বিশেষ প্রতিবেদক
Published:2023-10-01 18:56:39 BdST
সব দেশেই দণ্ডিতরা আদালতের নির্দেশেই বিদেশে যেতে পেরেছেন
দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর দাবী জানিয়ে আসছে তার পরিবার। মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র অথবা জার্মানি নিতে আগ্রহী তার পরিবার।
কিন্তু সরকার বলছে, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে হলে তাকে আদালতের অনুমতি নিতে হবে। তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি। তাদের দাবি, সরকার চাইলেই তাকে বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দিতে পারে।
খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি প্রথমে একটি দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হন এবং পরবর্তীতে আরও একটি মামলায় তিনি দণ্ডিত হন। হাইকোর্ট বিভাগও একটি মামলায় তার সাজা বহাল রেখেছে। আইনের বিবেচনায় তিনি একজন দণ্ডিত ব্যক্তি। একজন দণ্ডিত ব্যক্তি কি আদালতের অনুমতি ছাড়াই শুধুমাত্র সরকারের চাওয়াতে বিদেশ যেতে পারে?
বাংলাদেশে অতীতেও দণ্ডিত ব্যক্তির বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার উদাহরণ আছে। শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বের অনেক দেশেই দণ্ডিতরা আদালতের অনুমতি নিয়েই চিকিৎসার জন্য বিদেশে গিয়েছিলেন।
আ স ম আব্দুর রব
জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সামরিক আদালতে সাজাপ্রাপ্ত রাজনীতিক আ স ম আব্দুর রব জেল খাটার সময় ১৯৭৯ সালের এপ্রিল মাসে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে তখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়।
এসময় তৎকালীন রাষ্ট্রপতির কাছে আ.স.ম রব বিদেশে চিকিৎসার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করেন। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাবলে তিনি বিদেশ যান। উল্লেখ্য সে সময় দেশে কোন সাংবিধানিক সরকার ছিলো না। তাছাড়া কর্ণেল তাহেরের মামলা পরবর্তীতে সর্বোচ্চ আদালত অবৈধ ঘোষণা করেন। তাই আ.স.ম রবের বিষয়টি উদাহরণ হতে পারে।
হাজী সেলিম
সাজাপ্রাপ্ত থাকা অবস্থায় বিদেশে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজী সেলিম।
২০২২ সালের ৯ মার্চ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে হাজী মোহাম্মদ সেলিমকে বিচারিক আদালতের দেওয়া ১০ বছর কারাদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন হাইকোর্ট বিভাগ। তবে তিন বছরের দণ্ড থেকে খালাস পান তিনি।
রায় ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে তাঁকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। উচ্চ আদালত তাঁকে এক মাসের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিলেও এই সময়ের আগে তাঁর বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে আইনগত কোনো বাধা ছিল না। আইনকে অমান্য না করেই তিনি বিদেশে গিয়েছিলেন এবং তার আত্মসমার্পণের তারিখের আগেই দেশে ফিরে এসেছিলেন।
নাওয়াজ শরিফ
ফাঁস হওয়া পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে নাম আসার পর ২০১৭ সালে অপসারিত হন পাকিস্তানের সবচেয়ে দীর্ঘসময়ের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। পরে দুর্নীতি মামলায় তাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
কারাগারে যাওয়ার পর থেকে নওয়াজের স্বাস্থ্যের অবনতি হতে থাকলে প্রথমে তাকে লাহোরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য ২০১৯ সালের ২৫ অক্টোবর শরীফকে জামিন দেওয়া হয় এবং চিকিৎসার জন্য তিনি দেশ ছাড়ার জন্য আদালতের ছাড়পত্র পান।
একইভাবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করাতে হলে তাকে আদালতে গিয়ে আবেদন করতে হবে। আদালত যদি অনুমতি দেন তাহলে তিনি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে পারবেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে মতামত দিয়েছেন তাই আইনের অবস্থান এবং সেটাই সঠিক। আইনগতভাবে খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার সুযোগ নেই।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.