বিশেষ প্রতিবেদক
Published:2025-07-04 09:57:21 BdST
কর্মস্থলে অনুপস্থিত এসপি আরিফুর বরখাস্ত
পর ভেঙে পড়ে পুলিশ বাহিনী। অনেক পুলিশ সদস্য কর্মস্থলে যোগদান করার পরও ছুটি না নিয়ে উধাও হয়ে যান। দীর্ঘদিন কর্মস্থলে যোগ না দেওয়া এমন এক পুলিশ সুপারকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সরকার। ছুটি না নিয়ে কর্মস্থলে যোগদান না করায় এখন পর্যন্ত ১৭ পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হলো।
বুধবার (২ জুলাই) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ শাখা থেকে দেওয়া প্রজ্ঞাপনে বরখাস্তের আদেশ জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে সই করেন উপসচিব নাসিমুল গনি।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সিরাজগঞ্জ জেলার সাবেক পুলিশ সুপার, বর্তমানে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয় সংযুক্ত মো. আরিফুর রহমান মন্ডল কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত।
সরকারি চাকরি বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩(গ) অনুসারে পলায়নের অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ায় বিধি ১২ উপবিধি (১) অনুযায়ী আরিফুর রহমান মন্ডল যেদিন থেকে অনুপস্থিত সেদিন থেকে সরকারি চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্তকালীন তারা খোরপোশ ভাতা পাবেন।
সংস্কার এবং “জঙ্গি” সরবরাহকারী কুখ্যাত আরিফুর রহমান মন্ডল। এক বিভীষিকাময় গোপন কারাগারের নাম বগুড়ার পুলিশ লাইনসের ইন-সার্ভিস সেন্টার। এই সেন্টারে ভিন্ন মতের কিংবা নিরীহ নারী-পুরুষ ধরে এনে ‘জঙ্গি বানানো’ হতো। দেশব্যাপী বিভিন্ন জঙ্গি নাটকে ব্যবহার করা হতো এই নিরীহ বন্দিদের। এসবের নাটের গুরু ছিলেন পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান।
এসপি আরিফুর হাসিনা সরকার আমলে দাপুটে পুলিশ অফিসার হিসেবে সর্বত্র পরিচিত ছিলেন। সাবেক আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী ও অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেসুর রহমান আরিফুর রহমানকে প্রমোশন দিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন।
একাধিক সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, ঢাকার কল্যাণপুরের জাহাজবাড়ি জঙ্গিবিরোধী নাটক, পান্থপথে হোটেল ওলিওতে তথাকথিত আত্মঘাতী বিস্ফোরণের গল্প এবং গাজীপুরের পাতারটেকে অভিযান চালিয়ে ৭ তরুণকে হত্যা- সব ঘটনায় নিহত বা গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের বেশিরভাগই কোনো না কোনো সময় বগুড়ার পুলিশ লাইনসের ইন-সার্ভিস সেন্টারের গোপন কারাগারে গুম ছিলেন।
তথাকথিত জঙ্গিবিরোধী অভিযানের নামে গ্রামগঞ্জের চাষি, শ্রমিক, গ্রামচিকিৎসকসহ তৃণমূলের লোকদের ধরে এনে এই গোপন কারাগারে রেখে চলত মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ের নামে নির্মম নির্যাতন। কাউকে বা তথাকথিত ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করা হতো।
এই গোপন কারাগারে পুরুষের পাশাপাশি ছিলেন অনেক নারী ও তাদের সঙ্গে থাকা দুগ্ধপোষ্য শিশু। নারীদের দিনের পর দিন গুম করে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন বগুড়ার এএসপি (পরবর্তীতে সিরাজগঞ্জের এসপি) আরিফুর রহমান মণ্ডল ও তার দলবল।
পরিবারের পুরুষ সদস্যদের ধরতে নারীদের গুম করার জঘন্য কৌশল ব্যবহার করতেন তিনি। আর পালের গোদা ছিলেন বগুড়ার সাবেক এসপি আসাদুজ্জামান (পরবর্তী সময়ে সিটিটিসির প্রধান)। সাবেক পুলিশ প্রধান শহীদুল হকের নির্দেশে এটা গড়ে তুলেছিলেন তিনি।
সেই কারাগারে নিরীহ লোকদের ধরে নিয়ে জঙ্গি ট্যাগ দিয়ে বিভিন্ন তথাকথিত অভিযানে নিয়ে হত্যা করা হতো বা মামলায় ফাঁসানো হতো। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর আসাদুজ্জামান পলাতক রয়েছেন। হাসিনার পতনের পর আরিফুর রহমান মণ্ডলকে বরিশাল পুলিশ রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়।
সম্প্রতি আরিফুর রহমান মন্ডলের পাসপোর্ট জব্দ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু সে পলাতক থাকায় গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। আরিফ দেশেই আত্মগোপনে আছে নাকি দেশ ছেড়ে পালিয়েছে তার কোন হদিস জানা নেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।
আরিফুর রহমানকে গ্রেফতার করতে পারলে জঙ্গি নাটকের অনেক রহস্য উদঘাটন হবে বলে মনে করেন আইন বিশেষজ্ঞরা।
পুলিশের একটি সূত্রমতে, সাবেক আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী সকলের কাছে ন্যয় নীতিবান পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। কিন্তু আইজিপি হতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সব কিছু মেনেই নিয়োগ পেয়ে ছিলেন। আরেকজন অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেসুর রহমান ছিলেন বদমেজাজী। তিনি ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ছিলেন। সেই সুবাদে তিনি ছিলেন ক্ষমতাধর পুলিশ অফিসার। তাকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী মহল।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.