শাহীন আবদুল বারী
Published:2025-06-26 20:17:36 BdST
মাদক রোধে কোন সফলতা নেই
আজ (বৃহস্পতিবার) আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস। সারা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশেও পালিত হয়েছে। প্রতি বছর ২৬ জুন মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার রোধে সারা বিশ্বে পালিত হয় দিবসটি।।
'মাদক সেবন রোধ করি, সুস্থ সুন্দর জীবন গড়ি' এমন স্লোগানে বিভিন্ন ব্যনারে সারাদেশে সরকারী ভাবে পালিত হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবসটি শুধু একটি দিন নয়, বরং একটি প্রতিজ্ঞা—মাদকমুক্ত সমাজ গঠনের অঙ্গীকার। আধুনিক সভ্যতার নানা অগ্রগতি সত্ত্বেও মাদক আজ আমাদের সমাজ, রাষ্ট্র এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তরুণ সমাজ আজ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে। শুধু ব্যক্তিগত জীবন নয়, পারিবারিক বন্ধন, সামাজিক শান্তি ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাও মাদকের কারণে চরম সংকটে পড়ছে। তাই এই দিবসটিকে ঘিরে নতুন করে আমাদের ভাবতে হবে, কীভাবে মাদকমুক্ত ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাওয়া যায়। মাদকবিরোধী আন্দোলন আরো শক্তিশালী হতে হবে। বিশেষ করে পারিবারিক ভাবে কঠোর হতে হবে অভিভাবকদের।
সূত্রমতে, সীমান্ত ও আকাশপথে আসা মাদকের চালান প্রতিরোধে ব্যর্থ হওয়া, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা, জামিনে বেরিয়ে আবারও মাদক কারবারে জড়ানো, অভ্যন্তরীণ চাহিদা হ্রাসে গুরুত্ব না দেওয়া, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, প্রভাবশালীদের বলয়ে থেকে মাদক কারবার করা ও সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিতে না পারাসহ বিভিন্ন কারণে মাদকের চালান বেড়েই চলেছে। যুগ যুগ ধরে মাদক ব্যবসা বাড়ছে। কোনভাবেই মাদক রোধ হচ্ছেনা।
অপরাধ বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিত্তশালী পরিবারের সদস্যরা মাদকের সঙ্গে সংযোগটাকে স্বাভাবিক মনে করে। বন্ধু, কোনো বড় ভাই বা কাছের কেউ থেকে তাদের মাদকের যাত্রা শুরু হয়। পরে আসক্তির পর্যায়ে উপনীত হয় এবং প্রতিদিন সে মাদক গ্রহণ করে। ভয়াবহ এই মাদকগুলো কিন্তু অন্য দেশ থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। সেটি সীমান্ত, এয়ারপোর্ট বা ইন্টারন্যাশনাল কুরিয়ার হোক কোনো না কোনো ভাবে দেশে আসে। সীমান্ত তো উন্মুক্ত নেই সেটি সুরক্ষার জন্য তো ব্যবস্থাপনা রয়েছে, এই ব্যবস্থা ফাঁকি দিয়ে মাদক প্রবেশ করে কীভাবে? যে বা যারা এসব জায়গায় দায়িত্বে আছেন তাদের মধ্যে একটা ঘাটতি রয়েছে। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে এই দায়িত্বে থাকা অনেকে অর্থের বিনিময়ে দেশে মাদক প্রবেশে সুযোগ করে দেন। যারা মাদক বাণিজ্য করবে বা এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যে বা যারা যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে। অন্যথায় এটি আরও ভয়াবহ মাত্রায় ছড়িয়ে পড়বে। গুলশানের একটি মাদক পরিবারের ঘটনা তুলে ধরে এক ব্যবসায়ী বলেন, ইভানা সোনিয়া ওরফে সোনিয়া ইভানা থাকেন পরিবার নিয়ে গুলশান নিকেতনে। তিনি প্রশাসনের ছত্রছায়ায় দেদারসে মাদক ব্যবসা করেন। মাদকের আড়ালে বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে ব্লাকমেইল করা তার পেশা।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, মাদকাসক্ত হয়ে পড়ার অন্যতম কারণ মাদকের সহজলভ্যতা। মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে। মাদক বাণিজ্য বন্ধ করতে না পারলে আরও ভয়াবহ মাত্রায় আসক্তির প্রবণতা বেড়ে যাবে। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, মাদকাসক্তি একটি রোগ। মাদক গ্রহণের পর রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলে তার মস্তিষ্ক অনুভূতি শূন্য হয়ে পড়ে। অসংলগ্ন ভাব, সহিংস আচরণসহ জটিল রোগে আক্রান্ত হয়। মাদকাসক্তদের সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে ভয়াবহ পরিণতি সম্মুখীন হতে হবে।
মাদকের থাবায় ধুঁকছে অসংখ্য নারী-পুরুষ ও শিশু। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যেও বাড়ছে আসক্তি: মাদকের বিভীষিকাময় থাবায় ধুঁকছে অসংখ্য নারী-পুরুষ ও শিশু। উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নবিত্ত সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে বাড়ছে আসক্তির প্রবণতা। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে মাদকাসক্তের পরিবার। স্বপ্নভঙ্গ হচ্ছে অসংখ্য মানুষের। চিকিৎসা নেয়ার প্রবণতা বাড়লেও নানাবিধ কারণে চিকিৎসা নিতে অনীহা মাদকাসক্ত রোগীদের। সামাজিক ও অর্থনৈতিক চাপে দিনের পর দিন অনেক পরিবার গোপন রাখেন এই রোগকে। এদিকে মাদক বাণিজ্যে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে মাদক সিন্ডিকেট।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত দশ বছরে দেশে সরকারি ও বেসরকারি নিরাময় কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩ লাখ ২০ হাজার ৮৫৩ জন মাদকাসক্ত নারী-পুরুষ ও শিশু। বেসরকারি সংস্থা মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) তথ্য মতে, দেশে মাদকসেবী প্রায় দেড় কোটি। এর মধ্যে ১ কোটি মাদকাসক্ত এবং বাকি ৫০ লাখ মাঝেমধ্যে মাদক সেবন করে। মাদকাসক্তদের ৮০ শতাংশই কিশোর-তরুণ। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত। মাদকাসক্তদের ৩০ শতাংশ শুধু নেশার খরচ জোগাতে অপরাধ ও অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৯৮৭ সালের ৭ই ডিসেম্বর সিদ্ধান্ত নেয় প্রতি বছর ২৬শে জুন আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস পালনের। মাদকের ভয়াবহ থাবা থেকে বাঁচতে এবং সবাইকে সচেতন করতে দেশেও দিবসটি পালিত হয়। এই দিবসটিকে আরও বলা হয় মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ইয়াবা, গাঁজা, কোকেন, ফেনসিডিল, ক্রিস্টাল মেথ, হেরোইনসহ ভয়ঙ্কর মাদকের ব্যবহার বাড়ছে। চলছে হোম ডেলিভারিও। তরুণ-তরুণী, শিশু-কিশোরদের মধ্যে মাদকসেবনের প্রবণতা বাড়ছে। জানা যায়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে সরকারি চারটি নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে তেজগাঁও শিল্প এলাকায় কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ১২৪টি বেড আছে। এখানে নারীদের জন্য রয়েছে ২৪টি, পুরুষ ৯০টি এবং শিশুদের জন্য ১০টি। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহীতে একটি করে নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৫ সালে মাদকাসক্ত রোগী দেশের সরকারি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের আন্তঃবিভাগ ও বহিঃবিভাগে নারী-পুরুষ ও শিশু চিকিৎসা নিয়েছেন ৯৯৮৭ জন। ২০১৬ সালে ১২৮১৫ জন। ২০১৭ সালে ১৪৬৮৮ জন। ২০১৮ সালে ২৪১৪৩ জন। ২০১৯ সালে ২৭৯৮৩ জন। ২০২০ সালে ১৪৯৫২ জন। ২০২১ সালে ১৯২০৮ জন। ২০২২ সালে ১৬৩১৬ জন। ২০২৩ সালে ১৪৩৯৬ জন। ২০২৪ সালে ১৩০২৪ জন। গত দশ বছরে মোট চিকিৎসা নিয়েছেন ১ লাখ ৬৭ হাজার ৫১২ জন। এদিকে ২০১৫ সালে মাদকাসক্ত রোগী বেসরকারি নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা নিয়েছেন ৬৯১২ জন, ২০১৬ সালে ৯৩৯৭ জন, ২০১৭ সালে ১০৬৬৭ জন, ২০১৮ সালে ১২৮৯২ জন, ২০১৯ সালে ১৩৮৫২ জন, ২০২০ সালে ১৫১৮১ জন, ২০২১ সালে ১৭৫০৭ জন, ২০২২ সালে ১৮৬১৯ জন, ২০২৩ সালে ২২২৬২ জন, ২০২৪ সালে ২৬০৫২ জন। গত দশ বছরে মোট চিকিৎসা নিয়েছেন ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৪১ জন। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত দশ বছরে দেশে সরকারি ও বেসরকারি নিরাময় কেন্দ্রগুলোতে ৩ লাখ ২০ হাজার ৮৫৩ জন মাদকাসক্ত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।
এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. হাসান মারুফ জানান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সব সময় মাদক বিরোধী অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি আমরাও দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদক নির্মূলে অভিযান চলভে এবং এটি নিয়ন্ত্রণে চলবে। নেশার টাকা জোগাতে মাদকসেবীরা খুন করতে দ্বিধা করছে না মাদক কারবারিরা!
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাদকসেবনের টাকা জোগানো ও কেনাবেচা নিয়ে সংঘটিত অপরাধ প্রতিনিয়ত ঘটছে। নেশার টাকা জোগাতে মাদকসেবীরা খুন করতে দ্বিধা করছে না। দিনে দিনে এই সমস্যা আরও প্রকট হচ্ছে। সাইমন নামে এক ব্যক্তি দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছেন। তার মা বলেন, সন্তানটি দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। ঘরে একটি রুমে তালাবদ্ধ করে রাখতে হতো। বাইরে বের হলে পরিবারের লোক ও বাইরের মানুষকে মারতো। কিছু বলতে গেলে আমার দিকেও মাঝে মাঝে লাঠি হাতে তেড়ে আসতো। খাবার দিতে গেলে বকাঝকা করতো। ওদের বাবা অনেক আগেই মারা যায়। ওকে সবসময় আতঙ্কে থাকতে হয়। সন্তানের মাদকসেবনের ব্যাপারটি আগে বুঝতে পারিনি। পরে যখন বুঝতে পেরেছি তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে প্রথমে ওর মাদকের হাতেখড়ি হয়। পরবর্তীতে সেটি নেশায় পরিণত হয়। ছেলেটিকে সুস্থ করে তুলতে কয়েকবার রিহ্যাবে দেয়া হয়েছে। বেশি অসুস্থতার কারণে এখন আবার পরামর্শ নেয়ার জন্য নিরাময় কেন্দ্রে এসেছি।
কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের আবাসিক মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মো. রাহেনুল ইসলাম জানান, মাদকাসক্ত ব্যক্তির আচরণে পরিবর্তন আসে। অসংলগ্ন আচরণ, মিথ্যা বলা ইত্যাদি বেড়ে যায়। মেজাজ খিটখিটে অথবা বেশি ঘুমাতে থাকাসহ বেশি কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। এসব নজরে পড়লে সতর্ক হতে হবে। ‘মাদকাসক্তের পরিবারগুলো বিষয়টি লুকিয়ে রাখতে চায়। আমাদের সমাজে মানুষজন এটাকে রোগ হিসেবে দেখতে চান না। মাদকদ্রব্যের সঙ্গে জড়িয়ে পড়া ব্যক্তিকে কি পদ্ধতিতে ফেরাতে হয় বা মাদকাসক্তি কতোটা জটিল সে বিষয়টি বেশির ভাগ পরিবার জানেন না। বিষয়টি পুরোপুরি বুঝে ওঠার আগেই ততদিনে মাদকাসক্ত ব্যক্তি আরও বেশি জড়িয়ে পড়েন অন্ধকার জগতে। মানুষের শরীরের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ মস্তিষ্ক। মাদক পুরো সমস্যা করে মস্তিষ্ককে ঘিরে। মাদক গ্রহণে মানুষের মস্তিষ্কে এই রাসায়নিক যখন প্রবেশ করে তখন মস্তিষ্ক স্বাভাবিক থাকে না, পরিবর্তন দেখা দেয়। মাদকসেবনের পেছনের কারণ কেউ খুঁজছে না। মাদকাসক্তদের রোগী হিসেবে দেখে এই সংখ্যাটি দেশে খুবই কম। এর যে চিকিৎসা দরকার আছে সেটি কেউ ভাবে না। মাদকাসক্তরা আমাদের কাছে আসতে দেরি করে ফেলেন। অধিকাংশ রোগীরা যেদিন থেকে নিয়মিত মাদক নেয়া শুরু করে তার তিন বছর, কখনো ছয় বছর আবার কখনো দশ বছর পরে চিকিৎসা নিতে আসে।
মাদকাসক্ত নারীদের ক্ষেত্রে শিশু জন্মদানের পরে শিশুটির স্নায়ুতন্ত্রের গঠনটি বিকৃত হয়: ডা. মো. রাহেনুল ইসলাম জানান, মাদক সেবনকারীরা ব্রেন দিয়ে অনেক কিছু অনুভূতিই তো করতে পারে না বরং বিকৃত হয়ে যায়। ভালো-মন্দ কোনো কিছুই সে বুঝতে পারে না। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা। যারা মাদকে একবার ঢুকে যায় তারা হয় ভুলে যায় বা নিজের জীবন সে কোনোদিনও লিড করেনি। একজন পুরুষের যদি নিয়মিত মাদক গ্রহণকারিত্ব হতে সময় লাগে তিন-ছয় বছর সেক্ষেত্রে একজন নারীর সময় লাগে ছয় মাস। তিনি বলেন, মাদকাসক্ত নারীদের ক্ষেত্রে শিশু জন্মদানের পরে শিশুটির স্নায়ুতন্ত্রের গঠনটি বিকৃত হয়। মা যদি মাদক নেন বাচ্চার ব্রেন তো সরাসরি মাদক পাচ্ছে। নারী মাদকাসক্তির হার কিন্তু বাড়ছে। অধিকাংশ নারীদের মাদকাসক্ত হওয়ার পেছনে কারণ দেখা যায়, হয় তার স্বামী বা বয়ফ্রেন্ড মাদকাসক্ত হওয়ায় সেও ঝুঁকে যাচ্ছে। আরও কিছু কারণ রয়েছে শৈশবে নির্যাতনের শিকার হলে কষ্টটাকে কমানোর জন্য মাদক ব্যবহার করে। শিশু মাদকসেবীদের আসক্তিটা কিন্তু খুবই ভয়াবহ। মাদকের সঙ্গে আবার যুক্ত হয়েছে মোবাইল আসক্তি।
একাধিক চিকিৎসকদের মতে, অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজা ও প্যাথেড্রিন ইনজেকশন গ্রহণ করে। চিকিৎসা নিতে আসা মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত রোগীর সংখ্যা বেশি থাকে। কমপক্ষে একটানা দু’বছর ধরে চিকিৎসা দিতে হবে। তাকে জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে সুস্থ থাকতে হবে। ৬০ শতাংশের মতো ব্রেনটিকে স্বাভাবিক করতে পারে। এজন্যই রোগটি ভয়ঙ্কর। মাদকাসক্তদের সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে এর পরিণতি ভয়াবহ হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক জানান, জীবনযাত্রা কেন্দ্রিক, সম্পর্ক কেন্দ্রিক, পারিবারিক কলহ, আর্থিক ও কর্মজীবনে নানা ধরনের হতাশাসহ বিভিন্ন কারণে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে অনেকেই। মাদকাসক্ত হয়ে পড়ার অন্যতম কারণ মাদকের সহজলভ্যতা। দেশে অনলাইন বা অফলাইন মাদকের হাটবাজার চলছেই। মাদকাসক্ত ব্যক্তি নিজের, পরিবারের ও দেশের ক্ষতি করছে। পরিবার সমাজে নানাভাবে কলঙ্কের তকমা বহন করে। সামাজিক মর্যাদা হারায়।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালে সারা দেশে মাদক মামলা হয়েছে ৫২ হাজার ৭১৭টি। তারমধ্যে ঢাকায় ৬ হাজার ৪০৭টি। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে মাদক মামলা হয় ২০ হাজার ৯২৮টি। তারমধ্যে ঢাকায় ২ হাজার ৬৪৪টি।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর জানান, মাদকসেবী, মাদক ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে মাদক বাণিজ্যের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান, জিরো টলারেন্স ও যুদ্ধ ঘোষণার মতো কার্যক্রম পরিচালনা করেও মাদক নির্মূল করা যাচ্ছে না। উল্টো সীমান্তের বিভিন্ন রুট ও আকাশপথে আসা মাদকে সয়লাব সারা দেশ। পরিসংখ্যান বলছে, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৭ বছরে সাড়ে ১৮ লাখ কারবারিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়েছে সাড়ে ১১ লাখেরও বেশি। এরপরও সহনীয় পর্যায়ে আনা যায়নি মাদকের চালান। উল্টো মাদক জব্দের আকাশচুম্বী পরিসংখ্যান দেখলে চক্ষু চড়কগাছ হতে বাধ্য হবে।
অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, রাষ্ট্র মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা বললেও বাস্তবে মাদকের পৃষ্ঠপোষকদের গ্রেপ্তার প্রশ্নে সেটি দেখা যায় না। শুধু বাহক গ্রেপ্তার করে লাভ হবে না, পৃষ্ঠপোষকদের আইনের আওতায় এনে মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। আর না হয় এভাবে চলতে থাকলে মাদক গ্রহণ ব্যক্তি পছন্দের ওপর নির্ভর হয়ে যাবে। তখন রাষ্ট্র ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছুই করার থাকবে না। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সত্যিকারের জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন করতে হবে।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.