October 22, 2025, 4:50 pm


নিজস্ব প্রতিবেদক

Published:
2025-10-22 13:04:06 BdST

‘বাবা বিকল্প পথে আয় করতে জানতেন না বলে আজও ছোট্ট একটা বাড়ি হয়নি’


‘আমার বাবা যদি রাজনীতি না করে আইনজীবী হয়ে থাকতেন, তাহলে জীবনটা হয়তো অনেক আলাদা হতো। অন্তত নিজের একটা ছোট্ট বাড়ি বানাতে পারতেন। আমাদের বোনদের পড়ালেখার খরচ নির্বিঘ্নে চালাতে পারতেন। পরিবার নিয়ে একসঙ্গে থেকে স্বস্তির জীবন যাপন করতে পারতেন।’

এভাবেই নিজের আক্ষেপ আর গর্ব মিলিয়ে কথাগুলো বলেছেন টাঙ্গাইল-২ (ভূঞাপুর-গোপালপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম পিন্টুর ছোট মেয়ে ডা. সাফায়াত বিনতে সালাম।

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) রাতে নিজের ফেসবুকে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি বাবার সততা, ত্যাগ এবং নিজের জীবনের কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। পোস্টের কয়েকটি বাক্যে যেন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এক পরিবারের নীরব সংগ্রামের গল্প।

ডা. সাফায়াত লেখেন, "আমার বাবা যদি রাজনীতি না করে একটু আইনজীবী হয়ে থাকতেন, তাহলে জীবনটা হয়তো অনেক আলাদা হতো। আমি বিশ্বাস করি, তিনি ১৭ বছরের মধ্যে নিজের একটা ছোট্ট বাড়ি বানাতে পারতেন, আমাদের বোনদের পড়ালেখার খরচ নির্বিঘ্নে চালাতে পারতেন। পরিবার নিয়ে একসঙ্গে থেকে স্বস্তির জীবন যাপন করতে পারতেন। কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। যখন আব্বুর মন্ত্রিত্ব শেষ হলো, তখনও তাঁর নামে কোনো সম্পদ ছিল না। কারণ, কীভাবে একজন রাজনীতিক ‘বিকল্প পথে’ আয় করেন, সেটা তিনি জানতেন না, আজও জানেন না। তাই সারাজীবন কাজ করেছেন মানুষের পাশে থেকে, সম্মান নিয়ে, কিন্তু কখনও নিজের জন্য কিছু গড়তে পারেননি।"

নিজের জীবনের এক কঠিন অভিজ্ঞতার কথাও তুলে ধরেছেন তিনি- “জীবনে কোনো দিন তদবির করে চাকরি নেইনি। আমার জীবনের প্রথম চাকরিতে আমি নিজ যোগ্যতায় উত্তীর্ণ হয়েছিলাম, কিন্তু আমাকে চাকরিতে নেওয়া হয়নি, শুধু কারণ আমি সালাম পিন্টুর মেয়ে। তাদের ভাষায়- ‘ওকে নিলে প্রশ্ন উঠবে। এই মেয়ে যত ভালোই হোক, ওকে চাকরি দেওয়া যাবে না।’ তিনটি স্পেশাল বিসিএস গেছে, আমি একটাও দেইনি। কারণ, আমি জানি, আমার একটি আবেদন মানে আরেকজন প্রকৃত প্রার্থীর সিট নষ্ট করা। আমি অন্যের হক নষ্ট করতে পারি না, এটা আমার নীতির বাইরে।”

তবে রাজনীতি ও নৈতিকতার প্রশ্নে আত্মসমালোচনার জায়গাটিও তিনি স্পষ্ট করে লেখেন, ‘প্রশ্ন করি, আমাদের মতো মানুষ যারা অন্যায় সহ্য করতে পারে না, হকের প্রতি দায়বদ্ধ, তারা কেন রাজনীতিতে যাবে? যদি জানি, আমার তদবিরের কারণে কেউ হাসপাতালের বেড পাচ্ছে না, একজন যোগ্য ছেলে চাকরি পাচ্ছে না, একজন সৎ শিক্ষক তাঁর প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন—তাহলে আমি সেই জায়গায় থাকতে পারব না। এই রাজনীতি আমাদের জন্য নয়।’

শেষে তিনি সমাজ ও নেতৃত্ব নিয়ে গভীর বার্তা দিয়ে বলেন, “শুধু সরকার বা নেতা বদলালেই হবে না। আগে নিজেকে বদলাতে হবে। আল্লাহ বলেন—‘নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনও জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে।’ (সূরা রা’দ: ১৩:১১)। আমি শতবার বলেছি, আজ আবার বলছি—পরিবর্তন শুরু হোক নিজের ভেতর থেকে। অশিক্ষা, কুশিক্ষা যেন আমাদের মধ্যে ঢুকতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করুন। আপনার সন্তান যদি প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়, কেউ তাকে সহজে ঠকাতে পারবে না। আমাদের দেশে এখন সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে—নেতৃত্ব নয়, যোগ্য মানুষ তৈরি করা। যোগ্য নাগরিক ছাড়া কোনো যোগ্য নেতাও আসে না।”

ডা. সাফায়াতের হৃদয়স্পর্শী লেখাটি মুহূর্তের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ১৪ ঘণ্টার মধ্যে এটিতে প্রায় দেড় হাজার লাইক, ৬০টিরও বেশি শেয়ার এবং আড়াই শতাধিক মন্তব্য এসেছে। বেশিরভাগই তাকে ‘যোগ্য নেতার যোগ্য কন্যা’ হিসেবে অভিব্যক্তি দিয়েছেন।

সৌরভ তালুকদার নামে এক অনুসারী লিখেছেন, ‘আপু, আমাদের স্যার-এর নিজের কোনো বাড়ি-গাড়ি নেই, কিন্তু আল্লাহর রহমতে গোপালপুর-ভূঞাপুর তথা টাঙ্গাইলের প্রতিটি বাড়িই তাঁর জন্য নিজের বাড়ি। তিনি মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন। দুনিয়ার জমি না থাকলেও মানুষের মনের জমিতে জায়গা করে নিয়েছেন। এটা কয়জন পারে বলেন!’

নাজমুল ইসলাম নামে আরেকজন লিখেছেন, ‘টাঙ্গাইল-২ আসনের গরিব-দুঃখী মানুষের জননেতা আব্দুস সালাম পিন্টু। যদি বাংলাদেশের প্রতিটি আসনে এমন নেতা থাকত, তাহলে দেশ হতো সোনার বাংলা।’

রুবেল হাওলাদার নামে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘সিরাজগঞ্জ থেকে যখন নানার বাড়ি যাই, তখন থেকেই শুনি ‘এটা সালাম পিন্টু বা টুকু সাহেবের বাড়ি’। কথায় কথায় ওটা মন্ত্রী বাড়ি হিসেবে চিনতাম। এখন ২৫ বছর পেরিয়ে গেছে, বাড়িটার কোনো পরিবর্তন হয়নি। একটা ভালো নেতার বৈশিষ্ট্য আর কী হতে পারে আমার জানা নেই।’

মেয়ের এমন আবেগঘন লেখায় গর্বিত হয়েছেন তাঁর মা বিলকিস সালামও। মন্তব্যে তিনি লেখেন, ‘আমি তোমার জন্য গর্বিত, আমার সোনার মেয়ে। আল্লাহ তোমাকে পৃথিবীতেও এবং জান্নাতেও সর্বোচ্চ সম্মানের স্থানে আসীন করুন। তুমি সুখী হও, মানুষের সেবা করো- তোমার বাবার মতো, যিনি একনিষ্ঠ দেশপ্রেমিক।’

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.