November 18, 2025, 5:25 pm


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2025-11-18 15:42:19 BdST

দুর্নীতিবাজদের আখড়ায় পরিনত হয়েছে রাজউকরাজউক কর্মচারী পারভেজের কোটি টাকার সম্পদের উৎস কী?


রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) আওতাধীন এলাকায় ভবন নির্মাণে সংস্থাটির অনুমতি লাগে। আবার সরকারি এই সংস্থা ভূমি উন্নয়ন করে প্লট আকারে বিক্রি করেছে। রয়েছে ফ্ল্যাটের ব্যবসাও।

এসব কাজে বিশেষ করে ভবন নির্মাণে পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হয় গ্রাহকদের। ভবনের অকুপেন্সি সনদ (ব্যবহার ছাড়পত্র), নির্মাণ ও স্থাপত্য অনুমোদন, উচ্চতা কমানো-বাড়ানো সবকিছুর এখতিয়ার সরকারি এই প্রতিষ্ঠানের। এছাড়া কমমূল্যে প্লট বরাদ্দ দিয়ে সবার জন্য আবাসন নিশ্চিতেও কাজ করছে রাজউক।

সেবা প্রদানে নানা অজুহাতের সুযোগ নিয়ে রাজউকে এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী সিন্ডিকেট তৈরি করেছে। এই চক্রে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

রাজউকের চতুর্থ শ্রেণীর মাস্টাররোলে কর্মকর্তা পারভেজ। পদবী-মেকানিক; ঝিলমিল প্রকল্পে সংযুক্ত। বাড়ি পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠিতে। বাবা স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা। তার মূল ব্যবসা কাঠুরিয়া। টুকটাক কাঠের ব্যবসা করে জীবনযাপন করছেন পরিবার নিয়ে।

সাবেক সাংসদ ও ফ্যাসিস্ট সরকারের মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের আশীর্বাদে রাজউকে চাকরি নেন পারভেজ। পরে মন্ত্রী রেজাউল করিমের নাম ভাঙিয়ে রাজউকে তিনি হয়ে উঠেন অপ্রতিরোধ্য। দুইহাতে টাকা কামিয়েছেন।

পিরোজপুর জেলার হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান এই পারভেজ কিভাবে আজ কোটি কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন তা নিয়ে নিজ এলাকা ও রাজউকে চলছে মুখরোচক গল্প।

কোটি টাকা আয়ের উৎস

ফ্যাসিস্ট সরকারের দুর্নীতিবাজ নেতা ও কর্মচারীদের মত পারভেজও দুর্নীতিতে মহা চ্যাম্পিয়ন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে যে, অত্যন্ত ধুর্ত প্রকৃতির লোক পারভেজ।অভিযোগ উঠেছে যে, চাকরির আড়ালে তার মূল কাজ প্লট ও ফ্ল্যাট বিক্রয়ের নামে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করা। প্লট জালিয়াতির মুল হোতাদের তালিকায় রয়েছে তার নাম।

এদিকে, অল্প সময়ে কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়ে এখন নিজেকে ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন পারভেজ। রাজউকের কর্মচারী-কর্মকর্তাদের তিনি তোয়াক্কাই করেন না। শুধু কি তাই? গণমাধ্যম নাকি তার পকেটে থাকে। প্রায়শই দম্ভোক্তি করে বলেন, গনমাধ্যমকর্মীদের ২০-৫০ টাকার সাংবাদিক হিসেবেই মূল্যায়ন করি।

সম্পদের বিবরণ

রাজউকের চতুর্থ শ্রেনীর একজন কর্মচারীর কোটি কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে তার নেপথ্যের ঘটনা ও দুর্নীতিবাজ হয়ে ওঠার অজানা কাহিনি।

সামান্য চতুর্থ শ্রেণীর একজন কর্মচারী চলাফেরা করেন বিলাসবহুল এক প্রাইভেট কারে [ঢাকা মেট্রো গ- ৩৫-৩০৬৪, রেজিস্ট্রি ২০/১/২০২২]। প্রায় দশ লাখ টাকার দুটি মোটরসাইকেল রয়েছে তার দখলে। এছাড়া ডেমরাতে স্টাফ কোয়ার্টারে সন্তানের নামে ‘সাবিত টিম্বার’স মিল’ এবং ফার্নিচার কারখানা রয়েছে তার। এই টিম্বার’স মিলে কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। পারভেজের পিতা পেশায় একজন কাঠুরিয়া, কাঠ ব্যবসায়ে জড়িত। তাই রক্তের সাথে সম্পৃক্ত ব্যবসায় কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে চতুর এই পারভেজ।

সম্প্রতি, ধূর্ত এই রাজউক কর্মচারী অনলাইন ব্যবসায় নেমেছেন। রাজধানীর বাড্ডায় বিটিআই প্রিমিয়ার প্লাজা শপিং মলের নিচতলায় “ধামাকা” দেশি ব্র্যান্ড নামে একটি শপ খুলেছে পারভেজ। উত্তরায়ও রয়েছে এই “ধামাকা” শো রুম। এ কথা পারভেজ অকপটে স্বীকার করেছে।

অন্য একটি সুত্র বলছে বরগুনাতে তার শ্বশুরবাড়িতে ব্যক্তিগত যাতায়াতের জন্য জমি কিনে ও রাস্তা বানিয়ে দিয়েছেন এই গুনধর রাজউকের কর্মচারী।

এছাড়াও 'ফিন্যান্স টুডে'র অনুসন্ধান ও তথ্যসুত্র বলছে, রাজধানীর অভিজাত এলাকা ওয়ারীতে বিলাসবহুল এক অ্যাপার্টমেন্টে তিনি থাকেন বলে তারই বিশ্বস্ত সুত্র আমাদের নিশ্চিত করেছে।

তার উদ্ধত্ব আচরণ ও ধৃষ্টতা এত বেশি যে গণমাধ্যমে খুবই তাচ্ছিল্যের ভাষায় কথা বলেন। গ্রামের বাড়ীতেও তিনি অঢেল সম্পদ ও ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মান করেছে।

প্রশ্ন উঠেছে যে, ৪র্থ শ্রেনীর একজন কর্মচারীর এত আয়ের উৎস কি? রাজউক কি তাহলে টাকা বানানোর মেশিন?

পারভেজের এই অস্বাভাবিক সম্পদ অর্জনের ঘটনা জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। রাজউকের মত একটি গুরুত্বপূর্ন প্রতিষ্ঠানে এমন একজন দুর্নীতির বরপুত্রের অবৈধ উত্থান স্বাভাবিকভাবেই অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

এই ঘটনার সঙ্গে আরও কারা জড়িত এবং পারভেজের সম্পদের উৎস কি- এসব বিষয়ে দ্রুত ও কঠোর তদন্ত হওয়া জরুরি। অবৈধ উপায়ে অর্জিত সকল সম্পত্তি অবিলম্বে বাজেয়াপ্ত এবং দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি উঠছে সর্বমহল থেকে।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.