October 21, 2025, 9:21 pm


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2025-10-21 17:39:00 BdST

হালিমের বেতন ১৮ হাজার, তবুও তার ছয় বাড়ি- ১০ কোটির বেশি সম্পত্তি!


ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলার প্রাক্তন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ফিল্ড সুপারভাইজার হালিম সিকদারের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের অভিযোগ উঠেছে।

মাত্র ১৮ হাজার টাকা মাসিক বেতনে চাকরি করেও এই ব্যক্তির নামে ৬টি বাড়ি, ১০ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। তিনি ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের নিকটাত্মীয়। তার ছোঁয়াতেই হালিম সিকদার আশীর্বাদ পায়। তিনি ইফার অস্থিত্বহীন কেন্দ্র নামে-বেনামে দেখিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতিতে অঢেল টাকা আয় করেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আব্দুল হালিম সিকদারের ভাগ্য খুলেছে আওয়ামী লীগের আমলে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সহ একাধিক দপ্তরে মুহাম্মদ ইবনে নাজিরুল্লাহ নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ দাখিল করেন। তা খতিয়ে দেখছে দুদক কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ফিল্ড সুপারভাইজার আব্দুল হালিম সিকদার ২০১২ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে চাকরি পায়। অতীতের ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের মন্ত্রীর ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে একই স্থানে ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের অধীনে কেরাণীগঞ্জ উপজেলায় ২০১৩ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১০ বছর চাকুরি করেন। উক্ত চাকুরি সুবাদে কেরানীগঞ্জ উপজেলার মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের সাধারণ শিক্ষকদের অত্যান্ত সু-কৌশলে, ঠান্ডা মাথায় আব্দুল হালিম সিকদার দুর্নীতি, অনিয়ম, জালিয়াতি, স্বেচ্ছাচারিতা, সরকারি যাকাতের টাকা আত্মসাৎ, শিক্ষক নিয়োগ বানিজ্য, জাল সনদের চাকুরি, কারসাজিতে অস্থিত্বহীন কেন্দ্র দেখিয়ে তার শ্বশুর মোঃ আকতারুজ্জামানসহ প্রায় ৪০টি কেন্দ্র থেকে প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা করে অবৈধভাবে কামিয়েছেন।

শুধু তাই নয়, জাহাঙ্গীর কবির নানকের নিকটাত্মীয় হওয়ায় ২০১৫ সালে খাদ্য অধিদপ্তরে চাকরি নেয়। পরে সে বরিশাল জেলার মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় চাকরি করেন। ৬ মাস পর আবার জাহাঙ্গীর কবির নানকের সুপারিশে তৎকালীন ডিজি শামিম মোহাম্মদ আফজালের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভারে একক নিয়োগ পায় হালিম সিকদার। পরে দুর্নীতি আর লুটপাটের মাধ্যমে আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। এছাড়াও ভূয়া স্বপ্ননীড় আবাসন প্রকল্প গড়ে তুলেন তিনি। এই সমিতির সভাপতি আব্দুল হালিম সিকদার। এই প্রকল্পের নামে নয়ছয় করে জাল-জালিয়াতি মাধ্যমে তার নামে-বেনামে রয়েছে একাধিক জায়গা জমি। সরকারের ভ্যাট, ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে অল্প সময়ে প্রায় কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যান।

হালিম সিকদার বর্তমানে মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলায় বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন। এনিয়ে খোদ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ভেতরে-বাইরে চলছে গুঞ্জন। একাধিক সূত্রে উল্লিখিত তথ্য পাওয়া গেছে।

কেরানীগঞ্জ উপজেলার একাধিক শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, আব্দুল হালিম সিকদারের ভাগ্য খুলেছে আওয়ামী লীগের আমলে। সাধারন শিক্ষকদের মধ্যে প্রতি মাসে প্রায় ৪০ জন শিক্ষকের ৫ হাজার টাকা সম্মানী বেতন থেকে ৩ হাজার টাকা আবাসন প্রকল্পের নামে আদায় করেন। বর্তমানে এই চাদাঁ আদায় করেন ইফার কেরানীগঞ্জ উপজেলার মডেল কেয়ারটেকার মিরাজুল ইসলাম। যা প্রকল্প বর্হিভূত কাজ।

তদন্তের সুবিধার্থে আব্দুল হালিম সিকদারের সম্পদের বিবরণ নিম্নে তুলে ধরা হলো

ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলায় ২০১৩ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১০ বছর চাকুরী করার ফলে আব্দুল হালিম সিকদার কেরানীগঞ্জ উপজেলায় কলাতিয়া ইউনিয়নের আকছাইল গ্রামের ১৫ শতাংশ জমির উপরে ৬তলা ফাউন্ডেশনের একটি বিল্ডিং নিমার্ণ করেন যার মূল্য প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা।

এদিকে রহিতপুর ইউনিয়নের লাকীরচর গ্রামে ৯ শতাংশ জমি ক্রয় করেন যার মূল্য প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা। একই উপজেলায় বাস্তা ইউনিয়নের কোনাখোলায় ৬ শতাংশ জমি ক্রয় করেন যার মূল্য ৭২ লক্ষ টাকা। কলাতিয়া ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামে ১৩ শতাংশ জমি ক্রয় করেন যার মূল্য ৬৫ লক্ষ টাকা। কলাতিয়া ইউনিয়নের নিলটেক গ্রামে ২০ শতাংশ জমি ক্রয় করেন যার মূল্য ৬০ লক্ষ টাকা। রুহিতপুর ইউনিয়নের মোহনপুর গ্রামে ১০ শতাংশ জমি ক্রয় করেন যার মূল্য ৪০ লক্ষ টাকা। বর্তমানে সাভার জেলার শ্রীপুর উপজেলার ফুলবাড়িয়া গ্রামে ১০ শতাংশ জমি ও বাড়ীসহ ক্রয় করেন যার মূল্য ১ কোটি টাকা। কলাতিয়া ইউনিয়নের, খাড়াকান্দা বাজারের একটি টিনসিট দোকান রয়েছে যার মূল্য জমিসহ ২০ লক্ষ টাকা।

মোঃ আব্দুল হালিম সিকদার, বরিশাল জেলার, মুলাদি খানার মোঃ সুলতান সিকদার ছেলে (জাতীয় পরিচয় পত্র নং-১৯৩৩২৪০৯৮৬)। তার গ্রামের এলাকায় রয়েছে প্রায় ২ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের সম্পদ। এছাড়াও পরনারীদের নিয়ে মডেল রিসোর্স সেন্টারে রাত্রী যাপন করতেন। তার এসব কুকর্মের কথা জানাজানি হলে পরবর্তীতে উক্ত মডেল রিসোর্স সেন্টার ছেড়ে কেরানীগঞ্জ উপজেলায় আকছাইল এলাকার আকতারুজ্জামানের মেয়ের সাথে বিবাহ পড়ানো হয়।তার পূর্বে সিলেটের সুনামগঞ্জে দ্বিতীয় স্ত্রী ও সন্তানাদি রয়েছে। কেরানীগঞ্জ উপজেলায় ২০২৩ সালে তাকে দুনীতির অভিযোগে বদলী করা হয়। একই বছরের জুলাই মাসে স্বপ্ন নীড় আবাসন প্রকল্প নামে একটি প্রতারণার ফাঁদ খোলেন তিনি।

এই বিষয়ে মোবাইলে আব্দুল হালিম সিকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি কেরানীগঞ্জ উপজেলায় ২০১৩ সাল থেকে ২০২৩ সাল পযর্ন্ত কর্মরত ছিলাম। যে জায়গার জমি কিনেছি তা আমার শশুরবাড়ীর টাকা দিয়ে করা। এরপর অফিসে ব্যস্ত আছেন বলে ফোন কেটে দেন তিনি।

ইফার প্রকল্প পরিচালক এস এম তরিকুল ইসলাম বলেন, তদন্তে যে কোনো কর্মকর্তার অবৈধ সম্পদ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একজন ফিল্ড সুপারভাইজারের চাকরি করে বৈধ পথে এত সম্পদের মালিক হওয়া সম্ভব নয়। এত সম্পদ করে থাকলে নিশ্চয়ই তিনি অবৈধ পথ অবলম্বন করেছেন।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.