November 27, 2025, 7:43 pm


মোঃ ইকবাল উদ্দিন

Published:
2025-11-27 17:13:50 BdST

জাতীয় সেমিনারে নারী কৃষকদের অর্থবহ অন্তর্ভুক্তির আহ্বানউপকূলের প্রান্তিক নারী কৃষকেরা তাদের স্বীকৃতি চান


বাংলাদেশে মোট কৃষি শ্রমশক্তির ৫৮ শতাংশই নারী, যা তাদের এই খাতের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশীদার করে তোলে। তবুও, পুরুষদের তুলনায় নারীদের সরকারি ও প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ-সুবিধার অপ্রতুলতা, কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণে সীমিত সুযোগ এবং স্বীকৃতির অভাবের মতো চ্যালেঞ্জগুলো রয়ে গেছে।

মাত্র ১৯ শতাংশ নারী কৃষকের জমির মালিকানা থাকলেও বাস্তবে মাত্র ৪-৫ শতাংশ নারী তা ভোগদখল বা ব্যবহার করতে পারে।

আজ রাজধানীর সিরডাপে ‘জলবায়ু সহনশীল ফসল উৎপাদনে নারী কৃষকদের অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং নীতি-নির্ধারকদের ভূমিকা’ শীর্ষক এক জাতীয় সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

গেটস ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে এবং আভাসের নেতৃত্বে (AVAS), বিন্দু (BINDU), কোস্ট ফাউন্ডেশন এবং স্ট্রিট চাইল্ড ইউকে যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের মোঃ ইকবাল উদ্দিন।

সেমিনারে উপস্থিত বক্তারা বলেন, দেশের খাদ্য নিরাপত্তার প্রাণভোমরা হওয়া সত্ত্বেও স্বীকৃতি না থাকায় নারী কৃষকরা পিছিয়ে পড়ছেন এবং তাদের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।

সেমিনারে বিশিষ্ট আলোচকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) শস্য শাখার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক কৃষিবিদ ড. মোঃ হযরত আলী, ডিএই-এর অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ ড. মোঃ জামাল উদ্দিন, ডিএই-এর সাবেক উপ-পরিচালক ড. রাধেশ্যাম সরকার, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিভাগের অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী, আভাসের নির্বাহী পরিচালক রহিমা সুলতানা কাজল; বিন্দুর নির্বাহী পরিচালক জান্নাতুল মাওয়া, স্ট্রিট চাইল্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি লিড ইমতিয়াজ হৃদয়, কোস্ট ফাউন্ডেশনের উপ-নির্বাহী পরিচালক, সনত কুমার ভৌমিক, মোস্তাফা কামাল আকন্দ, ড. সোহেল ইকবালসহ বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরামের কাওসার রহমান, এসএ টিভির সালাউদ্দিন বাবুল, এনভায়রনমেন্টাল জার্নালিস্ট ফোরামের মোঃ মোতাহার হোসেন এবং এডাব (ADAB)-এর একেএম জসিম উদ্দিন। এছাড়া পটুয়াখালী ও সাতক্ষীরা জেলার CARE for Women প্রকল্পের নারী কৃষক দলগুলোর প্রতিনিধি হিসেবে মোসাম্মৎ রিনা বেগম, মোসাম্মৎ আসমা বেগম, কল্পনা রানী এবং নাজমা বেগম বক্তব্য রাখেন।

মূল প্রবন্ধে মোঃ ইকবাল উদ্দিন উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ উপকূলীয় এলাকায় বাস করে। যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সবচেয়ে তীব্র। এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও উপকূলীয় নারী কৃষকরা জলবায়ু-সহনশীল ফসল উৎপাদন করে যাচ্ছেন, কিন্তু সরকারি কৃষি সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে নারী কৃষকদের স্বীকৃতি এবং অন্তর্ভুক্তি অত্যন্ত জরুরি।

ড. মোঃ হযরত আলী বলেন, উপকূলীয় এলাকার নারী কৃষকরা জলবায়ু সহনশীল কৃষি উৎপাদনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করছেন, কিন্তু পুরুষদের তুলনায় তারা প্রায়শই অর্ধেক মজুরি পান। জমির মালিকানা না থাকায় তারা কৃষি ঋণও পান না। এই বৈষম্য দূর করা উচিত।

ড. মোঃ জামাল উদ্দিন নারী কৃষকদের সংঘবদ্ধ হয়ে দলগতভাবে তাদের অধিকার আদায়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

ড. রাধেশ্যাম সরকার কৃষি খাতে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করার আহ্বান জানান। অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী নারী কৃষকদের জন্য সহজে ব্যাংক ঋণ, স্বল্প সুদে অর্থায়ন এবং সময়মতো আবহাওয়ার পূর্বাভাস পাওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

উপকূলীয় কৃষক মোসাম্মৎ রিনা বেগম নারী কৃষকদের জন্য সরকারি স্বীকৃতি এবং ‘কৃষি কার্ড’ প্রদানের দাবি জানান।

কল্পনা রানী নারীবান্ধব কৃষি যন্ত্রপাতির আহ্বান জানান এবং মোসাম্মৎ আসমা বেগম সুদহীন বা স্বল্প সুদে কৃষি ঋণের দাবি জানান।

নাজমা বেগম উপকূলীয় অঞ্চলে কৃষিকাজে সহায়তার জন্য লোনা পানি শোধনের ব্যবস্থা করার দাবি জানান।

একেএম জসিম উদ্দিন কৃষি সম্প্রসারণ সেবায় আরও বেশি নারী কর্মী নিয়োগের মাধ্যমে লিঙ্গ-সংবেদনশীল সেবা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন।

রহিমা সুলতানা কাজল কীর্তনখোলা নদীর লবণাক্ততা বৃদ্ধির বিষয়টিকে উপকূলীয় জীবনজীবিকার জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে উল্লেখ করে অবিলম্বে প্রশমন ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।

জান্নাতুল মাওয়া কৃষিতে জলবায়ু অভিযোজন জোরদার করতে নারী কৃষকদের জন্য ভর্তুকি বৃদ্ধির দাবি জানান।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.