February 23, 2025, 2:29 pm


নেহাল আহমেদ, রাজবাড়ী

Published:
2024-10-24 22:21:09 BdST

রাজবাড়ীর শতবর্ষী প্রাচীন খ্রিস্টান কবরের প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন হারিয়ে যাচ্ছে


ইএনওর বাসভবন। এখানে বসবাস করতেন বাগদী কন্যা হাজেরা বেগম

রাজবাড়ী শহরের প্রাণকেন্দ্রে রেলওয়ে বিভাগের এ ই এন এর বাসভবনের দক্ষিণ-পশ্চিম কোনে ১৯২৮-২৯ সালে নির্মিত তদানীন্তন ইংরেজ এ ই এন (সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী-সে সময়ে রেলওয়ে এসডিও হিসেবে সমধিক পরিচিত) Mr. Pestonjee সাহেবের স্ত্রী রাজবাড়ীর বাগদী কন্যা হাজেড়া বিবির প্রায় শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী কবর রয়েছে।

কথিত আছে একটি অসম গোত্রের এই বিবাহ সেই সময়ে প্রেমের মহত্ব হিসাবে দেখা হয়েছিলো। প্রেম কোন ধনী গরীব বা জাতি ভেদ মানে না। প্রেম নিজেই একটা সম্প্রদায়।।

ধারনা করা হয়, ১৯১১ সালে রাজবাড়ী শহরের পশ্চিম প্রান্তে ডঃ সাইলাস মিড এবং মিস এডিথ এল কিং প্রতিষ্ঠা করেন খ্রিস্টান চার্চ। যারা ফাদার অব দি অস্ট্রেলিয়ান ইন ইন্টিয়া নামে খ্যাত। শুধু ধর্ম প্রচারই নয়-মানুষের মৌলিক চাহিদা খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা সেবা দানের মাধ্যমে তারা দেশের বিভিন্ন এলাকা হতে বাঙালি খ্রিস্টান এনে খ্রীষ্টানপাড়া গড়ে তোলেন। এখানে সুশীল বালা দে গড়ে তোলেন একটি অবৈতনিক প্রাইমারী স্কুল। এখানেই পড়তে আসতো বাগদী পরিবারের সুশ্রী কন্যা হাজড়া বিবি। মার্জিত আচরণ ও সুরুচিবোধের কারনে সে স্থান করে নিয়েছিল খ্রিস্টান পরিমন্ডলে।

১৯২০ সালের দিকে রেলওয়ে বিভাগের তদানীন্তন ইংরেজ এ ই এন (সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী-সে সময়ে রেলওয়ে এসডিও হিসেবে সমধিক পরিচিত) Mr. Pestonjee সাহেবের সাথে এই হাজড়ী বিবির বিবাহ সম্পন্ন হয়। ১৯২৮-২৯ সালের দিকে এই হাজড়ী বিবি গুরুতর অসুস্থ হয়ে মারা গেলে সেই ইংরেজ এ ই এন সাহেব তার রেলওয়ের বাসভবনের দক্ষিণ-পশ্চিম কোনে (বর্তমানে সরকারী পাবলিক লাইব্রেরীর পিছনে) তাকে সমাহিত করেন। সেখানে কবর নির্মিত হয় ১০ ইঞ্চি গাঁথুনীর ১০ ফুট গভীর থেকে ১১ ফুট দৈর্ঘ ও ৬ ফুট প্রস্থের। যার উপরের ঢাকনা ৬ ইঞ্চি পুরু। ওজন প্রায় ২০ মন। সবটাই সাদা সিমেন্টে পালিশ করা।

কবরটিতে প্রতিদিন শ্রদ্ধাঞ্জলী দেয়া হতো। সারারাত বাতির ব্যবস্থা ছিল সে সময়ের রেলওয়ে বিভাগের কায়দায়। পরিচর্যার জন্য সেবকও নিযুক্ত ছিল। তবে কালের বিবর্তনে আজ অযত্ন আর অবহেলায় পতিত।

সব সোনা-দানা ধন দৌলত দিয়ে কবর দেয়া হয়েছে এই জনশ্রুতির বদৌলতে কবরের উপরের ঢাকনা সরানো এবং নীচ থেকে কবরের ওয়াল ভেঙ্গে চুরির অপপ্রয়াস চালিয়েছে অনেকে।

সর্বশেষ এই খ্রিস্টান কবর ভেঙ্গে চুরির বিষয়টি বিশিষ্ট লেখক জনাব খালেদ সালাহউদ্দিন জগলুলের নজরে এলে তিনি লিখিতভাবে জেলা প্রশাসক মহোদয় বরাবরে আবেদন জানান কবরটি সংরক্ষণের জন্য।

প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এই খ্রিস্টান কবরটি জেলার ঐতিহ্যবাহী প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন হিসেবে সংরক্ষণ করার করা দরকার বলে মনে করেন রাজবাড়ীর সচেতন মানুষ।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.