May 15, 2025, 8:26 pm


নেহাল আহমেদ, রাজবাড়ী

Published:
2025-05-15 12:57:48 BdST

শাহ পালোয়ানের মাজার


রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি থানার ইসলামপুর ইউনিয়নের শেকাড়া গ্রামে অবস্থিত একটি মাজার সম্পর্কে নানান শ্রুতি কথা প্রচলিত রয়েছে। ধারনা করা হয় যে, ইসলাম প্রচারের জন্য ষোড়শ শতকে তিনি এই অঞ্চলে বসবাস করার  জন্য আসেন। কথিত আছে, তিনি অলৌকিক কিছু ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। তার কবরে এখনো যে মরা কাঠাল গাছটি রয়েছে সেটি ভাজা কাঠালের আটিঁ থেকে অঙ্কুরিত। তার কবর নিয়েও রয়েছে আরেকটি কাহিনী।

মৃত্যুর আগে তার অনুসারীদের কাছে বলে যান যে তার কবর যেন পুর্ব পশ্চিম মুখি করে দেয়া হয়। কিন্ত তারা সেটা না করে উত্তর দক্ষিন করে কবর দেয়। পরের দিন সকালে সবাই দেখতে পায় যে কবরটি আপনা আপনি পুর্ব পশ্চিমমুখী হয়ে আছে। বর্তমানে দুটি কবরই সংরক্ষিত আছে।

এরকম নানান বর্ণনায় তার কবর ঘিরে নানান কথা প্রচলিত। তার স্মৃতিচিহ্নটুকু হারিয়ে যেতে বসেছে।মাজার কমিটি অনেক চেষ্টা করেও মাজারের জায়গা আজও নির্ধারণ করতে পারেনি। সেখানে গড়ে উঠেছে মসজিদসহ একটি কবরস্থান।

ইতিহাস ঘেটে যেটুকু জানা যায় পালোয়ান শাহ ষোড়শ শতকে ধর্ম প্রচারের উদ্দেশে সুদূর বাগদাদ থেকে আগমন করেন। বালিয়াকান্দি থানার চন্দনা নদীর তীরে বাসস্থান নির্মাণ করেন। ধারণা করা হয়, খান জাহান আলীর উত্তরসূরি ছিলেন শাহ পালোয়ান। তার প্রভাবে ইসলাম প্রচার বৃদ্ধি পায়। শেকাড়া গ্রামে মৃত্যুবরণ করলে তাকে এখানেই এই গ্রামেই কবর দেয়া হয়।

এই ভূখণ্ডে সূফীবাদ পাগলামিতে নতুন মাত্রা এনে দেয়। মুরশিদ তত্ত্ব কিংবা পীরবাদে উল্লেখ আছে দুটি ধারার। একটি সালেকী, অন্যটি মজ্জুব। ধরে নেয়া হয় সালেকী ধারার পীররা প্রচলিত বিধানের ভেতর দিয়েই ভক্তদের সমস্যার সমাধান বাৎলে দেন। কিন্তু মজ্জুবদের চালচলন আলাদা। ওরা ধার ধারেনা প্রচলিত আচারের; কথা বলে একদম কম; গায়ে কাপড় রাখার ইচ্ছেও করেনা কেউ কেউ। বিশেষ দিনে ওদের সমাগম ঘটে নির্দিষ্ট মাজারে। ওরা নিজেদের জিন্দাপীর খিজিরের অনুগামী মনে করে। কোরআনে তার সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে। কিন্তু উত্তর ভারত ও প্রাচীন বাঙলায় এসে খিজিরের নামের সাথে যুক্ত হয় স্থানীয় লোকাচার। বৈদিক জলদেবতা বরুণসংশ্লিষ্ট আচারগুলো যুক্ত হয় স্থানীয়ভাবে পরিচিতি পাওয়া খোয়াজখিজিরের নামের সাথে।

লোকসমাজে ধারণা রয়েছে খোয়াজখিজির জলজগৎ ও প্রকৃতির নিয়ন্ত্রক। খোয়াজের নামে বাংলার ভাটী অঞ্চলে মাঘ মাসে এখোনো আয়োজন হয় বেড়াভাসানের। খিজির শব্দের অর্থ সবুজ। সবুজ আবার প্রকৃতির অংশ। সুফী সাধকরাও আবার বিরাজ করেন প্রকৃতিকে ঘিরে। মজ্জুবরা খোয়াজের হয়ে এই প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণের কাজটি করে থাকে - এমন বিশ্বাসও গড়ে উঠেছে ।

প্রত্যন্ত অঞ্চলে, শহরে ও গঞ্জে, মাজারে-মাজারে রয়েছে নানা বেশধারী পাগল ফকিরের সমাগম। কারো পরণে শালু; কারো পোশাকে ঘটেছে বিচিত্র রঙের সমাগম, শত শত তালি দেয়া কাপড়ে। শরীর জুড়ে শেকল মোড়া কারো; কেউ হাতে রেখেছে দা কিংবা চিমটা। নানা প্রতীক বা ‘আশা’র রয়েছে নানা অর্থ। এই প্রতীকগুলো বলে দেয় কে কোন তরিকার অনুগামী। লোকায়ত সাতপীর ও পাঁচপীরের প্রতীকী মাজারগুলোরও রয়েছে নানা মাহাত্ম।

প্রাথমিকভাবে মুসলিম বিশ্বে সুফিবাদের আবির্ভাব হয় উমাইয়া খিলাফতের সময় (৬৬১-৭৫০) এবং এটি ইসলামের দুটি মূলধারা সুন্নি এবং শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি রহস্যময় ঐতিহ্য হিসেবে বেড়ে ওঠে। সুফি মুসলিম তপস্বীগণ (ফকির ও দরবেশ) ইসলামের ইতিহাসে ইসলাম প্রচারে অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং ব্যাপকভাবে সফল ছিলেন।

ব্রিটিশরা প্রায় দুইশত বছর ভারতবর্ষ শাসন করে। এই সময় দেশের মানুষের স্বার্থবিরোধী নানা নিয়ম ও আইনের প্রচলন করে তারা। এসব নিয়ম আর আইনের বিরুদ্ধে বাংলার মানুষ বিভিন্ন সময় বিদ্রোহ করে। এই রকম একটি বিদ্রোহ হয়েছিল ব্রিটিশ শাসনের সূচনালগ্নে। এই বিদ্রোহ শুরু করেছিলেন বাংলার সুফি সাধক ও সন্ন্যাসীরা।

আমাদের এই ভুখন্ডে নানান জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য মাজার। তাদের ইতিহাস এবং দর্শন সংগ্রহ করা দরকার বলে অনেকেই মতামত দিয়েছেন। সেই সাথে তাদের নিয়ে মিথ্যা প্রচারনা বন্ধ হওয়া দরকার বলে মনে করে সুফি সাধকরা।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.