September 20, 2024, 1:06 pm


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2024-08-08 10:32:16 BdST

ব্যাংকিং খাতেও হাওয়া বদল


শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশত্যাগের এক দিনের মাথায় সুর বদলেছে ব্যাংক খাতে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকে গতকাল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে শোক সভার আয়োজন করা হয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অফিস করেননি গভর্নর।

আবার ২০১৭ সালে দখল হওয়া ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশকে এস আলম মুক্ত করার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ব্যাংক খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি আড়াল করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাংবাদিক প্রবেশে যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, তা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে। গতকালই ব্যাংকগুলো অফিস থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার ছবি সরিয়ে ফেলেছে।

এদিকে, এক সময় দেশের সেরা ব্যাংক হিসেবে পরিচিত ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ একটি গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় ২০১৭ সালে দখল করে এস আলম গ্রুপ। এস আলম গ্রুপের লুটপাটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে ব্যাংকটিতে বিক্ষোভ হয়েছে। এ ছাড়া এই সময়ে বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই যেসব নিয়োগ হয়েছে তা বাতিল, নিয়ম লঙ্ঘন করে দ্রুততার সঙ্গে পদোন্নতি দেওয়া কর্মকর্তাদের অপসারণের দাবি জানানো হয়। গতকাল ব্যাংকটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলতাফ হোসেন ছাড়া কেউ উপস্থিত হননি।

ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, কয়েকজন কর্মকর্তার মাধ্যমে এস আলম গ্রুপ গত কয়েক বছরে নামে-বেনামে হাজার হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছে। এক সময়ের সেরা ব্যাংকটি এখন সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে। এই ব্যাংকের ভঙ্গুরতা কাটাতে লুটপাটে সহায়তায় সরাসরি জড়িত এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদের সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী ও ব্যাংকের ডিএমডি মো. আকিজ উদ্দিন, ব্যাংকের কোম্পানি সেক্রেটারি ও এএমডি জে কিউ এম হাবিবুল্লাহ, গত ৮ বছরে ৫ থেকে ৭টি করে পদোন্নতি পাওয়া ডিএমডি মিফতাহ উদ্দিন, মোহাম্মদ সাব্বির ও কাজী রেজাউল করিম, দুই এসইভিপি মো. মাকসুদুর রহমান ও আহমেদ জোবায়েরুল হককে দ্রুত অপসারণ করতে হবে। এরই মধ্যে এসব কর্মকর্তার কক্ষের সামনে থেকে নেমপ্লেট খুলে ফেলেছেন বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় ডেপুটি গভর্নর, কাজী ছাইদুর রহমান, নূরুন নাহার, মো. খুরশীদ আলম, ড. মো. হাবিবুর রহমান ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক উপস্থিত ছিলেন। অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধা ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের নেতৃত্বে সাংবাদিকদের প্রতিনিধি দল কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যান।

বৈঠকে আর্থিক খাতের বর্তমান দুরবস্থার দায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এড়াতে পারে না উল্লেখ করে সাংবাদিকরা নানা পরামর্শ দেন। বিশেষ করে অনিয়ম-জালিয়াতি রোধে পরিদর্শন জোরদার, বেনামি ঋণ চিহ্নিত করে ব্যবস্থা, প্রকৃত ঋণখেলাপি চিহ্নিত করা, এক ব্যক্তির হাতে একাধিক ব্যাংক ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন।

দেশের আর্থিক খাত বিশেষ করে ব্যাংক খাতের ভঙ্গুরতা নিয়ে কয়েক বছর ধরে আলোচনা চলছে। বিশেষ করে অনিয়ম-দুর্নীতি, বেনামি ঋণসহ বিভিন্ন উপায়ে ব্যাংকের টাকা মেরে বাইরে পাচারের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন অনিয়ম-জালিয়াতির তথ্য জানলেও ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো এসব তথ্য আড়াল করতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কোনো অনিয়মের তথ্য যেন গণমাধ্যমে প্রকাশ না হয়, সে জন্য ২০১৬ সাল থেকে ২০২২ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত গভর্নরের দায়িত্বে থাকা ফজলে কবির এবং ২০২২ সালের জুলাই থেকে গভর্নরের দায়িত্বে আসা আব্দুর রউফ তালুকদার বিভিন্ন উপায়ে কর্মকর্তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন। অনেক সময় কোনো কর্মকর্তা পরিদর্শনে গিয়ে বিশেষ অনিয়ম-জালিয়াতি ধরলেই ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গত বছরের মার্চ থেকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন আব্দুর রউফ তালুকদার।

বাংলাদেশ ব্যাংকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে শুরু থেকে স্বোচ্চার ছিল ইআরএফ। এ ছাড়া সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াব, সম্পাদক পরিষদ, বিএফইউজে, ডিইউজে, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ বিভিন্ন সংগঠন বিবৃতি দেয়।

সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠকে ডেপুটি গভর্নর কাজী সাইদুর রহমান বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দিক থেকে অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করার কোনো বাধা নেই। অন্য তিন ডেপুটি গভর্নরও একই কথা জানিয়ে বলেন, আর্থিক খাতের দুরবস্থা কাটাতে তারা কাজ করবেন।

তারা বলেন, অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিদর্শন জোরদার করবে। একই সঙ্গে পাচার রোধ ও পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখন থেকে সাংবাদিকরা আগের মতো প্রবেশ করতে পারবেন।

গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার গতকাল অফিস করেননি। দেশ ছাড়ার গুঞ্জন রয়েছে।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা