বিশেষ প্রতিবেদক
Published:2025-10-31 00:28:31 BdST
আদর্শের প্রশ্নে পরিবার-বিচ্ছিন্নবাবার নীতিতে অবিচল থেকেই আওয়ামী লীগে মুবিন
রাজনৈতিক আদর্শ ও নৈতিকতার প্রশ্নে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কঠিন সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক আবেগঘন বার্তা দিয়েছেন এডভোকেট ফয়জল করিম মুবিন।
তিনি দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেছেন, দেশের সর্বোচ্চ আদর্শিক অবস্থান (মুজিবীয়, ৭১, ধর্মনিরপেক্ষতা) রক্ষার জন্যই তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার ছায়াতলে এসেছেন।
এদিকে, নিজের এমন সিদ্ধান্তে পরিবার প্রধানের নীতিগত বিরোধিতার কারণে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়া সত্ত্বেও এডভোকেট মুবিন তার অভিভাবক ও মুরুব্বিদের এই 'আপোষহীন মনোভাব' এর জন্য নিজেকে 'গর্বিত' বলে উল্লেখ করেছেন।
বুধবার এডভোকেট ফয়জল করিম মুবিন ফেসবুক স্ট্যাটাসে এক আবেগঘন বার্তায় নিজ পরিবার এবং নিজের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে এক বিশদ ব্যাখ্যা প্রদান করেন।
নৈতিকতার প্রশ্নে আপোষ নয়, উপাধি উত্তম
স্ট্যাটাসের শুরুতেই মুবিন নিজের অবস্থানকে অত্যন্ত জোরালোভাবে তুলে ধরেন। তিনি নিজেকে "শান্ত, স্থির, জীবন, সম্পদ, মানব বিপন্ন হলেই মেহেদী, নজরুল এর রুদ্র বা কল্কি" হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
পরিবার তাকে 'পাগল', 'মাথা খারাপ' বা 'চরিত্রহীন' বলে দূরে সরিয়ে দিলেও মুবিন তাতে আনন্দিত। তার মতে, "দেশের টাকা লুট, পর ধন সম্পদ, হামলা, মামলা, খুন, গুমের থেকে ঐসব উপাধি মহা উত্তম।"
তবে তিনি স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন যে, কোন অন্যায় বা বেআইনি কাজ বা জীবন-সম্পদের উপর হামলা হলে তিনি "নৃশংস, উন্মাদ, খোদার আরশ ছেদিয়া" প্রতিবাদ করবেন।
আদর্শের নীড়: কেন আওয়ামী লীগে?
এডভোকেট মুবিন জানান, দেশ ও জাতির প্রয়োজনে তাঁকে 'মুজিবীয়', 'নৌকা' ও 'শেখ হাসিনার' আদর্শিক ধারায় আসতে হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আদর্শিকভাবে 'একাত্তর ও ধর্মনিরপেক্ষতা'র এর প্রশ্নে সবারই ঐক্যমত থাকা উচিৎ৷ নয়তো বিপন্ন হবে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই রাষ্ট্রের স্বাধীনতা।
তিনি বলেন, "দেশ ও জাতির প্রয়োজন আমাকে মুজিবীয়, নৌকা, শেখ হাসিনায় নিয়ে এসেছে। এরচেয়ে আদর্শিক ৭১, ধর্মনিরপেক্ষ জায়গা দেশের রাজনীতিতে আর কোথাও নেই। থাকলে সেখানেই যেতাম।"
পারিবারিক সম্পর্কচ্ছেদ ও গর্বিত স্বীকারোক্তি
এই রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে যে নিজের পরিবার তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে, সেই বিষয়টি তিনি অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় তুলে ধরেছেন উক্ত স্ট্যাটাসে। এমনকি আপন বা বৈমাত্রেয় ভাই-বোন পর্যন্ত সম্পর্ক ছেদ করেছেন।
এই সম্পর্কচ্ছেদের সিদ্ধান্তকে মুবিন শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন: "আমি জানি আপনারা সব সম্পর্ক ছেদ করেছেন শুধুমাত্র নীতির প্রশ্নে অবিচল থেকে। আপন ভাই হোক আর বৈমাত্র ভাই বোনই হোক; তারা সবাই আমার মুরুব্বি। আমি অবনতে মস্তকে শ্রদ্ধাভরে স্বীকার করলাম, আপনাদের এই সিদ্ধান্ত। এমন একটি আদর্শিক পরিবারের সন্তান ছিলাম বলে নিজেকে গর্বিত মনে করছি।"
উল্লেখ্য যে, মুবিনের পিতা প্রয়াত ডা. আবু আহমদ ফজলুল করিম কিশোরগঞ্জ সদর আসনের বিএনপি নেতা ও সংসদ সদস্য ছিলেন। ফজলুল করিম বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সরকারে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সততার সাথে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
আবেগঘন এই বার্তায় মুবিন তার পিতা মরহুম ডা: ফজলুল করিমকে স্মরণ করে বলেন যে, বাবা একজন আদর্শিক মানুষ ছিলেন এবং তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও পিতার গড়া দলের প্রতি আদর্শিকভাবে দায়বদ্ধ।
তবে তিনি দৃঢ়ভাবে বলেছেন যে, তিনি পিতার সেই পুত্র যে কিনা আদর্শিক বলে যা বিশ্বাস করেন, তাতেই অবিচল থেকে মৃত্যু কামনা করেন।
যদিও তার মা প্রকাশ্যে নিজ সন্তানের এমন সিদ্ধান্তে সমর্থন জানাতে অজ্ঞ, তবে মুবিনের বিশ্বাস, "মা আমি জানি তুমি মনে মনে আমার সাথেই আছো, তোমার দোয়াই আমার চলার পথে পাথেয়।"
দলীয় মূল্যায়ন নিয়ে নির্লিপ্ততা
এডভোকেট মুবিন স্পষ্ট করে বলেন, তার এই সংগ্রাম কোনো ব্যক্তি বা পতাকার জন্য নয় বরং আদর্শের জন্য। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতি দায়বদ্ধ হলেও দল যদি তাঁকে মূল্যায়ন না করে বা বের করে দেয়, তাতেও তার কোনো আক্ষেপ থাকবে না।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, একদিন না একদিন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বা সেই আদর্শিক নীড় তাকে মূল্যায়ন করবেই। তাঁর চূড়ান্ত দায়বদ্ধতা দেশ ও জাতির প্রতি, আদর্শের প্রতি।
স্ট্যাটাসের শেষে মুবিন জানান, কারো গালিতে তিনি কষ্ট পান না, কারো অভিনন্দন তাঁকে পুলকিত করে না এবং কোনো কিছুই তাকে তার আদর্শিক পথ থেকে বিচ্যুত কররে পারবে না।
(ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে সংগৃহীত)
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.
