September 20, 2024, 8:30 pm


সামি

Published:
2020-05-03 00:13:35 BdST

চরম স্বাস্থ্য ঝুকিতে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা


ঢাকা সেনানিবাসের আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজের পাশে এবং হোটেল র‍্যাডিসন ব্লু-এর বিপরীত দিকে চমৎকার এক দৃষ্টিনন্দন ভবন। ভবনটি দেখে বাইরে থেকে অনেক সময় মনেই হয় না, এটি একটি হাসপাতাল। কাচে ঘেরা এই হাসপাতালের নাম কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল।

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমন ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথেই  সরকারের নির্দেশে  স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালকে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছে।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাসপাতালের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলেও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে তা মানা হয় না বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

১২ তলা বিশিষ্ট এই হাসপাতালটিতে এখন পর্যন্ত মোট ২৪০ জন চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে ১৬৩ জন স্থায়ীভাবে নিয়োগকৃত চিকিৎসক আর সংযুক্তিতে আছেন ৭৭ জন। এছাড়াও নার্স আছেন ৪০২ জন। আর ২৫০ জন বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারী।

হাসপাতালটিতে শুধুমাত্র চিকিৎসক ও নার্সরা স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা পেলেও এই ২৫০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী অত্যন্ত ঝুকিপূর্ন অবস্থায় কর্মক্ষেত্রে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা হচ্ছে না বলে একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেছেন। এক্ষেত্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের জীবন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।

চিকিৎসকেরা বলছেন, "করোনার চিকিৎসার সঠিক ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসা কাজে নিয়োজিতদের সবার স্বাস্থ্য নিরাপত্তা এখনো নিশ্চিত হয়নি৷ এই বিষয়ে সঠিক কোনো গাইডলাইন নেই৷"

তারা আরো বলেন, 'চিকিৎসকেরা রোগী দেখে ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন। আর রোগীর বিভিন্ন প্রয়োজনে তার সংস্পর্শে আসছেন ওয়ার্ডবয় বা আয়ারা। দিন শেষে এই ওয়ার্ডবয় ও আয়ারা যখন প্রশাসনিক কাজে কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের কাছে যাচ্ছেন, তখন কিন্তু  তারাও করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। তাই হাসপাতালে কর্মরত সবারই স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।"

কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে তারা নিজেরাই সন্তুষ্ট নন বলে জানান হাসপাতালটির চিকিৎসক-নার্সরা।

কুর্মিটোলা হাসপাতালে দায়িত্বরত এক চিকিৎসক বলেন, ‘২৪ ঘণ্টায় চিকিৎসকরা একবার অথবা দুবার রাউন্ডে যান। এ সময় নার্সেরাও সঙ্গে থাকেন। রোগী দেখতে গেলে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) পরতে হয়। এতে প্রায় আধা ঘণ্টা সময় লাগে। একবার রোগী দেখে এসে পিপিই পাল্টে ফেলতে হয়। তাই চাইলেও বারবার পিপিই পরে যাওয়া যায় না। এত বেশি পিপিই পাল্টালে এসব সামগ্রীর সংকট দেখা দেবে। আর আমরা যখন প্রশাসনিক কাজে হাসপাতালের কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের সংস্পর্শে আসি, তখন কিন্তু তারাও করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুকিতে থাকেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক; হাসপাতালে কর্মরত একজন নার্স জানান, করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে গিয়ে নিজেরা সংক্রমণের ভয়ে সবসময় আতঙ্কে থাকেন। তারপরও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী না পেলে তাদের কিছুই করার থাকে না।

এ বিষয়ে কথা বলতে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. জামিল আহমেদের সাথে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী এফটি টীমকে বলেন, "বর্তমানে চিকিৎসক, নার্সদের পাশাপাশি হাসপাতালে কর্মরত অন্যান্যরাও করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে। এমতাবস্থায় যে সকল বিশেষায়িত হাসপাতালে করোনা রোগীর চিকিৎসা করা হচ্ছে, সেখানে কর্মরত সকলের জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা অতীব জরুরী।"  

উল্লেখ্য যে, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালেই সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে অন্যান্য হাসপাতালে ন্যায় কুর্মিটোলা হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জীবনের ঝুঁকি বাড়তে পারে। এমনকি হাসপাতালটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলেও একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে হাসপাতালের মতো এত সুন্দর একটি হাসপাতাল শুধুমাত্র ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও অদক্ষতার কারণে প্রশ্নের মুখে পড়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। 

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা