই বোঝা যায় কতটুকু সৌখিন হলে একজন মানুষ এমন সৌন্দর্য ভরপুর আলিশান বাড়ি করতে সক্ষম হয়। এছাড়াও বাড়ির পাশে নিজ খরচে কোটি টাকা খরচ করে নির্মাণ করেছেন ৪ তলা একটি মসজিদ। পুরো মসজিদ টাইলস দিয়ে ঢাকা। মসজিদের চারপাশে দেয়া হয়েছে দেয়াল। দেয়ালের মধ্যেই মসজিদের পাশে করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন পারিবারিক কবরস্থান। শুধু তাই নয়, চলাফেরা তো নিজ গাড়ি ছাড়া একেবারেই অসম্ভব। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলেও তিনি তার জায়গায় রয়েছেন অনড়।

এলাকার অনেকেই জানেন তিনি রাজউকের মস্ত বড় এক অফিসার। আবার কেউ কেউ জানেন ইলিয়াস মোল্লা চাকরি করেন সচিবালয়ে উচ্চ পদে। বিপুল এই সম্পত্তির মালিক যে ইলিয়াস নিজেই তা এলাকাবাসীর বোধগম্য। রাজউকের কর্মকর্তা ইলিয়াস মোল্লার এসব সম্পদ অনুসন্ধান করে তাকে আইনের আওতায় আনার দাবি করেছেন মাদারীপুরবাসী।

রাজউকের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, ইলিয়াসের বদলি হয়েছে রাজউকের উত্তরা জোনাল অফিসে। উক্ত স্থানে দাঁড়িয়ে তাকে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

নিরীক্ষা ও বাজেট শাখার কর্মচারীদের নিকট থেকে জানা যায়, তাকে কখনই কল দিলে পাওয়া যায় না, এবং তার ফোন নাম্বার সবসময়ই বন্ধ থাকে। বর্তমান এই যুগে যেখানে ফোন ছাড়া মানুষ অচল, সেখানে একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা কিভাবে ফোন ছাড়া রয়েছে সেটাই ভাবনার বিষয়। শুধু তাই নয়, উত্তরা জোনাল অফিসে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উক্ত অফিসে বিভিন্ন ভুক্তভোগীরা তার খোঁজে গিয়েও তাকে পাননি। আব্দুস সাত্তার নামে এক ব্যক্তি বলেন, শুনছি ইলিয়াস সাহেব বদলি হয়েছেন রাজউকের প্রধান কার্যালয় থেকে উত্তরা জোনাল অফিসে। তার বদলি হলেও তার এখন পর্যন্ত কোন স্থায়ী বসার জায়গা হয়নি। তাই বলে ফোনটাও বন্ধ করে রেখে দিবেন, এটা কেমন কথা।অনেক কষ্ট করে মেয়েকে দিয়ে রাজউকের ওয়েবসাইট থেকে তার নাম্বারটা বের করেছিলাম।

পরবর্তীতে যোগাযোগ করা হলে এই রিপোর্টারের নিকট ইলিয়াস মোল্লা বলেন, তার মাথায় সমস্যা আছে।

এখন প্রশ্ন থেকেই যায়, তার মাথায় যদি সত্যিই সমস্যা থেকে থাকে তাহলে তিনি অফিস করছেন কিভাবে? একজন মানসিক রোগীর কোথায় থাকার কথা সেটা সবাই জানে অথচ এত দুর্নীতি অনিয়ম করেও শাস্তির আওতায় না পরে কিভাবে বদলির মাধ্যমে চাকরিতে বহাল থাকেন।

বদলি নামক শব্দের সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। কিন্তু এই বদলি কি স্বাভাবিক অর্থের বদলি? নাকি এর মধ্যে রয়েছে অন্য স্বাদের গহীনের গল্প? সেটা এখন ভাবনার বিষয়।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.