বিশেষ প্রতিবেদক
Published:2021-09-08 02:33:19 BdST
ক্ষমতার অপব্যবহার ও দূর্নীতির অন্তহীন অভিযোগদূদকের কঠোর নজরদারিতে সওজের মোসলেহ উদ্দিন
অবশেষে ফেঁসে যেতে বসেছেন সওজের বহুল আলোচিত ও সমালোচিত তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোসেলেহ উদ্দিন আহম্মদ। নিজেকে রাষ্ট্রপতির লোক পরিচয় দিয়ে ইতোমধ্যে নিজ দপ্তরে তিনি দূর্নীতি ও বিধি ভঙ্গের সুপার হিরো হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
সওজের ইট কাঠটিও এখন জানে যে, প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন কোন নিয়ম মেনে চলেন না। তার নিজের ইচ্ছাকেই দপ্তরের আইনে রুপান্তর করেছেন তিনি।
আচরণে বেসামাল ও দূর্নীতিতে আপদ মস্তক নিমজ্জিত এ সরকারি কর্মকর্তার অবৈধ ও জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদের তালিকা আঁতকে ওঠার মতো। সেই সাথে নিজ দপ্তরে বিধি ভঙ্গের সুস্পষ্ট তথ্য প্রমাণসহ সম্প্রতি দূর্নীতি দমন কমিশনে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন একজন অনুসন্ধ্যানী সাংবাদিক।
উক্ত গণমাধ্যমকর্মীর দুদকে দাখিল করা তালিকায় দেখা যাচ্ছে অনিয়ম ও দূর্নীতির মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে তিনি নিজ দপ্তরে মাস্টাররোলে নিয়োগ দিয়েছেন প্রায় অর্ধশত লোক। ক্ষমতার অপব্যবহার করে ও বিধি ভেঙ্গে মাস্টার রোলে নিয়োগ দিয়ে গত দু বছরে মাথা পিছু মাসে ১৫ হাজার টাকা হারে তিনি সরকারের ৭লাখ ২০ হাজারের বেশী টাকা অপচয় করেছেন।
'ডিপার্টমেন্টে লোকবলের প্রয়োজন নেই'; সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এমন লিখিত মন্তব্যের পরও নিজের পছন্দের লোকদের বিধি ভেঙ্গে সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায় নিয়োগ দিয়েছেন তিনি। এভাবে সরকারি অর্থ অপব্যায়ে তিনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
জানা যায়, কারখানা সার্কেলে চাকুরি করার সময় তিনি ১৬জন এম আর কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অংকের অর্থ।
সম্প্রতি তিনি বদলী হয়ে এসেছেন সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রণ ও সংগ্রহ সার্কেলে। কারখানা সার্কেল ঢাকায় বদলীর পূর্ব মুহুর্তে স্মারক নং ৩৫ ও ৩৬ তারিখ ১১/০৮/২০২১এর মাধ্যমে ৩ জন এম আর কর্মচারী নিয়োগ করেন। সংশ্লিষ্ট অফিসে যার কোন চাহিদা নাই।
উক্ত নিয়োগের পরেই সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলী কারখানা বিভাগ ঢাকা স্মারক নং ২৯০ তারিখ ২৫/০৮/২০২১ ইং এবং নির্বাহী প্রকৌশলী কারখানা বিভাগ ময়মনসিংহ এর স্মারক নং ৮০৮ তারিখ ১২/০৮/২০২১ ইং এর মাধ্যমে উক্ত কর্মচারীর প্রয়োজন নাই মর্মে নিয়োগ বাতিলের জন্য অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেয়। কিন্তু সে চিঠি আমলে নেয়নি বা নিয়োগ বাতিলও করেনি। এ নিয়ে কেউ কথা বলতে গেলেই তাকে রাষ্ট্রপতির ভয় দেখান মোসলেহ উদ্দিন।
এ দিকে অফিসে এম আর ভিত্তিক কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে সরকারি টাকায় বেতন দিয়ে নিজের বাসার কাজের জন্য নিয়োজিত রেখেছেন দুই জনকে। মো: সুমন ও জসিম নামের এম আর ভিত্তিক নিয়োগ প্রাপ্ত দুই কর্মচারী দীর্ঘ সময় ধরে মোসলেহ উদ্দিনের বাড়ীতে কর্মরত রয়েছেন। অথচ তাদের বেতন ভাতা যাচ্ছ সরকারিখাত থেকে।
জানা যায়, বাসায় কর্মরত ওই দুই বিশ্বস্ত কর্মচারীকে মোসলেহ উদ্দিন অবৈধভাবে নিয়ম ভেঙ্গে ফেরি প্লানিং সার্কেল থেকে বদলী করে নিয়ে আসেন। এ ছাড়া নিয়ম ভেঙ্গে বার বার এই দুই কর্মচারীর পদ পদবি পরির্বতন করেছেন তিনি। তিনি বদলীর পূর্ব মুহুর্তে নিয়ম ভেঙ্গে দুজন কর্মচারীকে পিয়ন থেকে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে পদোন্নতি দিয়েছেন।
স্মারক নং-৩৬ তারিখ ১১/০৮/২০২১ তারিখে নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আরিফুর রহমান একটি চিঠি লেখেন। তাতে তিনি লেখেন অর্থবিভাগের পরিপত্র নং ০৭.০০.০০০.১৭৩.৬৬.০৫৯.১৫-৩৪ তারিখ ১৪/০৫/২০১৬ সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সাথে সংগতি রেখে কাজে লাগানোর শর্তে “কাজ নাই মজুরী নাই" পদ্ধতিতে অস্থায়ী দৈনিক হাজিরা ভিত্তিক অত্র বিভাগে ওয়েল্ডার হিসেবে গত ১১/০৮/২০২১তারিখে ওয়াসি উল্লাহ সজিব পিতা- ফারুক মিয়া, গ্রাম সাভিয়া নগর ডাকঘর সাবিয়া নগর বাজার-২৩৮০ অষ্টগ্রাম কিশোরগঞ্জ (এন আই ডি নং ৪২১০৮২১৭০০) কে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু উক্ত দপ্তরে দুটি ওয়েল্ডার পদের বিপরীতে দু’জন লোক কর্মরত রয়েছে। তাই এ পদে নতুন লোকবলের প্রয়োজন নাই। অন্য দিকে এ দপ্তরে প্রয়োজনের অতিরিক্ত মাস্টাররোল (এম আর) জনবল রয়েছে। অপ্রতুল বরাদ্ধের কারণে প্রতিমাসে কর্মচারীদের বেতন প্রদান দূরহ হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে এ নিয়োগটি পুন: বিবেচনার আবেদন করা হয়।
গুলশানের ১৩৭ নং সড়কের ১০ নং বাড়ীতে তিন কোটি টাকা মূল্যের ২২০০ স্কয়ার ফিটের অত্যাধুনিক ফ্ল্যাট
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় কে ব্লকের ১১ নং রোডের ৫০৯ নং হোল্ডিং এ সুরম্য ডুপ্লেক্স বাড়ী
জানা গেছে বিশাল বিত্ত বৈভবের মালিক মোসলেহ উদ্দিন পাহাড়সম অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলোতে রয়েছে তার বাড়ী ফ্লাটসহ বহু সম্পদ। এর মধ্যে গুলশানের ১৩৭ নং সড়কের ১০ নং বাড়ীতে রয়েছে ২২০০ স্কয়ার ফিটের অতি আধুনিক ফ্ল্যাট। যার আনুমানিক মূল্য তিন কোটি টাকার উপরে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় কে ব্লকের ১১ নং রোডের হোল্ডিং ৫০৯ এ রয়েছে তার সুরম্য ডুপ্লেক্স বাড়ী। তার দু সন্তান। এক ছেলে ও এক মেয়ে। এদের একজন আমেরিকায় এবং অন্যজন কানাডায় লেখাপড়া করছেন। এর বাইরে নামে বেনামে রয়েছে তার প্রচুর সম্পত্তি ও ব্যাংক ব্যালেন্স।
জানা গেছে, বিভিন্ন টেন্ডার প্রক্রিয়ায় কমিশন মাস্টার হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে। নির্ধারিত কমিশন না দিয়ে কেউ তার দপ্তর থেকে কাজ নিতে পারেন না। বরাদ্ধের অতিরিক্ত প্রাক্কলন করে তিনি এরই মধ্যে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।
জানা যায়, ২০১৯ সালে দুদকে তার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ জমা পড়ে। কিন্ত রহস্যজনক কারণে সে অভিযোগের তদন্ত আলোর মুখ দেখেনি। তবে সম্প্রতি তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোসেলেহ উদ্দিন আহম্মদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ জমা হয়েছে তা বেশ গুরুত্ব সহকারেই তদন্ত করা হচ্ছে। অভিযোগ প্রমানিত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানিয়েছেন দূদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.