অনুসন্ধানী প্রতিবেদন
Published:2024-07-30 19:51:46 BdST
বিআইডব্লিউটিএ অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সাইদুরের খুঁটির জোর কোথায়?
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত দুর্নীতি দমনে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নে বিআইডব্লিউটিএ'র দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা থোরাই কেয়ার করছেন। তাদেরই একজন ড্রেজিং শাখার অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সাইদুর রহমান। একই শাখার ট্রুথ কমিশনে আত্নস্বীকৃত দুর্নীতিবাজ চারজন নির্বাহী প্রকৌশলী ও তাদের পরিবারবর্গ সাইদুর রহমানের শেল্টারে বহাল তবিয়তে আছেন। এমনকি তার সহযোগিতায় তারা প্রমোশনসহ দেদারসে ঘুষ লেনদেন এবং ক্ষমতার অপব্যবহারসহ সব ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত আছেন। শুধু তাই নয়, এই সংঘবদ্ধ চক্র বিভিন্ন প্রকল্পের শত শত কোটি টাকা আত্নসাৎ করে নিজেদের নামে-বেনামে বাড়ি-ফ্ল্যাট, মার্কেট, গাড়ির শো-রুম সহ প্রচুর ধন সম্পদের মালিক হয়েছেন। প্রত্যেকেই বিআইডব্লিউটিএ'তে টাকার মেশিন হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে দুদকে মামলা চলমান। কিন্তু দুদক তাদের সম্পদ বিবরণী এবং বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের সঠিক হিসাব না পাওয়ায় মামলার গতি ঢিলেঢালা ভাবে চলছে। অভিযুক্তরা দুদকের অনুসন্ধানী টিমকে চ্যালেঞ্জ এবং বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে মামলা থেকে রক্ষা পেতে বিভিন্ন তদবিরে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। আবার তারা এটাও বলছেন যে, দুদকের অনুসন্ধানী টিমকে তাদের সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দিয়েছেন। কিন্তু দুদক মামলা গুলো শেষ করতে গড়িমসি করছে। দুদকের অনুসন্ধান টিমের একজন কর্মকর্তা বলেন,অভিযুক্ত আসামীরা তাদের সম্পদ এবং জ্ঞাত আয়ের যে তথ্য দিয়েছে তাতে অনেক গড়মিল পাওয়া গেছে। অনেকেই নিজেদের পৈর্তৃক অবস্থার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন যে, তাদের পারিবারিক অবস্থা আগ থেকেই স্বচ্ছল। এমন তথ্যই বেশি দিয়েছেন তারা। কিন্তু অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসছে তাদের ভয়াবহ দুর্নীতির চিত্র। দুদকের ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, আসামীরা অধিকাংশ সম্পদ এবং ব্যাংক ব্যালেন্স নিজের নামে না করে বেনামে করেছেন। কেউ আবার তার কোন আত্নীয় দেশের বাইরে থাকলে তাদের নামে সম্পদ এবং ব্যাংক একাউন্টে টাকা রেখেছেন। সেক্ষেত্রে দুর্নীতিবাজরা তাদের সাথে আলাদা কোন ডকুমেন্ট করে নিজেদের সম্পদ রক্ষা করার চেষ্টা করছেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, বিআইডব্লিউটিএ'র ড্রেজিং শাখার অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সাইদুর রহমান দুদকের মামলা থেকে দায়মুক্তি পেতে মরিয়া হয়ে উঠছেন। তার বিরুদ্ধে ১৩৪ কোটি টাকার আত্নসাতের অনুসন্ধানটি ধামাচাপা দিয়ে মামলা থেকে অব্যহতি পেতে মোটা অংকের টাকাও খরচ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি মামলা থেকে রেহাই পেতে নানা কৌশল অবলম্বন করেছেন। বিশেষ করে ভোগাই ও কংস নদ খননের নামে টাকা আত্নসাতের অনুসন্ধান এবং রেকর্ডপত্র স্থগিত করার জন্য জোর চেষ্টা চালিয়েছেন সাইদুর। এজন্য তিনি দুদকের অনুসন্ধানী টিমকে ম্যানেজ করার জন্য নানাভাবে পায়তারা করছেন। সূত্রমতে, বিআইডব্লিউটিএ'র ড্রেজিং বিভাগের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সাইদুর রহমান বিআইডব্লিউটিএ'র ১৩৪ কোটি টাকা আত্নসাতের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন। দুদকের অনুসন্ধানী টিমের অনুসন্ধানে সঠিক এ তথ্য বেরিয়ে আসছে। প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র যাচাই বাছাই, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক, কাজের দায়িত্বে থাকা দুই নির্বাহী প্রকৌশলী ও মাঠ পর্যায়ের প্রকৌশলীকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে দুদকের অনুসন্ধানী টিম অনুসন্ধান করে সাইদুর রহমানের ভয়াবহ দুর্নীতির চিত্র পেয়েছে। তবে এ বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তারা মুখ খুলতে চাননা। অজ্ঞাত কারণে মামলাটির কার্যক্রম থেমে আছে। যে কারণে সাইদুর রহমানের সম্পদ বিবরণীর যাচাই বাছাইয়ের কাজ এখনো শেষ হয়নি। শুধু চিঠি ইস্যুর মধ্যেই সময় ক্ষেপণ করা হচ্ছে। একের পর এক তদন্ত কর্মকর্তা বদল করা হচ্ছে। দুদক শেষ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিবেনা এবং মামলা থেকে অব্যহতি পাবেন এই আত্নবিশ্বাসে বিআইডব্লিউটিএ'র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সাইদুর রহমান বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। তিনি একক আধিপত্য বিস্তার করেছেন ড্রেজিং বিভাগে। তার ঈশারায় চলছে ড্রেজিং বিভাগের সব টেন্ডার বাণিজ্য। তার সিন্ডিকেট এতোই শক্তিশালী যে, সেখানে নির্ধারিত ঠিকাদার ছাড়া অন্য ঠিকাদার কাজ পাওয়ার সুযোগ নেই। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২০ সালে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সাইদুর রহমান, তার স্ত্রী শামিমা আক্তার এবং বিআইডব্লিউটিএ'র উপ-পরিচালক (প্রশাসন) মো. সিরাজুল ইসলাম ভুঁইয়ার সম্পদ বিবরণী চাওয়া হয়। চার বছরেও তাদের হিসেব বিবরণীর কাজ শেষ হয়নি। মামলা থেকে দায়মুক্তি প্রদানের অদৃশ্য ইঙ্গিত থাকায় দুদক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ সাইদূর রহমানুষের মামলার তারিখ লম্বা ডেট দিয়ে সময় ক্ষেপণ করছেন। আবার তারিখ পরলেও বেশি মামলা থাকায় তার শুনানি হয়না। এমন সব অযুহাতে ঝুলে আছে সাইদুর রহমানের মামলার তদন্ত কার্যক্রম। অপর একটি সুত্রমতে, সাইদুর রহমান ও তার স্ত্রী শামিমা আক্তার তাদের সম্পদের হিসাব বিবরণী দিয়েছেন। সেগুলো যাচাই বাছাই চলছে। তবে সাইদুর রহমান উত্তরাধিকার সূত্রে বিপুল সম্পদের মালিক দেখিয়েছেন বিষয়টি দুদকের অনুসন্ধানে মিথ্যা ও জালিয়াতি হিসাবে ধরা পড়েছে। তিনি দুদকের দায়ের করা মামলা থেকে বাঁচতে ২০১৭ সালে তার জীবিত বাবাকে মৃত দাবি করেন। তিনি জীবিত পিতাকে মৃত দেখিয়ে উত্তরাধিকার সূত্রে বাবার সম্পদের মালিক দাবি করে ছিলেন। তার এই মিথ্যা অপকৌশল এবং জঘন্য অপরাধ শুধু নিজে ভালো থাকার জন্য বেছে নিয়েছিলেন। খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলার বেনগাছা উপজেলার মুক্তারপুর গ্রামে ১৯৭৩ সালে ১০ জুন সাইদুর রহমান একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি রাজধানীর ৫৫/৫৬ সিদ্ধেশ্বরীর ৪/এ আমিনাবাদ হাউজিং এ নিজের কেনা ফ্ল্যাটে বসবাস করেন। খিলগাঁওয়ের ২৫/বি, এম ডব্লিউ মানামা হাইটস'র ৮ম তলায় ১৮০০ বর্গফুটের একটি অত্যাধুনিক ফ্ল্যাটও রয়েছে সাইদুর রহমানের। কুড়িগ্রাম শহরেও ৫০ কোটি টাকা খরচ করে রড-সিমেন্টের একটি বড় দোকান করেছেন সাইদুর রহমান। দোকানটি পরিচালনা করেন সাইদুর রহমানের ভাই আব্দুল আলীম। আর খিলগাঁওয়ের ফ্ল্যাটটি শশুরের বলে প্রচার করেন তিনি। ( আগামী পর্বে সাইদুর রহমানের বিষয়ে আরো চমকপ্রদ তথ্য থাকছে )।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.