September 19, 2024, 10:57 pm


মোঃ মাহবুবুর রহমান

Published:
2024-09-09 17:58:48 BdST

জাতীয় রাজস্ব কর্মকর্তা সুদীপ্ত শেখর দাস দুর্নীতির মহা দানব


 জাতীয় রাজস্ব কর্মকর্তা (সুপারিনটেনডেন্ট) সুদীপ্ত শেখর দাস যেন দুর্নীতির মহা দানব। তিনি সেগুনবাগিচা সার্কেলের মগবাজার সেঞ্চুরী আর্কেট শপিং সেন্টারের ৪ তলায় বসেন। তার অধীনে ৫ জন ইন্সপেক্টর রয়েছেন। এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি অভিনব কায়দায় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেন। তা হচ্ছে, একজন ব্যবসায়ী তার কাছে ভ্যাট চালান জমা দিতে গেলে সই ও সিল মহর দেয়ার আগে তাকে ঘুষ দিতে হয়। সুদীপ্ত শেখরের রেড হচ্ছে, তিন হাজার থেকে ৭০ হজার টাকা। তবে এই টাকা তিনি ইন্সপেক্টরের মাধ্যমে গ্রহন করেন। দোকানের ডিড অনুযায়ী তারা ভ্যাট নির্ধারন করে থাকেন। কিন্তু তারা একটি ডিডে নিজেদের পরামর্শ অনুযায়ী দোকানদারদের ডিড করতে বলেন। সেখানে বড় ধরনের কর ফাকিঁ দিয়ে থাকেন ব্যবসায়ীরা। এতে লাভবান হয় দুর্নীতিবাজরা এবং ব্যবসায়ীরা। আর সরকার হারাচ্ছেন লাখ লাখ টাকার রাজস্ব। ভুক্তভোগী মহল তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, একজন ব্যবসায়ীর মাসিক ভাড়া দুই লাখ টাকা। সেখানে আসল ডিডের আড়ালে ব্যবসায়ী এবং ভ্যাট ইন্সপেক্টর যেগাসাজস করে দুই লাখ টাকার ভাড়ার ডিডটি অন্ধকারে রেখে দেয়। এরপর তারা দুই লাখ টাকার ভাড়া ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার ডিড তৈরী করেন। এই ডিডের উপর ভিত্তি করেই সরকারি কোষাগারে ভ্যাট এর টাকা জমা করা হয়। হিসেব অনুযায়ী দুই লাখ টাকায় মাসিক ভ্যাট আসে ৩০ হাজার টাকা। সেখানে ২৫ হাজার টাকায় আসে মাতর ৩৭শ ৫০ টাকা। এই অনুযায়ী সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে ২৬ হাজার ২৫০ টাকা। এটি শুধু একটি দোকানের গড় হিসাব তুলে ধরা হলো। এভাবে হাজার হাজার দোকানের একই নিয়মে ভ্যাট আদায় করা হচ্ছে। এসব লুকোচুরি একমাত্র ভ্যাট কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা ছাড়া কেউ ধরার উপায় নেই। আরো একটি বড় অনিয়ম হচ্ছে যে, একটি দোকানে মাসিক সেলস আছে দশ থেকে বার লাখ টাকা। আবার কোন দোকানে সেলস আছে দেড় থেকে দুই কোটি টাকা। সেখানে ভ্যাট ইন্সপেক্টরের মাধ্যমে দশ লাখ টাকার সেলের মধ্যে মাসিক সেলস দেখানো হয় এক লাখ টাকা। ১২ লাখ টাকার সেলসে মাসিক ভ্যাট আসে ৬০ হাজার টাকা। আর এক লাখ টাকার সেলস দেখায় তাতে আসে মাসিক ৫ হাজার টাকা। এতে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে মাসিক ৫৫ হাজার টাকা। এভাবে মাসে সরকারকে ঠকিয়ে লাখ লাখ টাকা ঘুষ বাণিজ্য করছে জাতীয় রাজস্ব কর্মকর্তা (সুপারিনটেনডেন্ট) সুদীপ্ত শেখর দাস সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের প্রত্যেকে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যবসায়ী এ প্রতিবেদককে জানান, আমরা পরিস্থিতির শিকার। ভ্যাট কর্মকর্তারা আমাদেরকে যেভাবে বাতিয়ে দেন আমরা সেভাবেই দোকানের ডিড করি। এক প্রশ্নবানে তিনি বলেন, অনেক সময় খোদ মালিক এর সাথে আমরা যে ডিড করি তা গোপন রেখে নতুন করে আরেকটি দলিল তৈরী করে থাকি। এভাবে ভ্যাট কারচুপির মাধ্যমে সরকারকে ঠকানোর জন্য আমরা শুধু একাই দায়ী নই। তবে প্রতিটি দোকানের মালিক এই অনিয়মের সাথে যেমন জড়িত, ঠিক তেমনি ভ্যাট কর্মকর্তারা আরো বেশি দায়ী ও দোষী।
জাতীয় রাজস্ব কর্মকর্তা (সুপারিনটেনডেন্ট) সুদীপ্ত শেখর দাস এর অধীনে ৫ জন ইন্সপেক্টর রয়েছেন। তারা হলেন, এ এস এম রাকিব হাসান। তিনি রেঞ্জ ১ এর দায়িত্বে আছেন। রাকিব তোপখানা রোড থেকে বিজয়নগর এরিয়ায় ডিউটি করেন। তৌইবুর রহমান রেঞ্চ-২ এবং ৩ এর দায়িত্বে রয়েছেন। বিজয়নগর মুসলিম সুটটস থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। শরিফুল রেঞ্চ ৪ । তিনি কাকরাইল মোড় তেকে বেইলি রোড মো

পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করছেন। রেঞ্চ ৫ এর দায়িত্বে আছেন নাসিমুল হক পার্থ। বেইলি রোড থেকে ভিকারুন্নেসা স্কুল এন্ড কলেজের সামনে ও পেছন পর্যন্ত দায়িত্বে আছেন তিনি। জানা যায়, সুদীপ্ত দাসের সেকেন্ড ইন কমান্ড হচ্ছে রাকিব হাসান। অভিযোগ আছে, ওই চার ইন্সপক্টের কে পরিচালনা করেন রাকিব হাসান। মাসিক যে টাকা অবৈধভাবে আয় হয় তা সুদীপ্ত শেখর এর মাধ্যমে ভাগবাটোয়ারা হয়। এই টাকার বড় অংশ পান সুদীপ্ত শেখর দাস। ছদ্মবেশে সুপারেনটেনডেন্ট সুদীপ্ত শেখর দাসের সাথে একটি দোকানের ভাড়ার দলিল কিভাবে তৈরী করতে হবে তা নিয়ে কথা বলতে গেলে তিনি রাকিব হাসানের সাথে আলাপ করতে বলেন। বিষয়টি নিয়ে রাকিব হাসানের সাথে কথা বললে তিনি দলিল তৈরী ও সেলস ক্যাশমেমো কিভাবে তৈরী করতে হবে তার দিক নির্দেশনা বাতিয়ে দেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী, যদি আপনার দোকানের ভাড়া ডিড ৫০ হাজার টাকা হয়, সেক্ষেত্রে ১৫ খেকে ২০ টাকা ডিড দেখালেই হবে। বলা হয়, যদি আপনার দোকানের ভাড়া ৫০ হাজার টাকা হয় তাহলে দোকান ভাড়া বাবদ মাসিক ভ্যাট দিতে হবে সাড়ে ৭ হাজার টাকা। আর যদি বিশ হাজার টাকা ভাড়ার ডিড দেখান তাহলে আপনার মাসিক দোকান ভাড়া বাবদ ভ্যাট দিতে হবে তিন হাজার টাকা। তখন জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন এটি নকল ডিড হবে। আসল ডিড কখনো প্রকাশ করা যাবেনা। একইভাবে সেলস এর বিষয়েও অনুরূপ ভাবে ক্যাশমেমো তৈরী করতে হবে বলে জানান তিনি।
এক অনুসন্ধানে জানা যায়, জাতীয় রাজস্ব কর্মকর্তা (সুপারিনটেনডেন্ট) সুদীপ্ত শেখর দাস যেন দুর্নীতির মহা দানব। তিনি পতিত সরকারের আমলে ব্যবসায়ীদের সাথে যোগসাজস করে রাজস্ব ফাকি দিয়ে শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। দুর্নীতিবাজ এই কর্মকর্তা দেশে টাকা না রেখে ভারতে পাচার করেছেন। তিনি কাউকেই তোয়াক্কা করেননা। তার দাম্ভীকতা ও অহংকার এতোই বেড়ে গেছে যে তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে থোরাই কেয়ার করেন। শুধু তাই নয়, তিনি খুব সুন্দর ভংগিতে কথা বলেন। দেখে মনে হবে তার মতোন সৎ নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা আর একজনও নেই। ব্যক্তিগত জীবনেও বেশ আলিশান জীবন যাপন করেন তিনি। বড় ব্যবসায়ীদের সাথে তিনি নিজেই সব ধরনের দেনদরবার করে থাকেন। আর ছোটখাটো বা মাঝারি ব্যবসায়ীদের সাথে দেনদরবার করেন সুদীপ্ত দাসের সেকেন্ড ইন কমান্ড এ এস এম রাকিব হাসান। তথ্যমতে, প্রতিজন কর্মকর্তা আংগুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন। তাদের অবৈধ সম্পদের হিসাব নিলে দুর্নীতির জালে ধরা পড়বে প্রত্যেকেই।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ইন্সপেক্টর এ এস এম রাকিব হাসান বলেন, আপনারা কি করতে চান। তবে তিনি অফিসে গিয়ে দেখা করতে বলেন। তাছাড়া তিনি আর কিছু বলতে রাজি নন। জাতীয় রাজস্ব কর্মকর্তা (সুপারিনটেনডেন্ট) সুদীপ্ত শেখর দাস এর মুঠো ফোনে কল করলে তিনি রিসিভ না করায় তার মন্তব্য জানা যায়নি।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা