September 20, 2024, 7:03 am


অনলাইন ডেস্ক:

Published:
2024-08-29 13:24:15 BdST

৮ বছরের মধ্যে দেশে সর্বোচ্চ বেকারত্ব এখন!


চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক তথা এপ্রিল-জুন সময়ে দেশে বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছে ৩.৬৫ শতাংশ, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ০.২৪ পয়েন্ট বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, দেশে বেকারত্বের হার এ সময় ২০১৬ সালের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠে এসেছে।
আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বেকারত্বশ্রমশক্তি জরিপ-২০২৪-এর চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের ফলাফল গত বুধবার প্রকাশ করেছে বিবিএস। প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত এক বছরে দেশে ১০ লাখ ৭০ হাজার কর্মসংস্থান কমেছে।
কাজের সংস্থান না থাকায় শ্রমবাজারে অংশ নেওয়া মানুষের সংখ্যাও কমেছে প্রায় ৯ লাখ ৩০ হাজার।
গত এক বছরে কৃষি খাতে দুই লাখ ৩০ হাজার কর্মসংস্থান কমে আসার বিপরীতে শিল্প খাতে বেড়েছে প্রায় দুই লাখ কর্মসংস্থান। তবে এককভাবে সেবা খাতে প্রায় ১০ লাখ ৪০ হাজার কর্ম কমেছে বলে জানিয়েছে বিবিএস। গত কয়েক বছরে সামষ্টিক অর্থনীতিতে বিভিন্ন জটিলতা, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির কারণে অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে আসাসহ বিভিন্ন সংকটের কারণে কর্মসংস্থান কমছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা।
এসব সমস্যা কাটিয়ে দেশে বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন বাড়িয়ে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির বিষয়টি বর্তমানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে বলেও তাঁরা মনে করেন। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, তিন কোটি ৯ লাখ ২০ হাজার মানুষ নিয়োজিত করে কৃষি খাত এখনো কর্মসংস্থানে শীর্ষে রয়েছে। এ খাতে নিয়োজিত আছেন ৪৪ শতাংশ মানুষ। এর বাইরে শিল্প খাতে ১৮ শতাংশ ও সেবা খাতে ৩৮ শতাংশ মানুষ নিয়োজিত আছে।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এপ্রিল-জুন সময়ে দেশে কর্মে নিয়োজিত মানুষের সংখ্যা ছয় কোটি ৯৬ লাখ ৪০ হাজারে নেমে এসেছে, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল সাত কোটি সাত লাখ ১০ হাজার। এ হিসাবে এক বছরে কর্মসংস্থান কমেছে প্রায় ১০ লাখ ৭০ হাজার। এর মধ্যে পুরুষদের তিন লাখ ৩০ হাজার ও নারীদের সাত লাখ ৪০ হাজার কাজ কমেছে বলে জানিয়েছে বিবিএস। এক বছরে কাজ হারানো মানুষের প্রায় ৬৯ শতাংশই নারী।
পর্যালোচনায় আরো দেখা গেছে, গত এক বছরে দেশে প্রায় ৯ লাখ ৩০ হাজার কমে শ্রমশক্তির আকার দাঁড়িয়েছে সাত কোটি ২২ লাখ ৮০ হাজারে।
গত এক বছরে এক লাখ ৫০ হাজার পুরুষ ও সাত লাখ ৮০ হাজার নারী শ্রমবাজার ছেড়েছে। এ হিসাবে শ্রমবাজার ছেড়ে দেওয়া মানুষের প্রায় ৮৪ শতাংশই নারী।
বিবিএস সূত্র জানায়, সপ্তাহে মাত্র এক ঘণ্টা কাজ করলেই আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থার হিসেবে তাকে কর্মে নিয়োজিত হিসেবে গণ্য করা হয়। তা ছাড়া কেউ এক মাস কাজ না খুঁজলেই বেকারের তালিকায় না দেখিয়ে তাকে কর্মবাজারের বাইরে দেখানো হয়। এ ধরনের প্রায় ৯ লাখ ৩০ হাজার মানুষকে যোগ করলে দেশে প্রকৃত বেকারের সংখ্যা কয়েক গুণ বাড়বে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এপ্রিল-জুন সময়ে দেশে বেকারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬ লাখ ৪০ হাজারে, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২৫ লাখ। এ হিসাবে এক বছরে ৫.৬ শতাংশ বেড়েছে বেকারের সংখ্যা। এর আগে ২০১৬ সালে দেশে ২৭ লাখ বেকার পেয়েছিল বিবিএস। দেশে এবার বেকারের সংখ্যা আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
‘কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে আসার সবচেয়ে বড় প্রমাণ জুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলন ও আগস্টের বিপ্লব। বেসরকারি খাতে কাজের পর্যাপ্ত ও আকর্ষণীয় সুযোগ থাকলে সরকারি চাকরির জন্য এত বড় আন্দোলনের যৌক্তিকতা ছিল না।’
কয়েক বছর ধরে ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা, বিনিয়োগে খরা, বাড়তি মূল্যস্ফীতি, অভ্যন্তরীণ সামষ্টিক চাহিদায় ধসের কারণে কর্মসংস্থান কমেছে। আমাদের মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৮৭ শতাংশই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের এবং এই উদ্যোগগুলো মূলত সেবা খাতের আত্মকর্মসংস্থান ও ছোট শিল্পপ্রতিষ্ঠান। নিয়ম-নীতি পরিপালনের বাধ্যবাধকতা না থাকায় এসব খাতেই কর্মচ্যুতির ঘটনা বেশি ঘটছে।
অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া না হলে অন্যান্য খাতেও এই ব্যাধি প্রকট আকার ধারণ করবে মন্তব্য করে অর্থনীতির এই অধ্যাপক বলেন, ডিসেন্ট কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে যুব সম্প্রদায়ের ভাগ্য উন্নয়ন চলতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা