সুরাইয়া মাহমুদা মিষ্টি
Published:2024-10-15 11:29:19 BdST
হাসপাতালের কোয়ার্টারের পাশে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ
বক্ষ্যব্যাধি, কলেজ অফ নার্সিং মহাখালি ও ক্যান্সার হাসপাতালের সরকারি কোয়ার্টারের পাশে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে মাসিক প্রায় ২০ লাখ টাকা অবৈধ ভাবে উপার্জনের অভিযোগ জানা গেছে। শুধু তাই নয়, স্টাফদের জন্য তৈরীকৃত রুম গুলোও দৈনিক, সাপ্তাহিক এবং মাসিক ভিত্তিতে ভাড়া দেয়া হচ্ছে। আবার গ্যাসের চুলায় রান্না করতে আলাদাভাবে রোগিদের নিকট হতে ২০ টাকা থেকে ৫০ টাকা করে নেয়া হয়। পাশাপাশি ক্যান্সার ও বক্ষ্যব্যাধি হাসপাতালে ঢুকার দুই পাশে ফুটপাতে প্রায় একশত দোকান পাট গড়ে উঠেছে। স্থানীয় মাস্তান, হাসপাতালের স্টাফ এবং প্রশাসন এই টাকা ভাগাভাগি করে খাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে বক্ষ্যব্যাধি হাসপাতালের সরকারি কোয়ার্টারে গিয়ে নার্সিং সুপারভাইজার দয়া রাণী বৌদ্ধ’র সাথে ছদ্মবেশে ভাড়া নেয়ার কথা হয়। তিনি ভাড়া নেয়ার কথা শোনা মাত্রই খুশিতে গদগদ। হাস্যজ্জল দয়া রাণী বলেন, ভাড়া কি আজকেই নিবেন ? প্রশ্ন উত্তরে দয়াকে বলা হয় মাসের শেষে আসবো। তখন তিনি বলেন তাহলে একমাসের ভাড়া ১৫ হাজার টাকা অগ্রীম দিয়ে যান। তখন দয়া রাণীকে বলা হয় রোগী যখন আসবে তখন আমি এসে টাকা দিবো। দয়া রাণী অপর এক প্রশ্নবানে জানান, আমি ছয়টি রুমসহ ডায়নিং রুম লোক প্রতি ৫ শত টাকা করে প্রতিদিন তিন হাজার টাকা ভাড়া পাই। তাতে আমার মাসিক নব্বই হাজার টাকা ভাড়া আসে। তবে এই ভাড়ার টাকার একটা অংশ হাসপাতালের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদেরকেও দিতে হয়। কাকে দিতে হয় তা জানতে চাওয়া হলে দয়া রাণী চেপে যান। এছাড়াও গ্যাসের চুলায় রান্না বাবদ রোগীদের স্বজনদের কাছ থেকে প্রতিদিন ২০ থেকে ৫০ টাকা করে নেন দয়া রাণী। দয়া রানী আরও বলেন, তিনি এই বিল্ডিংয়ে ২০ বছর যাবৎ আছেন। এখানে শুরু থেকেই এইরকম ভাড়া দিয়ে আসছি। দয়া রাণীকে ফোন করে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন যা পাইছেন তাই লিখে দেন। আর আমি আমার বাসা ভাড়া দিছি। কলেজ অফ নার্সিং মহাখালীতে মোঃ সোহেল দীর্ঘদিন যাবৎ চাকুরী করেন। তিনি বিথী নামের কোয়াটারে নিচ তলায় বিথী-খ বাসায় বসবাস করেন। তার স্ত্রী গ্যাস্ট্রো লিভার হাসপাতালে সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে চাকুরী করেন। প্রতিনিধি বাসা ভাড়ার ছদ্মবেশে সরেজমিনে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলে সোহেল ও তার স্ত্রী বলেন, তারা এই বাসায় দীর্ঘদিন যাবৎ এক রুম ভাড়া দিচ্ছেন। এক রুম ভাড়া ছয়শত টাকা। মাস হিসেবে ভাড়া নিলে আঠার হাজার টাকা। বর্তমানে একজন ভাড়াটিয়া আছে। তারা দু’এক দিনের মধ্যে রুম ছেড়ে দিবে। আপনি ভাড়া নিলে আজকে এক মাসের ভাড়া অগ্রিম দিয়ে যান। আজকে অগ্রিম না দিলে রুম ভাড়া হয়ে যাবে। সোহেল এর স্ত্রী আরও বলেন, তিনি গ্যাস্ট্রো লিভার হাসপাতালে সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে চাকুরী করেন। গ্যাস্ট্রো লিভার হাসপাতালের কোয়ার্টার থেকে হাসপাতাল অনেক দুরত্ব। তাই তিনি তার স্বামীর কলেজের কোয়ার্টারে বসবাস করেন। প্রতিনিধি সব তথ্য প্রমান নেওয়ার পর মোঃ সোহেল ও তার স্ত্রী কোনভাবে সাংবাদিক বুঝতে পেরে কিছুক্ষণ পর প্রতিনিধির পেছনে ছুটে এসে বলেন, ম্যাডাম আপনাকে সরি বলতে হলো, আমার ভাড়াটিয়া যারা রোগী সহ আছেন, তারা রুম ছেড়ে দিবেন না। তারা আরও একমাস থাকবেন। আমরা আপনাকে ভাড়া দিতে পারছিনা।
কলেজ অফ নার্সিং মহাখালির অধ্যক্ষ মদিনা খাতুন এর নিকট জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছু জানিনা। তবে আপনি জানলে আমাকে জানাবেন। আমি এ ব্যাপারে টিম গঠন করে ব্যবস্থা নিব।
বক্ষব্যাধি হাসপাতালের প্রফেসর ডাঃ মোঃ খাইরুন আনাম, পরিচালক ও ডাঃ মোঃ আব্দুল্লাহ আল মেহেদী, চিকিৎসা তত্ত্বাবধায়ক মন্ত্রণালয়ে মিটিং এ থাকার কারণে তাদের মন্তব্য জানা যায়নি।
প্রশাসনিক কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম এর কাছে জানার জন্য তাকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, বক্ষব্যাধি হাসপাতালের কোয়ার্টারের রুম ভাড়া এবং কোয়ার্টারের পেছনে অবৈধ স্থাপনা সরকারী ভাবে অনুমোদন দেয়া হয়নি।
সরেজমিনে বক্ষ্যব্যাধি হাসপাতাল, ক্যান্সার হাসপাতাল কলেজ অফ নার্সিং মহাখালির কোয়ার্টার গুলোতে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় শতাধিক অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এসব স্থাপনা গুলোতে নার্স, ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারি ওয়ার্ড বয়, সুইপার দারোয়ান, সরদার, কিচেন সার্ভেন্ট , এমএলএসএস, আয়া, কুক ও মশালসি উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা থাকেন। এদের মধ্যে বেশকিছু অসাধু অবৈধ স্থাপনা তৈরী করে বছরের পর বছর রোগীদের কাছে ভাড়া দিয়ে অবৈধভাবে টাকা উপার্জন করছেন। তারা কোন মিডিয়ার লোকজন গেলে তাদেরকে নানাভাবে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। তাদের কোয়ার্টারের সামনে নিজেরা সিকিউরিটি গার্ড রেখেছেন। তারাই সব সামলান। কাঁচা-পাকা এসব অবৈধ স্থাপনাগুলো যে কোন সময় ভেঙ্গে পড়তে পারে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, ভাড়াটিয়ার কোন আসবাবপত্র লাগেনা। তারা নিজেরাই সব দেন। অধিকাংশ ভাড়াটিয়ারা হলো রোগী এবং তাদের স্বজনরা। ভেতরে ময়লা আবর্জনার কারনে র্দুগন্ধে থাকা যায়না। খুব কষ্টে রোগীরা দিনাতিপাত করছেন। স্থানীয়রাও বাসা ভাড়ার বিষয়ে অবগত। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপরে জানেন না বলে এ প্রতিবেদককে জানান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা জানান, এ ব্যাপারে হাসপাতালের কিছু অসাধু কর্মকর্তা জড়িত। তারাও এখান থেকে সুবিধা পান।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.