September 20, 2024, 6:40 am


স্টাফ রিপোর্টার

Published:
2024-09-01 15:48:37 BdST

অধ্যক্ষের অপসারণ দাবিদুর্নীতি-স্বেচ্ছাচারিতায় ডুবছে পাঁচ কান্দি ডিগ্রি কলেজ


দুর্নীতি ও অনিয়মে ডুবছে নরসিংদীর মনোহরদী উপ-জেলার পাঁচ কান্দি ডিগ্রি কলেজ। প্রতিষ্ঠানটির প্রিন্সিপাল একে এম তোফাজ্জল হোসেনের স্বেচ্ছাচারিতা, বিভিন্ন খাতে অতিরিক্ত অর্থ আদায় এবং অর্থ তছরুপের ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছেন অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীরা। তাই অবিলম্বে দুর্নীতিবাজ ভাইস প্রিন্সিপাল কে অপসারণ করে বিচারের আওতায় আনার দাবি তাদের।
ভুক্তভোগী অভিভাবকরা জানান, প্রিন্সিপাল একে এম তোফাজ্জল হোসেনের দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, অদক্ষতায় রসাতলে যেতে বসেছে স্থানীয় ভাবে নামকরা এই ডিগ্রি কলেজ। পড়া শুনার মান ক্রম: নিম্নগামী হওয়ার পাশাপাশি চলছে ব্যপক দুর্নীতি।বিভিন্ন খাতে তিনি অভিনব সব দুনীতির জাল বিছিয়ে রেখেছেন।
যেমন, প্রিন্সিপাল তোফাজ্জল হোসেন ২০২৪-২৫ শিক্ষা বর্ষের শিক্ষার্থী এবং এর আগে ২০২৩-২৪ শিক্ষা বর্ষের শিক্ষার্থীদের ৬৫০ জন কে কলেজ ইউনিফর্ম দিয়েছেন। একেক টি ইউনিফর্ম থেকে ১ হাজার ৫০ টাকা করে আদায় করেছেন। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ইউনিফর্ম বাবদ বেশি টাকা আদায় করলেও ড্রেসের কাপড় দিয়েছেন অত্যন্ত নিম্নমানের ও কম দামি। এক্ষেত্রে তোফাজ্জল হোসেন ড্রেস প্রতি ৩শ’ টাকা করে অতিরিক্ত আদায় করেছেন। এভাবে তিনি এ খাত থেকে প্রায় ২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ইউনিফর্ম প্রদান সংক্রান্ত কোনো কমিটি নেই। ফলে এ দুর্নীতি প্রবণ এই খাতটি খতিয়ে দেখার ও কেউ নেই।
আরেক অমানবিক দুর্নীতির খাত প্রতিবছর ভর্তি বাণিজ্য। প্রথমত: আসন সংখ্যার চেয়ে দ্বিগুণ শিক্ষার্থী তিনি ভর্তি নেন। সাড়ে ৪শ’র মতো শিক্ষার্থী তিনি ভর্তি করান। পরবর্তীতে তিনি দু’য়েকটি সাবজেক্টে ‘অকৃতকার্য’ দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিল করেন। শিক্ষার্থীদের মানোন্নয়নের কোনো চেষ্টা না করে তাদের টিসি দিয়ে দেন। এর ফলে অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন ধ্বংস হয়ে যায়। অন্য দিকে ভর্তির সময় যে অর্থ আদায় করা হয়ে ছিলো প্রিন্সিপাল তোফাজ্জল সেই অর্থ আত্মসাৎ করেন।এতে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও নেমে যায় অর্ধেকে। ভর্তি সাড়ে ৪শ’ করলেও এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে ২ থেকে আড়াইশ’ শিক্ষার্থী। এতে শত ভাগ পাসের নিশ্চয়তা মেলে বটে, কিন্তু শিক্ষা জীবন নষ্ট হয় ভর্তি হওয়া বাকি অর্ধেক শিক্ষার্থীর। ‘শত ভাগ পাস’র নিশ্চয়তা দেয়ায় প্রন্সিপিালরে প্রতি সন্তুষ্ট থাকছেন কলেজের গভর্ণিং বডি। অথচ অত্যন্ত পরিকল্পিত ভাবে অন্তত: পঞ্চাশ ভাগ শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন ধ্বংস হয়ে গেলেও অমানবিক আচরণের জন্য গভর্ণিং বডির কাছে তাকে কোনো জবাব দিহিতা কিংবা শাস্তির মুখো মুখি হতে হয় না।
পাঁচ কান্দি ডিগ্রি কলেজ স্থানীয় ভাবে একটি আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছে। কিন্তু বর্তমান অধ্যক্ষ দায়িত্ব নেয়ার পর সইে সুনাম ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। নানা আর্থিক অনিয়ম আর দুর্নীতিতে ডুবতে বসেছে প্রতিষ্ঠানটি। কলেজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় বিভিন্ন পর্যায়ে একাধিক কমিটি রয়েছে। অথচ কলেজের আয়-ব্যয় ও আর্থিক বিষয়ে কোনো কমিটি করা হয় না।
দুর্বল শিক্ষার্থীদের রেগুলার ক্লাসে অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়া হয় না। তাদের কে এক্সট্রা কেয়ারের নাম করে পৃথক শ্রেণি কক্ষে বসিয়ে মানসিক শাস্তি ও অপমান করা হয়। দুর্বল শিক্ষার্থীদের পড়া ‘ দেয়া- নেয়া’র নাম করে আদায় করা হয় অতিরিক্ত ১ হাজার টাকা করে। ২০২২-২০২৩ ব্যাচের ২৯ পরীক্ষার্থী এবং ২০২৩-২০২৪ ব্যাচের ৪০ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১ হাজার টাকা অতিরিক্ত আদায় করা হয়। এখাত থেকে তোফাজ্জল হোসেন ৬৯ হাজার টাকা নিজের পকেটস্থ করেন।
ধূর্ত প্রকৃতির প্রিন্সিপ্যাল তোফাজ্জল হোসেন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে অর্ধেক সংখ্যক শিক্ষার্থীদের ‘দুর্বল’ আখ্যা দিয়ে কলেজ থেকে বের করে দিয়েই ক্ষান্ত হননা। অবশিষ্ট শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেও ‘দুর্বল শিক্ষার্থী’ আবিষ্কার করেন। ২০২৩-২০২৪ ব্যাচের ১০৫ শিক্ষার্থীকে তিনি ‘দুর্বল’ চিহ্নিত করেন। তাদের কে সকাল ৯টা থেকে ‘ইংরেজি কোচিং’ এর নাম করে প্রতি মাসে শিক্ষার্থী পিছু ২শ’ টাকা করে হাতিয়ে নেন। এর মধ্য থেকে সামান্য কিছু অর্থ ইংরেজী শিক্ষক ফারুক হোসেন ও মোহসীনা চৌধুরীকে দিয়ে পুরোটা আত্মসাৎ করেন নিজেই।এভাবে কলেজের বিভিন্ন খাত থেকে তিনি হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা। নামে- বেনামে করেছেন বিপুল সম্পদ।
শুধু শিক্ষার্থীদের ওপরই নয়-শিক্ষকদের ও পর চালাচ্ছেন বহুমাত্রিক নির্যাতন। কয়েজক শিক্ষককে তিনি নিজের হাতে রাখার জন্য তাদের সব ধরণের স্বেচ্ছাচারিতাকে প্রশ্রয় দেন। পক্ষান্তরে যারাই তার সিন্ডিকেটের সঙ্গে একাত্ম না হবে তাদের ওপর পরিচালনা করেন জুলুম। সাধারণ শিক্ষকদের প্রিন্সিপালের মুখাপেক্ষি করে রাখা, শিক্ষকদের মাঝে তুচ্ছ বিষয়ে মনোমালিন্য ও কোন্দল জিইয়ে রেখে তোফাজ্জল বিকৃতি আনন্দ লাভ করেন। একজন কে অন্যের পেছনে ‘ গোয়েন্দা’ লাগিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে পারষ্পরিক শ্রদ্ধাবোধের পরিবর্তে অনাস্থা, অবিশ্বাস ও ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে রাখেন।
শিক্ষকদের প্রতি অশ্লীল, অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহার করেন। তার দুর্ব্যবহারের কারণে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সদা তটস্থ থাকেন।
তোফাজ্জল হোসেন নানা ছুতোয় শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের ডেকে পাঠান। অভিভাবক অসুস্থ এমনকি হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও তাকে তার ডাকে সাড়া দিতে হয়। গার্ডিয়ান মিটিংয়ের নামে অভিভাবকদের অপমান-অপদস্ত করেন। কখনো প্রবল হিংস্রতা নিয়ে চেয়ার ছেড়ে তেড়ে এসে মারতেও উদ্যত হন।
অধ্যক্ষ একে এম তোফাজ্জল হোসেন আপাদমস্তক একজন দুর্নীতিবাজ শিক্ষক-এ কথা মনোহরদীতে সর্বজন বিদিত।কিন্তু তার রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তির ভয়ে কেউ মুখ খোলেন না। ধুরন্ধর তোফাজ্জলের প্রিন্সিপাল পদে আসীন হওয়ার মধ্যে ও রয়েছে বিশাল অনিয়ম ও দুর্নীতি। পাঁচ কান্দি ডিগ্রি কলেজে তিনি চাকরি নেন প্রভাষক হিসেবে। সেখান থেকে লবিং-গ্রুপিং ও দলাদলি করে উন্নীত হন ‘সহকারি অধ্যাপক’ পদে। সেখান থেকে স্থানীয় এমপি এবং সাবেক শিল্প মন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন কে ৫ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে ভাইস-প্রিন্সিপালের পদ বাগিয়ে নেন। এ চেয়ারের সে তিনি অধক্ষ্য মো: শহিদুজ্জামানের পিছু লাগেন। তার ভুল-ত্রুটি খুঁজতে থাকেন। তাকে অপসারণ করতে প্রিন্সিপাল কে নানা কৌশলে অপমান-অপদস্থ করতে থাকেন। মিথ্যা রটনা ছড়িয়ে শহিদুজ্জামান সম্পর্কে গভর্ণিং বডির চেয়ারম্যানের কান ভারি করেন। এভাবে তাকে বিতাড়িত করে প্রিন্সিপালের চেয়ার দখলে মরিয়া হয়ে ওঠেন তিনি। এক পর্যায়ে বাক পটু তোফাজ্জল গভর্ণিংবডির সভাপতির মন গলিয়ে ফেলেন। তাকে দিয়ে একটি পাতানো ‘নিয়োগ প্রক্রিয়া’র আয়োজন করে নিজেই বসে যান প্রিন্সিপালের চেয়ারে।
জানা গেছে, তোফাজ্জল হোসেনের নিয়োগ প্রক্রিয়াটি ছিলো অস্বচ্ছ ও দুর্নীতি ময়। পাঁচকান্দি ডিগি ্রকলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগে যথারীতি সার্কুলার হয় ঠিকই। সার্কুলার হলেও কোনো প্রার্থীকে আবেদন করতে দেননি। তোফাজ্জল ‘ডামি প্রার্থী’ হিসেবে চারটি কলেজের প্রিন্সিপালকে দিয়ে নিজেই আবেদন করায়। তারা নাম মাত্র ইন্টারভিউতে অংশ নেন। পরে হাতে হলুদ খাম ধরিয়ে দিয়ে তোফাজ্জল তাদের বিদায় করে দেন। এভাবে ‘উপযুক্ত কোনো প্রার্থী না পাওয়া’র প্রেক্ষাপট তৈরি করে তৎকালিন ভাইস প্রিন্সিপাল কূটকৌশলী তোফাজ্জল নিজের অধ্যক্ষ পদটি নিশ্চিত করেন।
পাঁচ কান্দি ডিগ্রি কলেজের গভর্ণিং বডির সভাপতি ছিলেন আব্দুল কাদের মোল্লা। কিন্তু অধ্যক্ষের ক্রমাগত দুর্নীতি,চাতুর্য এ অনিয়মের এ তথ্যগুলো তার কান অবধি পৌঁছায় না। ফলে তিনিও তার বিষয়ে কোনো অ্যাকশন নিতে পারছেন না।
ছাত্র-জনতার অভুত অভ্যুত্থানে স্বৈর সরকার বিদায় নিয়েছে। বর্তমান সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা সহ সকল পর্যায়ে শৃঙ্খলা-স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে-এমন প্রত্যাশা দেশবাসীর। এ প্রক্রিয়ায় পাঁচ কান্দি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ একে এম তোফাজ্জল হোসেনের দুর্নীতি উদঘাটন করে তাকে অপসারণ এবং বিচারের ব্যবস্থা করবেন-এমন আশা করছেন কলেজটির শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক গণ। নয়তো দুর্নীতিগ্রস্ত প্রিন্সিপালকে ঘিরে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের ক্ষোভ বিস্ফোরিত হতে পারে যে কোনো মুহূর্তে-এমন আশঙ্কা করছেন প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্টরা।
অভিযোগের ব্যাপারে প্রিন্সিপাল তোফাজ্জেল হোসেনের নিকট জানতে চাওয়া হলে তিনি দ্য ফিন্যান্স টুডেকে বলেন অভিযোগ সম্পূর্নরূপে মিথ্যা ও বনোয়াট। অধ্যক্ষ নিয়োগের ব্যাপারে তিনি বলেন বিধি মোতাবেক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পান্ন হয়েছে। কোন রকম অনিয়মের সুযোগ নাই।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা