September 20, 2024, 12:34 pm


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2024-08-12 15:56:50 BdST

বেআইনিভাবে ঋণ দিয়েছে জনতা ব্যাংকখেলাপি হতে চলেছে এস আলমের ১০ হাজার কোটি টাকার ঋণ


বেআইনিভাবে এস আলম গ্রুপকে দশ হাজার কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে জনতা ব্যাংক যা প্রতিষ্ঠানটির মোট মূলধনের ৪২০ শতাংশ।

আইন অনুযায়ী গ্রুপ অব কোম্পানীর মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ ঋণ দেওয়ার কথা থাকলেও এস আলম গ্রুপের ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের মূলধন হিসাবে ৫৭৮ কোটি টাকা প্রাপ্য হলেও তাদের ঋণ দেওয়া হয়েছে ৯ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। আমদানির বিপরীতে বিপুল টাকা ঋণ দেওয়া হলেও তা শোধ করা হয়নি।

জানা যায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ অনুমোদন নিয়ে বছরের পর বছর মেয়াদ বাড়িয়ে কৌশলে নিয়মিত দেখানো হচ্ছে। নতুন করে ঋণের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন সদ্য পদত্যাগ করা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। তবে এখন আর ওপরের চাপ না থাকায় বেআইনি এই সুবিধা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে পুরোটাই খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পর্যালোচনায় বলা হয়, জনতা ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের ঋণ নবায়নের অনুমোদন দিলে মোট ঋণ সুবিধা হবে ১০ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা। ব্যাংকটির মূলধনের যা ৪৫১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। নতুন করে সুবিধার জন্য গত ২৫ জুন জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে এই ঋণের মেয়াদ বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এতো বিপুল টাকা ঋণ নেওয়া হলেও গ্রাহকের ঋণপত্র দায় সময়মতো পরিশোধ করেনি গ্রুপটি। ব্যাংক থেকে দেনা পরিশোধ করায় বারবার পেমেন্ট এগেইনেস্ট ডকুমেন্টের (পিএডি) মাধ্যমে ফোর্সড ঋণ সৃষ্টি হয়েছে। ফোর্সড ঋণও শোধ না করায় বারবার পুনঃতপশিলের মাধ্যমে মেয়াদি ঋণে পরিণত হয়েছে। এভাবে নন-ফান্ডেড থেকে বিপুল পরিমাণের ফান্ডেড ঋণ সৃষ্টি হয়েছে। এই অবস্থায় ঋণ নবায়নের কোনো সুযোগ নেই।

উল্লেখ যে, শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শুরুর পর গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার পলাতক থাকা অবস্থায় শুক্রবার পদত্যাগ করেন। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিক্ষোভের মুখে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নররাও আর ব্যাংকে আসছেন না। এ অবস্থায় এখন আর বেআইনি এই সুবিধা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।

জানা যায়, গত জুন পর্যন্ত জনতা ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ছিল ২ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা। এর মানে একক কোনো গ্রুপকে ফান্ডেড ৩৪৭ কোটি ১০ লাখ এবং নন-ফান্ডেড ২৩১ কোটি ৪০ লাখ টাকা দেওয়া যাবে। দুইয়ে মিলে সর্বোচ্চ ৫৭৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা দিতে পারবে ব্যাংক। তবে এস আলম গ্রুপকে দেওয়া হয়েছে ৯ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। ব্যাংকটির মোট পরিশোধিত মূলধনের যা ৪১৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এর মধ্যে ফান্ডেড ঋণে পরিণত হয়েছে ৮ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা। বাকি ৮১৬ কোটি টাকা রয়েছে নন-ফান্ডেড। নতুন করে সুবিধার জন্য গত ২৫ জুন জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে সিদ্ধান্ত হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট একজন নির্বাহী পরিচালক গণমাধ্যমকে বলেন, ব্যাংকের ঋণ ঝুঁকি বিবেচনায় কেন্দ্রীভূত ঠেকাতে একক গ্রাহকের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণের বিধান করা হয়। সাধারণভাবে কোনো ব্যাংক নির্দেশনা লঙ্ঘন করে ঋণ দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘বিশেষ বিবেচনায়’ এ রকম অনাপত্তি দিয়ে দিচ্ছে। ২০১৬ সাল থেকে এই ব্যবস্থা বেশি শুরু হয়েছে। কোন আইনে এটা দেওয়া হচ্ছে, তা অজানা। এর ফলে প্রভাবশালী গ্রাহক সামর্থ্য থাকলেও ঋণ শোধ না করে ব্যাংকের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। বছরে বছরে কেবল সীমা বাড়িয়ে সুদও পরিশোধ করছে না। আবার ঋণ নিয়মিত থাকায় ব্যাংকও সুদ আয় খাতে নিতে পারছে।

তিনি বলেন, আমদানিকারকের ব্যাংকের সমুদয় পাওনা শোধ করে পণ্য খালাস করার কথা। কোনো কারণে তখন দিতে না পারলে পণ্য বিক্রি করে দেওয়ার কথা। অথচ এক্ষেত্রে তা করা হয়নি। এখন দেখার বিষয় পণ্য বিক্রির টাকা পাচার হয়েছে কিনা।

জনতা ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বিশেষ অনুমোদনের নামে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বেআইনি এই সুবিধা দেওয়ার কারণে ঠিকমতো ঋণ আদায় করতে পারছেন না। অনাদায়ী ঋণ কেবল কাগুজে নিয়মিত দেখিয়ে ব্যাংকের স্বাস্থ্য ভালো দেখাচ্ছেন। আইন লঙ্ঘন করে ব্যাংক এবং ঋণগ্রহীতা দু’পক্ষকে সুবিধায় রেখে ঝুঁকিতে ফেলা হচ্ছে আমানতকারীকে।

সার্বিক বিষয়ে বক্তব্যের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পদত্যাগী গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এবং এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদকে মোবাইল ফোনে খোঁজ করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি। জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুস সালামের বক্তব্যও নেওয়া সম্ভব হয়নি।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা