কামরুজ্জামান মিলন
Published:2025-03-06 11:03:59 BdST
নীল আকাশে জুলহাসের স্বপ্ন
যমুনার তীরে এক ছোট্ট গ্রাম তেওতা। চারপাশে সবুজ ফসলের ক্ষেত, আর দুর্দান্ত বয়ে চলা নদীর স্রোত। এই গ্রামে বেড়ে ওঠা জুলহাস মোল্লার ছোটবেলা কেটেছে স্বপ্ন দেখার মধ্য দিয়ে। অন্যরা যখন খেলাধুলায় ব্যস্ত, তখন সে হাতের কাছে পাওয়া যেকোনো জিনিস কাটাকুটি করে কিছু না কিছু বানানোর চেষ্টা করত। তার বাবা-মা হাসতেন, ভাই-বোনরা মজা করত, কিন্তু জুলহাস জানত, একদিন সবাই দেখবে সে কী বানাতে পারে।
কিন্তু জীবন সবসময় স্বপ্নের মতো সহজ হয় না। সংসারের অভাব-অনটন, নদীর ভাঙনে ঘর হারানো, জীবিকার তাগিদে ইলেকট্রিক মিস্ত্রির কাজ করা—এসবের মাঝেও তার স্বপ্ন বেঁচে ছিল। ছোট্ট একটা কাগজের উড়োজাহাজ বানিয়ে সে একদিন বলেছিল, "আমি একদিন সত্যিকারের বিমান বানাব!" সবাই হেসে উড়িয়ে দিলেও তার ইচ্ছার আগুন কখনো নিভে যায়নি।
চার বছর ধরে প্রতিটি রাত নির্ঘুম কাটিয়েছেন জুলহাস। দিনের পর দিন ইলেকট্রিক কাজের টাকা জমিয়ে ছোট্ট একটা আলট্রা লাইট বিমান তৈরি করার চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। কেউ বলেছে, পাগল, কেউ বলেছে, অসম্ভব! কিন্তু সে থামেনি।
অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ এলো। যমুনার তীরে হাজারো মানুষ জড়ো হয়েছে। জেলা প্রশাসক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত, সবাই অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। জুলহাস ধীরে ধীরে তার নিজ হাতে তৈরি "স্কাই বাইক J-3" বিমানের ককপিটে বসলেন। হৃদপিণ্ডের ধুকপুকানি আরও বেড়ে গেল, হাত-পা যেন কাঁপছিল।
"আমি পারব!" নিজেকে বললেন তিনি।
ইঞ্জিন চালু হতেই গর্জন করে উঠল ছোট্ট বিমানটি। ধীরে ধীরে রানওয়ে থেকে চাকা ছেড়ে উঠল আকাশের দিকে। মুহূর্তের মধ্যে বিস্ময়ের ঢেউ বয়ে গেল মানুষের মাঝে। কেউ চিৎকার করে উঠল, কেউ করতালি দিল, কেউবা আবেগে চোখের পানি মুছল।
নীল আকাশে তখন এক টুকরো স্বপ্ন উড়ছিল।
মাত্র ৫০ ফুট ওপরে উঠতে পারলেও, এই উচ্চতা ছিল হাজার মাইল সমান। কারণ এটি ছিল তার শ্রমের, স্বপ্নের, আর হার না মানার জয়ের উচ্চতা।
নিচে দাঁড়িয়ে তার বাবা কলিল মোল্লার চোখে পানি। মুখে একটাই কথা, "আমার ছেলে সত্যি করে দেখালো!"
জেলা প্রশাসক নিজে এসে জুলহাসকে বললেন, "তোমার জন্য আমরা সব ধরনের সাহায্য করব, তুমি চালিয়ে যাও!"
জুলহাস হাসল, আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, "এই বিমান আমি উৎসর্গ করলাম আমার অনাগত সন্তানের জন্য। সে জানবে, অসম্ভব বলতে কিছু নেই।"
শেষ কথা
স্বপ্ন দেখতে জানতে হয়, স্বপ্নকে লালন করতে জানতে হয়। জুলহাস মোল্লা প্রমাণ করলেন, ইচ্ছাশক্তি থাকলে গ্রামের এক সাধারণ ইলেকট্রিক মিস্ত্রিও আকাশ ছুঁতে পারে। তার গল্প শুধু একটি বিমান উড্ডয়নের নয়, এটি এক অদম্য ইচ্ছাশক্তির গল্প। এটি প্রতিটি স্বপ্ন দেখার সাহসী মানুষের গল্প।
নীল আকাশে আজও হয়তো ছোট্ট সেই বিমান উড়ছে, আর বাতাসে একটাই কথা ভাসছে—
"আমিও পারি!"
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.