September 20, 2024, 5:59 pm


সৈয়দ বোরহান কবীর

Published:
2024-08-03 06:41:41 BdST

নাও অর নেভার


পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। সময় বয়ে যাচ্ছে। সিদ্ধান্ত নিতে হবে এখনই। কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধান্বিত থাকা চলবে না। নির্মম নির্দয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে সঠিক সময়ে। সঠিক সিদ্ধান্ত না নিলে ঘটবে বড় ধরনের বিপর্যয়।

রাশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে হয়েছিলো ‘অক্টোবর বিপ্লব’। বিপ্লবের তারিখ নির্ধারণ নিয়ে সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরোতে হয়েছিলো বিতর্ক। সেই বিতর্কে একেকজন একেক রকম তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন। সেসময় রুশ বিপ্লবের মহানায়ক ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন ৭ নভেম্বর বিপ্লবের তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ৬ তারিখ অনেক আগে, ৮ তারিখ অনেক দেরিতে। ৭ নভেম্বরই আসল সময়, অভ্যুত্থানের দিন।

ঠিক তেমনই রাজনীতিতে একটি সঠিক দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি দিন, একটি ঘণ্টা, একটি মুর্হূত পাল্টে দিতে পারে সবকিছু। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

বাংলাদেশে গত কয়েকদিন ধরে যা ঘটছে তাতে সুস্পষ্ট একটি বার্তা পাওয়া যায়। বার্তাটি হলো এই সরকারের কিছু মন্ত্রী, সরকারি কর্মকর্তা আমলার দায়িত্বহীনতার মাসুল দিতে হচ্ছে সরকারকে। সাধারণ মানুষ সরকারের সমন্বয়হীনতা, ভুল সিদ্ধান্ত এবং কিছু মন্ত্রীর দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্যের কারণে তিক্ত বিরক্ত। তারা এই সমস্ত ব্যক্তিদেরকে ক্ষমতা কেন্দ্রের চারপাশে দেখতে চায় না।

এখনও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি জনগণের আস্থা আছে। জনগণ প্রত্যাশা করে প্রধানমন্ত্রী দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবেন। ব্যর্থ, অযোগ্য ও দুর্নীতিবাজ মন্ত্রীদেরকে ক্ষমতাকেন্দ্র থেকে বিদায় দেবেন। দু চারজন মন্ত্রীকে বাদ দিলে এই সরকারের ইমেজ সংকট হবে না, বরং ইমেজ বাড়বে।

প্রধানমন্ত্রী কেন এই সমস্ত ব্যর্থ অযোগ্যদের দায়ভার বহন করবেন? বিভিন্ন সময়ে যারা ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে যারা জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে বিতর্কিত করেছেন, তাদের শাস্তি পাওয়ার সময় এখনই। শেখ হাসিনা যদি এখন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেন, তাহলে জনগণের আস্থা তার ওপরে নষ্ট হয়ে যাবে। এখনও মানুষ প্রত্যাশা করে তিনি দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। জনগণের অনুভুতিকে সম্মান জানাবেন। জনগণের চাওয়া-পাওয়া পূরণ করবেন।

শুক্রবারের দিন সারা দেশে বিশেষ করে ঢাকা শহরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যেভাবে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ যুক্ত হয়েছে, তাতে সুস্পষ্ট ভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে এই আন্দোলনকে অন্য কোনো ভাবে দমন করা যাবে না। পুলিশ দিয়ে কিংবা রাজনৈতিক কূট কৌশল করে আন্দোলন দমনের উপায় বন্ধ হয়ে গেছে। সমঝোতার জন্য প্রথম দরকার সরকারের ভেতর শুদ্ধি অভিযান।

যে সমস্ত মন্ত্রীরা বিতর্কিত, দুর্নীতিবাজ, দায়িত্বহীন, দায়িত্ব পেয়েও যারা কাজ করছে না। বিভিন্ন সংকট সৃষ্টির জন্য যারা দায়ী তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে এবং দ্রুত তাদের মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দিতে হবে।

ওবায়দুল কাদের

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে এখন চলে যেতেই হবে। তার দায়িত্বহীন বক্তব্য, নির্লজ্জ মিথ্যাচার এবং বাস্তবতা বিবর্জিত কথাবার্তার কারণে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন ব্যাপক ব্যাপ্তি লাভ করেছে।

ওবায়দুল কাদের এখন কেবল জনগণের কাছে হাস্যকর একজন ব্যক্তিই নন, সবচেয়ে বিতর্কিত ব্যক্তি। তিনি একের পর এক বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে পুরো সরকারকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দ্রুত ওবায়দুল কাদেরকে বিদায় করুন। আওয়ামী লীগে বহু যোগ্য ব্যক্তি আছেন যারা দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনে সক্ষম। জনগণের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে। যারা দায়িত্ব নিলে দ্রুত সঠিক বক্তব্য দিয়ে জনগণকে আশ্বস্ত করতে পারবেন। শিক্ষার্থীদের আস্থায় নিতে পারবেন। এখন জনগণের আস্থা অর্জন সবচেয়ে জরুরি। সরকারের প্রধান কাজ হলো জনগণের বিশ্বাস স্থাপন।

আসাদুজ্জামান খান কামাল

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। তার একের পর এক ভুল সিদ্ধান্তের কারনে আজকের এই সংকট। শিক্ষার্থীদেরকে গ্রেপ্তার করা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মানেনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিশেষ করে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদেরকে গ্রেপ্তার করা হলো কার নির্দেশে, কিশোরদের গ্রেপ্তার করে কেন জেলে রাখা হলো? এসব প্রশ্নের জবাব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দিতে হবে।

এটি কি তার ব্যর্থতা, অযোগ্যতা নাকি তিনি ষড়যন্ত্রের অংশ তা নির্মোহভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে। দ্রুত এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ সংকট উত্তরণের একমাত্র পথ।

তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক কিংবা শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অযোগ্যতা নিয়ে আজ বিভিন্ন মহলে সমালোচনা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই এসমস্ত সমালোচনাগুলো শুনেছেন। প্রধানমন্ত্রী এই সমস্ত বিতর্কিত মন্ত্রীদের দায়ভার নেবেন কেন?

এখনই সময়। প্রধানমন্ত্রীকে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সব কিছু নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর কঠোর সিদ্ধান্ত এই সংকটের যেমন উত্তরণ ঘটাতে পারে, তেমনই আওয়ামী লীগ ও সরকারকে বাঁচাতে পারে। এই সরকারকে দিতে পারে এক নতুন চেহারা, যে চেহারায় জনগণ সন্তুষ্ট হবে, আশ্বস্ত হবে এবং জনগণ বিশ্বাস স্থাপন করবে।

বেশি কিছু করতে হবে না। ৫ থেকে ৭ জন বিতর্কিত মন্ত্রীকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়া, রাজনীতিতে যারা সততা নিষ্ঠার প্রতীক হিসেবে আছেন তাদেরকে সামনে নিয়ে আসা, সিন্ডিকেটের বাইরে গিয়ে সকল পক্ষের মানুষের সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের জন্য পথ খুঁজে বের করা- এই কাজগুলো কি খুব কঠিন?

শেখ হাসিনা এর চেয়ে দুরূহ কাজ করে এসেছেন। আপনি উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে আজকের জায়গায় পৌঁছেছেন। আপনি বঙ্গবন্ধু কন্যা। আপনার হারাবার কিছু নেই। কাজেই এই সমস্ত অন্যায়কারী, বিতর্কিত, মতলববাজ অযোগ্যদের প্রশ্রয় দেবেন না। এদের বাদ দিয়ে আপনি গণমানুষের নেতা হিসেবে আবার উদ্ভাসিত হন। আপনার সামনে এখন সুবর্ণ সুযোগ। আপনি এখন জনগণের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে জনগণের অবিসংবাদিত নেতা। আপনার কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক। আপনি সব বিতর্কের উর্ধ্বে ওঠে নির্মোহভাবে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করুন। জনগণ বিতর্কিতদের দেখতে চায় না। আপনার চারপাশে যে সমস্ত দুর্নীতিবাজ আছে তাদের অপসারণ চায়। মনে রাখতে হবে শেখ হাসিনাকে ছাড়া আওয়ামী লীগে কেউ অপরিহার্য নয়। এটুকু কাজ কি বঙ্গবন্ধু কন্যার জন্য খুব কঠিন?

লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা