বিশেষ প্রতিবেদক
Published:2024-05-04 00:49:21 BdST
ক্রমহ্রাসমান সবুজের মাঝেই এশিয়ার সর্ববৃহৎ আমগাছ বাংলাদেশে
দেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার হরিণমারী সীমান্তে মধুমালা নামে ছোট্ট একটি গ্রাম। সেখানে রয়েছে আলোচিত ঐতিহ্যবাহী ২০০ বছরেরও বেশি পুরোনো সূর্যপুরী আমগাছ। গাছটির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ এর ডালপালা। দূর থেকে দেখলে যে কেউ মনে করবে এটি বিশালাকৃতির ঝাউগাছ। তবে এই গাছটির বিশেষত্ব হলো এটি উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় আমগাছ হিসেবে পরিচিত।
আবার কেউ কেউ একে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আম গাছ বলেও আখ্যা দিয়ে থাকে। প্রতিদিন দূর দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ ছুটে আসে প্রাচীন এই গাছটিকে দেখতে। স্থানীয়দের কাছেও এই গাছটি এখন বিনোদনের জায়গা।
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে সীমান্ত ইউনিয়ন হরিণমারীর নয়াপাড়ার গ্রামে রয়েছে এ আমগাছ। গাছটি স্থানীয়ভাবে বালিয়াডাঙ্গী সূর্যপূরী আমগাছ নামে পরিচিত। প্রায় দুই বিঘা জমির ওপর বিস্তৃত এই গাছটির আকৃতি সুবিশাল। গাছটির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ এর ডালপালা।
গাছের ডালগুলো কাণ্ড থেকে বেরিয়ে একটু উপরে উঠেই মাটিতে নেমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তারপর আবারও উঠেছে উপরের দিকে। দেখতে অনেকটা ঢেউয়ের মতো। কাণ্ড থেকে বের হয়েছে গাছটির ২০টির বেশি শাখা। শাখাগুলোর দৈর্ঘ্য ৪০ থেকে ৫০ ফুট। গাছের প্রতিটি ডালে অনায়াসে হাঁটাচলা ও বসা যায়। একেকটা ডাল যেন একেকটা মাঝারি সাইজের আমগাছ।
বাংলাদেশে বিভিন্ন জাতের আম ও আমগাছ রয়েছে। কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, এটিই এশিয়ার সবচেয়ে বড় আমগাছ। প্রাচীন এই দানবীয় গাছকে এলাকার বাসিন্দারাও ঐতিহ্যবাহী আমগাছ বলে মনে করেন।
প্রাচীনতম এই বিস্ময়ের পেছনে কোনো বিশেষ ইতিহাস বা পূর্বপরিকল্পিত গল্প নেই। গাছটির মালিক নুর ইসলাম ও সাইদুর মোল্লা। তারাও সঠিক বলতে পারেন না, ঠিক কবে গাছটির চারা রোপণ করা হয়েছিল। তাদেরও ধারণা প্রায় ২০০ বছর হবে গাছটির বয়স। উপমহাদেশ জুড়ে সূর্যপুরী জাতের এত বড় আমগাছ আর নেই। তাই প্রতিদিনই মানুষ ভিড় করে এই বিষ্ময়ের সাক্ষী হতে।
আমগাছের মালিক সাইদুর রহমান বলেন, তিন বিঘা জায়গাজুড়ে গাছটির অবস্থান। গাছটি আমার বাবার দাদার দাদা লাগিয়েছিলেন বলে শুনেছি। এর বয়স আনুমানিক ২০০ বছর হবে। প্রতিজনের কাছ থেকে আমরা ৩০ টাকা করে নেই। টিকিট বিক্রি করে যা পাই, তা দিয়ে আমরা দুই ভাই মিলে গাছটির রক্ষনাবেক্ষন ও পরিচর্যা করি।
দূর থেকে দেখলে মনে হয় বটগাছ। অনেকে বলে যে এটি দেখতে একটি দানবাকৃতির গাছের মতো। ৩৫ ফুট ব্যাসার্ধে ছড়িয়ে থাকা এই আমগাছের উচ্চতা ৯০ ফুট। পাখির চোখে দেখলে মনে হতে পারে গাছটি একাই একটি বন।
সবুজে ঘেরা বাংলাদেশ হারিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনই আমরা হারাচ্ছি মানচিত্র থেকে সবুজ রঙ। এতে প্রকৃতিতে পড়ছে বিরুপ প্রভাব। গরম ক্রমশই বেড়ে যাচ্ছে এবং বৃষ্টি কমে আসছে। গত দিন ভেঙেছে ৭৬ বছরের তাপপ্রবাহের রেকর্ড। এর আগে ১৯৯২ সালে সর্বোচ্চ একটানা ৩০ দিন তাপপ্রবাহ ছিল দেশের পশ্চিমাঞ্চলে।
পুরো এপ্রিল মাসের মধ্যে মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) প্রথম দেশের সব অঞ্চলে তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। গরমে অসুস্থ হয়ে এদিন সারা দেশে অন্তত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
পরিস্থিতির মাত্রা তুলে ধরে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, এত বেশি জায়গাজুড়ে দীর্ঘ এক মাসব্যাপী তাপপ্রবাহ নজিরবিহীন ঘটনা। সবুজের যত্ন না করলে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে আরো ভয়াবহ ভবিষ্যৎ।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.