April 27, 2024, 7:22 am


সামিউর রহমান লিপু

Published:
2020-06-25 16:18:43 BdST

যে কৌশলে সরকার করোনার বিরুদ্ধে লড়ছে


করোনা মোকাবেলায় সরকার ভিন্ন ধরণের কৌশল নিয়েছে। সরকারের কৌশলের তিনটি আঙ্গিক রয়েছে। 

প্রথমত, সরকার মনে করছে যে জীবন এবং জীবিকা পাশাপাশি চলবে। কোন অবস্থাতেই অর্থনীতিকে অচল বা নিশ্চল করে দেওয়া যাবে না। এই কারণে ঢাকাসহ গোটা দেশ লকডাউনে যাবার সিদ্ধান্তে আগ্রহী নয়। বরং ধাপে ধাপে যে এলাকাগুলো বেশি সংক্রমিত সেই এলাকাগুলোতে ধাপে ধাপে লকডাউন করার পক্ষপাতী।

দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ মনে করছে যে, করোনা সঙ্কটের চেয়েও ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করবে অর্থনৈতিক সঙ্কট। তাই অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলা করাই প্রথম প্রাধান্য হিসেবে মনে করা হচ্ছে। 

সরকার অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলার  দিকেই তাঁর সমস্ত দৃষ্টি নিবন্ধন করছে। যার ফলে অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের অনেকগুলো দেশের থেকে এগিয়ে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তৃতীয়ত, করোনা সংক্রমণ রোধ করার ক্ষেত্রেও সরকার ভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যে গত ২২ এবং ২৩ জুন দুই দফায় দেশের নয়টি জেলাকে লকডাউন করেছে। এই  লকডাউনগুলো করা হয়েছে নির্দিষ্ট কিছু অংশে। 

এই নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছে যে, সরকার হঠাৎ করে এই সমস্ত এলাকাগুলোকে কেন লকডাউন করছে? ঢাকাকে লকডাউন করার দরকার সবার আগে, তবে কেন অন্যান্য স্থানগুলোতে লকডাউন করা হচ্ছে? 

এই ব্যাপারে সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে, এখানে সরকার একটি ভিন্ন কৌশল নিয়েছে। সরকার চাইছে যে, ঢাকার বাইরের যে সংক্রমণ, সেই সংক্রমণগুলো আগে ঠেকাতে এবং ধাপে ধাপে ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জের বাইরে সব এলাকাগুলোকে করোনা সংক্রমণমুক্ত করতে। তাতে যে লাভটি হবে তা হলো যে, ঢাকার বাইরে এইসমস্ত এলাকার যদি সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে তাহলে চিকিৎসা সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ এই সমস্ত স্থানে আইসিইউ নেই, অক্সিজেন সাপোর্ট নেই বা ভেন্টিলেটর নেই। এই কারণে সরকার ঐ সমস্ত এলাকাগুলোতে লকডাউন করে সংক্রমণ সীমিত করতে চাইছে এবং ঠেকাতে চাচ্ছে।

এই কৌশলের দ্বিতীয় তাৎপর্যপূর্ণ দিক হচ্ছে, এই সমস্ত এলাকা যদি সংক্রমণ মুক্ত হয় তাহলে ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জের মতো অতিসংক্রমিত এলাকাগুলোকে চিহ্নিত করা যাবে এবং সেই চিহ্নিত এলাকাগুলোকে লকডাউনের আওতায় আনা যাবে। তখন চাইলে পুরো ঢাকা বা চট্টগ্রামকে লকডাউন করতে পারবে। তবে এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। 

সরকার মনে করছে আগামী ৪০ দিনের মধ্যেই আবার ঈদের ছুটি শুরু হচ্ছে। কোরবানীর ঈদের ছুটিটা সাধারণত দীর্ঘ হয়। এই সময় পর্যন্ত যদি করোনা সংক্রমণ থাকে তাহলে সেই সময় বড় ধরণের লকডাউনের চিন্তা করা যাবে এবং তখন সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া হবে। তবে তাঁর আগে যদি ঢাকার বাইরের সংক্রমণ বন্ধ করে দেওয়া যায় এবং ঢাকাকে যদি অন্যান্য জেলাগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া যায় তাহলে ঢাকায় যে এলাকাগুলো অতি সংক্রমিত, সেই এলাকাগুলোকে পূর্ব রাজাবাজারের মতো লকডাউন করে, সেখানে সংক্রমিতদের চিহ্নিত করে সংক্রমণ কমানোর চেষ্টা করা হবে।

সরকারের সবথেকে প্রধান লক্ষ্য হলো রোগীদের চিকিৎসার অভাব যেন না হয়। ঢাকায় বেশি লোক আক্রান্ত হলেও এখানে চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা তৈরি করা যাবে, হাসপাতালের ব্যবস্থা করা যাবে এবং ইতিমধ্যে ঢাকার বহু মানুষ বাড়িতে চিকিৎসা নিয়েই সুস্থ হয়ে উঠছে তাই হাসপাতালের উপর এখন যে চাপ আছে তা আর বাড়বে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। এজন্য ঢাকার বাইরে যেন চিকিৎসা সঙ্কট তৈরি না হয়, চাপ না বাড়ে সেজন্য ঢাকার বাইরের এলাকাগুলোকে আস্তে আস্তে সংক্রমণ মুক্ত করার প্রক্রিয়া নেওয়া হয়েছে এবং ধাপে ধাপে ঢাকার সংক্রমণ রোধ করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এই কৌশলের মূল লক্ষ্য হলো যে, আমাদের অর্থনীতির মূল লাইফলাইন হলো ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জের মতো এলাকাগুলো, সেজন্য সরকার লাইফ লাইনগুলোকে বন্ধ করতে চাচ্ছে না। 

আরেকটি কারণ হচ্ছে এখন অর্থবছরের শেষ সময়, এই সময় যদি আমরা ঢাকাকে বা চট্টগ্রামকে সম্পূর্ণভাবে লকডাউন করে দেই সেক্ষেত্রে একটি বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। সেজন্য সামগ্রিক বিষয় বিবেচনা করে সরকার জীবন এবং জীবিকার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ঢাকার বাইরের সংক্রমণ রোধ করার উদ্যোগ নিয়েছে এবং ঢাকায় স্থানীয় পর্যায়ে যে লকডাউন করা হবে সেই লকডাউন যেন যথাযথ হয় সে ব্যাপারেও কাজ করছে।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা