কূটনৈতিক প্রতিবেদক
Published:2025-02-26 23:09:29 BdST
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগজাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিলেও ইইউ’তে বিরত বাংলাদেশ
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার যুদ্ধ বন্ধের জন্য নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে দুটি রেজুলেশন গৃহীত হয়েছে সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি)। দুটি রেজুলেশনেই দৃশ্যত শান্তি এবং সংঘাত অবসানের আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে বিষয়গতভাবে রেজুলেশন দুটির মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে।
বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের রেজুলেশনে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিয়ে সমর্থন করলেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের রেজুলেশনে ভোটদানে বিরত থাকে। জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা এবং প্রত্যাশার সঙ্গে মিল থাকার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের রেজুলেশনে সমর্থন দিয়েছে বাংলাদেশ।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা বৈশ্বিক শান্তি চাই। রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত দীর্ঘদিন ধরে চলছে। এর ফলে সারা বিশ্ব সমস্যায় রয়েছে। এটি শুধু রাশিয়া বা ইউক্রেনকে নয়, বরং সারা বিশ্বের সাপ্লাই চেইনে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই বৈশ্বিক শান্তি এবং এই সংঘাত যত দ্রুত শেষ হবে, সবার জন্য তত বেশি মঙ্গলজনক হবে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আমরা আশা করি, বৈশ্বিক শক্তিগুলো এই সংঘাত শেষ করার জন্য দ্রুত উপায় খুঁজে বের করবে। কারণ এই সংঘাতের তৃতীয় বছর পার করেছি আমরা।’
যুক্তরাষ্ট্রের রেজুলেশনে সমর্থনের বিষয়ে জসীম উদ্দিন বলেন, ‘সংঘাত শেষ করার জন্য আমাদের যে আকাঙ্ক্ষা, মার্কিন রেজুলেশনে তার প্রতিফলন রয়েছে। আমরা মনে করি, ইউরোপে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই রেজুলেশন একটি নতুন প্রতিশ্রুতির বাহক।’ পররাষ্ট্র সচিব আরও বলেন, ‘ইউরোপে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইউরোপীয় দেশগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’ তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠায় বৃহৎ শক্তিগুলোর দায়িত্বশীল উদ্যোগের ওপর জোর দেন।
যা আছে দুটি রেজুলেশনে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রেজুলেশনটি ছিল ‘পাথ টু পিস’। তিন লাইনের এই রেজুলেশনটিতে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে মৃতদের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়। জাতিসংঘের কাজ হচ্ছে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং শান্তিপূর্ণভাবে বিবাদ মীমাংসা করো– এটি মনে করিয়ে দেওয়া। দ্রুত এই সংঘাত শেষ করা, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানো হয়।
এর বিপরীতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রেজুলেশনটি ছিল তিন পাতার। এর মধ্যে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়া যুদ্ধ আরম্ভ করেছে—এমন দোষারোপ থেকে শুরু করে ইউক্রেনের ভূখণ্ডের অখণ্ডতার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
উল্লেখ্য, সংঘাত শুরু হওয়ার পরে ইউক্রেন ভূখণ্ডের কিছু অংশ দখল করে নেয় রাশিয়া। ইউক্রেন দাবি করছে, সংঘাত শেষ করতে হলে দখলকৃত ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে হবে রাশিয়াকে।
আগের রেজুলেশনে বাংলাদেশের অবস্থান
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত শুরু হওয়ার পর জাতিসংঘে একাধিক রেজুলেশন আনা হয়। এর মধ্যে দুটিতে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিয়ে সমর্থন করা ছাড়া আর সব রেজুলেশনে ভোটদানে বিরত ছিল বাংলাদেশ। ওই রেজুলেশনের একটি ছিল মানবিক সহায়তা বিষয়ক এবং অপরটি ছিল ভূখণ্ডের অখণ্ডতা বিষয়ক।
বাংলাদেশের প্রত্যাশা
যুক্তরাষ্ট্রের রেজুলেশনের পক্ষে ভোট দিয়ে ওয়াশিংটনকে একটি ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে ঢাকা। তবে, একইসঙ্গে শান্তি প্রচেষ্টায় যেকোনও পক্ষের সঙ্গেই কাজ করবে বাংলাদেশ।
নাম প্রকাশ না করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘ভোটের আগে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন– উভয়ই বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। নিউ ইয়র্ক এবং ঢাকায় এই যোগাযোগ হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তির পক্ষে। যুক্তরাষ্ট্রের রেজুলেশনটি শান্তি প্রতিষ্ঠায় একটি ভালো উদ্যোগ এবং আমরা সেজন্য দ্রুত সংঘাত বন্ধে এই রেজুলেশনে সমর্থন দিয়েছি। একই ধরনের উদ্যোগ ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে এলে– সেটিতেও আমরা সমর্থন দেবো।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের রেজুলেশনে ভোটদানে বিরত থাকার ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে ওই জোটের ব্যবধান তৈরি হবে কিনা জানতে চাইলে আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত পরিপক্ব। বাংলাদেশ কেন এবং কী কারণে এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে–সে বিষয়ে ইইউর উপলব্ধি আছে। একইসঙ্গে আমরা আমাদের অবস্থান ঢাকায় এবং ইউরোপের দেশগুলোতে ব্যাখ্যা করছি এবং করবো।’
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.