September 20, 2024, 1:00 pm


নিজস্ব প্রতিবেদক

Published:
2024-08-08 22:21:32 BdST

ইউসিবি কার্যালয়ে পরিবারতন্ত্রের অবসান ও নতুন পর্ষদ দাবিতে বিক্ষোভ


বেসরকারি খাতের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংককে (ইউসিবি) সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তাঁর পরিবারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন ব্যাংকের দেড় শতাধিক শেয়ারধারী।

আজ সকালে গুলশানে ইউসিবির প্রধান কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে তাঁরা এই দাবি জানান। এই সময় তাঁরা বিভিন্ন ফেস্টুন প্রদর্শন করে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর ‘বিদেশে অর্থ পাচার’ ও ব্যাংকটির নানা অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ উত্থাপন করেন।

ইউসিবির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন সাবেক ভূমিমন্ত্রীর বাবা চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী। শুরু থেকে ব্যাংকটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন পারটেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এম এ হাসেম। তাঁরা বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সাল পর্যন্ত উভয়ের পরিবারের সদস্যরাই ব্যাংকটিতে যুক্ত ছিলেন ও নেতৃত্ব দেন।

ব্যাংকের সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে পারটেক্স গ্রুপের মালিক পরিবারের সদস্যদের ইউসিবি ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হয়। ব্যাংকটির চেয়ারপারসনের দায়িত্ব নেন সাইফুজ্জামান চৌধুরীর স্ত্রী রুকমিলা জামান। তবে রুকমিলা জামান যুক্তরাজ্যে অবস্থান করায় ব্যাংকটি মূলত সাইফুজ্জামান চৌধুরী পরিচালনা করেন, এমনটাই জানিয়েছেন ব্যাংকটির কর্মকর্তারা।

আজ যখন শেয়ারধারীরা ব্যাংকটির সামনে বিক্ষোভ করেন, তখন ইউসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ কাদরী তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন।

জানতে চাইলে আরিফ কাদরী বলেন, ‘তাঁরা নানা অভিযোগ করেছেন। সাবেক মন্ত্রী আমাদের পর্ষদে নেই, তবে ওনার স্ত্রী আমাদের চেয়ারম্যান। যে দাবি এসেছে, সেগুলো পর্ষদে উপস্থাপন করা হবে। আমরা জানিয়েছি, ব্যাংকটি পেশাদারত্ব ও নৈতিকতা মেনে পরিচালিত হচ্ছে।’

এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকে আজ পাঠানো এক চিঠিতে ব্যাংকটির কিছু শেয়ারধারী জানিয়েছেন, রুকমিলা জামান ব্যাংকের চেয়ারপারসন হলেও সাইফুজ্জামান চৌধুরী কার্যত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন এবং তাঁর ‘স্বেচ্ছাচারিতা ও লুটপাটের কারণে’ ব্যাংকটি আজ দেউলিয়া হওয়ার পথে।

ওই চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর যুক্তরাজ্যে ১ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে, যা এই ‘ব্যাংকের আমানতকারীদের টাকা লুট করে পরিশোধ করা হয়েছে’।

চিঠিতে আরও অভিযোগ করা হয়, ২০১৭ সাল থেকে ব্যাংকটিকে একটি পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে ‘অবাধ লুটপাট, আর্থিক দুর্নীতি ও বিদেশে টাকা পাচার’ করা হয়েছে। ফলে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। ২০১৭ সালে ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ছিল ১ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা, যা ২০২৩ সাল শেষে বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা।

শেয়ারধারীদের চিঠিতে আরও বলা হয়, সাইফুজ্জামান চৌধুরী তাঁর ক্ষমতা ব্যবহার করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা উপেক্ষা করে মন্ত্রী থাকা অবস্থায় দায়িত্ব পালন করে গেছেন। এ জন্য ব্যাংকটির সম্পদের মান খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছে। তা ছাড়া ব্যাংকটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। না হলে এই ‘ব্যাংকের ওপর আমানতকারীদের আস্থা’ উঠে যেতে পারে। শেয়ারধারীরা পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে ‘পরিবারতন্ত্র ভেঙে’ দেওয়ার দাবি জানান।

শেয়ারধারীদের অভিযোগ সম্পর্কে সাইফুজ্জামান চৌধুরী এখনো কোনো বক্তব্য দেননি। তবে গত বছর তাঁর বিদেশে সম্পদের বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। নির্বাচনী হলফনামায় বিদেশে সম্পদ থাকার কথা গোপন করার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। লন্ডনে ব্যবসা ও সম্পদ থাকার কথা এক সংবাদ সম্মেলনে স্বীকার করেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী। তবে তাঁর দাবি, বিদেশের সম্পদ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে তিনি কোনো টাকা নেননি।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা