September 20, 2024, 10:45 pm


শাফিন আহম্মেদ:

Published:
2024-06-24 17:28:08 BdST

লোক ও কারুশিল্প ফাউণ্ডেশনে দুর্নীতি প্রতারক আজাদ বহাল তবিয়তে


সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউণ্ডেশনের প্রদর্শন কর্মকর্তা একে এম আজাদ সরকারের বিরুদ্ধে সরকারের লাখ লাখ টাকা আত্মসাত ও দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও প্রায় দুই দশক ধরে আছেন বহাল তবিয়তে। বিশেষ তদবিরে তিনি উল্টো বাগিয়ে নিয়েছেন উপপরিচালক পদ। তার প্রধান সহযোগি সংরক্ষণ কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম কোটি কোটি টাকা বাগিয়ে রাষ্ট্রীয় মহামূল্যবান মিউজিয়াম এন্টিক পাচার, বিনষ্টকরণের অভিযোগ নিয়ে ইতোমধ্যে অবসরে গেছেন।
সম্প্রতি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ-এর একটি মিউজিক ভিডিওতে মডেল হয়েছেন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা একে এম আজাদ ও তার স্ত্রী। তাই প্রশাসনে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ খোদ সচিবের বিরূদ্ধে। লাখ টাকা খরচ করে বিশেষ ড্রোন ব্যবহার করে লোকশিল্প জাদুঘরেই নির্মাণ করা হয়েছে এ ভিডিও। ফলে জাতীয় ঐতিহ্যের স্মৃতিবাহী প্রতিষ্ঠানটি পরিণত হয়েছে দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার সূতিকাগারে।

বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউণ্ডেশনের নথি পর্যালোচনা করে জানা গেছে, একেএম আজাদ সরকার ফাউণ্ডেশনে প্রদর্শন কর্মকর্তা হিসেবে অস্থায়ী পদে যোগদান করেন। ফলে তিনি সিলেকশন গ্রেড স্কেল প্রাপ্ত নন। কিন্তু বছরের পর বছর বেতন তুলেছেন সিলেকশন গ্রেডেই। অফিসিয়াল দায়িত্বকে পাশ কাটিয়ে চাতুরতাই ছিল তার মূল পুঁজি। মহামূল্যবান প্রদর্শনকৃত সামগ্রী রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রদর্শন দায়িত্ব তাদের উপর ন্যাস্ত থাকলেও তার সহযোগি সংরক্ষণ কর্মকর্তা রবিউল ইসলামকে ব্যস্ত থাকতেন অবৈধ অর্থ আয়ে। তাদের তত্ত্বাবধানেই মিউজিয়াম এন্টিক কাঁঠের তৈরী ময়ূরপঙ্খী নৌকা, ঘোড়া, হাতি, পালঙ্ক, তামা-কাসায় নির্মিত রাধাকৃষ্ণের মন্দির, হিন্দু পৌরানিক দেব-দেবীর মূর্তিসহ কোটি কোটি টাকা মূল্যের কষ্ঠি পাথরের বিভিন্ন মূর্তি বিনষ্ট ও পাচার হয়ে গেছে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে যা স্পষ্টভাবে উঠে আসে।

১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ঐতিহাসিক সোনারগাঁয়ে ঈসা খাঁর কীর্তি সংরক্ষণের জন্য জাদুঘর স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে দৃষ্টি নন্দন এই স্থানটিতে জাদুঘর স্থাপনের কাজ শুরু হয়। পরবর্তীতে শিল্পী এস.এম সুলতানসহ অনেকেই এই জাদুঘরের দায়িত্ব পালন করেন।

উন্নয়ন খাতের কোন কর্মকর্তা রাজস্ব খাতে আসতে হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নিয়মনীতি অনুসরণ করে রাজস্ব খাতে আসতে হয়। সুচতুর প্রদর্শন কর্মকর্তা একে এম আজাদ সরকার এক্ষেত্রেও সীমাহীন দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে ছলচাতুরির মাধ্যমে রাজস্ব খাতে বেতন ও ভাতাদি নিয়ে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে যাচ্ছেন।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পত্র এবং স্থানীয় ও রাজস্ব অডিট অধিদপ্তরের অডিট আপত্তির প্রেক্ষিতে অবৈধভাবে উত্তোলিত সরকারি লাখ লাখ টাকা বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউণ্ডেশন, সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জে সংরক্ষণ কর্মকর্তা (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) রবিউল ইসলাম এবং প্রদর্শন কর্মকর্তা একে এম আজাদ সরকারকে সাবেক পরিচালক শেখ আলাউদ্দিন অতিরিক্ত উত্তোলিত অর্থ সরকারি কোষাগারে ফেরত দিতে নির্দেশনা প্রদান করেন।
যার স্মারক নং বালোকাফা/অ-৮/৭৯/২০০৯/২৪৭, তারিখ ২০/০৩/২০০৯ খ্রিষ্টাব্দ। দীর্ঘ ১৪ বছর পূর্বে পত্র দেয়া হলেও সরকারি অর্থ আজ পর্যন্ত ফেরত প্রদান করা হয়নি। সুচতুর সংরক্ষণ কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম ঘুষের বিনিময়ে বিষয়টি ধামা-চাপা দিয়ে সম্প্রতি অবসরে যান। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে তদন্ত করলেও সরকারি অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে অদৃশ্য কারণে কোনরূপ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যায়নি। বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউণ্ডেশনে প্রতিবছর অডিট হওয়ার কথা থাকলেও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা অন্যান্য কর্মকর্তার সাথে যোগসাজসে অর্থের বিনিময়ে ধামা-চাপা দিচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান হিসেবে দায়িত্বরত পরিচালকগণও বছরের পর বছর ধরে থাকেন উদাসীন। অডিট আপত্তির তোয়াক্কাও করেন না। তৎকালীন সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে (বর্তমানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়) ২০০০ সালে তাদের বিরূদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উত্থাপিত হলেও অদৃশ্য কারণে বিগত প্রায় দুই দশকেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউণ্ডেশনের প্রতিদিন যে টাকা আগত দর্শনার্থীদের নিকট গেইটের প্রবেশ ফি বাবদ আয় হয় তা দুর্নীতিবাজ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আয়কৃত টাকার মাত্র ৪০% টাকা একটি অতি সাধারণ রাজঘরের মাধ্যমে জমা দেখান। এক্ষেত্রে সরকারি অর্থের ৬০% টাকা আত্মসাৎ করে যাচ্ছেন। এছাড়াও প্রতি বছর এখানে জামদানী মেলার আয়োজন করা হয়। দোকান প্রতি বরাদ্দ নিয়েও চলে দুর্নীতি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন এলাবাবাসী জানান, বর্তমানে লোকশিল্প জাদুঘরে অফিস টাইম শেষে মাঝে মধ্যে ব্যক্তিগত গাড়ীর আনাগোনা দেখা যায়। রাতে গান-বাজনা ও মদের আসর বসে। নিরাপত্তা কর্মীরা অবগত থাকলেও তারা নীরব ভূমিকা পালন করেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তার নিম্নস্তন কর্মকর্তাকে মডেল বানিয়ে মিউজিক ভিডিও নির্মাণ নি:সন্ধেহে সরকারি চাকুরি বিধিমালা পরিপন্থী। বিষয়টি প্রমাণিত হলে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে উভয়কেই শাস্তির আওতায় আসতে হবে।
এসব বিষয় নিয়ে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ-এর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি মুঠোফোন ধরেন নি।
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউণ্ডেশনের পরিচালক ড. মোঃ আমিনুর রহমান সুলতান বলেন, সংস্থাটির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ এবং দুর্নীতি সম্পর্কে কিছুই আমি জানিনা। খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। অবশ্যই অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিষয়টি মাথায় নিয়েছি। তারা শাস্তি পাবার যোগ্য হলে অবশ্যই প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেব।
বর্তমান উপপরিচালক একেএম আজাদ সরকার-এর কাছে তার দুর্নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি পুরোপুরি এড়িয়ে যান।

 

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা