নজরুল ইসলাম
Published:2025-02-25 16:30:38 BdST
দেশে সৃষ্ট বিরাজমান পরিস্থিতি বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. ইউনুস এর সাথে সাংঘর্ষিক
মানবীয় দুর্বলতার কারণে মানুষ হিসেবে আমরা নানা অপকর্মে জড়িত হয়ে পড়ি। ভুল-বোঝাবুঝি,মতের অমিল কিংবা স্বার্থ সংশ্লিষ্টতাকে কেন্দ্র করে আমাদের মধ্যকার সংঘাত ও দ্বন্দ্বের অবতারণা হয়। তবে এই অপকর্মের বিষ এবং দ্বন্দ্বের আগুন পুরো সমাজকে যাতে করে আচ্ছন্ন করতে না পারে তার জন্য একটা ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থা থাকতে হয়, যা গোষ্ঠী, শ্রেণি ও দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে সমাজের সমস্যাবলি চিহ্নিত করে, প্রতিহত করতে কাজ করে এবং অপরাধীদের দেশের প্রচলিত আইনের আওতায় এনে বিচারের দৃষ্টান্ত স্থাপনের সুপারিশ করে।
যে কোনো কারণে উপরের উল্লেখিত এই ব্যবস্থাপনা যখন অকার্যকর হয়ে পড়ে, কিংবা নির্দিষ্ট শ্রেণি নিজ স্বার্থে প্রভাবিত হয় তখনই সমাজ নষ্ট হতে শুরু করে। আইনের শাসন ও সুবিচার না থাকায় অপরাধপ্রবণতা বাড়তে থাকে, যার মাশুল শুধু অপরাধীদের নয়, বরং পুরো সমাজকেই দিতে হয়।
৭১ পরবর্তী বাংলাদেশে রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা কিংবা রাজনৈতিক চর্চা খুব একটা সুষম ছিল তা বলা যাবে না। তবে, ভালো এবং মন্দের মধ্যখান দিয়ে আমরা মোটামুটি এগিয়ে যাচ্ছিলাম। আরো better, সমৃদ্ধশালী উন্নত বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে ছাত্রদের নেতৃত্বে বিপ্লব হল, এবং বিপ্লব পরবর্তী শান্তিতে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউনুস এর নেতৃত্বে অন্তবর্তী কালীন সরকার ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশে চলমান।
দেশের রাজনৈতিক দল গুলোর মধ্যে যে বিভাজন,
ক্ষমতায়িত হওয়ার যে লোভ এর একটু বিচ্যুতি ঘটলে তারা আর লোড নিতে পারে না। তখন রাজনৈতিক দলগুলো জ্বালাও পোড়াও এর দিকে ধাবিত হয়। প্রবাদ আছে "পাটা-পুতার ঘষাঘষি মরিচের জান শেষ। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো মেধা এবং মনন কিংবা মাইন্ডসেট অনেকটা "বিচার মানব তবে তালগাছ আমার।
শান্তিতে নোবেল বিজয়ী একজন শ্রদ্ধেয় বয়োজ্যেষ্ঠ প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউনুস এর নেতৃত্বে দেশের মানুষের প্রত্যাশা ছিল অনেক। unfortunately, এই সময়টাতে বাংলাদেশে শান্তি-শৃংখলার ভয়াবহ অবনতি, মানুষের আত্মসম্মানের উপর আঘাত, জান মালের ক্ষতি, আগুন দিয়ে মানুষের বাসস্থান জ্বালিয়ে দেওয়া, মেশিন দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া এমন সব দৃশ্যমান ক্রিয়াকর্ম জনমনে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মত। সৃষ্ট এহেন পরিস্থিতি বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউনুস এর সাথে সাংঘর্ষিক, মানুষের আশা এবং প্রত্যাশার সাথে বেশ ফারাক।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউনুস এর প্রথম আমেরিকা সফরে ক্লিনটন ফাউন্ডেশন এর এক অনুষ্ঠানে তার সফর সঙ্গীকে পরিচয় করাতে গিয়ে প্রফেসর ইউনুস বলেছেন, বাংলাদেশের যে জুলাই বিপ্লব হল সেটা ছিল ম্যাটিকুলাসলি planed, পূর্ব পরিকল্পিত। প্রধান উপদেষ্টার এমন সহজ সরল প্রকাশ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সন্দেহকে প্রতিষ্ঠিত
করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে বলে জনমনে কানাঘুষা চলছে।
দেশ সুস্থ রাজনৈতিক ধারায় ফিরে আসুক সেটা আমি সবসময়ই চাই। জুলাই তান্ডবের পর কলমে কালি থাকলেও লেখা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। জীবনে অনেক তান্ডব দেখেছি, এরকম তান্ডব কখনো দেখেনি। কেমন করে কি হলো বুঝতে সময় লেগেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহ ট্রাকিং দূরসাধ্য। প্রতিদিন ঘটনা প্রবাহ মোড় নিচ্ছে, মিনিটে মিনিটে পরিবর্তিত হচ্ছে। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে গোছালো আলোচনা অসম্ভব। এরপরেও কিছু বিষয় আমাকে তাড়া করছে, তাই ছোট্ট পরিসরে হলেও আমার স্বাধীন মতামত প্রকাশের সর্বোচ্চ চেষ্টা।
এক.
মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার পর কেন তাদের এমন করুন পরিণতি হলো সেটা তাদেরকেই খুঁজে বের করতে হবে।আগুন দিয়ে আগুন নেভানো অসম্ভব। যেকোনো উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে বা টানটান উত্তেজনায় হিসাব কষে কথা বলতে হয়। আমাদের জিব্বা ভয়াবহ অস্ত্র। তাই জিব্বাকে সংযত রাখতে হয়। যে কোনো তাণ্ডবের পর তাৎক্ষণিক স্টেটমেন্ট/বিবৃতি যথাযথ হয় না, সময় নিতে হয়। স্পর্শকাতর কোন বিষয় নিয়ে কথা বলতে হলে আগে ড্রাফট করতে হয়, ড্রাফট করা স্টেটমেন্টের (consequences) পরিণতি কি হতে পারে স্টাডি করতে হয়। বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে মতামত দিতে হয়। লক্ষ্য করেছি যে, এই ক্ষেত্রে,আমরা সর্বদা ব্যর্থ।
দুই.
সহজ সরল কর্মীদের মাথায় বেল ভেঙ্গে রাজনৈতিক দল ও সরকারের নাম বিক্রি করে যারা নেতাগিরি করেন, দেশের সম্পদ লুটেপুঠে নিজেদের আখের গোছাতে পারেন তারা সত্যিই চতুর প্রাণী। তাণ্ডবের সাথে সাথে কর্মীদেরকে পিছনে রেখে যারা নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করে বিদেশ পাড়ি দিয়েছেন। দয়া করে বিদেশ থেকে তীর চূড়ার আগে কিংবা বাগাড়ম্বর কথাবার্তা বলার পূর্বে ওইসব সাধারণ কর্মীদের (Seafty & Security) সুরক্ষার কথা মাথায় রাখবেন। যাদের দেশ থেকে পলাতক হওয়ার নিম্নতম সামর্থ্য নেই।
তিন.
দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে অর্থনৈতিক গতিশীলতা ক্রমান্বয়ে নিচের সূচকে ধাবিত হবে। একটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বাধীন সরকারকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা না করে পেশীশক্তি দিয়ে ক্ষমতা অপহরণের হীন উদ্দেশ্যে দেশকে আমরা গৃহযুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারি না। রাজনীতি করেন না বা রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে জড়িত নয় কোটি লোকের বসবাস এই দেশে। তথাকথিত রাজনীতির নামে দেশকে লুটেপুটে খাওয়ার যে হরিলুট ইহা দেশের শান্তি প্রিয় সাধারণ জনসাধারণের জন্য উদ্বেগ উৎকণ্ঠার কারণ।
চার.
শক্তিশালী বিরোধী দল এবং তাদের গঠনমূলক ভূমিকায় যেকোনো রাজনৈতিক সরকারকে শৃঙ্খলায় নিয়ে আসা সম্ভব। বাংলাদেশে গেল এক দশক ধরে সরকারকে জবাবদিহিতার মধ্যে নিয়ে আসার জন্য কনস্ট্রাক্টিভ কোন বিরোধী দল দৃশ্যমান ছিল না, যারা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করবে।
পাঁচ.
দেশের রাষ্ট্রপতিকে শহীদ মিনারে আসতে না দেওয়ার দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ইতিমধ্যে প্রমাণ করে বা indicate দেয় দেশ গৃহযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আচ্ছ, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের সাথে আগস্ট ২০২৪ বিপ্লবের কি সম্পর্ক? দেশে প্রতিদিন এত খুন ডাকাতি ধর্ষন হচ্ছে। আর এদিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাত ৩টার প্রেস ব্রিফিং দিয়ে বলছেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে। আমি পদত্যাগ করবো না। এ ভদ্রলোকের কথাবার্তা শুনে মনে হয়েছে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তার আত্মবিশ্বাসের যথেষ্ট অভাব ,স্ট্রাগল করছেন। দায়িত্ব ছাড়ার লোভও সামাল দিতে পারছেন না।
ছয়.
রাজনৈতিক পরিবর্তন আমাদের বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করতে পারে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা চ্যালেঞ্জিং ও হতে পারে। দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবরণ করলে আমি আপনাদের বিরক্তির কারণ হব। রাজনৈতিক ক্ষমতার হস্তান্তর অনিশ্চয়তা দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে চাপ সাধারণ জনগণের উদ্বেগের কারণ।
গেল সপ্তাহের দেশের স্থানীয় ও জাতীয় নিউজ পেপারের কিছু হেডলাইন দিয়ে আজকের লেখা শেষ করতে চাই- পদ্মার চরে গণ ধর্ষণ, জন প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা, চার বছরের ফুল বিক্রেতা শিশু ধর্ষণ,শহিদ মিনার ভাংচুর, বাংলাদেশের সেরা গায়কদের কনসার্ট বাতিল, দলীয় রাজনৈতিক অফিস গুড়িয়ে দেওয়া, খিলগাঁও এ ভয়াবহ অগ্নিকান্ড, বিভিন্ন যায়গায় নজিরবিহীন ছিনতাই, জঙ্গলে মঙ্গল ভেবে লুকিয়ে ছিলো কৃষ্ণপক্ষ, একুশের ফেব্রুয়ারির বিরুদ্ধে মিছিল, আটচল্লিশ ঘন্টায় ১৩ টা ধর্ষণ, জামায়াতের গাড়ির বহরের নিচে পড়ে একজনের মৃত্যু, কড়াইল বস্তিতে আগুন, যুবদল নেতা হত্যা, শিক্ষক লাঞ্চনা। ইহা এক সপ্তাহের ঘটনা প্রবাহের আংশিক বিবরণ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশে'একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
বাংলাদেশে বর্তমানে সৃষ্ট রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক অস্থিরতা কাটিয়ে ওঠার জন্য রাষ্ট্র সংস্কারের একটি সুস্পষ্ট ও কার্যকর নীতিমালা উপস্থাপন অত্যন্ত জরুরি। যে নীতিমালা রাষ্ট্রের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক খাতগুলোর উন্নয়নে দিকনির্দেশনা প্রদান করবে। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সাধারণ মানুষের জীবনের মান উন্নয়নে রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে আমূল পরিবর্তন করবে। বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার অগ্রদূত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান প্রফেসর ইউনুস এবং তার সহকর্মীরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে কাজটি সুপরিকল্পিতভাবে করবে বলে
আমি আশাবাদী।
লেখক: নজরুল ইসলাম', ফ্রিল্যান্স জার্নালিস্ট, চিপ এডিটর
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.