September 20, 2024, 10:15 am


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2024-08-18 17:31:00 BdST

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সংকটের নেপথ্যে আজিজুর-জাকিয়া সিন্ডিকেট


পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর জুড়ে দীর্ঘদিন যাবৎ দুর্নীতি, অনিয়ম ও নৈরাজ্য বিরাজ করে আসছে। বিশেষ করে অধিদপ্তরের মধ্যে একটি বিশেষ সিন্ডিকেট তাদের আধিপত্য বিস্তার করে আসার পর লাগামহীন দুর্নীতির কারনে আজ পুরো অধিদপ্তরে সেবার মান শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।

জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সেবা ও সংকটের পেছনে মূলত: একটি নির্দিষ্ট শক্তিশালী সিন্ডিকেট দায়ী। এই সিন্ডিকেটের মূল হোতা সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী র.আ.ম মোক্তাদীর চৌধুরীর নিকটাত্মীয় পরিচয় দানকারী লজিষ্টিক শাখার সাবেক পরিচালক জাকিয়া আক্তার। তিনি বর্তমানে পরিচালক (পরিকল্পনা) পদে দায়িত্বরত আছেন।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে যে কোন কেনাকাটা ও ঠিকাদার সিন্ডিকেটের তিনিই মূল হোতা। তার আপন ভাই সালমান এফ রহমানের কোম্পানীতে চাকুরীরত। সালমান এফ রহমানের কোম্পানি জয়েন্ট ভেঞ্চারের মাধ্যমে রেনেটা কোম্পানির সাথে যৌথভাবে টেন্ডারে অংশগ্রহণ করে। কিন্তু টেন্ডার প্রক্রিয়ায় ঐ কোম্পানী কাজ না পাওয়ায় টেন্ডারের সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান টেকনো ড্রাগসকে কাজ না দিয়ে পুরো টেন্ডার প্রক্রিয়া বাতিল করে দেয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা জাকিয়া আক্তার। পুরো বিষয়টি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায় কিন্তু আদালতের নির্দেশকেও অমান্য করে জাকিয়া আক্তার। আর তাকে মূল পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করে স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব আজিজুর রহমান। মূলত আজিজুর রহমানই জাকিয়া আক্তারকে দিয়ে টেন্ডার বাতিল করায়।

দেশে যখন পরিবার পরিকল্পনা সংকট চরম আকার ধারণ করে তখন অতি উচ্চমূল্যে পরিবার পরিকল্পনা সামগ্রী ক্রয়ে উদ্যোগী হয় আজিজুর রহমান ও জাকিয়া আক্তার সিন্ডিকেট।

এই বিষয় নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও আজিজুর রহমান বিশেষ কমিশন খাওয়ার আশায় আদালতের নির্দেশকেও তোয়াক্কা করেন না।

এরই মধ্যে দেশে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায় হলেও দুর্নীতিবাজ সচিব আজিজুর রহমান ও জাকিয়া আক্তার সিন্ডিকেট রয়েছে বহাল তবিয়তে।

শুধুই তাই নয়, ভোল পাল্টিয়ে এরা এখন বিএনপি জামায়াতের অনুসারী সাজার চেষ্টা করছে। এমনকি দুর্নীতির দায়ে যাদের প্রধান কার্যালয়ের বাইরে পোষ্টিং দেয়া হয়েছে তাদের পুনরায় প্রধান কার্যালয়ে পূর্ণবাসন করার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে জাকিয়া আক্তার সিন্ডিকেট।

এদিকে বৈষম্য নিরসনে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন ১৩ দফা দাবিতে রাজধানীর রাজপথে মিছিল সমাবেশ করেছে। এমন দাবী আদায়ে মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে। সচিবের দফতরে ঘেরাও করার কথাও জানা গেছে ।

১৩ দফা দাবি সমূহ নিম্ন রূপ

১। যোগ্যতা অর্জনের তারিখ থেকে ১৮ তম বিসিএস ও পরবর্তী ব্যাচ পর্যন্ত পদোন্নতির যোগ্য সকল কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষভাবে পদোন্নতি প্রদান করতে হবে। সিনিয়র স্কেল প্রাপ্তিতে সন্তোষজনক চাকুরি এবং ৫ বছরের সময়কাল সমাপ্তিতে সিনিয়র স্কেল প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে।

২। পরিচালক পদে যাদের পদোন্নতির ডিপিসি সম্পন্ন হয়েছে তার পূর্ণাঙ্গ জিও জারি করতে হবে। সহকারী পরিচালক থেকে উপপরিচালক এবং পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা থেকে সহকারী পরিচালক পদে অনতিবিলম্বে পদোন্নতি প্রদান করতে হবে ।

৩। ভূতাপেক্ষভাবে পদোন্নতি প্রদানের মাধ্যমে পরিবার পরিকল্পনা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ডিএস (উঝ) পুলে
অর্ন্তভুক্ত করতে হবে এবং মেধার ভিত্তিতে ডিএস (উঝ) পুলে পদোন্নতি প্রদান করতে হবে।

৪। জনসংখ্যা ও জনবলের উপর ভিত্তি করে উপজেলা হতে অধিদপ্তর পর্যায়ে ক্যাডারের ল্যান্ডার সামঞ্জস্যপূর্ণ করা এবং বিসিএস পরিবার পরিকল্পনা ক্যাডারে গ্রেড ও এবং গ্রেড ২ পদসহ অন্যান্য পদ সৃজন করতে হবে। জেলা, বিভাগ ও অধিদপ্তরে সামঞ্জস্যপূর্ণ সৃজন করা। মন্ত্রণালয়ে স্ব স্ব ক্যাডার অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।

৫। পদোন্নতিতে অযোগ্য না হওয়ার ক্ষেত্র ব্যাতিত সিনিয়রকে বাদ দিয়ে জুনিয়র কর্মকর্তাকে পদোন্নতি-পদায়ন করা যাবে না। এক্ষেত্রে, বিসিএস ব্যাচ ও মেধাক্রম অনুসরণ করতে হবে।

৬। বিসিএস (পরিবার পরিকল্পনা) ক্যাডারের পদে প্রশাসন ক্যাডার থেকে পদায়ন করা যাবে না।

৭। উপজেলা পর্যায়ে সম্পূর্ণ আলাদা দু'টি অফিস হওয়া সত্ত্বেও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা কর্তৃক 'স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পদবী ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রশাসনিক শৃংখলার স্বার্থে "স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পদ থেকে "পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা" অংশটুকু বাদ দিতে হবে।

৮। ৫ম গ্রেড ও তদনিম্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা /কর্মচারীদের বদলী, পদায়ন ও সংযুক্তি আদেশ মহাপরিচালক মহোদয় কর্তৃক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

৯। আর্থিক শৃংখলা আনয়ণের স্বার্থে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে একক ডিডিওশিপ নিশ্চিত করতে হবে;

১০। বিসিএস পরিবার পরিকল্পনা ক্যাডারের কর্মকর্তা এবং মাঠকর্মীদের মানোন্নয়ন ও প্রশিক্ষণের জন্য সম্পূর্ণ আবাসিক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

১১। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে বিরোধীতাকারী এবং স্বৈরাচারের দোসর কর্মকর্তাদের অনতিবিলম্বে অধিদপ্তর থেকে অপসারণ ও বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করতে হবে।

১২। মাঠ পর্যায়ে পরিবার কল্যাণ সহকারীদের বর্তমান প্রশাসনিক ওয়ার্ড অনুযায়ী পদ সৃষ্টি অর্থাৎ প্রতিটি ওয়ার্ডে ১টি করে প্রতি ইউনিয়নে ৯টি পরিবার কল্যাণ সহকারীর পদ সৃষ্টি করা।

১৩। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ১১-২০তম গ্রেডের নিয়োগবিধি চূড়ান্তকরণসহ পদোন্নতি নিশ্চিত করতে হবে।

বর্তমান সচিবের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে যারা মন্ত্রণালয় ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে পরিচালক পর্যায়ে আছে। এই সিন্ডিকেট পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর দখলে মরিয়া। এখনই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে অধিদপ্তর হারাবে তা সুনাম জনগণ বঞ্চিত হবে তাদের কাঙ্খিত সেবা থেকে।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা