September 23, 2024, 9:22 pm


বিশেষ সংবাদদাতা

Published:
2022-10-06 03:26:57 BdST

প্রমাণ পেলেও মামলা করে না দুদক পেট্টোবাংলার ‘ক্যান্সার’ আইয়ুব খান চৌধুরী


পেট্টোবাংলার ‘ক্যান্সার‘খ্যাত অবসরে যাওয়া পরিচালক (পরিকল্পনা) আইয়ুব খান চৌধুরীর বিরুদ্ধে কখনোই মামলা করে না দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিভিন্ন সময় করা অনুসন্ধানে তিনি এবং তার দুর্নীতির দোসরদের বিরুদ্ধে অকাট্য প্রমাণ হাতে পায় সংস্থাটি। কিন্তু রহস্যজনক কারণে কখনোই তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে না। দিয়ে দেয়া হয় দায়মুক্তি। মামলার পক্ষে অনুসন্ধান কর্মকর্তাদের জোর সুপারিশ থাকলেও নানা ‘কয়েরি‘ দিয়ে, কখনও বা আইও পরিবর্তন করে উল্টে দেয়া হয় সুপারিশ। সেই সঙ্গে মামলার সুপারিশকারী দুদক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নেয়া হয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। কিন্তু দুর্নীতি বিরোধী একমাত্র রাষ্ট্রীয় সংস্থা দুদক‘র কেন এই আচরণ ? কেনই বা দুদক আইয়ুব খান চৌধুরীর প্রতি এতোটা দুর্বল ? কি সেই রহস্য ? ‘দি ফিন্যান্স টু-ডে‘র দীর্ঘ অনুসন্ধানে উন্মোচিত হয়েছে সেই রহস্য।
পেট্টোবাংলার ক্যান্সার আইযুব খান চৌধুরী : বর্তমান জ্বালানি সঙ্কটের জন্য দায়ী পেট্টোবাংলার ততকালিন পরিচালক (পরিকল্পনা) আইয়ুব খান চৌধুরী। তার দুর্নীতি,স্বজনপ্রীতি এবং পরিকল্পনার অভাবেই আজকের এই সঙ্কট। এ মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সালেক সূফী। সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরকালে ফিন্যান্স টুডে‘কে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন,ভবিষ্যত জ্বালানি নিরাপত্তার কথা ভাবার দায়িত্ব ছিলো আইয়ুব খান চৌধুরীর। কিন্তু তিনি ব্যস্ত ছিলেন লুটপাট আর নিজের আখের গোছাতে। বাপেক্সকে তিনি কাজ করতে দেননি। ব্যক্তিগত দুর্নীতির পাশাপাশি তিনি ছিলেন চাইনিজ স্বার্থ রক্ষায় নিয়োজিত। পেট্টোবাংলার অধীনস্থ ১৩টি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদ থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে বসিয়ে রেখেছেন নিজের অনুগতদের। তাদের মাধ্যমে তিতাস ও কর্ণফুলির গ্যাসের হাজার হাজার অবৈধ বাণিজ্যিক সংযোগ দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন শত শত কোটি টাকা। এছাড়া কর্ণফুলি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি:র ভবন নির্মাণের জন্য জমি ক্রয়ে অর্থ আত্মসাত,ক্ষমতার অপব্যবহার এবং জালিয়াতির মাধ্যমে নিজের দ্ইু ছেলেকে পেট্টোবাংলায় চাকরি প্রদান, নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমেও হাতিয়েছেন অর্থ। এমন সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইয়ুব খান চৌধুরী এবং তার দুর্নীতিতে সহায়ক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে একাধিক মামলার সুপারিশ আসে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে সংস্থাটি তার বিরুদ্ধে কখনও কোনো মামলা করে নি। শুনেছি, সংস্থাটির ভেতর তার অনেক শুভাকাঙ্খি রয়েছেন। তারাই প্রতিবার তাকে দায়মুক্তির ব্যবস্থা করেন। শুনেছি,অনেক কাজের কাজী এই দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিটি গত বছর অবসরে গেছেন। কিন্তু অবসরে গিয়েও পেট্টোবাংলায় বসিয়ে যাওয়া নিজস্ব কর্মকর্তাদের দিয়ে প্রভাব ও দুর্নীতি অব্যাহত রেখেছেন। এখনও পেট্টোবাংলা চলে বিতর্কিত পরিচালক (পরিকল্পনা) আইয়ুব খান চৌধুরীর অঙ্গুলি হেলনে। অধীনস্থ ১৩টি প্রতিষ্ঠানের রন্ধ্রে রন্ধ্রে রয়েছে তার প্রভাব। বাপেক্সসহ গুরুত্বপূর্ণ টেবিলগুলো এখনও তার পদানত। বর্তমান বিদ্যুত ও জ্বালানি সঙ্কট,অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণ তিনিই সৃষ্টি করে গেছেন। আমার এ বক্তব্যের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত অনেক কর্মকর্তাই একমত হবেন। আইয়ুব খান পরিচালক, পরিকল্পনার দায়িত্বে থাকলেও পেট্টোবাংলা চলছিলো তার অপরিণামদর্শী নেতৃত্বে। যার মূল্য দিতে হচ্ছে এখন গোটা জাতিকে।
কে এই আইয়ুব খান চৌধুরী ? : ১৯৯১ সালে বয়স জালিয়াতির মাধ্যমে পেট্টোবাংলার সহকারি ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) হিসেবে নিয়োগ নেন আইয়ুব খান চৌধুরী। সেখান থেকে ডেপুটি ম্যানেজার,ম্যানেজার, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর, জেনারেল ম্যানাজার, সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার (অ্যাডমিন),কর্ণফুলি গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লি:র এমডি এবং সর্বশেষ পেট্টোবাংলার পরিচালক (প্ল্যানিং) পদে উন্নীত হন। অবসর-পূর্ব ছুটিতে যান ২০২১ সালের ৪ আগস্ট পেট্টোবাংলার পরিচালক (পরিকল্পনা) হিসেবে। ৩০ বছরের কর্মজীবনের পুরোটাই বিতর্কময়। বয়স জালিয়াতি করে তিনি শুধু নিজের নিয়োগই বাগিয়ে নেন নি, একই কায়দায় চাকরি দেন নিজ পুত্র আশেকউল্লাহ চৌধুরী এবং মহিউদ্দিন চৌধুরীকে।
আইয়ুব খান চৌধুরী ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের মামলায় নিজে কারাভোগ করেন। ফৌজদারি মামলার আসামি হওয়া সত্তে¡ও বয়স লুকিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে পেট্টোবাংলায় চাকরি নেন। তিনি একজন জটিল,কুটিল,ধূর্ত প্রকৃতির মানুষ। বেশিরভাগ সময় প্রশাসন ডেস্কে থাকায় সবার প্রোফাইল তার কাছে রয়েছে। এ কারণে তিনি জানতে কবে কোন কর্মকর্তা পদোন্নতি পাবেন, কে কবে অবসরে যাবেন। তাদেরকে সুপারসিড করে কিভাবে শীর্ষ চেয়ারটিতে বসবেন-এই ছিলো তার ধ্যান-জ্ঞান। তিনি ব্যক্তিগতভাবে একটি অফিস মেন্টেইন করেন। সেখানে তিনি তার ষড়যন্ত্র সংশ্লিষ্ট বিশেষ ফাইলগুলো কঠোর গোপনীয়তা সংরক্ষণ করেন। চাকরির প্রথম দিন থেকে শুরু করে চাকরির শেষ দিন পর্যন্ত প্রতিটি কাগজ তার কাছে রয়েছে। তিনি এতোটাই প্রতিশোধপরায়ণ ছিলেন যে, তার উত্থানের পথে যাকেই তিনি হুমকি মনে করতেন তার বিরুদ্ধেই বেনামী চিঠি দিয়ে তদন্তের ফাইল বানাতেন। এমন ব্যক্তিকে তদন্তের দায়িত্ব দিতেন যিনি কথিত অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে অপছন্দ করেন। স্বভাবতই তদন্তকারী কর্মকর্তা মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতেই অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করে প্রতিবেদন দিতেন। এতে পরিষ্কার হয়ে যেতো তার উত্থানে পথের কাঁটা। বেনামী উড়ো চিঠি দিয়ে আইয়ুব খান এভাবে পেট্টোবাংলার বহু কর্মকর্তার ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দিয়েছেন। অনেককে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করেছেন। অনেককে করেছেন বরখাস্ত। কারাভোগও করেছেন কেউ কেউ। তার প্রতিহিংসা শিকার হয়েছেন প্রকৌশলী মো:আতিকুজ্জামান,বাপেক্স’র এমডি মীর আব্দুল হান্নান,রূহুল চৌধুরী, মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্পের এমডি প্রকৌশলী মো:ফজলুর রহমান,তিতাসের আলী নূর মো: মামুন।
তার দায়িত্বপালনকালে পেট্টোবাংলার প্রায় সবগুলো নিয়োগে তিনি জালিয়াতির আশ্রয় নেন। তার আগে নিয়োগপ্রাপ্ত অনেক সিনিয়র কর্মকর্তাকে নানা কৌশলে দমন করে নিজের পদোন্নতির পথ পরিষ্কার করেন। যে কারণে তার সিনিয়র অনেক কর্মকর্তা ম্যানেজার কিংবা ডিএমডি হয়ে পড়ে থাকলেও তর তর করে উঠে যান পরিচালক (প্ল্যানিং)র মতো পদে।
পেট্টোবাংলার নিয়ন্ত্রণ এখনও আইয়ুব খান চৌধুরির হাতে :

কর্ণফুলি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি: (কেজিডিসিএল)র ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকাকালে প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়োগ বাণিজ্য এবং জমি ক্রয় বাবদ হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। কর্ণফুলিকে বর্তমানে শাসন করছেন আইয়ুব খান চৌধুরীরই বসিয়ে যাওয়া কর্মকর্তারা। তিনি নিজে অবসরে গেলেও কর্ণফুলির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম.এ.মাজেদ তার কথায়ই উঠ-বস করেন। আইয়ুব খান কর্ণফুলি থেকে এখনও নিয়মিত মাসোহারা পাচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানটি এখনও তার পদানত। কর্ণফুলির আমিনুর রহমান, ফিরোজ খান এবং প্রকৌশলী মো: শফিউল আজম খান তার আইয়ুবের কালেক্টর এবং ট্রেজারার হিসেবে কাজ করছেন। বিপণন দক্ষিণ ডিভিশনের মহা-ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আমিনুর রহমান,ফিরোজ খান একাধারে কর্ণফুলির মহা-ব্যবস্থাপক এবং কোম্পানি সেক্রেটারি। শফিউল আজম প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক (বিপণন,উত্তর ডিভিশন)। তাদের মাধ্যমে আইয়ুব খান আবুল খায়ের গ্রæপসহ চট্টগ্রামের ব্হু বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ প্রদান এবং মিটার টেম্পারিংয়ের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। শিল্পপ্রতিষ্ঠানে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে তিনি বড় বড় শিল্পপতি এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন। তাদেরকে তিনি প্রতিপক্ষ দমনে ব্যবহার করেন। আর এসব কাজে ‘দালাল’ এবং ‘কালেক্টর’ হিসেবে কাজ করেন আমিনুর রহমান। কর্ণফুলির ডেপুটি ম্যানেজার (ডিপ্লোমা প্রকৌশলী) মোর্শেদুল ইসলাম আইয়ুব খান চৌধুরীর সঙ্গে থাকেন অনেকটা দেহরক্ষীর মতো। তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করে মামলার সুপারিশ করা হলেও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সেটি ধামাচাপা দেয়।
বাংলাদেশ পেট্টোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স)র বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী একজন ডিপ্লোমা প্রকৌশলী। মীর আব্দুল হান্নানকে সরিয়ে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে তাকে বাপেক্সে বসান আইয়ূব খান চৌধুরী। কিন্তু লেনদেনের হিসাব-নিকাশে ঝামেলা হওয়ায় এখন কেউ কারও নামও শুনতে পারেন না। দুর্নীতিবাজ মোহাম্মদ আলী এখন বাপেক্স নিয়ন্ত্রণ করছেন।
সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লি:’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক তোফায়েল আহমেদ আইয়ুব খান চৌধুরীর আজ্ঞাবহ লোক। এখান থেকেও তিনি নিয়মিত পাচ্ছেন মাসোহারা।
গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লি: (জিটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী রুখসানা নাজমা ইছহাক একবার আইয়ুব খান চৌধুরীর নামে রিপোর্ট করেন। সেটির ওপর তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়। ওই রিপোর্টের প্রেক্ষিতে পেট্টোবাংলার বর্তমান চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) নাজমুল আহসান আইয়ুব খান চৌধুরীর বিষয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে তার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিতে উদ্যত হন। কিন্তু চট্টগ্রাম থেকে ঘুরে এসে রহস্যজনক কারণে তিনি নমনীয় হয়ে যান। ফলে মহাদুর্নীতিবাজ আইয়ুব খান শাস্তি পাওয়াতো দূরে থাক,সসম্মানে অবসরে যান।
মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু দাউদ মুহম্মদ ফরিদুজ্জামানের সঙ্গে আইয়ুব খান চৌধুরীর সঙ্গে হট কানেকশন। তিনি আইয়ুব খানের বুদ্ধিতে চলেন। তবে তার বুদ্ধিতে যারাই চলেছেন তারা প্রত্যেকেই পরে বিপদে পড়েছেন। আইয়ুব খান যখন যাকে প্রয়োজন তাকে ব্যবহার করেন। পরে ব্যবহৃত টিস্যুর মতো ছুঁড়ে ফেলে দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর হোসেন মনসুরকে সামনে রেখে নিয়োগ বাণিজ্যসহ ফায়দা লোটেন আইয়ুব খান। এতে হোসেন মনসুরের গায়ে দুর্নীতির তকমা লাগলেও আইয়ুব খান থেকে যান ধোয়া তুলসি পাতা। মাঝে মেধাবী প্রকৌশলী তিতাসের তৎকালিন এমডি নওশাদ ইসলাম এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা করান। নওশাদের বিরুদ্ধে দুদকে একের পর এক বেনামী অভিযোগ দিতেন আইয়ুব খান। ফলে নওশাদ ইসলাম যতদিন তিতাসের এমডি ছিলেন ততোদিন দুদকের হয়রানির কারণে শান্তিতে কাজ করতে পারেন নি। তার বিরুদ্ধে দুদকে একযোগে ৭টি তদন্ত পরিচালনা করান তিনি। হোসেন মনসুরের মেয়ের বিয়েতে আইয়ুব খান চৌধুরী আগা- গোড়া থেকে ফুটফরমায়েশ খাটেন। মোটা অংকের গিফটও দেন। এভাবে তিনি আস্থা অর্জন করলেও হোসেন মনসুর অবসরে যাওয়ার পর আইয়ুব খান চৌধুরী তার ফোনটিও রিসিভ করতেন না। এভাবে তিনি প্রয়োজনে মানুষকে ব্যবহার করেন। প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে তাকে ছুঁড়ে ফেলে দেন। নিজের প্রয়োজনে তিনি এভাবে বহু মানুষকে যেমন ব্যবহার করেছেন,তেমনি তার বশ্যতা স্বীকার না করা বহু মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে দিয়েছেন।
নিজের ফায়দা লুটতে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তিনি বø্যাকমেইল করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। পেট্টোবাংলার বর্তমান চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিত্ব। তিনি যোগদানের পর আইয়ুব খান চৌধুরীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উদ্যত হন। বিষয়টি টের পেয়ে যান ধূর্ত আইয়ুব খান চৌধুরী। অনেক ব্যস্ততার মধ্যে নাজমুল আহসান একদিন ছুটে যান চট্টগ্রাম। সেখানে ওঠেন হোটেল রেডিসনে। তার সঙ্গে সাক্ষাত করেন আইয়ুব খান চৌধুরী এবং কর্নফুলি গ্যাসের এক কর্মকর্তা। সেখান থেকে ফিরে পেট্টোবাংলার চেয়ারম্যান আইয়ুব খান চৌধুরী ইস্যুতে চুপসে যান। ব্যবস্থা নেয়ার পরিবর্তে তার প্রশংসা শুরু করেন। সামনে পদোন্নতি। অতিরিক্ত সচিব থেকে সচিব হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে নাজমুল আহসানের। ধারণা করা হয়,আইয়ুব খান চৌধুরী নাজমুল আহসানকে কোনোকিছু দিয়ে বø্যাকমেইল করেছেন।
বিদ্যুৎ,জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে রয়েছে আইয়ুব খানের শক্তিশালী সিন্ডিকেট। যে দেবতা যাতে তুষ্ট তাকে সেই ‘ভোগ’ দিয়ে বশে আনতে পারদর্শী আইয়ুব খান। অর্থ,নারী,উপঢৌকন-যাতে যিনি তুষ্ট সেই কর্মকর্তাকে তিনি তাই দিতেন। ফায়দা হাসিলে তেল মারতেন মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতনদের। কারওবা বাসার বাজার করে দিতেন। পেট্টোবাংলার অধীনস্থ বিভিন্ন কোম্পানির কর্মকর্তাদের আদেশ দিতেন তার কর্মক্ষেত্র এলাকায় তাজা মাছ,তরি-তরকারি,ফল,দুধ,মুরগি,ডিম ঢাকায় পাঠাতেন। এর সামান্যই তিনি নিজে ভোগ করতেন। অধিকাংশ পাঠিয়ে দিতেন উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বাসায়। অনেকের ছেলে-মেয়ের বিয়েতে তিনি দামী গিফট দিতেন। পেট্টোবাংলার পক্ষ থেকে সরকারি খরচে দিতেন বিদেশ ট্যুরের সুযোগ। তবে মন্ত্রণালয়ের তৎকালিন সিনিয় সচিব আবু হেনা মো: রহমাতুল মুনিমকে তিনি কোনো প্রলোভনেই বশে আনতে পারেন নি। তাই তার বিরুদ্ধে আইয়ুব খান বেছে নেন নোংরা ষড়যন্ত্রের পথ। যদিও কোনো ষড়যন্ত্রই শেষ পর্যন্ত কাজে আসেনি। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের থাকাকালে একজন সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তা আইয়ুব খান চৌধুরীর দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করেছিলেন। এ কারণে তার বিরুদ্ধেও অনেক উড়োচিঠি মারেন আইয়ুব।
ইচ্ছে মতো ব্যবহার করেন দুদককে : কাউকে আইয়ুব খান হুমকি মনে করলে তার বিরুদ্ধেই পেট্টোবাংলার চেয়ারম্যান,মন্ত্রণালয় এবং দুদকে বেনামী চিঠি দিয়ে তদন্তের নামে হয়রানি করেন। এ কারণে প্রাপ্যতা সত্তে¡ও তাদের পদোন্নতি এবং এক্সটেনশন হয়নি। কাউকে কাউকে বিভাগীয় শাস্তি দেখিয়ে পদাবণিতও (ডিমোশন) দিয়েছেন। তার কথা না শোনায় আমির হামজাকে ডিমোশন দেন। পিডি আবু সালেহকে পদাবণতি দেন।
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৭২৭.৯৯ টন কয়লা ‘উধাও’ হয়ে যাওয়ার গল্পও ফাঁদেন আইয়ুব খান চৌধুরী। ২০০৬ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই পর্যন্ত ১ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৪ মেট্টিক টন কয়লা কথিত ‘চুরি যাওয়া’র গল্পের অবতারণা,মামলা এবং জেল খাটানোর ঘটনা সফলভাবে সম্পাদিত হয় আইয়ুব খান চৌধুরীর সাজানো ছকে।স্বাভাবিক সিস্টেম লসকে তিনি ‘চুরি’ দেখিয়ে বিষয়টি প্রথমে কৌশলে মিডিয়ায় আনেন তিনি।পরে প্রতিষ্ঠানটিতে তার অনুগত ম্যানেজার (প্রশাসন) মোহাম্মদ আনিছুর রহমানকে দিয়ে মামলা করান। মামলাটি তদন্ত করে দুর্নীতি দমন কমিশন। তদন্তের নামে বড়পুকুরিয়ার সাবেক ৬ এমডিসহ ২৩ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় ২০২১ সালের ১২ জানুয়ারিতে কারাগারে যান প্রতিষ্ঠানটির সাবেক এমডি মো:আব্দুল আজিজ খান,প্রকৌশলী খুরশিদ আলম,প্রকৌশলী কামরুজ্জামান, মো: আমিনুজ্জামান,প্রকৌশলী এসএম নুরুল আওরঙ্গজেব ও প্রকৌশলী হাবিব উদ্দীন আহমেদ। এছাড়া সাবেক মহাব্যবস্থাপক (জিএম) শরিফুল আলম,মো: আবুল কাশেম প্রধানিয়া, আবু তাহের মো: নুরুজ্জামান চৌধুরী,ব্যবস্থাপক মাসুদুর রহমান হাওলাদার,মো: আরিফুর রহমান ও সৈয়দ ইমাম হাসান,উপ-ব্যবস্থাপক মো: খলিলুর রহমান, মো: মোর্শেদুজ্জামান, মো: হাবিবুর রহমান, মো: জাহিদুর রহমান,সহকারী ব্যবস্থাপক সত্যেন্দ্র নাথ বর্মন,মো: মনিরুজ্জামান,কোল হ্যান্ডেলিং ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপক মো: সোহেবুর রহমান,উপ-মহাব্যবস্থাপক এ কে এম খাদেমুল ইসলাম,ব্যবস্থাপক অশোক কুমার হাওলাদার ও উপ-মহাব্যবস্থাপক মো: জোবায়ের আলী। মামলাটির চার্জশিট দাখিল হওয়ার পর প্রচন্ড মানসিক চাপে বড়পুকুরিয়ার সাবেক এমডি মাহবুবুর রহমান মারা যান।
যাদেরকে এ মামলার আসামি করা হয়েছে তাদের অধিকাংশই ছিলেন সৎ। শুধুমাত্র আইয়ুব খান চৌধুরীর কোপানলে পড়ে আসামি হয়েছেন তারা। অথচ যার হাত দিয়ে বড়পুকুরিয়া প্রকল্পের অর্থ খরচ হয়েছে,যিনি বিল পেমেন্ট করেছেন সেই আব্দুল মান্নান পাটোয়ারিকে স্পর্শও করা হয়নি। মান্নান পাটোয়ারি ছিলেন বড়পুকুরিয়ার তৎকালিন মহাব্যবস্থাপক (অর্থ ও হিসাব)র দায়িত্বে। তাকে না জড়ানোর কারণ হলো তিনি ছিলেন আইয়ুব খান চৌধুরীর পেয়ারের লোক। ‘নন-টেকনিক্যাল’ লোক হওয়া সত্তে¡ও ফিন্যান্সে পড়াশুনা করা মান্নান পাটোয়ারিকে ২০১৮ সালের ২২ জানুয়ারি পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লি:র (পিজিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে বসান আইয়ুব খান।
আইয়্্ুব খান চৌধুরীর দুর্নীতির সঙ্গে যিনিই একাত্ম না হতেন তার বিরুদ্ধেই দুদকে বেনামে দিতেন দুর্নীতির অভিযোগ। দুদকেও তার রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। প্রতিষ্ঠানটির বিগত চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ আইয়ুব খান চৌধুরীর খাস লোক ছিলেন। দু’জনের প্রকৃতি ও স্বভাব-চরিত্রও ছিলো একই রকম। কারও উপকারতো দূরে থাক সব সময় অন্যের ক্ষতির চিন্তা করতেন। দুদকের একজন কমিশনার এক সময় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন। সেই সুবাধে তিনিও আইয়ুব খান চৌধুরীর খুব ‘কাছের লোক’ হিসেবে পরিচিত। আইয়ুব খান তাকে ব্যবহার করে দুদক দিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনকে হয়রানি করান। মহাপরিচালকদের মধ্যে বদলি হয়ে যাওয়া সাঈদ মাহবুব খান (বিশেষ-তদন্ত) তার খাস লোক। এছাড়া সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত একজন মহাপরিচালক তার আত্মীয়। দুদকের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত উপ-পরিচালক আবু বকর সিদ্দিক, সম্প্রতি অবসরে যাওয়া উপ-পরিচালক সামছুল আলম রীতিমতো আইয়ুব খানের ক্যাডার হিসেবে কাজ করেন। যে কারণে আইয়ুব খান চৌধুরী তার টার্গেটেড যেকোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করে দুদকে ‘দুর্নীতির তদন্ত’ শুরু করাতে পারেন। পক্ষান্তরে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অকাট্য প্রমাণ থাকলেও একাধিকবার পেয়ে যান দায়মুক্তি। সর্বশেষ কর্নফুলিতে তার নিয়োগ-বাণিজ্য,রাতের আঁধারে পেট্টোবাংলার ৩৭ ভুয়া কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদান, জালিয়াতি ও দ্নর্ুীতির ঘটনায় মামলা রুজুর সুপারিশ করা হলেও সেটি আটকে দেন দুদকের থাকা আইয়ুব খানের ‘পেইড সিন্ডিকেট‘।
সংশ্লিষ্ট অনুসন্ধান কর্মকর্তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, ২০২০ সালে ২২ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের একটি দৈনিকে কর্ণফুলী গ্যাসের ৩৭ ভুয়া কর্মকর্তাকে রাতের আধারে পদোন্নতি দেয়ার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তাতে উল্লেখ করা হয়, নিয়োগ পরীক্ষায় ৩৭ কর্মকর্তা ফেল করেন। এদের অনেকের শিক্ষাগত যোগ্যতাও ছিলো না। তবু ১০ বছর আগে ৩৭ জন লোক ‘নিয়োগ’ পেয়েছিলেন সহকারী ব্যবস্থাপক পদে। জালিয়াতি ধামাচাপা দিতে এমনকি তাদেও কোনো নথিপত্রও রাখা হয়নি। এদের নিয়োগ পরীক্ষার কোনো নথি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার খাতার কিছুই পাওয়া যায়নি। কারও কারও সনদও জাল। কেউ কেউ পাশের আগে পাশ দেখিয়ে সার্টিফিকেট জমা দিয়েছেন নিয়োগের সময়। এমনকি নজিরবিহীন কান্ডে নিয়োগ পাওয়া সেই কথিত ‘কমকর্তারা’ গত ১০ বছরে পদোন্নতিও বাগিয়ে নিয়েছেন।এ ঘটনা জেনে তদন্ত শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সেই তদন্তের তথ্য গোপন করে এবং দুদকের ভুয়া ক্লিয়ারেন্স দেখিয়ে ২০ আগস্ট রাতে তাদের পদোন্নতি দেয়া হয়।
পেট্টোবাংলার অধীন কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি:র তৎকালিন ব্যবস্থাপনা পরিচালক আইয়ুব খান চৌধুরীর বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে নিজ দুই পুত্রসহ ৩৭ জনকে ভুয়া নিয়োগ প্রদান, মধ্যরাতে পদোন্নতি প্রদান এবং কর্ণফুলি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন লি: কোম্পানির জমি ক্রয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ২০১৮ সাল থেকে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক (স্মারক নং- ০০.০১.১৫০০.৬২২.০১.১২৬.১৮)। ভুয়া নিয়োগ এবং পদোন্নতির অভিযোগটি অনুসন্ধান করে সংস্থার সমন্বিত জেলা কার্যালয়,চট্টগ্রাম-২ (চট্টগ্রাম-২’র ই/আর নং-২৬/২০১৮)। দুই বছরের বেশি অনুসন্ধানে অভিযোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে জালিয়াতি,প্রতারণা এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অকাট্য প্রমাণ মেলে। এ প্রেক্ষিতে আইয়ুব খান চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্টদের অপরাধের ফিরিস্তিসহ তাদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধি’র ২০১/৪০৯/১০৯ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় মামলা রুজুর সুপারিশ করা হয়।
প্রতিবেদনে অবৈধভাবে পদোন্নতি প্রদানের সঙ্গে তিন জনের সংশ্লিষ্টতা উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লি: মহা-ব্যবস্থাপক (ইঞ্জি:সার্ভিস) মো: সারওয়ার হোসেন ৩৩ দিন এ দায়িত্বে ছিলেন। এ সময় তিনিঅসৎ উদ্দেশ্যে দুদকে অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন থাকা অবস্থায় ২০১১ সালে সহকারী ব্যবস্থাপক (সাধারণ) পদের মূল নিয়োগ নথি অসৎ উদ্দেশ্যে বিলুপ্ত করেন। নিয়োগপ্রাপ্ত মো: মহিউদ্দিন চৌধুরীর ব্যক্তিগত নথি জব্দ থাকা অবস্থায় ২০১৫ সালের উপ-ব্যবস্থাপক (কারিগরি) পদের নিয়োগ নথি এবং মো: আশেক উল্লাহ চৌধুরী ও শাপলা দেওয়ানজির ব্যক্তিগত নথি দুদকে জব্দ ছিলো। এ ছাড়া৩১/১২/২০১৭ ও ৩১/১২/২০১৮ তারিখের রেটিং শীটও। এ অবস্থায় দুদকের ছাড়পত্র ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অনুমোদন ছাড়া সারোয়ার হেসেন আপন ছোট ভাই প্রকৌশলী রফিক খানকে ব্যবস্থাপক থেকে উপ-মহাব্যবস্থাপক পদে পদোন্নতি দেন। ৫৭ জনকে পদোন্নতি প্রদানে সহযোগিতা করেন। এ পদোন্নতিতে কেজিডিসিএল’র উপ-মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন)লুৎফুল করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রমাণিত হয় অভিন্ন অভিযোগ। ব্যবস্থাপক সুলতান আহম্মেদনিজেই নিজের পদোন্নতি নিয়েছেন-মর্মে প্রমাণিত হয়। এছাড়া তার ব্যাচের অন্যান্যদের পদোন্নতি প্রদানের ক্ষেত্রে দুদকে ২০১১ সালে নিয়োগ সংক্রান্ত নথি জব্দ থাকার তথ্য গোপন করেন। নিয়োগের মূল নথি গায়েব করেছেন। তার বিরুদ্ধে দন্ডবিধি’র ২০১/৪০৯/১০৯ ধারাসহ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় মামলা রুজুর সুপারিশ করা হয়।
প্রতিবেদনের রাতের আঁধারে ১২ জন সহকারি-ব্যবস্থাপক থেকে এক রাতে উপ-ব্যবস্থাপক পদে উন্নীত করা হয়। একই পদ্ধতিতে ৮ উপ-ব্যবস্থাপককে ব্যবস্থাপক পদে উন্নীত করা হয়। উপ-ব্যবস্থাপক পদে পদোন্নতিপ্রাপ্তরা হলেন, মো: সাখাওয়াত হোসেন,মুহাম্মদ তৈয়বুল ইসলাম, আব্দুল মোমিন, মো: মোবারক হোসেন, মো: জাকির হোসেন,মোহা: হাবিবুর রহমান, ফুয়াদ আউয়াল চৌধুরী, মো: আসাদ উজ জামান,রেবেকা সুলতানা, মো: গোলাম শাহজাহান, সাহিদা আক্তার ও রাজিয়া সুলতানা মুনমুন। ব্যবস্থাপক পদে উন্নীত ব্যক্তিরা হলেন, মো: বেলাল উদ্দিন, মো: সোহেল মৃধা, মো: আশ্রাফ আলী, মো: মঞ্জুর রহমান, সুলতান আহম্মদ, মো: আব্দুল আজিজ, মো: মহিউদ্দিন চৌধুরী ও বাসুদেব বিশ্বাস।
বার বার দেয়া হয় দায়মুক্তি : দুর্নীতির মাধ্যমে আইয়ুব খান চৌধুরী অন্তত: ৩শ’ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। অবৈধ নিয়োগ,ঘুষ বাণিজ্য,অবৈধ গ্যাস সংযোগ প্রদান,ভবন নির্মাণ ও জমি ক্রয় দেখিয়ে তিনি পেট্টোবাংলা থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বিভিন্ন কনস্ট্রাকশনের কাজে ঠিকাদারদের কাছ থেকে বিল আটকে হাতিয়ে নিতেন অর্থ। ‘ইমারসন’ নামক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান তার প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় পরবর্তীতে তিনি প্রতিষ্ঠানটির অনেক ক্ষতিসাধন করেন। ‘রয়েল ইউটিলাইজিং’র মালিক জুলফিকার কে জিজ্ঞেস করলেই এর সত্যতা মিলবে।
অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ কোথায় কোন ব্যাংকে রেখেছেন-জানে না কেউ। তার এক শ্যালক যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন। তার মাধ্যমে বিপুল অর্থ তিনি সুইসব্যাংকসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করেছেন। বেনামে দেশেও করেছেন প্রচুর সম্পত্তি। রাজধানীর খিলগাঁওয়ে রয়েছে বহুতল আবাসিক ভবন। এটি তার আয়কর নথিতে প্রদর্শিত ছিলো না। তার অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করলে দুদকে কর্মরত তার নিকটাত্মীয়ের পরামর্শে দ্রæত ট্যাক্স দিয়ে ৬ কোটি কালো টাকা তিনি ‘হোয়াইট‘ করেন। পরবর্তীতে এই ট্যাক্সফাইল দুদক গ্রহণ করে দায়মুক্তি দেয়। অথচ আয়কর নথিতে সমস্ত সম্পদ প্রদর্শিত থাকলেও দুদক বহু নিরীহ ব্যবসায়ী, বেসরকারি চাকরিজীবী,ব্যাংকার,প্রকৌশলী ও ডাক্তারের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের মামলা করে।
জালিয়াতির মাধ্যমে তার নিয়োগ বাণিজ্য,জমি ক্রয়ে দুর্নীতি এবং অবৈধ গ্যাস সংযোগের বিষয়ে মামলার সুপারিশ করা হলেও দুদক তাকে দায়মুক্তি দেয়। কেবল নিরপেক্ষ ও গভীর অনুসন্ধানের মাধ্যমেই তার অবৈধ সম্পত্তির সন্ধান মিলতে পারে। ধূর্ত আইয়ুব খান চলাফেরা করেন অতি সাধারণ বেশে। মনেই হবে না যে এই ব্যক্তি এতোটা ভয়ঙ্কর এবং এতো অবৈধ অর্থ সম্পত্তির মালিক। কোম্পানির দামী গাড়ি হাকালেও চলাফেরা করতেন দরিদ্র হালতে। একবার তার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার নিয়ে কাজের বুয়া পালিয়ে যায়। কিন্তু লুণ্ঠিত স্বর্ণের পরিমাণ উল্লেখ করতে হবে ভেবে এ বিষয়ে তিনি থানায় জিডি পর্যন্ত করেন নি।
পেট্টো বাংলার অধীন ১৩টি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের একটি কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি:’ (কেজিডিসিএল)। এ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ জালিয়াতির অভিযোগ থেকে পেট্টোবাংলার অধীন কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি:’র সাবেক এমডি আইয়ুব খান চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্ট ৮ জনকে দায়মুক্তির প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে। দীর্ঘ অনুসন্ধানে অভিযোগের অকাট্য মিললেও অনুসন্ধান কর্মকর্তা বদলিয়ে তাকে দিয়ে লেখানো হয় দায়মুক্তির সুপারিশ। এভাবে অনুসন্ধান প্রতিবেদন ‘উল্টে দেয়া’ বাবদ আইয়ুব খান চৌধুরী দুদক কর্মকর্তাদের ‘টেবিল-খরচা‘ দেন প্রায় ২ কোটি টাকা।
তবে সকল দুর্নীতির দায় থেকে আইয়ুব খান চৌধুরী গংদের দায়মুক্তি প্রসঙ্গে দুদক সচিব মো: মাহবুব হোসেন বলেন,অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা মিললে দুদক কাউকে দায়মুক্তি দেয় না। এমন কিছু ঘটে থাকলে বিষয়টি আমার জানান নেই।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from National