September 23, 2024, 9:29 pm


মুস্তাকিম নিবিড়

Published:
2022-10-09 01:48:32 BdST

ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশন টাকার খনি রাজস্ব কর্মকর্তা শাহনেওয়াজের শত কোটি টাকার সম্পদ!


  • দুর্নীতির অনুসন্ধান করছে দুদক।
  • সিটি কর্পোরেশনের মাস্টার রোলের কর্মচারী ভাগ্নে বিপ্লব তার ক্যাডার।
  • নামে বেনামে শশুর-শাশুড়ী ও ভাই বোনের নামে সম্পদের পাহাড়।
  • ভেদরগঞ্জের সখিপুরে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে বহুতল শপিংমল ও রয়েছে বিশাল মাছের ঘের।

ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা শাহনেওয়াজ। সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব আদায় করাই তার কাজ। তিনি যথাযথভাবে রাজস্ব আদায়ের কাজটি অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে করে থাকেন। কিন্তু রাজস্ব আদায়ের অর্থ সিটি কর্পোরেশনের ভান্ডারে জমা না হলেও তার ব্যক্তিগত ভান্ডারে ঠিকই জমা করতে তিনি মোটেও কার্পন্য করেনি। এ ক্ষেত্রে সঠিকভাবে দায়িত্বপালন করার জন্য ঢাকা দক্ষিন  সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে শ্রেষ্ঠ রাজস্ব কর্মকর্তার উপাধি দেওয়ার প্রয়োজন বলে তার আশেপাশের কর্মকর্তারা মনে করেন।

ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব আদায়ের টাকায় শাহনেওয়াজ বাসাবো বৌদ্ধ মন্দিরের পাশে প্রায় ২ কোটি টাকা মূল্যের আলিশান ফ্ল্যাট কিনেছেন। উক্ত ফ্ল্যাটে তিনি স্বপরিবার নিয়ে বসবাস করেন। বিএনপি ঘরোনার রাজনীতির সাথে যুক্ত শাহনেওয়াজ ও তার ভাই শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর ইউনিয়ন ২ নং ওয়ার্ডের হাজী নওয়ান শরীফ সরকারকান্দিতে তার গ্রামের বাড়ি। সখিপুরে তিনি গড়ে তুলেছেন একাধিক ভবন, মসজিদ মার্কেট, বর্তমানে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মানাধীন রয়েছে বহুতল বিশিষ্ট শপিং মল। এছাড়াও সখিপুরে কয়েক কোটি টাকার চাষি জমি ক্রয় করেছে। ৫০ একর সমপরিমান জমিতে বিশাল মাছের ঘের রয়েছে কার্তিকপুর নদীর পূর্ব পাড়ে চর হোগলা মৌজায় ডিএমখালি ইউনিয়নে। উক্ত মাছের খামারটি তার ভাইয়ের সাথে যৌথভাবে পরিচালিত।

ঢাকার বৌদ্ধমন্দিরের পাশে আলিশান ফ্ল্যাট ছাড়াও শনিরআখড়ার পলাশবাগে ৫ নং রোডে রয়েছে ৭ তলা বিশিষ্ট অট্টালিকা। উক্ত অট্টালিকা ২য় তলায় তার শশুর শাশুড়ি বসবাস করেন। ঢাকা গুলিস্তান দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনের সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটের নিচ তলায় ৪২ ও ৪৩ নম্বর ২টি দোকান তার স্ত্রীর নামে রয়েছে। একটি দোকানের নাম নাহার এন্টারপ্রাইজ, উক্ত দোকানে শাহনেওয়াজের ৫০ লাখ টাকার অধিক বিনিয়োগ রয়েছে। কর্মচারী দ্বারা দোকানটি পরিচালনা করা হয়। এছাড়াও শনির আখড়ার আরএস শপিং কমপ্লেক্সের নিচ তলায় কিডস এন্ড মোমো সুজ নামে তার একটি দোকান রয়েছে। উক্ত দোকানটি তার ভাতিজা পরিচালনা করে থাকেন। গাজীপুরের রয়েছে তার যৌথভাবে বাগানবাড়ি। এছাড়াও শনিরআখড়ার মেইন রোডের সাথে তার একটি টাইলসের দোকান রয়েছে। উক্ত দোকানটি তার শশুর পরিচালনা করে থাকেন। উক্ত দোকানে তার শেয়ার রয়েছে। যদিও বর্তমানে দুদকের অনুসন্ধানের পর তিনি তার দোকানের নাম পরিবর্তন করেছে বলে জানা গেছে।নিজের চলাফেরার জন্য রয়েছে বিলাশবহুল গাড়ি। তার ড্রাইভার পলাশবাগের বাসায় বসবাস করেন।

 একজন রাজস্ব কর্মকর্তা রাষ্ট্রীয় কোষাগারের টাকা নিজের মনে করে কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলেছে। ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার সম্পদের বিবরনী হিসাব চেয়ে নোটিশ করেছে। খোঁজ নিয়ে যতদূর জানা গেছে, শাহনেওয়াজ তার সম্পদ বিবরনী একটি আংশিক অংশ দুর্নীতি দমন কমিশনে জমা দিয়েছে। তার ক্ষমতার দৌড় এতো বেশি যে সিটি কর্পোরেশনের শীর্ষ অনেক কর্মকর্তাই শাহনেওয়াজের কাছে ধরাশয়ী। তার এ অদৃশ্য ক্ষমতার দৌড় কোথায় তা রহস্যাবৃত। শরীয়তপুর জেলায় নিজ গ্রামে তার পরিবার বরাবরই বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত। কিন্তু বর্তমানে ক্ষমতার স্বাদ পেতে ও অবৈধ অর্জিত সম্পদ রক্ষার্থে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা (ভাই) ক্ষমতাসীন দলের নৌকায় উঠে বাকি পথ পাড়ি দিতে চায়। এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের কিছু কিছু সুবিধাবাদী নেতৃবৃন্দের মদদ রয়েছে।

বাসাবো বৌদ্ধ মন্দির এলাকায় যেখানে তিনি পরিবার নিয়ে বসবাস করেন সেখানে সবাই জানে তিনি ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনের শীর্ষ কর্মকর্তা। উক্ত এলাকায় তিনি ব্যাপক প্রভাবশালী। সাধারন চা দোকানদার থেকে শুরু করে উক্ত এলাকা মসজিদ কমিটি নেতৃবৃন্দ ও রাজনীতির মহারথি পর্যন্ত সবাই শাহনেওয়াজকে এক নামে সিটি কর্পোরেশনের ক্ষমতাসীন বড় কর্মকর্তা হিসেবে চিনে। বাস্তবে তিনি একজন রাজস্ব কর্মকর্তা। একজন রাজস্ব কর্মকর্তার কোটি কোটি টাকার সম্পদ এর আয়ের উৎস কোথায়? দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ইতোমধ্যে অনুসন্ধান শুরু করলে তিনি যে সম্পদ বিবরনী জমা দিয়েছেন বাস্তবিক অর্থে নামে-বেনামে তার সম্পদের পরিমান এর চেয়ে কয়েকগুন বেশি। শাহনেওয়াজ এতোটাই ধুর্ত প্রকৃতির যে তিনি যে পরিমান অবৈধ টাকা সিটি কর্পোরেশন থেকে আত্মসাৎ করেছে তা তার শ্যালক শ্যালিকা, শশুর-শাশুড়ী, স্ত্রী ও ভাই-বোনদের নামে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। শাহ নেওয়াজের সম্পদের বিবরনী বের করতে হলে তার নিকট আত্মীয়দের বিশেষ করে শশুড়ের দিক থেকে আত্মীয়দের সম্পদ অর্জনের হিসাব নিতে হবে। তাহলেই শাহ নেওয়াজের সম্পদ বেরিয়ে আসবে। দ্য ফিন্যান্স টু’ডে ইতোমধ্যে তার সম্পদের খোজে অনুসন্ধানী কার্যক্রম শুরু করেছে। শাহনেওয়াজ দুদকে যে সম্পদের বিবরনী তালিকা দিয়েছে তার চেয়ে কয়েকগুন বেশি সম্পদের তালিকা দ্য ফিন্যান্স টু’ডের হাতে এসেছে।

ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনের আয়তনের পরিধি বাড়ার সাথে সাথে কর্পোরেশনের ব্যয় অনেকগুন বেড়ে দাঁড়িয়েছে। ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশন মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস দায়িত্ব গ্রহনের পরপরই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করার সাথে সাথেই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরেছে। ইতোমধ্যে শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করার ফলে সাধারন নাগরিকদের মধ্যে মেয়রের জনপ্রিয়তা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। বর্তমান মেয়র দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে গনমাধ্যমকেও সজাগ হওয়ার ও তথ্য উপাত্ত প্রকাশের আহ্বান জানানোর পর গনমাধ্যম কর্মীরা এ ব্যাপারে তথ্য অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে ।

রাজস্ব কর্মকর্তা শাহ নেওয়াজের সম্পদের বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য তার কার্যালয় নগর ভবনে গেলে তার পালিত আউটসোর্সিং কর্মচারী বিপ্লব তার ভাগ্নে গনমাধ্যমের সাথে বিরূপ আচরন করে। মূলত তার ভাগ্নে বিপ্লব তার ক্যাডার হিসেবে পরিচিত। দ্য ফিন্যান্স টু’ডে এর প্রতিবেদক ভারপ্রাপ্ত মেয়র শহিদুল্লাহ মিনুর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে মেয়র মহোদয়ের কঠোরতার কথা পুনঃ উল্লেখ করেন। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারী যে নামেই পরিচিত হোক না কেন, তাদের ব্যাপারে মেয়র মহোদয় জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহন করেছেন।‘’

ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশন মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস দেশের বাইরে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from National