September 20, 2024, 12:46 pm


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2024-08-08 11:01:46 BdST

‘ভেঙে পড়া’ পুলিশকে দাঁড় করানোর চেষ্টা


ছাত্র আন্দোলনে নির্বিচারে গুলি ও হতাহতের ঘটনায় পুলিশের ‘উচ্চভিলাষী ও অপেশাদার কিছু কর্মকর্তার সিদ্ধান্ত দায়ী বলে মনে করছেন পুলিশের কর্মকর্তারাই। তাদের নির্দেশেই পুলিশ সদস্যরা ছাত্র-জনতার মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিল বলেও মনে করা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত ওই কর্মকর্তারা আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় রীতিমতো পুলিশের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে। দিশেহারা এবং আতঙ্কিত মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও সদস্যরাও দায়িত্ব ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন।

তবে চলমান পরিস্থিতি উতরাতে দ্রুতই আত্মগোপনে থাকা পুলিশের সদস্যদের কর্মস্থলে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে বাহিনীর নতুন প্রশাসন। আপাতত ‘পুলিশের চেইন অব কমান্ড’ এবং মাঠ সদস্যদের ভেঙে পড়া মনোবল ফেরানোর জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবে পুলিশপ্রধানের পদ থেকে এরই মধ্যে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, র‌্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) ব্যারিস্টার মো. হারুন-অর-রশিদ এবং ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) হাবিবুর রহমানকে নিজ নিজ পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই তিন পদে নতুন মুখ এসেছে।

গতকাল বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে র‌্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শহিদুর রহমানকে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ডিআইজি মো. মাইনুল হাসানকে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার (চলতি দায়িত্ব) হিসেবে বদলি করা হয়েছে। একই প্রজ্ঞাপনে র‌্যাব মহাপরিচালক ব্যারিস্টার মো. হারুন-অর রশিদকে পুলিশ সদর দপ্তরে অতিরিক্ত আইজিপি এবং ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানকে পুলিশ সদর দপ্তরে অতিরিক্ত আইজিপি পদে সংযুক্ত করা হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার আইজিপি পদে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের চুক্তি বাতিল করে অতিরিক্ত আইজিপি মো. ময়নুল ইসলামকে আইজিপি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

পুলিশ সূত্র জানায়, দু-এক দিনের মধ্যেই পুলিশ বাহিনীতে আরও বড় রদবদল আসছে। এই রদবদলে ঢাকা মহানগর পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনাল পদ এবং সহিংসতা হয়েছে—এমন জেলাগুলোর পুলিশ সুপার এবং পুলিশের রেঞ্জগুলোতে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেওয়া হতে পারে। এসব পদে অপেক্ষাকৃত নিরপেক্ষ ও চৌকস কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হবে। ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রায় সব থানার ওসি, বিভিন্ন ক্রাইম বিভাগের ডিসি, এডিসি এবং সহকারী কমিশনার পদেও পরিবর্তন আসতে পারে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশের গুলিতে সারা দেশে চার শতাধিক ব্যক্তি নিহত হন। এই নিহতের তালিকায় শিশু-কিশোর, নারীসহ বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণি-পেশার লোক রয়েছেন।

সহিংসতার বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়, নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে সারা দেশের মানুষ। শেষ পর্যন্ত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। এই খবরে বিক্ষুব্ধ জনতার কেউ কেউ বিভিন্ন থানা ও পুলিশ সদর দপ্তরে হামলা চালায়। তখনো কোনো কোনো থানা থেকে পুলিশ সদস্যদের এলোপাতাড়ি গুলি করতে দেখা যায়। জনবিস্ফোরণের একপর্যায়ে আত্মরক্ষায় কর্মস্থল ছেড়ে চলে যান পুলিশের সদস্য ও কর্মকর্তারা। এতে মঙ্গলবার পুলিশ সদর দপ্তর, ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দপ্তরসহ ঢাকার সব থানা পুলিশ শূন্য ছিল। তবে গতকাল পুলিশ সদর দপ্তরে নতুন আইজিপিসহ নানা স্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত হন।

গতকাল পুলিশ সদর দপ্তরে একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা আপাতত পুলিশ সদস্যদের নিজ নিজ কর্মস্থলে ফেরাতে কাজ করে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে নতুন আইজিপি বাহিনীর সদস্যদের সেই বার্তা দিয়েছেন। তিনি দফায় দফায় বৈঠক করেছেন।

পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পুলিশ সদস্যদের মনোবল ফেরাতে নানা উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। তবে যেসব কর্মকর্তার কারণে পুলিশের মধ্যে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তাদের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দোষীদের বিরুদ্ধে পুলিশের আইন ও প্রয়োজনে ফৌজদারি আইনেও মামলা হতে পারে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, বৃহস্পতিবার (আজ) রাত ৮টার মধ্যে সারা দেশে পুলিশ সদস্যদের নিজ নিজ কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য আইজিপি নির্দেশ দিয়েছেন। এই নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুলিশ সূত্র বলছে, ১৫ বছর ধরে পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা অবৈধভাবে প্রভাব বিস্তার করেছেন বা প্রভাবশালী ছিলেন, তারা আত্মগোপনে। বঞ্চিত বা সাধারণ কর্মকর্তারা জনরোষ থেকে রক্ষা পেতে নিরাপদে গেলেও গতকাল অনেকেই পুলিশ সদর দপ্তরে এসেছেন। অনেকে যোগাযোগ করেছেন। তবে যারা প্রভাবশালীদের কাছ থেকে নানা সুবিধা, ভালো পদায়ন নিয়েছিলেন, তাদের অনেকেই ভোল পাল্টাতে শুরু করেছেন। তারা নানা পরিস্থিতির বিষয় উপস্থাপন করে নিজেদের নিরপেক্ষতা প্রমাণের চেষ্টা করছেন।

আবার মাঠ পর্যায়ের অনেক কর্মকর্তা বলছেন, তারা শৃঙ্খল বাহিনীর সদস্য হিসেবে শীর্ষ কর্মকর্তাদের নির্দেশ পালন করেছেন। নির্দেশ পালন করতে গিয়ে এখন পরিবার-স্বজন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। কর্মে ফিরতে জীবনের নিরাপত্তা চাইছেন তারা। নিরাপত্তার দাবিতে রাজারবাগসহ কোথাও কোথাও কর্মবিরতির ডাকও দিয়েছেন পুলিশের কেউ কেউ।

নবনিযুক্ত আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম গতকাল পুলিশ সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘একটি শূন্যস্থান হয়তো তৈরি হয়েছে। তবে সেটি পূরণে আমরা কাজ শুরু করেছি। আশা করছি অচিরেই এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে।’

তিনি পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সবার সহযোগিতা চেয়ে বলেন, থানাগুলোকে ঠিকঠাক করতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সচেতন মানুষ, সাংবাদিকসহ সাধারণ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রত্যেক এলাকায় ‘নাগরিক নিরাপত্তা কমিটি’ করা হবে।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা