February 24, 2025, 1:40 pm


লিপু

Published:
2020-08-06 20:06:43 BdST

কেন ছিটকে পড়লেন আ জ ম নাছির?


চট্টগ্রামে সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে পাঁচ বছরের দায়িত্ব পালন করে বিদায় নিতে হলো আ জ ম নাছির উদ্দীনের। তাঁর বিদায় ছিল পূর্বনির্ধারিত। কারণ করোনার আগেই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল এবং সেই তফসিল ঘোষণার পর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্যে আওয়ামী লীগ যে নতুন মেয়রের প্রার্থীতা ঘোষণা করেছিল সেখানে আ জ ম নাছির বাদ পড়েছিলেন। 

তখন থেকেই আ জ ম নাছির উদ্দীন যে চট্টগ্রামের মূলধারার রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়ছেন তা অনুমান করা হয়েছিল। কিন্ত করোনার কারণে নির্বাচন পিছিয়ে গিয়েছিল এবং অনেকে মনে করেছিলেন যে, নাসির হয়তো সম্পর্ক পুনোরুদ্ধারের সুযোগ পাবেন এবং তিনি হয়তো প্রশাসক হিসেবেও দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাবেন। কিন্তু তাঁর কোনটাই হয়নি। বরং আ জ ম নাছিরকে মেয়াদকালীন সময়েই সরিয়ে দেওয়া হলো এবং সরিয়ে দিয়ে খোরশেদ আলম সুজনকে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

কেন এইভাবে বিদায় নিতে হলো আ জ ম নাছিরকে? 

চট্টগ্রামের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্তরা বলছেন যে, এর পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ। চট্টগ্রামের রাজনীতিতে বিভক্তি সৃষ্টি, প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠার পরেও মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পরে মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিরোধিতা করা, মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রীকে অপমান করা এবং চট্টগ্রামের রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের ত্যাগী-পরীক্ষিত নেতাদের কোণঠাসা করে দেওয়াই আ জ ম নাছিরের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আ জ ম নাছিরের রাজনৈতিক জীবনের উত্থান হয় প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর হাত ধরে এবং ধীরে ধীরে  তিনি চট্টগ্রামের রাজনীতিতে একটি বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু যে প্রত্যাশা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আ জ ম নাছিরকে রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিয়ে এসেছিলেন, সেই প্রত্যাশা পূরণে তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন। 

আ জ ম নাছিরের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের রাজনীতিতে গ্রুপিং করা এবং নিজস্ব গ্রুপ তৈরি করার অভিযোগ রয়েছে। 

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সবথেকে বড় প্রত্যাশা ছিল যে, চট্টগ্রামের যে বিভক্তির রাজনীতি, সেই বিভক্তির রাজনীতি আ জ ম নাছির উপড়ে ফেলবেন এবং সকলকে নিয়ে কাজ করবেন। কিন্তু মেয়র হওয়ার পরে আ জ ম নাছির বিভক্তিকে আরো উসকে দেন এবং এই বিভক্তির মধ্যে দিয়ে তিনি দলের ভেতর এমন কিছু ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ করেন যাঁদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। 

আ জ ম নাছিরের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ ছিল যে, মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীকে প্রাপ্য সম্মানটুকু না দেওয়া। বিশেষ করে মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পরে তাঁর স্ত্রীকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেওয়ার ঘটনাটি প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষুব্ধ এবং ব্যথিত করেছিল। 

এছাড়া আ জ ম নাছির চট্টগ্রামের যারা নেতা এবং এমপি তাঁদের সঙ্গে সখ্যতা নিয়ে কাজ না করে বরং তাঁর নিজস্ব মতামতের ভিত্তিতে সিটি করপোরেশনকে পরিচালিত করার চেষ্টা করেছিলেন।

উল্লেখ্য যে, মেয়র হওয়ার পর থেকেই আ জ ম নাছিরের সঙ্গে সরকারের নীতিনির্ধারকদের সম্পর্কের টানাপোড়েন তৈরি হয়েছিল, তার প্রমাণ পাওয়া যায় যে, আ জ ম নাছির যখন মেয়র হন, তখন অন্যান্য মেয়রদেরকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা দেওয়া হলেও আ জ ম নাছিরকে কোন পদমর্যাদা দেওয়া হয়নি। 

ধারণা করা হচ্ছে যে, খোরশেদ আলম সুজনকে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার মধ্যে দিয়ে চট্টগ্রামের রাজনীতি থেকে আ জ ম নাছির ছিটকে পড়লেন। এখন তাঁর ভবিষ্যত নির্ভর করছে তিনি এই বিভক্তি কাটিয়ে উঠে দলের ঐক্য নিয়ে কতটুকু কাজ করবেন তাঁর উপরে। 

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.