February 23, 2025, 9:31 pm


নেহাল আহমেদ

Published:
2024-10-08 21:09:24 BdST

অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা গলার কাটা হয়ে উঠেছে রাজবাড়ীতে


রাজবাড়ী জেলা যারা বাইরে থেকে দেখতে আসেন তারা রাজবাড়ী জেলার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে যান। ইতিহাস ঐতিহ্যের রাজবাড়ী আমরা যে অবস্থায় পেয়েছি তা রক্ষা না করে যেন নষ্ট করার প্রতিযোগিতায় নেমেছি। কোথাও আর খেলার মাঠ পাওয়া যায় না। পুকুর জলাশয়গুলো ভরাট হয়ে গেছে।

প্রতিষ্ঠার শত বছর পার হলেও রাজবাড়ী পৌর এলাকায় পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। ফলে অপরিকল্পিত এই ড্রেনেজ মহল্লাবাসীর দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই পাড়া-মহল্লা তলিয়ে যায় পানির নিচে। শহরের ছোট বড় সব খাল, পুকুর ও নালা ভরাট করে বাড়ি তৈরি করা হয়েছে।

সরেজমিনে পৌরসভা সদরের ভবানীপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায় প্রায় অর্ধশত পরিবার পানি বন্ধ হয়ে পড়েছে। সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় শরীরের অনেক জায়গায়।

অভিযোগ আছে যে, ড্রেন নির্মাণের নামে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা লোপাট করা হয়ে থাকে। নিয়োগ দেয়া হয় মেয়রের নিজস্ব লোকজন ও বাহিনীকে।
ড্রেন উন্নয়নে কেউ কার্যকর ভুমিকা পালন করেননি।

প্রথম শ্রেণির রাজবাড়ী পৌরসভার মোট আয়তন ৩৯.৪২ বর্গ কিলোমটিার। ২৫টি মৌজা নিয়ে গঠিত রাজবাড়ী পৌরসভায় তিন লাখ পরিবার বসবাস করেন।

পৌরসভার তথ্য বাতায়ন সূত্রে জানা গেছে, চলাচলের জন্য পৌর এলাকার বেশির ভাগ রাস্তা ভাঙাচোরা ও কাঁচা রয়েছে।

সূত্রমতে, রাজবাড়ী শহরে ৭৫.৩০ কিলোমিটার পাকা রাস্তা রয়েছে। অন্যদিকে কাঁচা রাস্তা আছে ৫৪.৬১ কিলোমিটার। হাল আমলে কাঁচা-পাকা ড্রেনের কোন পরিসংখ্যান পৌরসভায় না থাকলেও পুরাতন তথ্য বলছে রাজবাড়ী শহরে ১০৭ কিলোমিটার ড্রেন রয়েছে।

এরমধ্যে পাইপ ড্রেন আছে ৭ কিলোমিটার, ইটের ড্রেন ৩৫ কিলোমিটার, আরসিসি ১৫ কিলোমিটার, প্রাইমারি ১০ কিলোমিটার ও কাঁচা ড্রেন ৪০ কিলোমিটার।

শহরের প্রধান ড্রেনটির সঙ্গে পাড়ামহল্লার ড্রেনের সংযোগ না থাকায় গোটা পৌর এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা লেজেগোবরে দশার সৃষ্টি হয়েছে। কলেজপাড়া, নতুন বাজার, বাজার পাটশালা স্কুল রোড, মাছ বাজার, বিনোদপুর, মহিলা কলেজ রোড, হাসপাতাল রোড, চালবাজার, তরকারি বাজার, ফলবাজার ও খোদ রাজবাড়ী শহরের প্রধান সড়কেও অল্প বৃষ্টিতে হাঁটু পানি হয়ে যায়।

এই বিষয়ে রাজবাড়ী পৌরসভার প্রধান প্রকোশলী এই প্রতিবেদককে বলেন, বিভিন্ন এলাকায় নতুন নতুন আরসিসি ড্রেন তৈরি হচ্ছে। দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করি।

রাজবাড়ীতে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা হয়ে পানি বন্দি হয়ে রয়েছে রাজবাড়ী শহরের ভবানীপুর গ্রামের শতাধিক পরিবার। বাড়িতে পানি জমে থাকায় গবাদী পশু নিয়ে বিপাকে পরেছেন অনেকে।

ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভবানীপুর লাল মিয়া সড়ক কবরস্থানের সামনে থেকে রাস্তার পাশদিয়ে একটি সরু ড্রেন করা হয়েছিল। যেখান দিয়ে ভবানীপুর মিলপাড়া, কবরস্থান, বড়লক্ষীপুর-ড্রাই আইস ফ্যাক্টরির পেছনের মাঠের পানি বের হতো। কিন্তু কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ড্রেনের উৎসমুখ বন্ধ করে দিয়েছে। যেটুকু ড্রেন খোলা আছে তা ময়লা আবর্জনা ও মাটি পড়ে ভরে গিয়েছে। শহরের শহীদ খুশি রেলওয়ে মাঠের পাশে ময়লার স্তুপের কারণে ড্রেন দিয়ে আর কোন পানি বের হচ্ছে না। এই কারণে বৃষ্টির পানি আটকে গত এক মাস ধরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।

গত দুই তিন দিনের বৃষ্টিতে পানি আরও বেড়ে গিয়ে ভবানীপুর মিলপাড়া এলাকার শতাধিক বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। বাড়িতে পানি ওঠায় অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে আত্মীয়দের বাড়িতে চলে গেছে। কেউ কেউ গৃহপালিত পশু গরু-ছাগল নিয়ে রেল লাইনের উপর আশ্রয় নিয়েছে। নোংরা ও পঁচা পানিতে চলা ফেরার কারণে অনেকের হাত পায়ে ঘাঁ দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভবানীপুর কবরস্থানের সামনে দিয়ে একটি সরু ড্রেন রয়েছে। ড্রেনের উৎসমুখ বালু ভরাট করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ড্রেনের শেষ মাথা পান্না চত্ত¡র ইউমার্কে এসে শেষ হয়েছে। ইউমার্কেট সংলগ্ন ড্রেনের শেষ মাথায় ময়লা আবর্জনার স্তুপ জমে পানি আটকে গিয়েছে। পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের ভবানীপুর গ্রামের মিলপাড়া এলাকাজুড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার সবগুলো বাড়ির চারপাশে থৈ থৈ পানি জমেছে। নিচু বাড়িঘরে ঘরের ভেতর পানি প্রবেশ করেছে। অনেকেই রেল লাইনের পাশে পলিথিনের তাবু বানিয়ে গরু রাখার জায়গা বানিয়েছে। কেউ কেউ বাড়িতে প্রবেশ করার জন্য বাঁশের সাঁকো বানিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করছেন।

পানিবন্দি আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমি এখানে ত্রিশ বছর ধরে বসবাস করছি। কিন্তু এ রকম জলাবদ্ধতা কখনও হয়নি। ড্রেনটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে পানি বের হতে পারছে না। আমরা এলাকার শতাধিক পরিবার পানি বন্দি হয়ে আছি। গরু ছাগল নিয়ে আমরা আপাতত রেলরাস্তায় উঠেছি। রান্নাবান্না খাওয়া দাওয়া বন্ধ। পানির মধ্যে চলাচল করার কারণে হাত পায়ে ঘাঁ হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন চুলকানি রোগবালাই দেখা দিচ্ছে। রেললাইনে এসে সময় কাটাই।’

মারজান নামে এক গৃহবধু বলেন, ‘বাড়ির ভেতর হাটু পানি। আসা যাওয়া করা যায় না। রাস্তাঘাট সব পানির নিচে। পানি অতিরিক্ত নোংরা। নামতেও ঘৃণা করে। তাও নামতে হচ্ছে। আমরা এর প্ররিত্রাণ চাই।’

আব্দুর রহিম ডাবলু বলেন, ‘ভবনীপুরের এই ড্রেনটি পরিষ্কার না করার কারণে বৃষ্টি নামলেই এলাকার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পরে। আমার বাড়ির চারপাশে পানি। বাড়ি থেকে বের হতে হলে হাটু পানি ভেঙ্গে বের হতে হয়। আমরা প্রথম শ্রেণীর পৌরসভার বাসিন্দা। অথচ পৌরসভার বাসিন্দা হয়েও আমরা পানি বন্দি হয়ে পরে আছি। আমাদের এই পানির সমস্যা হতে দ্রæত সমাধান চাই।’

রাজবাড়ী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এএইচএস মো. আলী খান বলেন, ‘রাজবাড়ীর বেশির ভাগ ড্রেনই অপরিকল্পিত ভাবে করা হয়েছিল। অনেক ডোবাই ভরাট হয়ে গেছে। সেই কারণে এখন আর পানি বের হতে পারছেনা। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। ডোবাগুলো উদ্ধার করা গেলে পরিকল্পিত ভাবে ড্রেন নির্মাণ করা হলে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে।’

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.