নেহাল আহমেদ
Published:2023-05-07 23:04:14 BdST
পাট পাতায় সম্ভাবনার নতুন দুয়ার
সোনালি আঁশ (পাট) বাংলাদেশের অন্যতম মূল্যবান অর্থকরী ফসল। আমাদের দেশের মতো এত ভালো মানের পাট পৃথিবীর আর কোথাও উৎপন্ন হয় না।
পাট চাষের জন্য প্রয়োজনীয় জলবায়ু বাংলাদেশের গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যমান থাকায় উক্ত সময়েই এর আবাদ হয়। সারা দেশে এখন পাট চাষ শুরু হয়েছে। সঠিক পরিকল্পনা এবং গবেষনায় পাটপাতা হতে পারে দেশে অর্থনীতির নতুন দিগন্ত।
বিশ্বব্যাপী কৃত্রিম আঁশ থেকে তৈরি পণ্য ব্যবহারে আগ্রহ কমছে, কারণ এসব পণ্য ব্যবহারে নানা রকম জটিলতা সৃষ্টি হয়। কৃত্রিম আঁশ পরিবেশবান্ধব নয়, পাট পরিবেশবান্ধব। বর্তমানে পাটের বহুমাত্রিক ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হয়েছে। পাটপণ্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। পাটের জেনম আবিষ্কার করেছেন একজন মেধাবী বাঙালি বিজ্ঞানী শামসুল আলম।
এ সময় প্রায় সারা বছরই আমাদের দেশে পাটপাতা পাওয়া যায়। পাটের পাতায় রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ যেমন- প্রচুর পরিমাণ আয়রন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন ই, কে,সি, বি-৬ ও নিয়াসিন। প্রতি ১০০ গ্রাম পাটপাতায় ক্যালরির পরিমাণ ৭৩ কিলোজুল, আমিষ ৩.৬ গ্রাম, লোহা ১১ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৯৮ মিলিগ্রাম ও ক্যারোটিন ৬৪০০ (আইইউ) আরো রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও খাদ্যআঁশ।
পাট একটি সুপরিচিত বাস্ট ফাইবার উদ্ভিদ কিন্তু বৈজ্ঞানিক তথ্য অপ্রতুলতার জন্য ঔষধ হিসেবে খুবই কম পরিচিত। গাছের প্রতিটি অংশই ঔষধ হিসেবে কার্যকর।
আয়ুর্বেদী শাস্ত্র মতে এই গাছের ভেষজ গুণকে অসাধারণ মূল্য দেয়া হয়। পাটের পাতা শুধু শাক হিসেবেই নয় বরং পাটগাছের পাতা ও বীজ নৃতাত্ত্বিক ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
পাটপাতা শারীরিক অসুস্থতা যেমন- রেচক বা কোষ্টকাঠিন্য, মাথাব্যথা, চিকেনপক্স বা গুটিবসন্ত, ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং গুঁড়াকৃমি চিকিৎসায় পাটগাছের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করা হয়।
পাটপাতার জলীয় অথবা অ্যালকোহলিক নির্যাস, যার মধ্যে পলিস্যাকারাইড ও অলিগোস্যাকারাইড জৈব পদার্থগুলো সমৃদ্ধ থাকে, যা মানব ত্বকের জন্য প্রসাধনী বা চুলের ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
আঁশের জন্য খ্যাত পাটের বহুমুখী ব্যবহার এক দশক আগেও ছিল অকল্পনীয়। পাট এখন শাড়ি, পোশাক, ব্যাগসহ নানাবিধ পণ্য তৈরির উপকরণ হিসেবে বেশ সমাদৃত।
বাঙালীর খাদ্য তালিকায়ও রয়েছে পাটশাক। এই শাক দু’ধরনের হয়, মিঠা ও তিতা। মধ্যযুগের মঙ্গলকাব্যে নালিতাশাক বা পাটশাকেরও বর্ণনা মেলে।
কিন্তু সেই পাট গাছের পাতা দিয়ে যে চা তৈরি সম্ভব, তার আবিষ্কারক বাংলাদেশীকে অবশ্যই অভিনন্দন। পাট পাতা থেকে দুই বছর আগে চায়ের উৎপাদন শুরু হয়েছে। দেশের মানুষ এখনও এর স্বাদ না পেলেও এরই মধ্যে তা ইউরোপের চার দেশে বেশ সাড়া ফেলেছে। ‘অর্গানিক পণ্য’ হিসেবে পরিগণিত এই পাতার চায়ের কদর বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পাট বাংলার নিজস্ব সম্পদ, অত্যন্ত মূল্যবান অর্থনৈতিক সম্পদ। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের বহু তরুণ উদ্যোক্তা পাটবস্ত্র তৈরি করে বাজারজাত করছেন। শীতপ্রধান দেশগুলোতে পাটবস্ত্রের চাহিদা আছে।
পাটখড়ি থেকে বিজ্ঞানী কুদরত-ই খুদা পারটেক্স আবিষ্কার করেছেন। আমাদের জ্ঞান কাজে লাগিয়ে আরও উন্নতজাতের পাট আবিষ্কার করা সম্ভব; এবং উৎপাদন আরও বাড়ানো সম্ভব। সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার মাধ্যমে পাটশিল্পের হারানো ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার করা সম্ভব।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.