September 20, 2024, 12:35 pm


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2024-08-07 00:33:59 BdST

‘আশা নিয়ে’ হলে ফিরছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা


ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে ফিরতে শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা।

তারা বলছেন, দীর্ঘদিন পর রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ও বৈষম্যহীন স্বাধীন ক্যাস্পাস পেয়েছেন তারা। এখন ক্যাম্পাসে আর অত্যাচার-নির্যাতনের সংস্কৃতি ফিরে আসবে না বলে আশা করছেন তারা।

মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হলে খুলে দেয়। তবে এর আগে সোমবার রাত থেকেই হলে আসতে শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। হলগুলোর ড্রাইনিং এখনও চালু না হওয়ায় অনেকেই বাসায় চলে যাচ্ছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুহসীন হল, সূর্যসেন হলে, বিজয় ৭১, জিয়া হল, বঙ্গবন্ধু হল, জসিমউদদীন ও শহিদুল হল ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি হলে শতশত শিক্ষার্থী এসেছেন। তারা ক্যাস্পাসে এসেই বিজয় মিছিল ও আনন্দ উদযাপন করছেন। কেউ কেউ সরকার পতনের আনন্দে মিষ্টি খাওয়াচ্ছেন।

শিক্ষার্থীরা জানান, আমরা দীর্ঘদিন পর একটি উন্মুক্ত স্বাধীন ক্যাম্পাস পেয়েছি। এখন আর কেউ আমাদের নির্যাতন করতে পারবে না। কথা বলার স্বাধীনতা হরণ করতে পারবে না। জোর করে মিছিল-মিটিংয়ে নিয়ে যাবে না।

আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা জানান, দলীয় রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত হল ক্যাম্পাস চান। সেখানে ছাত্র সংসদের বাইরে কোনও রাজনৈতিক দল থাকবে না। হলের সিট বরাদ্দ হবে মেধার ভিত্তিতে। হল প্রশাসনের মাধ্যমে হলের পরিচালনা থাকতে হবে। দলীয় কিংবা কোনও রাজনৈতিক প্রভাব থাকতে পারবে না।

ইসলামের স্টাডিস বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীর আহমেদ জানান, সোমবার (৫ আগস্ট) সরকার পতনের কথা শুনেই তিনি ঢাকা চলে আসেন। রাতেই তিনি হলে ওঠেন।

তিনি বলেন, আমি প্রথম বর্ষে থাকার সময় অনিচ্ছা সত্ত্বেও ছাত্রলীগের বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রোগ্রামে যেতে হতো। তারা আমাদের অনেক নির্যাতন করতো। যার ফলে আমার ক্যাম্পাসের স্বাধীনতা আমি উপভোগ করতে পারি নাই। এই বিজয়ের পর আমরা আর বসে থাকতে পারিনি। আনন্দ উদযাপন করতে হলে চলে আসছি।

সমাজ কল্যাণ ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আবু হাফিস সোমবার রাতে কুমিল্লা থেকে ক্যাম্পাসে চলে আসেন। তিনি সূর্যসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।

তিনি বলেন, অনেক উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে আমরা একটি পরাধীনতায় ছিলাম। এখন আবার নতুন করে আমরা আর কোনও রাজনৈতিক দলের অধীনে থাকতে চাই না। আমাদের আন্দোলন সব সময় বৈষম্যবিরোধী থাকবে। সেটা দলমত নির্বিশেষে।

ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মো. হৃদয় হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলে থাকেন। তিনি মঙ্গলবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জ থেকে এসেছেন। হলে খাবারের সমস্যা থাকায় তিনি আবার বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। হৃদয় বলেন, কতদিন আমার ক্যাম্পাস দেখি না। হলের ঘ্রাণ নিতে পারি নাই। আজ অনেক আনন্দ লাগছে। ক্যাম্পাসের বাতাস বলছে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী এলিন ইসলাম থাকেন হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ৪৩৩ নম্বর রুমে। তার বাড়ি গোপালগঞ্জে। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ক্যাম্পাসে সংঘর্ষে আহতও হয়েছিলেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হল বন্ধ করে দেওয়ার পরও বাড়ি ফিরে যাননি। বরং উত্তরায় বোনের বাসায় থেকে যোগ দিয়েছিলেন আন্দোলনে যা পরবর্তীতে সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়।

এলিন ইসলাম বলেন, প্রতিদিন আন্দোলনে গিয়েছি, হামলার শিকার হয়েছি, কিন্তু ঘরে বসে থাকিনি। অবশেষে স্বৈরাচারের হাত থেকে মুক্তি মিলেছে আমাদের। আমরা বিজয়ীর বেশে হলে ফিরে আসতে পেরেছি।

সোমবার (৫ আগস্ট) রাতেই হলে ফিরে আসেন এলিন। তবে এখনও হল ক্যান্টিনগুলো না খোলায় খাওয়া-দাওয়া নিয়ে বিপাকে পড়েন। এমন পরিস্থিতিতে অনেকে আবার আত্মীয়-স্বজন বা বাড়ি ফিরে গেলেও এলিনের মতো অনেকে হলেই থাকছেন। নিজেরা চাল-ডাল কিনে এনে রান্না করছেন।

এলিন বলেন, ক্যান্টিন যারা পরিচালনা করেন তাদের ফোন দিয়েছি। তারা আজ রাতেই ক্যাম্পাসে ফিরবে। আগামীকাল (বুধবার) থেকে আর খাওয়া-দাওয়া নিয়ে বিপাকে পড়তে হবে না। এরই মধ্যে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী ফিরে এসেছেন। আরও শিক্ষার্থী আসছে।

তিনি যুক্ত করেন, আমরা দলীয় লেজুরভিত্তিক ছাত্র সংগঠন ক্যাম্পাসে আর চাই না। একমাত্র ছাত্র সংসদ থাকবে। আমরা এখনও আমাদের আন্দোলন স্থগিত করিনি। যতদিন এটি না হচ্ছে আমাদের আন্দোলন চলবে।

মাস্টার দা সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থী আরিফ সোমবার রাতে হলে ফিরেছেন। তবে ক্যান্টিন বন্ধ থাকায় মঙ্গলবার তিনি আবার আত্মীয়ের বাসায় চলে যান। হল থেকে বের হওয়ার সময় তিনি বলেন, খাওয়া-দাওয়ার সমস্যা, তাই ঢাকায় আত্মীয়ের বাসায় যাচ্ছি। ক্যান্টিন খুললে আবার আসবো।

শেখ হাসিনার সরকারের পতনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা এখন ক্যাম্পাসে বুক ফুলিয়ে থাকতে পারবো। আমরা ডাকসু ছাড়া ক্যাম্পাসে আর কোনও ছাত্র রাজনীতি চাই না।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা