February 23, 2025, 10:18 pm


শাহীন আবদুল বারী

Published:
2025-02-23 16:45:42 BdST

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসরদুর্নীতির বরপুত্র পবিত্র এখন রাজশাহীতে 


গণপূর্ত অধিদপ্তরের দুর্নীতির বরপুত্র নির্বাহী প্রকৌশলী পবিত্র কুমার দাসকে ঢাকা থেকে রাজশাহী বদলি করা হয়েছে। তিনি পতিত সরকার আমলে অনিয়ম ও দুর্নীতিতে ছিলেন ‘মাস্টারমাইন্ড’। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছাড়া কাউকেই তিনি তোয়াক্কা করতেন না। তিনি সর্বমহলে বলে বেড়াতেন তাকে পোস্টিং দেয়া হয়েছে গণভবন থেকে। তাই তিনি একমাত্র শেখ হাসিনা পরিবারের বাইরে কাউকে মানতে রাজি নন। এই কথার সাথে কাজেরও মিল ছিল পবিত্র কুমার দাসের। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পতিত সরকারের পক্ষে কোটি কোটি টাকাও খরচ করেছেন পবিত্র কুমার দাস।

ঢাকা পোস্টিং থাকাকালীন সময়ে দরপত্রে অনিয়ম, কাজের আগে বিল পরিশোধ, প্রাইজপোস্টিং প্লেস অর্থাৎ ঢাকায় পদায়ন, একসঙ্গে দুই সংস্থায় চাকরি, নারী কেলেংকারী এবং চাকরিচ্যুত হওয়ার পর পুনরায় চাকরিতে ফেরার মতো ঘটনা ঘটেছে গণপূর্ত অধিদপ্তরে। প্রথমে ঢাকঢোল পিটিয়ে তদন্ত শুরু হলেও পরে সব ধূলেবালি হয়ে যেত পবিত্র'র ক্ষমতা বলে। ফলে অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া এই প্রকৌশলীর আর শাস্তি পেতে হতো না। পবিত্র'র হাজারো অপরাধ মুছোন হয়ে যেতো গণভবনের ফোনে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একজন বিশেষ সহকারী সব সময় পবিত্রকে দেখে রাখতেন। শুধু তাই নয়, পবিত্র দু'হাতে কামাতেন মাসে কোটি কোটি টাকা। এই টাকার ভাগ চলে যেতো গণভবনের সিন্ডিকেট বাণিজ্য'র হাতে। সরকার পরিবর্তন হলেও পবিত্র কুমার দাসের কোন আছড় পড়েনি। তিনি আছেন বহাল তবিয়তে। শুধু মাত্র তাকে বদলি করা হয়েছে ঢাকা বাইরে রাজশাহীতে। পবিত্র কুমার দাস সিন্ডিকেট এখনো তৎপর রয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে খবর জানা গেছে।

অধিদপ্তরের গণপূর্ত বিভাগ-৬ এর ই/এম বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে থাকা অবস্থায় পবিত্র কুমার দাসের অপকর্মের শেষ ছিলনা। ওই সময় মিডিয়ায় তার বিরুদ্ধে নিউজ প্রকাশিত হলে সংবাদ কর্মীর টুটি চেপে ধরা হতো।

চাকরি জীবনে বেশিরভাগ সময় পবিত্র কুমার দাস কাটিয়েছেন ঢাকায়। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এর উন্নয়ন প্রকল্প, পুলিশ ও র্যাবের উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি করেও ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। 

বিল ভাউচারে বড়ো ধরনের গাবলা, নয়-ছয় এবং কমিশনের বিনিময়ে পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দিতেন পবিত্র কুমার। অসংখ্য কাজে তার অপকর্মের প্রমাণ মিললেও তাকে শাস্তির আওতায় আনা হতোনা।

পতিত সরকার আমলে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংস্কারের জন্য মোট ২২টি কার্যাদেশ দিয়েছিল গৃহায়ন ও গণপূর্ত অধিদপ্তর। এর মধ্যে একটি কাজ শেষ করেছেন ঠিকাদার। বাকি ২১টি কার্যাদেশের বিপরীতে কোনো কাজই হয়নি। অথচ  সব কাজের ঠিকাদাররা তাদের পুরো বিল তুলে নিয়েছেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে দেওয়া এক চিঠিতে এমন অভিযোগ করেন মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান। কিন্তু ওই অভিযোগ ধামাচাপা দেন পবিত্র কুমার দাস সিন্ডিকেট। ওই সময়ের

নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিভিন্ন ধরনের সংস্কারের জন্য ২০২২-২৩ অর্থবছরে দরপত্রের মাধ্যমে মোট ২২টি কার্যাদেশ দেয়া হয়েছিল। নিয়ম অনুসারে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসব কাজ সম্পন্ন করে বিল উত্তোলন করবে। তবে এক্ষেত্রে ঘটেছে উল্টো ঘটনা। গণপূর্ত ই/এম বিভাগ-৬-এর আওতাধীন এই কাজ সম্পন্ন না করেই বিল তুলে নিয়ে ভাগাভাগি করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কাজের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী পবিত্র কুমার দাস এবং উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান রনি এই ঘটনার নেপথ্য নায়ক ছিলেন বলে জানা গেছে। তারা ২২ কাজে বরাদ্দ থাকা প্রায় ১০ কোটি টাকা ভুয়া বিল ভাউচারে আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ আছে।

সুষ্টু তদন্ত হলে নির্বাহী প্রকৌশলী পবিত্র কুমার দাস এবং উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান রনি এই ঘটনায় ফেঁসে যাবার কথা ছিল। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে আজো কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি কর্তৃপক্ষ। ফলে পবিত্র কুমার একের পর এক দুর্নীতি করেছেন প্রকাশ্য দিবালোকে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বিষয় গুলো পূণরায় তদন্ত'র দাবি জানিয়েছেন গণপূর্তের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা।

ওই সময়কালে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে দেওয়া মুগদা হাসপাতালের পরিচালকের চিঠিতে বলা হয়, "২০২২-২৩ অর্থবছরে গণপূর্ত ই/এম বিভাগ কর্তৃক নির্মাণ/সংস্কার কাজের বিপরীতে ২২টি কাজের প্রত্যয়নপত্রের জন্য কাগজপত্র দাখিল করা হয়েছে। ওই ২২টি কাজের মধ্যে ২১টির দাখিলকৃত কার্যাদেশ অনুযায়ী কোনো কাজই সম্পাদন করা হয়নি। গণপূর্ত ই/এম বিভাগকে বারংবার বলার পরও তারা নির্মাণ ও সংস্কার কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করছে না।" মুগদা হাসপাতালের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত ছয় সদস্যের কমিটির সরেজমিন পরিদর্শন প্রতিবেদনে কাজ না করার বিষয়টিও উঠে এসেছে। এতে উল্লেখ করা হয়, ২১টি কাজ সম্পন্ন করা হয়নি। কমিটির সদস্য এবং মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ত‍ৎকালীন সহকারী অধ্যাপক ডা. আনিছুর রহমান এপ্রতিবেদককে বলেন, "আমরা সরেজমিন পরিদর্শনে যে তথ্য পেয়েছি, তা পরিচালক স্যারের কাছে হস্তান্তর করেছি।" পরবর্তীতে কি হয়েছে তা আমি জানিনা।

মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়,  ওই সময়ে কী কাজ সম্পন্ন হয়েছে সেটা যারা ছিলেন তারাই বলতে পারবেন।প্রতিবারই কাজের সর্বশেষ অবস্থা নিরূপণের জন্য হাসপাতালে একটি কমিটি হয়। ওয়ার্ক অর্ডার এবং সম্পন্ন কাজ দেখে তারা একটি মতামত দেন।ওই সময় লিখিতভাবে ওই বিষয়টা মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় টাকা দিয়েছে, তাই বিচারের দায়িত্বও তাদের। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেবল তাদের মতামত জানিয়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২২টি কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে বাবর অ্যাসোসিয়েটস, রফিক ট্রেডার্স, অনিক কনসোর্টিয়াম, ব্রাইট ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন, ম্যালার্ড করপোরেশন, স্মাইল এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স এস এ এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স জান্নাত এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স শেখ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, মেসার্স ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ, দিপ্র কনস্ট্রাকশন, মেসার্স জাফির অ্যান্ড ব্রাদার্স, মা-বাবা কনস্ট্রাকশন এবং ওএসএল। এর মধ্যে একাধিক কাজ করেছে অনিক কনসোর্টিয়াম এবং বাবর অ্যাসোসিয়েটস।

পরিদর্শন কমিটির প্রতিবেদন বলছে, শুধু ব্রাইট ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন ২২ লাখ টাকার উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করেছে। বাকিরা কেউই কাজ সম্পন্ন করেনি।

আরো জানা যায়, মুগদা হাসপাতালের ওই কাজগুলো ছিল বিভিন্ন অকেজো সরঞ্জাম মেরামত এবং সংস্কার। মেরামত কাজের মধ্যে ছিল হাসপাতাল কম্পাউন্ডে নিরাপত্তার জন্য অকেজো/নষ্ট সিকিউরিটি লাইট, গার্ডেন লাইট, ভবনের চতুর্থতলায় অবস্থিত ফ্লাডলাইট মেরামত বা পরিবর্তনসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ। এছাড়া হাসপাতালের পাম্প মটরের অকেজো নষ্ট যন্ত্রাংশ মেরামত বা পরিবর্তনসহ আনুষঙ্গিক কাজও এর আওতাধীন ছিল। আরেকটি কাজ ছিল হাসপাতালের রোগীদের নিরবচ্ছিন্ন সেবা প্রদানের জন্য হাসপাতালে স্থাপিত ২০০ কেভিএ একটি, ২২৫ কেভিএ দুটি এবং ২৫০ কেভিএ একটি অকেজো বা নষ্ট ডিজেল জেনারেটর সেট মেরামত কিংবা সার্ভিসিংসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ। এ ছাড়া ভিন্ন ভিন্ন কার্যাদেশে কনফারেন্স রুমে অকেজো বা নষ্ট বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং ফিটিংস ফিকচার মেরামত কিংবা পরিবর্তন; হাসপাতালের পঞ্চমতলার পশ্চিম পাশে স্থাপিত ওয়ার্ডগুলোর অকেজো বা নষ্ট বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং ফিটিংস ফিকচার মেরামত কিংবা পরিবর্তন; মেডিকেল কলেজের নবমতলার পূর্ব পাশে স্থাপিত ওয়ার্ডগুলোর অকেজো বা নষ্ট বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং ফিটিংস ফিকচার মেরামত কিংবা পরিবর্তন; নিয়ন সাইন বোর্ডে অকেজো বা নষ্ট লাইট পাওয়ার সাপ্লাই মেরামত এবং ৫০০ কেভিএ ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি জেনারেটর সেটের মেরামত কিংবা সার্ভিসিংসহ বিভিন্ন সংস্কার এবং উন্নয়ন কাজ।

তদারকির দায়িত্বে থাকা উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এবং নির্বাহী প্রকৌশলীর যোগসাজশে এসব কাজ না করেই বিল তুলে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পরবর্তীতে পবিত্র কুমার দাস তার ক্ষমতা বলে ধামাচাপা দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অন্তর্বর্তী সরকার বিষয় গুলো পূণরায় তদন্ত কমিটির মাধ্যমে এর যথাযথ ব্যবস্থা করে পবিত্র কুমার দাস ও মাহবুবুর রহমানকে বিচারের মুখোমুখি করা হলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে বলে দাবি জানিয়েছেন বিজ্ঞমহল।

পবিত্র কুমারের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ হচ্ছে তিনি মানিলন্ডারিং এর সাথে জড়িত । দেশের বাইরে তার প্রচুর অবৈধ সম্পদ রয়েছে। পবিত্র কুমার দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ নামে-বেনামে বিনিয়োগের পাশাপাশি হুন্ডির মাধ্যমে পাশের দেশ ইন্ডিয়ায় পাচার করেছেন।

ইন্ডিয়ার নিউমার্কেট এলাকায় পবিত্র কুমার দাস একটি বিলাসবহুল বাড়ি নির্মান করেছেন। এই ভবন নির্মাণের সমস্ত টাকা তিনি হুন্ডির মাধ্যমে ইন্ডিয়াতে পাচার করেছেন। বিশেষ করে গত বছর ৫ আগস্টের পর পবিত্র কুমার দাস অর্ধ কোটি টাকা ইন্ডিয়ায় হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করেছেন।

এখানেই শেষ নয়, নির্বাহী প্রকৌশলী পবিত্র কুমার দাস অস্ট্রেলিয়া এবং কানাডায় বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী পবিত্র কুমার দাসের বাড়ি নড়াইল। ঢাকায় তিনি গড়ে তুলেছেন একাধিক বাড়ি ও ফ্লাট।

প্রাপ্ত তথ্য মতে,  নির্বাহী প্রকৌশলী পবিত্র কুমার দাসের বাবা ছিলেন একজন পান বিক্রেতা। সূত্রমতে, রাজধানীর মোহাম্মদপুর, মালিবাগ, ধানমণ্ডি এবং বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় রয়েছে তার বিলাসবহুল পাঁচটি ফ্লাট ও বাড়ী।

এরমধ্যে মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার আলিশান ফ্লাট তার সারাজীবনের অর্জিত আয়ের চেয়েও বেশি মূল্যের। সপ্তক আবাসন কোম্পানির ফ্ল্যাটটির মূল্য নূন্যতম তিন কোটি টাকা। ঢাকা উদ্যানের পাশে ছয়তলা একটি ভবন নির্মাণ করেছেন। পবিত্র কুমার দাসের বিরুদ্ধে একাধিকবার নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে। গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতারকে একাধিকবার এসব নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ মিটমাট করতে হয়েছে। যা ছিল অধিদপ্তরে ওপেন সিক্রেট।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী পবিত্র কুমার দাস উপ-বিভাগীয় এক মহিলা প্রকৌশলীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়েছেন। এনিয়ে পারিবারিকভাবে একাধিকবার ঝামেলার সৃষ্টি হয়েছিল।

এখানেই শেষ নয়, পবিত্র কুমার দাস এর আগে বরিশালে গণপূর্ত বিভাগের এক অফিস সহকারীর সঙ্গেও অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে ছিলেন।

এক গোপন অনুসন্ধানে জানা গেছে, পবিত্র কুমার দাস প্রায়ই গুলশান বনানীর একাধিক স্পা ও ম্যাসেজ পার্লারে যেয়ে থাকেন। এবং বিভিন্ন বারে তিনি প্রায়ই মদপান করেন।

পবিত্র কুমার দাসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে একাধিক অভিযোগ জমা পড়লেও অদৃশ্য ক্ষমতাবলে  তা অনুসন্ধানে আলোর মুখ দেখছে না। বিভাগীয় তদন্তও থেমে আছে।

গণমাধ্যমকে ম্যানেজ করার জন্যও রয়েছে তার বিশ্বস্ত লোক, যিনি গণপূর্ত অধিদপ্তরেই কর্মরত।

পবিত্রর রয়েছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। যার মাধ্যমে বদলি বানিজ্য করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন একভকর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, তার কিছুই হবে না। সে আশির্বাদপ্রাপ্ত। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। তারই ই-এম-৬ শাখার অধীনে উপ-সহকারী প্রকৌশলীদের দিয়ে নির্দিষ্ট হারে পারসেন্টেজ ছাড়া তিনি কোন কাজ করতেন না বলে ভুক্তভোগী ঠিকাদাররা জানান। দীর্ঘ প্রায় ৬ বছর যাবৎ একই বিভাগে থাকার কারণে তিনি পুরো ই-এম- ৬ শাখাটিকে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিনত করে ছিলেন।

পবিত্র কুমার দাসের বদলি এবং অভিযোগের বিষয়ে জানতে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতারকে ফোন করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।

এদিকে সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এর প্রেতাত্মা ছিলেন পবিত্র কুমার দাস।  নির্বাহী প্রকৌশলী পবিত্র কুমার দাস স্ব-পদে রয়েছেন বহাল তবিয়তে। তিনি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে পতিত সরকারের পক্ষে ছিলেন অর্থদাতা। যেখানে টাকা দরকার সেখানে টাকা নিয়ে হাজির হয়ে যেতেন পবিত্র কুমার দাস। আবার অস্রদাতাদের শেলটার দাতাও ছিলেন তিনি। অর্থাৎ যেখানে যা দরকার তা নিয়েই মোকাবেলা করতে পিছু হঠেননি পবিত্র । প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের খুবই আস্তাভাজন হবার সুবাদে এত বড়ো নেতৃত্ব পেয়ে ছিলেন। ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং প্রশাসনের লোকজন ম্যানেজ করতেন পবিত্র কুমার।  তার বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে দুদকে। তবে সব কিছুই থোড়াই কেয়ার করেন পবিত্র । তার পরিচয়ের হাতিয়ার ছিলেন প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।

ডিভিশনে গুঞ্জন আছে প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ ছিলেন নারী লোভী ও অর্থ লোভী। দুটো চাহিদা মেটাতেই প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ তার কাছে টেনে নেন পবিত্রকে। খুব অহংকারী এবং দাম্ভিকতা নিয়ে ডিভিশনে একক আধিপত্য বিস্তার করে ছিলেন পবিত্র কুমার। 

৫ আগস্টের পর অনেক চেষ্টা করেছেন ভোল্ট পাল্টানোর জন্য। কিন্তু অতিত খতিয়ান ভালো না হওয়ার কারণে এবং গোয়েন্দা রিপোর্ট পক্ষে না থাকায় পবিত্রকে ঢাকার বাইরে রাজশাহীতে বদলি করা হয়। বিগত সাড়ে ১৫ বছর যে সব ঠিকাদার এবং কর্মকর্তা কোনঠাসা ছিলেন তাদেরকে ব্যাপক হয়রানি করেছেন পবিত্র কুমার  সিন্ডিকেট। কাজ দেয়ার নামে অনেক ঠিকাদার থেকে ৫ আগস্টের আগে টাকা নিয়ে তাদেরকে কাজ দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে পবিত্র কুমার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে।

পবিত্র নিজেকে খুব অহংকারী ভাবেন। মিডিয়ায় তার বিরুদ্ধে অনেক তথ্যবহুল নিউজ প্রচারিত হয়েছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে পবিত্র কুমার দাসের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। এখনো তার বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করে শুধু মাত্র বদলি করা হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, এরা পতিত সরকার আমলে অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন শত শত কোটি টাকা। ওই সময়ে দুদক এবং কর্তৃপক্ষ একেবারেই নিষ্ক্রিয় ছিলেন। যে কারণে পবিত্র সিন্ডিকেট একক বাণিজ্য করেছেন। তারা অনিয়ম দুর্নীতিকে নিয়মে পরিণত করেছিলেন। এখনো দাপটের সঙ্গে উঠাবসা করেন বিভিন্ন মহলে। শুধু মাত্র বদলি করে তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় ক্ষমতার দাপট কমেনি পবিত্র সিন্ডিকেটের।

ভুক্তভোগীদের মতে, পতিত সরকারের এসব দালালরা ঘাপটি মেরে আছেন। যে কোন সময় এরা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে পারেন। এদের গতিবিধি শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেয়া দরকার বলে তারা মনে করেন।

দুর্নীতি দমন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এর বিরুদ্ধে  দুদককে মামলা হয়েছে।তার অন্যতম সহযোগী নির্বাহী প্রকৌশলী পবিত্র কুমার দাসের অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ জমা পড়েছে। যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। দুদক কমিশনার বলেন, দুর্নীতি বন্ধ না হলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তাই দুর্নীতিবাজ যেই হউক চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তার যে বৈধ আয়, তার সঙ্গে সম্পদের পরিমাণ অসামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি যে সম্পদ অর্জন করেছেন, সেটি দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে। তার কাছে যে ক্ষমতা ছিল, সেটির অপব্যবহার করেছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করেই তিনি এই সম্পদ গড়েছেন। আর এই সম্পত্তি যে তিনি একা করেছেন, সেটা কিন্তু ভাবার কোনো সুযোগ নেই। তার সঙ্গে অনেক যোগসাজশকারী ও সহায়তাকারী রয়েছে। এখন এর সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার এবং জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনা দরকার। তিনি আরো বলেন, এরা পতিত সরকারের আমলে শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি করেছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য পবিত্র কুমার দাসকে একাধিক বার ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।

 

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.