September 20, 2024, 11:54 am


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2024-08-14 20:13:38 BdST

রেলের দুই মেগা প্রকল্প নিয়ে দুশ্চিন্তা


শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর রেলের দুটি অগ্রাধিকার প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে দেখা দিয়েছে দুশ্চিন্তা। প্রকল্প দুটি হচ্ছে পদ্মা সেতু রেলসংযোগ ও দোহাজারি-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ। চলতি বছরের মধ্যে ঋণের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে প্রকল্পের সংশোধনীর অনুমোদন না পেলে দাতাসংস্থার ঋণপ্রদান বন্ধ হতে পারে। তবে প্রকল্প দুটির কাজ পুরোপুরি শেষ না হলেও উদ্বোধন করা হয়েছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবরা গত ১২ আগস্ট বৈঠক করেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, ৭ দিনের মধ্যে অগ্রাধিকার প্রকল্পের তালিকা দিতে হবে। অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এরই মধ্যে জানিয়েছেন, জরুরি প্রকল্প ছাড়া অর্থছাড় দেওয়া হবে না। এর আলোকে রেলওয়ের পক্ষ থেকে জরুরি ভিত্তিতে এ দুটি প্রকল্পের সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদনের নথি প্রস্তুত করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

জানা গেছে, সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প সেতু বিভাগের আওতায় নির্মিত হয়েছে পদ্মা সেতু। রেলওয়ের অধীনে আরেকটি অগ্রাধিকার প্রকল্প রয়েছে পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্প। পদ্মা সেতু হয়ে রেলপথটি যশোরের সঙ্গে যুক্ত হবে। আপাতত পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলছে। কিন্তু প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি।

বাংলাদেশ সরকারের ১৫ শতাংশ ও চীন সরকারের ৮৫ শতাংশ অর্থায়নে জিটুজি পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন হচ্ছে প্রকল্পটি। ঋণচুক্তির শর্ত পূরণের অংশ হিসেবে সম্পূরক চুক্তি-১ এবং ডব্লিউডি-১ প্যাকেজের চুক্তিমূল্য অপরিবর্তিত রেখে একটি সম্পূরক চুক্তি-২ সই করা হয়েছে। তাই প্রকল্পটি দ্বিতীয়বার সংশোধন করা দরকার। এতে ব্যয় বাড়বে না, বরং ৬২১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা কমবে। তবে বাড়বে প্রকল্পের মেয়াদকাল। ২০২৬ সাল পর্যন্ত মেয়াদ বাড়াতে হবে। ঋণের মেয়াদ চলতি বছর ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত ধরা আছে। প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেল ট্র্যাক নির্মাণ করা হচ্ছে। এর ৮২ কিলোমিটার অংশ ঢাকা ও ভাঙ্গাকে সংযুক্ত করে ট্রেন সার্ভিসের উদ্বোধন করা হয় ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর। বাকি অংশের কাজ শেষ হয়নি এখনো।

এই বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, প্রকল্পটির খাত অনুযায়ী কাজে কিছু পরিবর্তন এসেছে। ঋণের মেয়াদ আরও বর্ধিত করতে হবে। দ্রুত শেষ হয়ে যাবে প্রকল্পের বাকি কাজ। তাই ডিপিপি সংশোধন দরকার।

এদিকে সরকারের আরেকটি মেগা প্রজেক্ট দোহাজারি-কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্পেরও মেয়াদ ফুরিয়ে যাচ্ছে। বিগত সরকার ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চালু করলেও প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। এরই মধ্যে দুটি ট্রেন উদ্বোধন করা হয়েছে এ রুটে যাত্রী পরিবহনের জন্য; একটি কক্সবাজার এক্সপ্রেস, অন্যটি পর্যটক এক্সপ্রেস।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহযোগিতায় নির্মাণাধীন এই প্রকল্পের সময়সীমা চলতি বছর ৩০ সেপ্টেম্বর। এই সময়ের মধ্যে প্রকল্পের সকল ভৌত কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। ঠিকাদারের পক্ষ থেকে টেকিং ওভার সার্টিফিকেট নিতে হবে, যা নির্ভর করছে প্রকল্পের ডিপিপি সংশোধনের ওপর। চুক্তি অনুযায়ী প্রকৌশলী বা পরামর্শকের পক্ষ থেকে ঠিকাদারকে নির্দেশিত কাজের মূল্য পূর্ণাঙ্গভাবে পরিশোধ করতে প্রকল্পের ডিপিপি সংশোধন জরুরি। না হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আরবিট্রেশন কোর্টে অভিযোগ দিতে পারবে। এডিবির ঋণের মেয়াদ থাকাকালে আরবিট্রেশন নিষ্পত্তি না হলে পরবর্তী সময়ে রাজস্ব খাতে বিপুল খরচের আশঙ্কা রয়েছে। তাই চলতি বছর ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের অবশিষ্ট কাজ শেষ করতে না পারলে এডিবির অর্থায়ন অনিশ্চিত হতে পারে।

এরই মধ্যে আরডিপিপিতে প্রস্তাবিত নতুন আইটেম ও নতুন কাজের বিপরীতে প্রস্তাবিত ভেরিয়েশন এডিবির মাধ্যমে অনাপত্তি নেওয়া হয়েছে। তাই এ মুহূর্তে প্রকল্পের সংশোধন দরকার। এ প্রকল্পের প্রথম সংশোধিত ডিপিপি মূল্য ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এখন খরচ আরও কমবে। ডিপিপি মূল্য ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৩৫১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। তার মানে ৩৭.০৬ শতাংশ খরচ কমছে। কিন্তু প্রকল্পের সংশোধনের অনুমোদন নেওয়া এখন জরুরি কাজ।

এই বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. সুবক্তগীন বলেন, মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য উত্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আশা করি, প্রকল্পের ডিপিপি রিভাইজড হয়ে যাবে।

সূত্র মতে, বহু প্রতীক্ষিত দোহাজারি-কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধন হয়েছে ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর। ডিসেম্বরে এ রেলপথে বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে শুরু হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকার দোহাজারি-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি) ও বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি এবং চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) ও বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড দুই ভাগে কাজ করছে। এটি সরকারের অগ্রাধিকার (ফাস্ট ট্র্যাক) প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা