September 20, 2024, 5:37 pm


শাহীন আবদুল বারীঃ

Published:
2024-07-31 18:02:37 BdST

দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আসছে কঠোর নির্দেশনা


  •  কোটা আন্দোলন ইস্যুতে দুর্নীতিবাজদের মধ্যে আপাতত: স্বস্তির নি:শ্বাস।

  •  সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হচ্ছে সরকার দলীয় হাইব্রীড আমলা, রাজনীতিবিদ গণপূর্ত, সওজ,এলজিইডি এবং বিআইডব্লিউটিএ প্রকৌশলী ও আমলাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ।

  •  দুর্নীতির মাত্রায় নতুন যুক্ত এনবিআর এর শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে পিয়ন পর্যন্ত।

  •  বিদ্যুৎ,পানি সম্পদ ও নৌ মন্ত্রনালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ দুর্নীতির অভিযোগ

  • স্বাস্থ্য ও শিক্ষা, ব্যাংক-বীমা সহ আর্থিক খাতে রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ক্যান্সারের মত ছড়িয়ে পড়েছে।

খুব শিগগিরই দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আসছে কঠোর নির্দেশনা। ইতোমধ্যে দুর্নীতিবাজদের নামের তালিকাও প্রস্তত করা হয়েছে। দুর্নীতিবাজদেরকে যারা দুর্নীতির কর্মকান্ডে সহযোগিতা এবং শেল্টার দিচ্ছেন তারাও রেহাই পাবেননা। জনগণের জন্য উম্মুক্ত প্রধানমন্ত্রীর সিকিউরিটি সেলে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে প্রতিদিন শত শত অভিযোগ জমা পড়ছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে খবর জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে " জিরো টলারেন্স " ঘোষণা করেন। এর প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট দপ্তর গুলোকে দুর্নীতিবাজদের নামের তালিকা প্রস্তত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আদেশ প্রদান করেন। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপের উপর ভর করেই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ এর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে।


দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর শক্ত অবস্থান টের পেয়েই রাতের অন্ধকারে দেশ ত্যাগ করেন ক্ষমতাধর সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ এবং জাহাঙ্গীর আলম সহ অনেক রাঘববোয়াল। এছাড়াও দুর্নীতির অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের আলোচিত তিন কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।


এতে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। প্রধানমন্ত্রীর সময়োপযোগী পদক্ষেপে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ এর মধ্যে স্বস্তির আভাস পাওয়া যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে "জিরো টলারেন্স" ঘোষণার পর দুর্নীতি পরায়ন এমপি, প্রতিমন্ত্রী, মন্ত্রী, আমলা, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, পুলিশ কর্মকর্তা, প্রকৌশলী, শিক্ষাবিদ এবং বিভিন্ন সেক্টর ও দপ্তরের উচ্চ পদস্থ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করে।

জানা যায়, জনগণের জন্য উম্মুক্ত প্রধানমন্ত্রীর সিকিউরিটি সেলে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে প্রতিদিন শত শত অভিযোগ পত্র জমা পড়ছে। অধিকাংশ অভিযোগ বিভিন্ন সেক্টরের দুর্নীতি-অনিয়ম এবং জমি জমা দখল বেদখলে নিয়ে। ইতোমধ্যে রাঘববোয়াল দুর্নীতিবাজের নামের তালিকাও প্রস্তত করেছে সংশ্লষ্ট দপ্তর গুলো। কিন্তু এমন এক সময় অতিবাহিত হচ্ছে যে, দেশে অস্থিরতা বিরাজ করায় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ঘাপটি মেরে থাকা দুর্নীতিবাজরা স্বস্তির ডেকুর গিলছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর "জিরো টলারেন্স" তারা থোরাই কেয়ার করছেন। দেশে অস্থিতিকর পরিস্থিতির কারণে বিভিন্ন সেক্টর এবং দপ্তরের দুর্নীতিবাজরা আবারও মাথা চাড়া দিয়ে উঠছেন। তারা মনে করছেন হয়তো দুর্নীতি বিরোধী অভিযান থমকে গেছে। কিন্তু সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা গুলোর তথ্য অনুযায়ী দেশের অবস্থা স্থীতিশীল বা স্বাভাবিক হলেই খুব শীঘ্রই দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর " জিরো টলারেন্স" বাস্তবায়ন করা হবে। এটি প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার।


অভিযোগে খবর প্রকাশ, দেশব্যাপী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত অর্থ যোগানদাতাদের তালিকায় বিএনপি-জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যবসায়ী, আমলা এবং সরকারের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা নব্য আওয়ামী লীগের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা অন্যতম। এদের অতীত খতিয়ান বিএনপি জামায়াত হলেও এখন তারা হাইব্রিড আওয়ামী লীগ। এরা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে বহাল তবিয়তে আছেন। তারা ভেতরে ভেতরে নিজেদের প্রভাব ও আধিপত্য বিস্তার করে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন মুলক কর্মকান্ড নস্যাৎ করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। এদেরকে শেল্টার দিচ্ছেন খোত সরকার দলীয় অর্থলোভি রাজনীতিবিদ এবং এক শ্রেণির এমপি, মন্ত্রীরা। গোয়েন্দা সংস্থা গুলোর কাছে এমন তথ্য থাকলেও নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি এবং টেন্ডার বাণিজ্য সহ সব কিছু ই নিয়ন্ত্রণ করছেন এই হাইব্রিড কর্মকর্তারা। এদেরকে নিয়ে দলীয় ফোরামেও কথা উঠেছে খুব জোরেশোরে। কিন্তু ভবিষ্যতে সরকার এসব দুর্নীতিবাজদের নিবৃত্তি করতে কতোটুকু সফল হবে তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাহাড় সমপরিমাণ অভিযোগ ও মামলার নথি পড়ে আছে। অধিকাংশ অনুসন্ধান চলছে ধীরগতিতে। যে কারণে দুর্নীতিবাজদের লাঘাম টেনে ধরা কোন ভাবেই সম্ভব হচ্ছেনা। এমনটাই মনে করেন অভিজ্ঞ মহল।


এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর,বিআরটিএ, স্থানীয় সরকার,প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, রাজউক, বিআইডব্লিউটিএ, গণপূর্ত অধিদপ্তর, প্রাণী অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, ডেসকো, আরইবি, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বিভিন্ন ব্যাংক, বিমা, আর্থিক খাত এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ঘাপটি মেরে বসে আছেন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা। নব্য হাইব্রিড নামে খ্যাত এসকল দুর্নীতি পরায়ন ব্যক্তিরা নিজেদের আখের গোছাতে সরকারের সমস্ত উন্নয়ন এবং পরিকল্পনা ধুলিস্যাৎ করতে মরিয়া। এদের অধিকাংশ এর বিরুদ্ধে দুদকে মামলা রুজু আছে। কিন্তু দুদক শুধু অনুসন্ধানের পর অনুসন্ধান করছে। আবার দুর্নীতিবাজরাও তাদের হিসেব বিবরণী জমা দিতে বছরের পর বছর সময় ক্ষেপণ করছেন। সব মিলিয়ে দুর্নীতিবাজরা তাদের কর্মস্থলে পদোন্নতি সহ সব সুবিধাই ভোগ করছেন। দুর্নীতি যেন তাদের কাছে নিয়মে পরিণত হয়েছে।
সুত্র মতে, দেশের অর্থনীতির অক্সিজেন হিসাবে খ্যাত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর অধীনে ভ্যাট, আয়কর বিভাগ এবং কাস্টমস এর দুর্নীতিপরায়ণ শীর্ষ কর্মকর্তারা শত শত কোটি টাকার মালিক। তাদের সন্তানরা পড়াশোনা করেন দেশের বাইরে। তারা বসবাস করেন অভিজাত এলাকায়। তাদের বাসার পিয়ন এবং গাড়ি চালকরাও একেকজন আলিশান জীবন যাপন করেন। সাম্প্রতিক সময়ে মতিউর কান্ডে দেশ বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি হলেও এনবিআর স্ব-উদ্যোগে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে তালিকা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এমন কোন নজির স্থাপন হয়নি।


কুষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর:
দুর্নীতির আরেকটি অন্যতম খাত হচ্ছে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এই অধিদপ্তরে নিয়োজিত প্রকল্প পরিচালকরা (পিডি) গবেষণার নামে কোটি কোটি টাকার প্রজেক্ট দেখিয়ে লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছেন সংস্থাটিকে। অভিযোগ আছে, এখানে প্রচুর ভুয়া ডিগ্রিধারী ডক্টর ও গবেষক রয়েছেন। তারা বিভিন্ন প্রকল্পের নামে মহাব্যস্ত। এসব মহাপন্ডিতদের অনেকেই হাইব্রিড। এরা প্রকল্পের টাকা আত্বসাৎ করে একেক জন কোটি কোটি টাকার ধনসম্পদ করেছেন। এসব প্রকল্পে সরকার কতটুকু লাভবান হয়েছে তা খতিয়ে দেখার কেউ নেই।
সরকারের আরেকটি দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য হচ্ছে, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। এই অধিদপ্তরের দুর্নীতি ও অনিয়ম ওপেন সিক্রেট। এই সেক্টর থেকে সরকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীকে সাবলম্বি করার জন্য অসংখ্য প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। যেখানে ছাগল, গরু, মহিষ, হাসমুরগী লালন-পালন করার উদ্যোগ গ্রহণ করলেও প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা উপ-পরিচালক তার সিংহভাগ টাকা লুটপাট করে খাচ্ছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে খবরও প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু প্রকল্প পরিচালক এর বিরুদ্ধে আদৌ কোন বিভাগীয় ব্যবস্থা বা শাস্তিমূলক কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। বরং তদন্তের নামে তাদের কে পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়। এছাড়াও নির্দিষ্ট সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিম্নমানের ভ্যাকসিন ও পশু পাখির ওষুধ ক্রয়ের নামে সরকারের কোটি কোটি টাকা তছনছ করছে চিহ্নিত একটি গোষ্ঠী। এই চক্রটি এতোই শক্তিশালী যে, তারা ঢাকার একজন সাংসদের নাম ভাঙ্গিয়ে রামরাজত্ব ও আধিপত্য বিস্তার করেছেন।


স্বাস্থ্য খাত:
সবচেয়ে হতাশা জনক সেক্টরের নাম স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই অধিদপ্তরের ওষুধ ক্রয় এবং হাসপাতালের যন্ত্রপাতি ক্রয় সহ প্রতিটি স্তরে স্তরে দুর্নীতির কালো থাবায় নিমজ্জিত। এখানে বিএনপি আমল থেকেই নির্দিষ্ট ঠিকাদারী সিন্ডিকেট ছাড়া কেউ কাজ পাননা।এ সরকার আমলেও তারাই বহাল তবিয়তে দেদারসে কাজ হাকাচ্ছেন। এছাড়া আউট সোর্সিং জনবল নিয়োগ, নিত্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী সহ হাসপাতালে আগত রোগীদের বরাদ্দকৃত ওষুধ-পত্র লুটেপুটে খাচ্ছেন দায়িত্বে থাকা উপ পরিচালক প্রশাসনিক কর্মকর্তা, , হিসাব রক্ষক, স্টোর কিপার এবং ওয়ার্ড মাস্টাররা। অভিযোগে প্রকাশ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং হাসপাতালের প্রশাসনিক শাখার সাথে যারা সম্পৃক্ত, তারাই মুলত: দুর্নীতির মূল মাস্টার মাইন্ড। এদের প্রত্যেকের দুর্নীতির চিত্র তালিকা ও আমলনামা অত্যন্ত দীর্ঘ এবং প্রসার। উল্লেখ, করোনা কালীন সময়ের আগে দুদকের অনুসন্ধানে শত শত কর্মকর্তা কর্মচারীর দুর্নীতির চিত্র জনসম্মুখে প্রকাশ করা হলে দেশব্যাপী আলোড়নসৃষ্টি হয়। কিন্তু দুদকের অনুসন্ধান টিমের কতিপয় ব্যক্তি ব্যাপক আর্থিক সুবিধা নেয়ার বিনিময়ে ফাইল গুলো ধামাচাপা পড়ে আছে বলে ওয়াকিবহাল হাল একটি সুত্রের দাবি। ওই সুত্র মতে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দুর্নীতির চিত্র এতোই ভয়াবহ যে, সেখানকার ঠিকাদার সিন্ডিকেট জীবন রক্ষার রোগ নির্নয়কারী শত শত কোটি টাকার যন্ত্রণাংশ সরবরাহ না করেই বিল তুলে নিয়েছেন। উদাহরণ হিসেবে, মিঠু-আফজাল সিন্ডিকেট এর মতো আরো শত শত সিন্ডিকেট রয়েছে দেশ জুড়ে। এই সেক্টরটিতে ডা. সাবরিনা গংরা গ্রেফতার হওয়ার পর কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর রিহার্সেল দিলেও দুর্নীতির চিত্র আগের চেয়ে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।


গনপূর্ত অধিদপ্তর:
দুর্নীতি ও অনিয়মের আরেক স্বর্গরাজ্য হচ্ছে, গণপূর্ত অধিদপ্তর। সেখানে একজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, যিনি সরাসরি হাওয়া ভবনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। আর তিনিই পূরো গণপূর্তকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। তারই ছত্রছায়ায় বিএনপি-জামায়াতের পৃষ্ঠপোষক ছাত্রদল ও ছাত্র শিবিরের ক্যাডাররা এখন নিয়ন্ত্রণ করছেন ঠিকাদারি, বদলী,পদোন্নতি সহ নানা তদবির বাণিজ্য। শুধু তাই নয়, বড়ো বড়ো ঠিকাদারি কাজগুলোও ভাগিয়ে নিচ্ছেন বিএনপি-জামায়াতের ঠিকাদাররা। পুরো ডিভিশনে জোরেশোরে গুঞ্জন উঠেছে, এখানকার নিয়ন্ত্রনকারী তালিকায় রয়েছে বিএনপি-জামায়াত পন্থী একজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, বেশ কয়েকজন নির্বাহী প্রকৌশলী এবং ঠিকাদার। গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, এই সিন্ডিকেট সরকার উৎখাত আন্দোলনের পেছনে দেদারসে টাকা খরচ করছেন। পুরো অধিদপ্তর জুড়ে তাদের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াতের সাথে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ সত্ত্বেও কেন তাদেরকে অন্যত্র বদলি করা হচ্ছেনা এর পেছনে মোটা অংকের ঘুষ লেনদেন ছাড়া আর কিছুই নয় বলে বিশ্বস্ত সুত্রে খবর জানা গেছে। বর্তমান প্রধান প্রকৌশলীও এদের বিরূদ্ধে কার্যকর কোন পদক্ষেপ বা ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হননি। কারণ এদের শেকড় অনেক গভীরে। সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহম্মেদ শরীফুল ইসলাম এবং সাবেক সচিব ওয়াসিউদ্দিন এর ছত্রছায়ায় এদের উথান বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাবেক একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা মত প্রকাশ করেন। সরকারী অনুসারী ওই কর্মকর্তা বলেন,প্রতি টি সেক্টর বা দপ্তরে ঘাপটি মেরে আছে বিএনপি জামায়াত অনুসারীরা। তারা সরকারের বিভিন্ন দুঃসময়ে পেছন থেকে সব কল কাঠি নাড়ে। এদের বিরূদ্ধে চিরুনী অভিযান করে চিহ্নিত করে মূল শাস্তির ব্যবস্থা করলে অনেকটাই সফল হবে সরকার। এদের দুনীতির মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ সম্পদ এর পাহাড় গড়ে তুলেছে।ঢাকার ভিতর ঘুরে ফিরে ১০/১২ জন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলীর সিন্ডিকেটই মূলত: গনপূর্তের নিয়ন্ত্রনকারী ও পৃষ্টপোষক।


সওজ অধিদপ্তর:
সওজ এর প্রধান প্রকৌশলী থেকে শুরু করে নির্বাহী প্রকৌশলী পর্যন্ত প্রত্যেকের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং শত শত কোটি টাকা আত্নসাতের অভিযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে সওজ এর সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মনির হোসেন পাঠানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের মামলায় তিনি জেলে গিয়েছেন। এছাড়া সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ফিরোজ ইকবাল সহ একাধিক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও তাদের পরিবার পরিজনদের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধানে মামলা হয়েছে। অতি সম্প্রতি অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ৭৭ টি এফডিআর এবং ৮২ টি ব্যাংক একাউন্টে শত কোটি টাকার লেনদেনের খবর বিএফআইইউ এর অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। এখানেই শেষ নয়, ঢাকার বাইরে উত্তরবঙ্গের সন্তান একজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও তার ভাইয়ের নামে বেনামে শত কোটি টাকার সম্পদ, রিয়েল এস্টেট ব্যবসা এবং ব্যাংক ব্যালেন্সের অনুসন্ধান পেয়েছে গোয়েন্দা ডায়েরি। ঢাকার আফতাব নগরে তিনটি বাড়ি এবং ৫ কাঠা, ৭ কাঠা ও ১০ কাঠার তিন টি প্লটের সন্ধান পাওয়া গেছে। তার গ্রামের বাড়িতে বাবার নামে কোটি কোটি টাকা খরচ করে কলেজ, ডুপ্লেক্স বাড়ি এবং অগাধ সম্পদের সন্ধান মিলেছে। ঢাকার আশিয়ান সিটিতে বিশ কোটি টাকা মুল্যের বিশ কাঠার প্লটও রয়েছে তার। উক্ত প্লটে অবকাঠামো নির্মাণ করে একটি ছাত্রাবাস স্থাপন করেছেন তিনি।এছাড়া ও নামে-বেনামে বিপুল অংকের ব্যাংক ব্যালেন্স এর ও সন্ধান মিলেছে। আরো একজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী যিনি ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত আছেন। তিনি দুদক ও গণমাধ্যমের চোখ আড়াল করে বনশ্রীতে শাশুড়ীর নামে আলিশান বাড়ি নির্মাণ করেছেন। নিজ জেলা যশোরে নিজের নামে এবং স্ত্রীর নামে বিঘা বিঘা জমি ক্রয় করেছেন। তার অতিরিক্ত টাকার কারণে সেখানে অন্য কেউ জমি ক্রয় করতে পারেননা। এই ব্যক্তি বেশি দামে জমি ক্রয় করার কারণে ওই এলাকায় জমির দাম বহু গুণে বেড়ে গেছে। অভিযোগে প্রকাশ, উক্ত অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর অধীনস্থ’ তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলীগণ দেশব্যাপী ঘুপচি টেন্ডার, ঠিকাদারি সিন্ডিকেট এর মাধ্যমে কোন মাল না কিনেই বিল উত্তোলন, ভুয়া বিল ভাউচার তৈরি করে কোটি কোটি টাকা আত্নসাৎ করে প্রত্যেকেই অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। এদের দুর্নীতির আমলনামা ও তথ্য গোয়েন্দা ডায়েরির অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, এই সেক্টরের বৈদেশিক সাহায্যপুষ্টে ভারী যন্ত্রপাতি ক্রয়ে দুর্নীতির চিত্র ভয়াবহ। যা ক্রয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা কমিশন হাতিয়ে নিয়েছে। অপরদিকে উক্ত ভারী যন্ত্রপাতি খোলা আকাশের নিচে রাস্তার ধারে অথবা অফিস কমপাউন্ডে অব্যাহত অবস্থায় পড়ে থাকায় নষ্ট হওয়ার পথে। গুরুতর অভিযোগ হচ্ছে, এসকল যন্ত্রাংশ ও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন মেশিনারিজ যাদের জন্য ক্রয় দেখানো হয়েছে তারা কোন রিকুইজেশন কর্তৃপক্ষের কাছে দেননি। মুলত কমিশন ভাগিয়ে নেয়ার জন্যই পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে উচ্চমুল্যে নিম্নমানের ভারী যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়েছে। বলা যেতে পারে রীতিমতো সাগর চুরি ঘটনা ঘটেছে।


প্রানী সম্পদ অধিদপ্তর:
সরকারের আরেকটি দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য হচ্ছে, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। এই অধিদপ্তরের দুর্নীতি ও অনিয়ম ওপেন সিক্রেট। এই সেক্টর থেকে সরকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীকে সাবলম্বি করার জন্য অসংখ্য প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। যেখানে ছাগল, গরু, মহিষ, হাসমুরগী লালান পালন করার উদ্যোগ গ্রহণ করলেও প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা প্রকল্প পরিচালক তার সিংহভাগ টাকা লুটপাট করে খাচ্ছেন। এনিয়ে বিভিন্ন সময়ে খবরও প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু প্রকল্প পরিচালক এর বিরুদ্ধে আদৌ কোন বিভাগীয় ব্যবস্থা বা শাস্তি মূলক কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। বরং তদন্তের নামে তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়। এছাড়াও নির্দিষ্ট সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিম্নমানের ভ্যাকসিন ও পশু পাখির ওষুধ ক্রয়ের নামে সরকারের কোটি কোটি টাকা তসরুপ করছে চিহ্নিত একটি গোষ্ঠী। এই চক্রটি এতোই শক্তিশালী যে, তারা ঢাকার একজন সাংসদের নাম ভাঙ্গিয়ে রামরাজত্ব ও আধিপত্য বিস্তার করেছেন।


বিআইডব্লিউটিএ:
দুর্নীতির আরেক মহা উৎসব চলছে বিআইডব্লিউটিএ। সেখানে সর্বস্তরের কর্মকর্তা কর্মচারী দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে দুদকে মামলা রয়েছে। তারপরও থেমে নাই বেপরোয়া কর্মকর্তারা। বিআইডব্লিউটিএ'র আত্নস্বীকৃত ১২ দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা মামলাটি লাল ফিতায় বন্দী। দুদকের চার্জশিট অনুমোদনের পরও তদন্তের কোন অগ্রগতি নেই। ট্রুথ কমিশনে জরিমানা এবং জেল খেটেছেন এই ১২ কর্মকর্তা। তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট কার্যকর না হওয়ার পেছনে মোটা অঙ্কের লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্তদের দাবি দুদক তাদেরকে মামলা থেকে অব্যহতি দিয়েছে। এই মামলাটি ধামাচাপা পড়ায় বিআইডব্লিউটিএ'র অন্য সব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকে দুর্নীতির মামলা গুলোও অলোর মুখ দেখছেনা। তাদের শিকড় এতোটাই শক্ত যে, তারা যেখানে আছেন যেভাবে পারছেন লুটেপুটে খাচ্ছেন।


বেপরোয়া এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চাকরির পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যবসায় পুঁজি বিনিয়োগের অভিযোগও জানা গেছে। তাদের লাগাম টেনে ধরার মতো কেউ নেই বলে বিআইডব্লিউটিএ'র মতো লাভজনক একটি প্রতিষ্ঠান ক্রমেই লোকসানে পরিণত হচ্ছে। ট্রুথ কমিশনের আত্বস্বীকৃত দুর্নীতিবাজ মো.সাইফুল ইসলাম (সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী) এ, এইচ মো. ফরহাদুজ্জামান ( উপ প্রধান প্রকৌশলী) মো. আবু বকর সিদ্দিক ( সহকারী প্রকৌশলী) এবং মো.জহিরুল ইসলাম (সহকারী প্রকৌশলী) এর বিরুদ্ধে দুদকে মামলা চলমান। এদের প্রত্যেকের নামে বেনামে প্রচুর সম্পদের অভিযোগ রয়েছে। আবু বকর সিদ্দিক কুড়িলে ৭ তলা বাড়ি, গাড়ির শো রুম, কালশীতে গাড়ির ওয়ার্কসপ এবং বনশ্রীতে একটি রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় ভায়রা মতিনের সাথে পার্টনারশিপে পুঁজি বিনিয়োগ করেছেন বলেও অভিযোগ আছে। ওই রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী তাদের ছত্রছায়ায় বিআইডব্লিউটিএ'তে ঠিকাদারি করেন। তবে, তাদের উপরস্থ এক কর্মকর্তার দাবি, ওই সময় জমির দাম কম থাকায় এবং ডোবা জমি ক্রয় করতে তেমন বেগ পেতে হয়নি। বিআইডব্লিউটিএ' আরেক রাঘববোয়াল যুগ্ম-পরিচালক আরিফুর রহমান আরিফ। তিনি এলিফ্যান্ট রোডে ৭ তলা বাড়ি, বসুন্ধরায় একাধিক ফ্ল্যাট এবং সন্তানদের বিদেশে লেখাপড়া সহ শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে দুদকে মামলা চলমান। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে মামলাটি ধীরগতিতে এগুচ্ছে।আরিফের একজন তলপিবাহক হিসাব সহকারী। তিনি বেতন পান ২৫ হাজার টাকা। থাকেন ঢাকার লালবাগে বাসা ভাড়া দেন ৪১ হাজার টাকা। আলাদা আরো বিদ্যুৎ বিল, সার্ভিস চার্জ সহ ৬০ হাজার টাকা তার বাসা ভাড়া আসে। গোপালগঞ্জের মোকসেদপুরে এসি সম্বলিত তিন তলা বাড়ি,ঢাকার কেরানিগঞ্জে স্ত্রীর নামে সানওয়ে স্যাটেলাইট সিটিতে প্লট ক্রয় সহ ইন্ডিয়ায় বাড়ি এবং ব্যবসা রয়েছে এই হিসাব সহকারীর। অভিযোগে আরো প্রকাশ, প্রজেক্ট পরিচালক (পিডি) ফয়সাল বিআইডব্লিউটিএতে প্রভাবশালী একজন কর্মকর্তা। তিনি স্যারদের খুব আস্থাভাজন। প্রকল্পের কাজ তেমন কিছুই বুঝেননা। কিন্তু তাকেই অধিকাংশ প্রজেক্টের পিডির দায়িত্ব দেয়া হয়। এ নিয়ে অন্যান্য নির্বাহী প্রকৌশলীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভও রয়েছে।


অভিজ্ঞমহলের মতে, সেক্টর কর্পোরেশন গুলোর রন্ধে রন্ধে দুর্নীতির আখড়া। প্রতিটি অফিসের উচ্চ পদস্থ থেকে নিম্ন সহকারী (পিওন) দুর্নীতি ও অনিয়মের সাথে জড়িত। অধিকাংশ ব্যক্তির নামে-বেনামে অঢেল সম্পদ এবং শত শত কোটি টাকার মালিক তারা। তাদের সন্তানরা লেখাপড়া করেন বিদেশে। স্ত্রীরদের নামে ব্যাংক ব্যালেন্স সহ গাড়ি-বাড়ির অভাব নেই। এসব টাকা সরকারী কোষাগারের। সরকারের সুনাম এরাই মুলত: ক্ষুন্ন করছেন।

 

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা