এম এইচ মুন্না
Published:2025-03-05 14:42:49 BdST
শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রের দায়িত্ব
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম চালিকাশক্তি হলেন শিক্ষকরা। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, এই মহান পেশার মানুষদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র বারবার ব্যর্থ হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে বেসরকারি শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি, জাতীয়করণ ও সরকারি সুযোগ-সুবিধার দাবিতে আন্দোলন চলছে, কিন্তু প্রতিশ্রুতির বৃত্তেই সীমাবদ্ধ থেকেছে পরিবর্তন। আজকের এই প্রেক্ষাপটে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবিগুলো নিয়ে কীভাবে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে, সেটিই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা ও সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত না করলে মানসম্পন্ন শিক্ষা কখনোই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকরা আজও সরকারি শিক্ষকদের তুলনায় বেতন-ভাতা, অবসর সুবিধা, চিকিৎসা ভাতা ও উৎসব ভাতা থেকে বঞ্চিত। একই যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও এই বৈষম্য কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত হতে পারে না। রাষ্ট্র যখন ‘সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা’ নিশ্চিত করার কথা বলে, তখন শিক্ষকদের বঞ্চিত রেখে সেই লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বড় কোনো নীতিগত পরিবর্তন আনতে না পারলেও, তারা শিক্ষকদের ন্যায্য দাবির ভিত্তিতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে পারে। সর্বপ্রথম, শিক্ষকদের বেতন কাঠামোর উন্নয়ন ও উৎসব ভাতা, গৃহ ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা অন্তর্ভুক্ত করে একটি নির্দেশনা জারি করা যেতে পারে। এতে শিক্ষকদের আর্থিক সংকট কিছুটা কমবে এবং তারা আরও মনোযোগী হয়ে পাঠদান করতে পারবেন। দ্বিতীয়ত, সরকারি-বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে বৈষম্য দূর করার জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নেওয়া জরুরি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এটি নিয়ে আলোচনা শুরু করতে পারে এবং পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের কাছে বিষয়টি সুপারিশ হিসেবে উপস্থাপন করতে পারে। তৃতীয়ত, শিক্ষকদের বেতন বিলম্বিত হওয়ার সমস্যা সমাধানে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (EFT) ব্যবস্থা চালু করা দরকার, যাতে নির্দিষ্ট সময়েই তারা বেতন পেতে পারেন।
শিক্ষকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হলে শিক্ষাব্যবস্থার বহুমুখী উপকার হবে। প্রথমত, শিক্ষকরা যখন অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল হবেন, তখন তারা নিজেদের শিক্ষকতা পেশায় আরও বেশি নিবেদিত হতে পারবেন। দ্বিতীয়ত, তরুণ মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আসতে উৎসাহিত হবেন, যা মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। তৃতীয়ত, শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে, যা পুরো শিক্ষাব্যবস্থার গুণগত মান উন্নয়নে সহায়ক হবে।
একটি উন্নত জাতি গঠনের জন্য শিক্ষকদের যথাযথ সম্মান ও ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি। শিক্ষকদের অবহেলা করে কখনোই একটি জ্ঞানভিত্তিক, উন্নত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি শিক্ষকদের প্রতি সদয় হয় এবং তাদের ন্যায্য দাবি পূরণের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেয়, তবে এটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হবে। আজকের ক্ষুদ্র উদ্যোগই আগামী প্রজন্মের জন্য সুদূরপ্রসারী ইতিবাচক পরিবর্তন বয়ে আনতে পারে। শিক্ষকদের প্রতি সুবিচার করা মানেই দেশের ভবিষ্যৎকে নিরাপদ করা।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.