September 21, 2024, 12:48 am


শাফিন আহমেদ

Published:
2024-05-29 16:44:54 BdST

ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিরাপদ বিশ্ব উপহার দেবো: প্রধানমন্ত্রী


শান্তিপ্রতিষ্ঠা এখন অতীতের চেয়ে অনেক কঠিন দাবি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতার প্রদর্শিত পথে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় আমরা কাজ করে যাবো। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ বিশ্ব উপহার দেবো। আজকের দিনে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

বুধবার (২৯ মে) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২৪ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, গাজায় ইসরায়েলের চলমান গণহত্যা ও মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধন বন্ধের আহ্বান জানান। পাশাপাশি যুদ্ধ বন্ধ করে অস্ত্র তৈরি ও প্রতিযোগিতার টাকা জলবায়ুর অভিঘাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে, ক্ষুধার্তের আহার ও শিশুশিক্ষায় কাজে লাগানোর আহ্বান জানান।

সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা যেন আরও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জাতিসংঘের আহ্বানে সাড়া দিতে পারে, সেজন্য আমাদের সরকারের সব প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। আমাদের প্রত্যাশা, বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা তাদের বর্তমান ধারা অব্যাহত রেখে দেশের সম্মান বিশ্বের দরবারে আরও উন্নত করবে। এই আয়োজন করা ও আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আমি সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা এখন অতীতের চেয়ে অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রযুক্তির প্রসার ও অগ্রযাত্রার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে নতুন নতুন হুমকি। ফলে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে শান্তিরক্ষীদের বহুমাত্রিক জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তাই শান্তিরক্ষা মিশনসমূহ উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে সমৃদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা এখন বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা যেন বিশ্বের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং এবং বিপজ্জনক পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে, সেজন্য তাদের সময়োপযোগী প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, মিশন এলাকার পরিবেশ, আবহাওয়া ও ভূমির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নত প্রযুক্তির সামরিক সরঞ্জামাদি ও পোশাক এবং অন্যান্য সরঞ্জাম সরবরাহ নিশ্চিত করা হচ্ছে। যোগাযোগের জন্য অত্যাধুনিক যানবাহন এবং প্রযুক্তির সংযোজন করেছি। প্রশিক্ষণ ও আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন চলমান পক্রিয়া, এটি অব্যাহত থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা সংঘাত প্রতিরোধ, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা, মানবাধিকার নিশ্চিত ও শান্তিপ্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আন্তরিকতাপূর্ণ কাজের কারণে ওই সব দেশের জনগণ আপনাদের অক্ষুণ্ন ভালোবাসা উপহার দিয়েছে। অনেক দেশ আপনাদের থেকে বাংলা ভাষা ও সস্কৃতি শিখেছে। এজন্য আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। যারা বিশ্বশান্তি রক্ষায় অকাতরে জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি। আমাদের ১৬৮ জন শান্তিরক্ষী শহীদ হয়েছেন। তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।

যুদ্ধ মানবজাতির জন্য কী কল্যাণ বয়ে আনছে?

শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে দ্বন্দ্ব, সংঘাত, যুদ্ধ আজ বিশ্বশান্তি বিঘ্নিত করছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, গাজায় ইসরায়েলের হামলায় হাজার হাজার মানুষ মরছে, সেখানে গণহত্যা চলছে, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাস্তুচ্যুত করা- ইত্যাদি মানবজাতির জন্য এক ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। আমি ঠিক জানি না, এই সংঘাত বা যুদ্ধ মানবজাতির জন্য কী কল্যাণ বয়ে আনছে। অস্ত্র প্রতিযোগিতা প্রতিনিয়ত যত বৃদ্ধি পাচ্ছে, ততই মানুষের জীবন আরও বেশি দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা বেশি কষ্ট পাচ্ছে। যুবকরা অকাতরে জীবন দিচ্ছে। আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান চাই।

তিনি বলেন, বিশ্বের এক বিশাল সংখ্যক মানুষ এখনো দরিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে। কোটি কোটি মানুষ দুবেলা খাবার পায় না। রোগের চিকিৎসা পায় না। শিশুরা শিক্ষা পায় না, শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। যারা অস্ত্র তৈরি ও অস্ত্র প্রতিযোগিতায় এত অর্থ ব্যয় করছেন, তাদের কাছে আমার আহ্বান- আমরা শান্তির কথা বলি, কিন্তু সংঘাতে লিপ্ত হই, কেন? এই যে অর্থ ব্যয় হচ্ছে, এই অর্থ যদি ক্ষুধার্ত মানুষের আহার, শিক্ষা ও চিকিৎসায় ব্যয় হতো, তাহলে এই পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতো, মানুষের জীবনমান উন্নত হতো, মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচতে পারতো। কিন্তু এই সংঘাত প্রতিনিয়িত মানুষকে আরও কষ্টের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আমি সবসময় যেখানেই যাই, এই একটি আহ্বান জানাই, সংঘাত নয়, আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা, সেটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কাজ।

‘সেই সঙ্গে যেসব দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে যাচ্ছে, সেই জলবায়ু অভিঘাত থেকে মানবজাতিকে রক্ষার জন্য এই অস্ত্র তৈরি ও প্রতিযোগিতার অর্থ দিতে পারে। পাশাপাশি ক্ষুধার্ত ও শিক্ষাবঞ্চিত শিশুদের ক্ষুধা নিবারণ ও শিক্ষার আলো দেওয়ার কাজে ব্যবহার করতে পারে, সেই আহ্বানটাই আজ আমি জানিয়ে যাচ্ছি।’ যোগ করেন সরকারপ্রধান।

শান্তিরক্ষীদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশ এরই মধ্যে ৬৩টি মিশন সফলতার সঙ্গে সমাপ্ত করেছে। বর্তমানে ১৩টি মিশনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা দায়িত্ব পালন করছেন। যে দরদ ও আন্তরিকতা দিয়ে আমাদের শান্তিরক্ষীরা কাজ করেন, বিশ্বের যেখানেই যাই এ বিষয়ে প্রশংসা পাই। তাতে আমার বুক ভরে যায়।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা