February 24, 2025, 1:29 am


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2024-09-30 23:12:33 BdST

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার পদায়ন


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর যে নতুন সরকার গঠিত হয়েছে তার কাছে সকলের প্রত্যাশা নতুন এক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার যেখানে থাকবে না কোন বৈষম্য।

কিন্তু গত কয়েকদিনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে অপ্রত্যাশিতভাবে যেসকল বদলি আদেশ জারি করা হয়েছে তা দেখে সকলেই হতাশ হয়েছেন এবং বলছেন যে আমরা নতুন সরকারের কাছে যে প্রত্যাশা করেছিলাম সে আশায় গুড়েবালি।

সম্প্রতি পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে এক কর্মকর্তার বদলির আদেশ এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। উক্ত বদলি আদেশ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দুর্নীতি ও অসদাচরণের দায়ে খাগড়াছড়ি পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে শাস্তিমূলক বদলি হওয়া তদন্তাধীন সহকারী পরিচালক আব্দুল মান্নানকে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অর্থ ইউনিটে সহকারী পরিচালক (বাজেট) পদে পদায়ন করা হয়েছে।

আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি ৩ (খ) ও ৩ (ঘ) অনুযায়ী যথাক্রমে অসদাচরণ ও দুর্নীতির মামলা রুজু প্রক্রিয়াধীন। এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের সত্যতা আছে বলে মন্তব্য করেছে তদন্ত কমিটি। 

এছাড়াও এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ২৮ তম বিসিএসে আবেদ আলীর কাছ থেকে ৩০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে প্রশ্নপত্র নিয়ে বিসিএস পরিবার পরিকল্পনা ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়ার বিষয়ে অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে। উক্ত ঘটনার তদন্তপূর্ব প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ হতে ১৯শে সেপ্টেম্বর ২০২৪ ইং তারিখে উপ সচিব শারমিন ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত একটি পত্র জারি করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ইং তারিখে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ সহকারী পরিচালক (বাজেট), অর্থ ইউনিটে এই কর্মকর্তাকে পদায়ন করে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের উপ সচিব শারমিন ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এই প্রজ্ঞাপন জারির ফলে অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অর্থ ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন, অধিদপ্তরের শতাধিক কর্মকর্তা কর্মচারী পরিচালক (প্রশাসন) ও মহাপরিচালকের সাথে এই আদেশ বাতিল করার দাবিতে সাক্ষাৎ করতে আসেন। তারা এই ধরনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পদায়ন না করতে আলটিমেটাম দেন।

স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের এক্স সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, 'মন্ত্রণালয় যেখানে আমার দুর্নীতি তদন্তের জন্য দুইবার পত্র দিয়েছে, সেখানে তারাই আবার মান্নানের মত একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করেছে। এই ধরনের আদেশ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের পুনর্বহালের শামিল।'

কে এই আব্দুল মান্নান?

২৮তম বিসিএসে যোগদানকৃত এই কর্মকর্তা বিগত স্বৈরাচারী সরকারের সময়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সুবিধাভোগী হিসেবেই চিহ্নিত। মাগুরা জেলার অধিবাসী এই কর্মকর্তা মাগুরা ১ আসনের সাবেক সাংসদ সাইফুজ্জামান শেখরের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (পার-১) হিসেবে যদি পদোন্নতি না পেয়েও পোস্টিং নেন। পরবর্তীতে সবাইকে অবাক করে ১১ জন কর্মকর্তাকে ডিঙ্গিয়ে পদোন্নতি নেন। পদোন্নতির পর প্রশাসন ইউনিটেই সহকারী পরিচালক (পার-১) হিসেবে পোস্টিং নেন। 

এভাবে জৈষ্ঠোতা লংঘন করে পদোন্নতি এবং পোস্টিং করানোর ক্ষেত্রে এই বিভাগের একজন উপসচিব জড়িত ছিলেন মর্মে মন্ত্রণালয় লিখিত অভিযোগ করা হয় যা তদন্তের জন্য আলোর মুখ দেখেনি। 

প্রশাসন ইউনিটে থাকাকালীন অবৈধ নিয়োগ, বদলি বাণিজ্য, ঘুষ, দুর্নীতি সহ নানা অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে আনীত একাধিক অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাওয়ায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩ (খ) ও ৩ (ঘ) অনুযায়ী যথাক্রমে 'অসদাচরণ ও দুর্নীতি' মামলা রুজু করার জন্য তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। সেই মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন থাকা অবস্থায় আব্দুল মান্নানকে আবারো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে 

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.