February 24, 2025, 12:45 am


মো: হুমায়ূন কবির

Published:
2024-10-03 14:34:50 BdST

ডেঙ্গুর প্রকোপবিলম্বে হাসপাতালে ভর্তিতে বেশি মৃত্যু


এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ গেল কয়েক বছরের তুলনায় বেশি উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। ডেঙ্গু ভাইরাসজনিত রোগ। এই রোগ এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়।

এমন পরিস্থিতিতে কিটতত্ত্ববিদসহ গবেষক ও বিশ্লেষকরা বলছেন, আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে ভর্তিতে বিলম্ব হওয়ার কারণেই ডেঙ্গুতে এবার বেশি মৃত্যু ঘটছে। তাছাড়া ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পর রোগীকে দফায় দফায় হাসপাতাল পরিবর্তন না করার পরামর্শ দিয়েছেন দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় রোগী স্থানান্তরের ফলে মাঝপথে সুচিকিৎসা না পাওয়ায় যে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে, সে কারণেও ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার ও ঝুঁকি বাড়ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন, একক উদ্যোগে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। এজন্য জনসচেতনা বাড়ানোর পাশাপাশি জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। দুটি কাজকে একত্রে করা সম্ভব হলে ডেঙ্গু প্রার্দুভাব কমানো সম্ভব হবে। এছাড়া মশা নিধনে যারা সক্রিয় ভূমিকা রাখেন তাদের কিউলেক্স ও এডিশ মশার মধ্যকার তফাৎ সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকতে হবে। কেননা তারা এডিশ মশার লার্ভা ধ্বংস করার পরিবর্তে কিউলেক্স মশার প্রজনন ক্ষেত্রে ওষুধ ছিটিয়ে নিজেদের দায় শেষ করছেন। ফলে এডিশ মশার লার্ভা থেকে মশার বিস্তার ঘটছে। একই সঙ্গে এডিশ মশার লার্ভা ধ্বংসের সঙ্গে যদি উড়ন্ত মশাকে নিধন করা না যায় তাহলে ডেঙ্গু মশার নিয়ন্ত্রণ কখনই সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন কিটতত্ত্ববিদরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, যা ৯ মাসের মোট মৃত্যুর প্রায় ৫০ শতাংশ। জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে মোট মারা গেছেন ১৬৩ জন। অন্যদিকে, গত ৯ মাসে দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৩০ হাজার ৯৩৮ জন। যেখানে ১৮ হাজার ৯৭ জনই আক্রান্ত হয়েছেন সেপ্টেম্বরে। যা মোট আক্রান্তের প্রায় ৬০ শতাংশ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক উপদেষ্টা ডা. অধ্যাপক মোজাহেরুল হক প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ডেঙ্গু মশাবাহিত একটি রোগ। তাই যদি মশাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তাহলে ডেঙ্গু মশা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। ফলে মশা নিয়ন্ত্রণকে সবার আগে গুরুত্ব দিতে হবে।

মশা নিয়ন্ত্রণ কি সরকারের একার পক্ষে সম্ভব? এমন প্রশ্নের জবাবে এই চিকিৎসক বলেন, না, কখনই সম্ভব নয়। এখানে জনগণকে সম্পৃক্ত করার একটা বিষয় রয়েছে। জনগণ যতক্ষণ না সম্পৃক্ত হবে- এই মশা নিধনে কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া যাবে না।

তিনি আরো বলেন, শহর বা গ্রামগুলোতে যেসব খাল ছিল সেগুলো ভরাট হয়ে গেছে। এখানের জমা পানিতে এডিশ মশার জন্ম হয়, সেখান থেকে ডেঙ্গু মশার বিস্তার ঘটছে। ডেঙ্গু থেকে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের প্রথম কাজ হবে জনগণকে সচেতন করে তোলা।

সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, ডেঙ্গু থেকে বেঁচে থাকতে হলে মশা থেকে বেঁচে থাকতে হবে। মশার প্রজনন ক্ষেত্র আমাদের বাসা ও এর আশপাশ। সবচেয়ে বেশি হতে পারে আমাদের যে খালগুলো রয়েছে, পতিত জমি রয়েছে, যেখানে পানি জমে সেগুলোতে। এগুলো সংস্কারের মাধ্যমে পানির স্রোতধারার ব্যবস্থা করতে পারলে ডেঙ্গুবাহিত রোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করা যাবে।

তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সব সময় যেটা বলে, আমাদের জনসচেতনা যেমন বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। দুটি জিনিস পাশাপাশি থাকতে হবে। ডেঙ্গুতে মৃত্যুর প্রধান কারণ কি জানতে চাইলে বলেন, এডিশ মশা কাউকে কামড়ালে এর মাধ্যমে মানুষের রক্তটাকে দূষিত করে। আর জ্বর বেশি হলে, বিনাচিকিৎসায় দীর্ঘসময় পার করলে এবং সেটা ডেঙ্গুর কারণে হলে ওই রোগীর হিমোগ্লোবিন কমে যায়। রক্তের কণিকাগুলো ভেঙে যায়। এর ফলে রক্ত শূন্যতা থেকে বেশির ভাগ মানুষ মারা যায়।

ডেঙ্গুতে মৃত্যুর অন্যতম কারণ বিলম্বে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া। কোন একটা রোগী একটি হাসপাতালে ভর্তি হলো এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। মাঝখানে যে সময়টা ক্ষেপণ হয়, এতে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে। অনেক ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যু হয়। বলেন, অসুস্থ রোগীতে যে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হবে সেখানেই রাখার চিন্তা করা। কারণ এ সময়ে অর্থাৎ চিকিৎসা গ্রহণকালে একটা রোগীকে বিভিন্ন হাসপাতালে ট্রান্সফার না করা। এই দুটি যদি কমানো যায়, তাহলে মৃত্যু হার কমানো সম্ভব।

ডেঙ্গু এখন আর শহরের রোগ নেই, সারা দেশেই এটি ছড়িয়ে গেছে। সবাই তো জানি এডিস শত্রু মশা। তাই মশা নিধন করতে হবে, নিজেকে মশার কামড় থেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে ভয় পাওয়া যাবে না, প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনো ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে তীব্র পেটে ব্যথা, বমি, শ্বাস নিতে অসুবিধা এবং নাক, মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ার কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে। সরকারের একার পক্ষে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়। নাগরিকদের মশা নিধনে সক্রিয় হতে হবে।ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মানুষকে সচেতন করার কাজ করতে হবে, মানুষকে বোঝাতে হবে।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.