February 24, 2025, 1:17 am


মানসুরা চৌধুরী দোলা

Published:
2024-10-02 13:35:35 BdST

ডিএনসিসির দুর্নীতি পরায়ন কর্মকর্তা মহসিন আছেন


সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামের আশীর্বাদপুষ্ট, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মহসিনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি আছেন বহাল তবিয়তে। তাকে ডিএনসিসির প্রধান কার্যালয় থেকে অঞ্চল -১০ এ বদলি করা হলেও তার দাপট কমেনি। তবে ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে মহসিনের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নাই। তিনি একতছত্র আধিপত্য বিস্তার করে নানা অনিয়ম এর সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি ছিলেন সাবেক মেয়র আতিকুল রহমানের বিশ্বস্ত। টেন্ডার বাণিজ্য, নিয়োগ, বদলি সহ সব কিছুতেই সাবেক মেয়র আতিকুল রহমানের নিকটস্থ ছিলেন মহসিন। মেয়রের সঙ্গে মহসিনের গভীর সম্পর্ক থাকায় অনেক টা প্রকাশ্যেই ঘুষ লেনদেন করতেন মহসিন। অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় নিয়ন্ত্রণ করতেন সাবেক মেয়রের সব ধরনের কাজ। সাবেক মেয়র আতিকের অনেক অনৈতিক কাজের সাক্ষীও মহসিন। ডিএনসিসির সাধারণ কর্মচারিরা দাবি করেছেন মহসিনের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ উত্থাপিত হচ্ছে তা তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ম্বস্তি ফিরে আসবে পূরো ডিএনসিসিতে।
মাসেক খানিক আগে মহসিনকে বদলি করা হয়েছে অঞ্চল-১০। সেখানে গিয়েও তার আগের অভ্যাস বদলায়নি। তিনি ঠিক মতো অফিস করেননা। যতটুকু অফিস করে, থাকেন সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত।
মহসিনের নামে রয়েছে নানা অনিয়ম-দূর্নীতি, লুটপাট এবং জালিয়াতির অভিযোগ। তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে। এরমধ্যে বড়ো ধরনের অভিযোগ উঠেছে তিনি ল্যান্ডফিল্ডের একাধিক প্রকল্পের অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িত। গুরুত্বপূর্ণ নথিতে পাওয়া গেছে অনেক জালিয়াতি, ফাঁক-ফোকড় ও লুটপাটের তথ্য। ল্যান্ডফিল্ডের উন্নয়নের নামে কিভাবে বিল ভাউচার তৈরি হয়েছে তার সাথে যোগসাজস রয়েছে মহসিনের। ল্যান্ডফিল্ডের নতুন জমি ক্রয়ে আরো বড় ধরণের অনিয়ম ও জালিয়াতির তথ্য বেরিয়ে আসবে মহসিন চক্রের বিরুদ্ধে। এমন টাই ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সূত্রমতে, মহসিন মূলত সাবেক মেয়র আতিকুল রহমানের এ্যাসাইন করা একজন কর্মকর্তা। সাবেক মেয়রের সব ধরনের টাকার দেনদরবার করতেন মহসিন সিন্ডিকেট। মহসিন কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মেয়র আতিকের বরাত দিয়ে। তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী একজন মহসিন। তার এই অপকর্মে সহযোগিতা করতে না চাওয়া এসটিএস সংশ্লিষ্ট একজন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কর্মকর্তা (সি আইকে) অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে এবং তাকে মারপিটের ভয় ভীতিও দেখানো হয়েছিল। মহসিনকে ডিএনসিসি থেকে একটি মটর সাইকেল প্রদান করা হয়েছিল। ওই মোটর বাইক এর নম্বর ১৫-২৮৯৩। গাড়িটি গত ১৮ জুলাই উত্তরায় আঞ্চলিক কার্যালয়ের সামনে দুষ্কৃতিকারীরা জ্বালিয়ে দেয়। ২০ আগষ্ট থেকে ৫দিন পরপর ৯ লিটার করে জ্বালানি তেল নিয়েছেন। যার রশিদ দিয়ে বিলভাউচার করে জমাও দেয়া হয়েছে। বিষয় টি হাতেনাতে ধরা পড়ার পর ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ মহসিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। নিয়মিত ভূয়া বিল ভাউচার প্রদান হাজার হাজার টাকা মাসিক হাতিয়ে নিয়েছেন মহসিন। মোটর সাইকেল না থাকার পরও তার এই জ্বালানি তেল নেয়ার বিষয়টি খুবই ঘৃণ্য অপরাধ বলে মনে করেন বলে দিয়ে কর্তৃপক্ষ । অপর একটি সূত্র থেকে জানা যায়, মহসিন সাবেক মেয়র আতিকুল রহমান এর সাথে সব সময় লেগে থাকতেন। মেয়রের পরামর্শে মহসিন তার বাহিনী নিয়ে ডিএনসিসির গাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে ছাত্র-জনতার উপর দোষ চাপিয়ে ভালো সাজতেন মেয়রের কাছে। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন ঠেকাতে লাখ লাখ টাকা দিয়ে পতিত সরকারের প্রশাসনকে সহযোগিতা করার অভিযোগ উঠেছে মহসিনের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, পতিত সরকারের বিভিন্ন স্বার্থ রক্ষায় তিনি ছিলেন অনড়।
সোমবার সকালে অঞ্চল-১০ এ মহসিনের অফিসে যাওয়া হলে তাকে পাওয়া যায়নি। এর আগে তাকে ফোন করা হলে তিনি বলেন আমি অফিসে আছি আসেন। মহসিনের কক্ষের সামনে গিয়ে ফোন দিলে তিনি অপরপ্রান্ত থেকে জবাবে বলেন আমি দশ মিনিট আগে বের হয়ে গেছি। এরপর আরেকটি ফোন থেকে মহসিন এ প্রতিবেদককে ফোন করে বলেন, আপনি ভুল নাম্বারে ফোন করেছেন আমি মহসিন না, আমি শরিফুল। ফোনে অনেক খারাপ ভাষায় কথা বলেন।
মহসিন ফোন কল রিসিভ করে প্রথমে তার নাম স্বীকার করেন পরে তার নাম বলেন শরীফুল। তিনি কর্মক্ষেত্রের বিষয়টিও অস্বীকার করেন এবং নিজেকে একজন দোকানদার বলে দাবি করেন।
অঞ্চল ১০ এর সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মহসিনের এই ছলনা ও ঘৃণ্য অপরাধ ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ'র কাছে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক মহল।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.