নেহাল আহমেদ, কবি ও সাংবাদিক
Published:2025-03-08 14:34:34 BdST
আন্তর্জাতিক নারী দিবস
আজকাল কিছু কিশোর ও তরুণদের মধ্যে প্রচণ্ড নারীবিদ্বেষ দেখা যায়। ছেলেরা তো বটেই, এমনকি মেয়েদের মধ্যেও এটি বিদ্যমান। উন্মুক্ত মিডিয়ার যুগে বিশেষ করে ফেসবুকে একটা গ্রুপ বা গোষ্ঠী নারীদের ব্যাপারে ব্যাপক কুৎসা, গীবত এবং অপমানমূলক প্রচারনা চালাচ্ছে।
আমার মনে হয়, নারীবাদের ব্যাপারে ভুলভাল জানার কারণে, ‘নারীবাদী’ শব্দটা অনলাইনে এখন একটা গালি। নারী দিবসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সবার বাধ্যতামূলক অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমাদের তরুণদের নারীবাদ বিষয়ে সঠিক শিক্ষা দেয়া দরকার। স্কুল থেকে শিক্ষার ক্ষেত্রে নারীদের প্রয়োজন, ভূমিকা এবং তাদের প্রতি সম্মান বোধের শিক্ষা দেয়া জরুরী।
আমার মতে, প্রতিবছর নারী দিবসে ছেলে-মেয়ে সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেশের পুরুষদের মানসিকতার পরিবর্তন করে নারীর প্রতি সহিংসতা, অবমূল্যায়ন, ধর্ষণের মত ঘটনা কমিয়ে আনতে সাহায্য করবে।
কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের প্রতিবাদে এবং ন্যায়সংগত দাবি আদায়ে রাজপথে নেমেছিলেন নারী শ্রমিকেরা। এই শ্রম আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ পথপরিক্রমায় চালু হয় ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’।
বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে নারীর অধিকার, বিশেষ করে ভোটাধিকার প্রচারের প্রচেষ্টার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক নারী দিবস (IWD) পালিত হয়।
নারী ভোটাধিকারের প্রচারণায়, ১৯০৯ সালে আমেরিকার সমাজতান্ত্রিক দল প্রথম জাতীয় নারী দিবস, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে গণসমাবেশের মাধ্যমে বিশেষভাবে উদযাপন করা হয়েছিল; ১৯১৩ সাল পর্যন্ত এই দিনটি পালন করা হত। পরবর্তীতে জার্মান কর্মী দ্বারা উৎসাহিত হয়ে ১৯১০ সালে আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক কংগ্রেসের সভাপতি ক্লারা জেটকিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছুটির একটি আন্তর্জাতিক সংস্করণ তৈরি করতে সম্মত হন এবং ১৯ মার্চ, ১৯১১ তারিখে অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, জার্মানি এবং সুইজারল্যান্ডে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী দিবস অনুষ্ঠিত হয়। এই দিবস উপলক্ষে দশ লক্ষেরও বেশি মানুষ সমাবেশে অংশ নেয় । পরবর্তী বছরগুলিতে অন্যান্য দেশে এবং বিভিন্ন তারিখে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয়।
গত শতকের সত্তরের দশকের মাঝামাঝি দিবসটি জাতিসংঘের স্বীকৃতি পায়। এই স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ বিশ্বরূপ পায়।
যে সময়ে পৃথিবীর নারীরা বিশ্ব জয় করছে সেই সময়ে বাংলাদেশে নারীদের ঘরবন্দী করে রাখা, লেখাপড়ায় নিরুৎসাহিত করা এবং প্রতিবাদী নারীকে শারীরিক নির্যাতন করাকে আমরা আমাদের সংবিধান, আইন ও বিচার নিয়ে রাষ্ট্রকে প্রশ্নের সম্মুখীন করতে পারি।
শুধু ছবি তুলে ফেসবুকে দেয়া, বক্তৃতায় সভা সেমিনারে তালি পাওয়ার লোভে নয়; সমস্যা থেকে উক্তরনের উপায় বের করতে হবে। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দল গুলোর নারীর ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখতে হবে। শিল্প ও সাহিত্যকে দাস বানানোর মানসিকতা মানুষ দিয়ে উত্তরন সম্ভব নয়।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.