সায়েদুল আরেফিন
Published:2021-04-04 16:36:49 BdST
মামুনুল ছাড়া পাওয়ায় সারা দেশে হুর-গেলমান নিয়ে উৎসব!
বাংলাদেশ হেফাজত ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ইসলামী চিন্তাবিদ (!) মামুনুল হক গত ৩ এপ্রিল ২০২১ নারায়ণগঞ্জের সোনার গাঁও এলাকার একটি রিসোর্টে একজন নারী (হুর) সহ আটক হন।
এটা নিয়ে নানা নাটকীয় ঘটনার পরে মামুনুল হক সেখান থেকে ছাড়া পান। আমরা মামুনুল আটক হবার পর থেকে মামুনুলের লাইভে আসা পর্যন্ত ঘটনাগুলো একটু পর পর সাজিয়ে দেখতে চাই, তাতে কী বুঝা যায়।
স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে হোটেল বুকিং দিলে রিসিপশনে মামুনুল হক ও তাঁর কথিত ২য় স্ত্রীর ছবি তুলে রাখা হয়। মামুনুলের ভাষ্য মতে সাক্ষী রেখে মুখে মুখে কবুল করা কথিত ২য় স্ত্রীর নাম- আমেনা তৈয়বা, শ্বশুরের নাম জাহিদুল ইসলাম, শ্বশুরবাড়ি খুলনা।
মামুনুলের কথিত ২য় স্ত্রীর ভাষ্য মতে নাম- জান্নাত আরা, পিতার নাম অলিউর রহমান, বাড়ি আলফাডাঙা, ফরিদপুর।
মামুনুল হকের কথিত স্ত্রী কে প্রশ্ন করা হয়েছে মামুনুল হকের ছেলে কতজন? উত্তরে সে বললো ৪ জন। কিন্তু গত রাতে উইকিপিডিয়া ঘাটাঘাটি করে দেখা গেল মামুনুল হকের ছেলে ৩ জন (জিমামুল, ইমাদুল, মিদাদুল) ! তাছাড়া মামুনুল হক বলছেন যে, তিনি তাঁর কথিত ২য় স্ত্রী নিয়ে যাদুঘর এলাকায় বেড়িয়ে একটু বিশ্রাম নিতে রিসোর্টে এসেছিলেন। কিন্তু তাঁর কথিত ২য় স্ত্রী এক সাক্ষাতকারে দাবি তাঁরা রিসোর্টেই ঘুরতে এসেছিলেন। কথা কেমন হল তাহলে!
রিসোর্ট থেকে ছাড়া পেয়ে মামুনুল হক তাঁর প্রথম স্ত্রীর সাথে যে ফোনালাপ করেন তাতে তিনি আমেনা তৈয়বা বা জান্নাত আরাকে তাঁর বন্ধু শহীদুলের স্ত্রী বলে দাবি করে নিজ স্ত্রীকে সংযত হয়ে অন্যের সাথে কথা বলার জন্য অনুনয় বিনয় করেন।
আরেকটি ফোনালাপে মামুনুল হক আমেনা তৈয়বা বা জান্নাত আরার সাথে কথা বলে তাঁর টাকা, ব্যাগ, গাড়ির চাবি ইত্যাদির খোঁজ নেন। এই ফোনে তাঁকে খুব অসহায় ও হতাশ মনে হচ্ছিল।
আরেকটি অডিও ফোন আলাপে দেখা যায় যে, মামুনুলের পরিবারের এক মহিলা মামুনুলের স্ত্রীকে মামুনুলের কথা মত অন্যদের সাথে কথা বলতে অনুরোধ করছেন। আসলে এটা ছিল চাপ প্রয়োগ। তিনি পারিবারিকভাবে সব ঠিক করে দেবার আশ্বাসও দেন।
এর পরে মামুনুল হক লাইভে এসে তাঁর বক্তব্যে পুলিশ সাংবাদিকদের ভালো বলেন এবং এই রিসোর্টের ঘটনার জন্য আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের সদস্যদের দায়ী করেন। পাশে তাঁর ভাইয়েরা ছিলেন। তিনিও ছিলেন খুব মলিন মুখে, হুংকারের বদলে সবাইকে শান্ত থাকার পরামর্শ দেন।
এই ঘটনার পর শুরু হয় সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল ঝড়। অনেকে আবার উল্লসিত হুংকার দিয়ে বলেন যে, সরকার মামুনুলকে আটকে রাখতে পারেনি। এই সুযোগে কেউ কেউ শামিম ওসমানকে গালিগালাজ করে নেন একদফা।
কিন্তু কেন সরকার মামুনুল হককে আটক করেননি তার জন্য ব্যারিস্টার হওয়া লাগে না। একটু অতীত ঘাঁটলেই বুঝা যায়।
অনেকের হয়তো মনে আছে, বাংলাদেশে টানবাজার-নিমতলী যৌনপল্লী উচ্ছেদের প্রতিবাদে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল হয়েছিল। এই পিটিশনের রায়ে বলা হয়, নারী যৌনকর্মী অনূর্ধ্ব ১৮ বছরের হলে এবং যৌন ব্যবসাই তার একমাত্র আয়ের উৎস হিসেবে প্রমাণ করতে পারলে তিনি বৈধভাবে এই ব্যবসায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। কিছুদিন আগে যুব মহিলা-লীগের নেত্রী শামিমা নূর পাপিয়া আটক হওয়ার পর এটা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়৷ কিন্তু পাপিয়া বা ওয়েস্টিনের বিরুদ্ধে এবিষয়ে কোনো মামলা হয়নি, মামলা হয়েছে অন্য ইস্যুতে৷
আইনজীবীরা জানিয়েছেন,বাংলাদেশের সংবিধানে পতিতাবৃত্তিকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে৷ সংবিধানে এই পেশা বন্ধ করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলা হয়েছে৷ কিন্তু প্রচলিত আইনে ১৮ বছর বয়স হলে কোনো নারী আদালতে ঘোষণা দিয়ে পেশা হিসেবে গণিকাবৃত্তি বেছে নিতে পারেন৷ শর্ত হলো তাকে প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে এবং স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে আদালতের কাছে ওই পেশা বেছে নেয়ার ঘোষণা দিতে হবে৷
মামুনুল যখন অন্যের স্ত্রীকে নিজের স্ত্রী বলে ছাড়া পেতে পেরেছেন তখন তাঁকে ধরে আদালতে নিলে ১ দিনের বেশি আটক রাখা যেত না বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে। কারণ আমেনা তৈয়বা বা জান্নাত আরা নিজেকে মামুনুলের সেবাদাসী হিসেবে ঘোষণা দিলেই সব শেষ হয়ে যেতো। কারণ তাঁরা দুজনেই সাবালক /সাবালিকা। তাই ছেড়ে দেওয়ায় সরকারের জন্য বুদ্ধিমানের কাজ হয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে কিছুই গোপন থাকবে না, সব প্রকাশ পাবে। মানুষ বিচার করবেন, মামুনুল কী জিনিস। কী তাঁদের ধর্ম বিশ্বাস। জোর করে তো কারো বিশ্বাস পরিবর্তন করা যাবে না। কারণ সনাতন ধর্ম বা হিন্দুধর্মমতে অপ্সর বা অপ্সরী বা অপ্শর্ অর্থে স্বর্গবেশ্যা; সুরসুন্দরী (অপ্সর কিন্নর যক্ষ-ভারতচন্দ্র রায় গুণাকর; স্বর্গপথে কলকণ্ঠে অপ্সরী কিন্নরী দের বোঝানো হয়েছে। সনাতন ধর্মী সাধুরা ম্রিত্যুর পরে এই সুযোগ পাবেন বলে তাঁদের ধর্ম বিশ্বাস।
অপরদিকে আমাদের ইসলাম ধর্মের স্থানীয় মাওলানাদের ব্যাখ্যায় সূরা আর রাহমানের ৭২ নম্বর ও সূরা ওয়াকিয়া’র ৩৬-৩৭ আয়াত, সুরা : বাকারা, আয়াত: ২৫ থেকে জানা যায় যে, ভালোকাজ করে মৃত্যু হলে পরকালে বেহেস্তি হুর ও গেলমানের সেবা পাওয়া যাবে। যদিও বাস্তবে বাংলাদেশের আবাসিক মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষক হুজুরগণের অধিকাংশই পরকালের অপেক্ষা না করে মাদ্রাসার অল্পবয়সী গেলমান বা ছেলে ও সুন্দরী কিশোরী মেয়েদের হুর মনে করে জবরদস্তি করে ভোগ করেন। ভাবটা এমন যে তাঁরা বেহেস্তে এসে গেছেন।
যারা মামুনুলকে রিসোর্ট থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে গেছেন তাঁরা হয়তো রাতে তাঁদের মাদ্রাসায় হুর – গেলমান উপহার পেয়েছেন। যদি সত্যিই তা পান, তা হলে অবাক হবার কিছু নেই। মানে রাতে উৎসব হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া দেখে অনেকে তাই মনে করছেন।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.